কেন আমি ডাকি তারে -১১
নিতুর মনের মধ্যে কিছু একটা হচ্ছে৷ কেন যেন রেহানকে নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে মন চাইছে৷ কেউ যেন কানের কাছে জোরে জোরে বলছে, রেহানকে আটকানো উচিত। আটকে ওর কাছে গিয়ে নিজেকে সমর্পন করা উচিৎ৷
নিতু দ্রুত ভেজা কাপড় পালটে চুলে তোয়ালে জড়িয়ে বের হলো৷ রেহান অফিসের জন্য তৈরি হয়ে গেছে৷ ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে৷
নিতু কাছে গিয়ে বলল, আজ অফিসে যেতে হবে না।
রেহান একটু অবাক হয়ে বলল, কেন!
নিতু বলল, থাকুন না আজ!
রেহান বলল, ঠিক আছে।
নিতুু একটু লজ্জা মেশানো চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে দেখতে ভালো লাগছে।
রেহান বুঝল কিনা ঠিক বোঝা গেল না। শার্টের কলারের কাছের বোতাম আলগা করে বিছানায় বসল।
নিতু গিয়ে অপর দিকে বসে পড়ল৷
রেহান একবার নিতুর দিকে তাকাল, নিতুও তাকাতে গিয়ে চোখাচোখি হয়ে গেল৷ নিতু ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে, নিতুর লজ্জা আর সংকোচই রেহানকে বুঝিয়ে দিলো নিতুর কী চাইছে। কাল রাতেই না কমিটমেন্টের কথা বলছিল, আরে চুলোয় যাক কমিটমেন্ট। নিতু চাইছে, রেহানও চাইছে নিতুকে৷ দুজনেই এডাল্ট৷ পরে কী হবে সেটা পরে দেখা যাবে! আপাতত কেউ অপরাধী নয়।
রেহান উঠে গিয়ে নিতুর সামনে দাঁড়ালো। ঘোর লাগা এক অনুভূতিতে নিতুর মধ্যে অসাড়তা কাজ করছে। রেহান নিতুর দু হাত ধরে ওকে টেনে কাছে নিলো!
এই মুহুর্তে পৃথিবীর অন্য কোনো সত্য নেই, শুধু যেন ওরা দুজনেই আছে৷
রেহান কথা না বাড়িয়ে নিতুকে শুইয়ে দিয়ে ওর উপরে ঝুকল। খানিক আগেই ফেলে আসা অনুভূতি ভীষণ ভাবে তলপেটে নাড়া দিচ্ছে৷ রেহানের খোলা বুকের বুনো সুবাস নিতুর নিশ্বাস ছুঁয়ে আরো গাড় থেকে গাড়তরো করে তুলছে।
রেহান নিতুর ঠোঁটে চুমু খেতে গেল আর তখনি নিতুর হোয়াটসঅ্যাপে কল ঢুকল। ওরা দুজনেই চমকে উঠল৷
নিতু ফোনের দিকে তাকাতেই রেহান সরে গেল।
নিতু হাতে নিয়ে দেখল তুহিন ফোন করছে। মুহূর্তেই এতক্ষণের অনুভূতি চুরমার হয়ে গেল! এটা কী করতে যাচ্ছিল নিতু, ছি ছি! এটা ঠিক হচ্ছিল না।
রেহান ভেবেছিল নিতু ফোন রিসিভ করবে না, কিন্তু নিতু ফোন পিক করে সরে গেল।
রেহান নিজের ফোন হাতে নিয়ে বেডরুম থেকে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসল।
সায়রা তিনবার ফোন করেছে, রেহান কল ব্যাক করল।
সায়রা ফোন পিক করে বলল, আর্জেন্ট টাকাটা দরকার।
সেমিস্টার ফি দিতে হবে।
রেহান টাকাটা ট্রান্সফার করে দিলো। তারপর টিভিতে স্পোর্টস চ্যানেল দিয়ে সেদিকে কিছু না দেখেও তাকিয়ে রইল।
।চলবে
কেন আমি ডাকি তারে -১২
নিতু কি করছিলে? – তুহিন জিজ্ঞেস করল।
কিছু না৷ – নিতু সংক্ষেপে উত্তর দিলো।
এতক্ষণ দেরী হলো, তোমার তো এখন সকাল!
ব্যস্ত ছিলাম।
সেটাই তো জিজ্ঞেস করলাম, কিসের এত ব্যস্ততা!
