#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[পর্ব- ৮]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
সবুজ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা কি কারণে নেহা সবুজকে ডিভোর্স দিতে চাইছে। সবুজ রুমের মধ্যে বসে রইলো। আর তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। নেহা একটু পরে আবার রুমে এসে বেগ ঘোচাতে শুরু করে।
সবুজ নেহাকে বলল — নেহা কি করছি আমি আমাকে একটু বলবে প্লিজ? কেনো আমাকে এতো কাছে টেনে নিয়ে আবার একা করে দিতে চাইছো?কেনো আবার আমাকে একা করে দিচ্ছ? কি দোষ আমার? আমি তোমাকে আর মাইসাকে ছাড়া কি করে থাকবো? তোমাদের নিয়েই তো এখন আমার পৃথিবী। তোমাদের ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা।
নেহা সবুজের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে থাকে। সবুজ খাট থেকে নেমে এসে নেহার হাত ধরে রাখে।
নেহা সবুজের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলল — আমার হাত ধরার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আমাকে স্পর্শ করার আর কোনো অধিকার আপনার নেই। আমাকে আর ভুল করেও স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না।
— কেন এসব করছো নেহা? আমায় তুমি কোন অপরাধের শাস্তি দিচ্ছ? আমার ভালোবাসার কোম কি ছিলো যে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছো? একটি বার কি ভাবোনি আমার কথা? আমি কি ভাবে থাকবো তোমাদের ছাড়া?
— আপনার সাথে সংসার করার আর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে চলে যাচ্ছি। আপনি আজ থেকে আপনার মতো থাকুন।
— এমন করোনা প্লিজ। আমি আর কষ্ট সহ্য করতে পারবোনা। নেহা আমাকে বলো কি দোষ করছি আমি? শুধুই একটি বার বলো কি কারণে এমন করছো তুমি?
— দেখুন অহেতুক এতো কথা বলতে আমি চাইনা। আমি তো একবার বলছি আমি আর আপনার সাথে সংসার করতে চাইনা।
— কিন্তু কেন? সেটা তো আমাকে বলো।
— আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাদ্য নই।
এই কথা বলে নেহা মাইসাকে রেডি করাতে থাকে। সবুজ নেহার কাছে গিয়ে বলল — নেহা আমি মাইসাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা ওঁকে নিয়ে তুমি যেওনা প্লিজ।
নেহা এবার মাইসাকে নিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে চলে গেলো। সবুজ কান্না করতে করতে ফ্লোরের উপরে বসে পড়ে। আর নেহা বলে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে। সবুজের চিৎকারের শব্দ শুনে নেহার ঘুম ভেঙে যায়। আর নেহা তাড়াতাড়ি করে সবুজের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল — কি হয়েছে আপনার? এই ভাবে চিৎকার করছে কেনো এতো রাতে?
সবুজ এবার তার পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা তো তার পাশেই আছে। সবুজ বুঝতে পারলো এতক্ষণ তাহলে সব স্বপ্ন ছিল। সবুজ কোনো কথা না বলে নেহাকে জড়িয়ে ধরে রাখে খুব শক্ত করে।
— কি হলো?
সবুজ বলতে থাকে — খুব ভালোবাসি তোমাকে নেহা। আমাকে রেখে কখনো চলে যেওনা।
— কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেন?
— কিছু হয়নি।
এই কথা বলে সবুজ আরো শক্ত করে নেহাকে জড়িয়ে ধরে আর নেহার কপালে গালে চুমু খেতে থাকে। সবুজের এমন কাজ দেখে নেহা মনে মনে হাসতে থাকে আর সবুজের মাথার চুল নিয়ে খেলা করতে থাকে।
নেহা সবুজকে বলল — আপনি কি কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন?
সবুজ নেহাকে জড়িয়ে ধরে রেখেই বলল — হুম। খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি। এমন স্বপ্ন যেনো কোনো দিন ও সত্যি না হয়।
— কি স্বপ্ন দেখেছেন শুনি একটু।
তারপর সবুজ নেহাকে সব কিছুই বলল। সবুজের কথা শুনে নেহা হতবাক হয়ে গেলো।
সবুজ বলল — আমাকে রেখে কখনো যেওনা। নাহলে আমি মরেই যাবো।
নেহা সবুজের মুখের উপরে হাত দিয়ে বলল — এসব কথা আর বলবেন না। আপনাকে ছেড়ে কোথায় যাবো আমি? আপনার মতো এমন হাসবেন্ড কয়জন মেয়ে পায়? আমার মেয়েটা খুব ভালো একজন বাবা ফেলো। আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি চাই সব সময় আপনি আমার পাশে থাকুন।
তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। এর মধ্যে আরো কিছুদিন পার হয়ে গেলো। মাইসা এখন মোটামুটি কথা বলতে পারে। সবুজ অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসে দেখে মাইসা একা একা রুমের মধ্যে বসে আছে। মাইসা সবুজকে দেখেই একটা হাসি দিয়ে বলল — আব্বু আমার জন্য কি এনেছো?
