#কেয়ারিং_হাসবেন্ড
[৩য় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নেহা সবুজকে না দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রুম থেকে বেরিয়ে নেহা রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে সবুজ রান্না করছে। নেহা এবার রান্না ঘরের দিকে গিয়ে বলল — আপনি এখানে কি করছেন?
সবুজ নেহার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — রান্না করছি। আব্বু ঘুম থেকে উঠলে আগে খাবার দিতে হবে। আর এখন তো তুমিও আছো খেতে হবেনা নাকি?
— তাই বলে আপনি রান্না করবেন?
— হুম সবসময় তো আমিই রান্না করি। আর এতো সকাল সকাল কাজের মেয়ে টাও আসেনা। তাই আমাকেই রান্না করতে হয়।
— আজ থেকে আর আপনাকে রান্না করতে হবেনা। এখন আমি চলে আসছি আমিই রান্না করবো। আর হ্যাঁ কাজের মেয়েটাকে না করে দিবেন।
— ঠিক আছে। কিন্তু তুমি এতো কাজ কি ভাবে করবে? আর তুমি এতো কাজ করলে মাইসাকে কে দেখবে?
— আমি যখন কাজ করবো তখন আপনি আছেন না? এখন রুমে যান আমি রান্না করছি।
— আচ্ছা ঠিক আছে৷ কোথায় কি আছে আমি সব দেখিয়ে দিচ্ছি। নাহলে আবার খুঁজে পাবেনা।
— তা ঠিক।
তারপর সবুজ সব কিছু নেহাকে দেখিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলো। রুম থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। সবুজ রুমে গিয়ে দেখে মাইসা ঘুম থেকে উঠে কান্না করছে। সবুজ তাড়াতাড়ি গিয়ে মাইসাকে কোলে তুলে নেয়। মাইসা সাথে কান্না বন্ধ করে দেয়। সবুজ মাইসাকে কোলে তুলে হাটতে থাকে। মাইসা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। নেহা রান্না শেষ করে এসে দেখে সবুজ মাইসাকে কোলে নিয়ে হাটাহাটি করছে। আর মাইসা ঘুমিয়ে আছে। নেহা মাইসাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে মনে মনে ভাবতে থাকে – মাইসা তো তার কোলে ছাড়া অন্য কারো কোলে গেলে কান্না করে কিন্তু উনি কি ভাবে পারলো ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে?
নেহা সবুজের কাছে গিয়ে বলল — ও তো ঘুমিয়ে গেছে আপনি এখনো হাটছিলেন কেন?
— ঘুমিয়ে গেছে? খেয়াল করি নাই। আচ্ছা তাহলে শুইয়ে দেই।
তারপর সবুজ মাইসাকে বিছানার উপরে শুইয়ে দিলো।
নেহা বলল — বাহ আপনি তো দেখছি যাদু জানেন?
— কিসের যাদু?
— এইযে মাইসা তো অন্য কারো কোলে যেতে চায়না আর খুব সহজেই আপনার কোলেই ঘুমিয়ে গেলো।
— দেখতে হবেনা বা,, এই কথা বলে সবুজ আর কিছুই বলল না। আর সে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
নেহা নিজে নিজে বলতে থাকে– কি হলো ওনার? বুঝলাম না কিছুই।
সবুজ যাওয়ার সাথে সাথে মাইসা ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে দিলো। কিন্তু কিছুতেই নেহা মাইসার কান্না থামাতে পারছেনা। নেহা মাইসাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু মাইসা খাচ্ছেনা। মাইসার কান্নার শব্দ শুনে সবুজ রুমে চলে আসছে। এসে দেখে মাইসা নেহার কোলে কান্না করছে। আর নেহা খাবার নিয়ে বসে আছে।
সবুজ এসে বলল — কি হইছে মাইসা এই ভাবে কান্না করছে কেন?
— জানিনা ঘুম থেকে উঠেই কান্না করছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ করে এমন করছে কেন?
নেহার কোল থেকে সবুজ মাইসাকে নিয়ে নিজের কোলে তুলে নিলো। আর সে বলল — কি হয়েছে মা? কান্না করছো কেন? আম্মু কি বোকা দিছে? আর বোকা দিবেনা আমি চলে আসছি। আর কান্না করেনা।
মাইসার কান্না সাথে সাথে বন্ধ হয়ে গেলো। নেহা তো অবাক হয়ে গেলো।
সবুজ বলল — আমাকে দাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
এবার সবুজ মাইসাকে খাইয়ে দিতে থাকে। আর মাইসা ও খুব ভালো ভাবে সবুজের হাতে খাবার খেতে থাকে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবুজ মাইসাকে নিয়ে তার বাবার রুমে চলে যায়।
এই দিকে নেহার ফোন বেজে উঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নেহার আম্মু কল দিয়েছে। নেহা তাড়াতাড়ি করে কোল রিসিভ করলো।
— কেমন আছো আম্মু?
— আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস? আর মাইসা কেমন আছে?
— আমরা ভালোই আছি। আব্বু কেমন আছে?
— ভালো আছে। তা মা ওখানকার সবাই কেমন আছে? আর জামাই?
— সবাই ভালো আছে।
— ওহ। তা মা ছেলেটা কেমন?
— উনি তো খুব ভালো। আর আসল কথা কি জানো?
— কি?
— মাইসার খুব ভালো খেয়াল রাখতে পারে উনি। মাইসা সব সময় ওনার কাছেই থাকে। ওনাকে ছাড়া কিছুই বুঝে-না। তারপর সব কিছুই বলল।
নেহার আম্মু অনেক খুশি হয়ে গেলো। নেহার আম্মু বলল — মা তোর কাছে আমরা একটা কথা গোপন রেখেছি।
— কি কথা?
— আসলে মা সবুজ ও বিবাহিত। দুই বছর আগে ওর ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবে কি জন্য ডিভোর্স হইছে তা আমি জানি না।
— ওহ। তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমার মেয়েটা তো একজন ভালো বাবা ফেলো সেটাই অনেক।
— আচ্ছা ঠিক আছে মা ভালো থাকিস এখন রাখি।
— ঠিক আছে।
অন্যদিকে মাইসাকে কোলে নিয়ে সবুজ তার বাবার রুমে চলে গেলো। তারপর তারা সবাই মিলে মজা করতে থাকে। মাইসাও সবার মাঝে থেকে হাসতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে নেহাও রুমে আসে। এসে দেখে সবাই মাইসার সাথে দুষ্টুমি করছে।
নেহা বলল — আপনারা কি খাবার খাবেন না? নাকি না খেয়েই থাকবেন আপনারা?
সবুজের আব্বু বলল — আরে মা খাওয়ার কথা তো সত্যিই ভুলেই গিয়েছিলাম মাইসাকে কাছে পেয়ে।
— ঠিক আছে এখন খেতে আসুন আপনারা।
— হুম চল মা।
সবাই খাবার খেতে শুরু করলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবুজ বাহিরে চলে গেলো। অনেক্ষন ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফেরার সময় সবুজ মাইসার জন্য কিছু খাবার জিনিস কিনে নিলো। আর মাইসার জন্য কিছু খেলার জিনিস। আর পায়ে হাটার একটা খেলনা গাড়ি। (আসলে ওটার নাম যেনো কি? আমি নামটা জানিনা। বাচ্চার যে একটা গাড়িতে উঠে হাটে! নিচে ছোট ছোট অনেক গুলো চাকা থাকে। যাইহোক আমি ওটার নাম জানিনা দুঃখিত। কেউ নাম জানলে কমেন্ট করে বলবেন প্লিজ।) তো সবুজ এসব কিনে বাসায় ফেরার পথে একটা ফুলের দোকান চোখের সামনে পড়ে। সবুজ সেই ফুলের দোকানে গিয়ে নেহার জন্য বেলি ফুল কিনে নেয়। এসব নিয়ে সবুজ বাসায় চলে যায়।
সবুজ বাসায় গিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে নেহা মাইসার পাশে শুয়ে আছে। নেহা সবুজকে দেখে উঠে বসে গেলো। আর সবুজের হাতে এসব দেখে বলল — কি এসব?
— মাইসার জন্য কিছু খাবার আর ওর জন্য কিছু খেলার জিনিসপত্র নিয়ে আসলাম।
— কেনো শুধু শুধু এতো টাকা অপচয় করতে গেলেন?
— এ তেমন কিছুনা। তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
— কি জিনিস?
এবার সবুজ নিজের পকেটে হাত দিয়ে বেলি ফুলের মালা বের করে নেহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল — এই মালা তোমার জন্য।
সবুজের হাতে বেলি ফুল দেখে অনেক খুশি হয়ে গেলো। নেহা সবুজের হাত থেকে ফুল নিয়ে নেয়। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। নেহা সবুজের কাছে এসে বলল — আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
— কি কথা?
— এখানে না। চলুন আমরা ছাদের উপরে গিয়ে কথা বলি।
— ঠিক আছে।
— আপনি যান আমি একটু পরে আসছি।
— ওকে।
সবুজ ছাদের উপরে গিয়ে নেহার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে৷ অনেক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু নেহা এখনো আসছেনা। সবুজ আরো কিছুক্ষণ নেহার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে সবুজ পিছনে ঘুরতেই সে হতবাক হয়ে গেলো।
চলবে??