তুহিন, কাল থেকে তোমার সময় হয় নি আমার সাথে একটু কথা বলার৷ এতক্ষণ পরে কল করে তুমি আবার কৈফিয়ত চাইছ! আশ্চর্য!
নিতু, তুমি কিছুটা বদলে গেছ, তুমি জানো আমি এখানে কত ঝামেলার মধ্যে থাকি! তারপরেও এমন করো!
তুহিন এমন ভাবে বলল, যেন সব দোষ নিতুর।
নিতু বিষয়টা নিতে পারল না। ও চিৎকার করে বলল, আমাকে কাজ দেখাবা না, তুমি একাই বিদেশ যাও নাই, আমিও অশিক্ষিত না। দেখ তুহিন, তোমার যদি আমার বিষয়ে দ্বিধা থাকে, সেটা আমাকে জানিয়ে দিবা।
অকারনে আমাকে ঝুলিয়ে রাখবা না।
তুহিন বলল, তুমি কি ঝুলে আছ, বিয়ে করে স্বামীর সংসারে দিব্যি ভালো আছ।
নিতু বলল, ভালো আছি না কিভাবে আছি, এটা তোমার জানার কথা! তুমি বলেছ বলেই বিয়েটা করেছি।
দেখ নিতু, একটা ছেলে তোমার স্বামী, তার সাথে রুম শেয়ার করছ, তাকে নিশ্চয়ই তুমি খালি মুখে রাখতে পারবে না! কিছু না কিছু তাকে দিতেই হবে! আমি কি এসব কথা কখনো বলেছি!
নিতু বলল, শাট আপ তুহিন। তুই আর আমাকে কল করবি না। একদম না! রেহানের বিষয়ে আমি একটাও বাজে কথা এলাউ করব না।
বাহ, এই তো, আসল কথা বের হয়েছে,
ভালো ঘর, বড়লোক জামাই পেয়ে সব ভুলে গেছ, আর দোষ সব আমার!
নিতুর মনে হলো, তুহিন কেমন পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করছে৷ অকারণে তাকে ব্লেম করার চেষ্টা করছে। নিতু ফোন কেটে সাইলেন্ট করে খাটের উপর বসে পড়ল।
কিছুক্ষণ পরে নিতুকে ডাকতে এলো রেহানের ছোটো বোন। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয় নি।
নিতুকে দেখে বলল, কি ব্যাপার! সকাল সকাল শাওয়ার নিলে৷ আরেকজন অফিস না গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে! প্ল্যান কি তোমাদের!
নিতু শুকনো হাসি দিলো। খেতে ইচ্ছে করছে না, এখন রেহানকেও ডাকা যাবে না।
নিতু বলল, তুমি যাও আমি আসছি৷
নিতুর প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। মনে হচ্ছে চিৎকার করে কাঁদলে একটু হালকা লাগত। রেহান রুমে এসে ঢুকেছে কোনো কারনে। নিতু ওয়াশরুমে ঢুকে বেসিনের কল ছেড়ে কাঁদতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পরে রেহান নক করল৷ নিতু, বাইরে এসো।
নিতুর মনে হচ্ছে, ওর মরে যাওয়া উচিৎ! এত ভালোবাসা, এত অপেক্ষা যার জন্য, সে এমন করল, এই কষ্ট কাকে বোঝাবে! রেহান, সে তো আরেকজনের বাকদত্ত পুরুষ! হ্যাংলার মত রেহানকে জড়িয়ে ধরার কোনো মানে হয় না।
নিতু এখানে থাকবে না। বাপের বাড়িতে চলে যাবে। তুহিনের জন্য আর অপেক্ষা না।
নিতু, দরজা খোলো।
নিতু দরজা খুলে বাইরে এলো৷ চোখ মুখ টকটকে লাল।
কি হয়েছে?
কিছু না৷ একটু থেমে ফুপিয়ে, নিতু বলল, আমি একটু আমাদের বাসায় যাব।
রেহান বলল, ঠিক আছে। এখন না৷ আমি দিয়ে আসব বিকেলে৷ ওকে?
একটু নরমাল হও।
নিতু ঘাড় নাড়ল।
ছাদে যাব?
এখন!
হুম!
এখন তো অনেক রোদ!
রোদেরও আলাদা সৌন্দর্য আছে, মেঘলা দিনে বোঝা যায়।
চলো, ঘুরে আসি।
নিতু চোখ মুখ মুছে তৈরি হলো৷
রেহান নিতুকে নিয়ে বের হয়ে আগে ব্রেকফাস্ট করল। তারপর কফিমগ নিয়ে দুজন ছাদে উঠল।
চলবে
শানজানা আলম