সবুজ পকেট থেকে চকলেট বের করে মসিসার হাতে দিয়ে দিলো। মাইসাও খাওয়া শুরু করে দিলো। এমন সময় নেহা রুমে চলে আসে। নেহা রুমে এসে দেখে মাইসা চকলেট খাচ্ছে। এটা দেখে নেহা রেগে গিয়ে বলল — আপনাকে না বলছি ওঁকে আর চকলেট খাওয়াবেন না।
এবার নেহা মাইসার হাত থেকে চকলেট কেড়ে নিয়ে চলে যায় রান্না ঘরের দিকে। আর এই দিকে মসিসা কান্না করতে থাকে।
সবুজ পকেট থেকে আরেকটা চকলেট বের করে মাইসার দিকে এগিয়ে দিতেই মাইসা কান্না বন্ধ করে দিয়ে সবুজকে জড়িয়ে ধরে সবুজের গালে একটা চুমু দেয়। আর বলতে থাকে — আব্বু তুমি আমার ভালো আব্বু। আম্মু খুব পঁচা।
— না মা আম্মুকে এই ভাবে বলতে নাই। আম্মুও অনেক ভালো আর তোমাকেও অনেক ভালোবাসে।
— না আম্মু আমাকে একটুও ভালোসেনা। খালি বোকে।
— শয়তানি করলে তো বোকা দিবেই। আম্মুর কথা শুনবে তাহলে আর কেউ বোকা দিবেনা ঠিক আছে?
— আচ্ছা।
— এবার খেলো তুমি আমি ফ্রেশ হয়ে আসি কেমন? এসে আবার গল্প করবো আমরা।
মাইসা মাথা নাড়ালো। সবুজ ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সবুজ ফ্রেশ হয়ে চলে আসে। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমতে চলে আসে। মাইসা নেহা আর সবুজের মাঝে শুয়ে আছে।
নেহা মাইসাকে বলল — তুই ঘুমাস না কেন? কতো রাত হইছে খেয়াল আছে তোর?
— আমার ঘুম আসছেনা। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও আব্বু।
মাইসা সবুজের দিকে তাকিয়ে বলল। এবার সবুজ মাইসাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে থাকে। মাইসা সবুজকে জড়িয়ে ধরে রাখে। মাইসার গায়ের উপর থেকে হাত সরিয়ে সবুজ যখন নেহার চুলের উপরে হাত দিলো তখন মাইসা সবুজের হাত ধরে নিজের গায়ের উপরে নিয়ে আসে। মেয়ের এমন কাজ দেখে নেহা সবুজ দুজনেই মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। সবুজ মাইসার মাথায় হাত ভুলতে ভুলতে একসময় মাইসা ঘুমিয়ে পড়ে। এবার মাইসাকে এক পাশে শুইয়ে দিয়ে দুজনে আবার হারিয়ে যায় ভালোবাসার সাগরে।
এই ভাবে চলতে থাকে তাদের দিন কাল। এই ভাবে আরো এক মাস কেটে গেলো। সবুজ অফিসে কাজ করছে হঠাৎ করে সবুজের ফোন বেজে উঠলো। সবুজ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবা কল দিয়েছে। সবুজ তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করলো।
— হ্যালো।
— সবুজ তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয় এক্ষনি।
— কেন কি হয়েছে?
— বউমা হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি আয়।
— কি বলছেন? কি ভাবে? ওয়েট আমি এক্ষুনি আসছি। আর ডাক্তারকে কল দিয়েছেন?
— হুম দিয়েছি তুই তাড়াতাড়ি আয়।
সবুজ অফিসের কাজ বাদ দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে সবুজ বাসায় পৌছে গেলো। সবুজ রুমে গিয়ে দেখে ডাক্তার নেহাকে দেখছে। আর মাইসা কান্না করছে। মাইসা সবুজকে দেখে সবুজের কাছে গিয়ে কান্না করতে থাকে। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে বলল — মা চিন্তা করোনা তোমার আম্মুর কিছু হবে না। ডাক্তার আংকেল তো আছে।
সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলো — কি দেখলেন ডাক্তার সাহেব?
চলবে??