#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
” হ্যালো মিস।আমি কি এখানে বসতে পারি?”
আস্থা মাথা তুলে দেখে একটা অপরিচিত ছেলে মুখে হাসি বজায় রেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
” বসুন।”
ছেলেটা আস্থার সম্মতি পেয়ে তার পাশে বসে পড়ে।আস্থা নিজের মতো ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্থ হয়ে পড়ে।আস্থা তার পরিবারের সাথে তাদের সেই ভাড়াটিয়ার মেয়ের বিয়েতে এসেছে।তার মা অন্য মহিলাদের সাথে কিছুটা দূরে কথা বলছে,অনিকও ওনার সাথে আছে আর আস্থার বাবা বাইরে আছে।
” তো মিস আপনার নামটা কি জানতে পারি?”
ছেলেটার হুট করে এমন প্রশ্নতে আস্থার ভ্রু-কুচকে উঠে।সে ফোনের দিকে তাকিয়েই বলে,
” আ….তুলি।” আস্থার কেন যেন ছেলেটাকে নিজের নাম বলতে ইচ্ছে করলোনা।
” তুলি,সুন্দর নাম তো।আমার নাম আবির।তুমি এখানে একা এসেছো বুঝি?”
” না।”
” ও আচ্ছা।তুমি কোন পক্ষ থেকে এসেছো?”
” কনে।”
” ও আচ্ছা।আমি বরপক্ষ থেকে এসেছি।সায়ন মানে বর আমার পরিচিত।”
” এ আবার কোন জ্বালা।কথা যেন থামছেই না।মিনিমাম কনমসেন্সটুকু নেই যে অপরিচিত মেয়ের সাথে এরকমভাবে কথা বলতে নেয়।অভদ্র লোক একটা।” মনে মনে বলে আস্থা।
” আচ্ছা তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”
” (কেউ আমাকে এই অভদ্র লোকটা থেকে বাঁচাও) আমি ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করছি।”
” কি বলো তুমি!আমি তো মনে করেছি তুমি এখনো কলেজে পড়ো।”
” আস্থা।”
পরিচিত কারো কন্ঠস্বর শুনে আস্থা তাড়াতাড়ি মোবাইল থেকে চোখ তুলে।সে এতোক্ষণ ফোনের দিকেই তাকিয়ে কথা বলছিলো।মাথা তুলে আস্থা দেখে তাজ দাঁড়িয়ে আছে।তাজকে দেখে আস্থা মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।
” আস্থা তোমাকে আন্টি ডাকছেন,যাও।আর আবির তুই এখানে?”
” তাজ তুই এখানে কি করছিস?আর তুই ওকে চিনিস?”
” হুম খুব ভালো করেই চিনি।আস্থা চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
তাজ আগে আগে চলে যায়,আস্থা তাড়াতাড়ি তাজের পেছন পেছন যেতে থাকে।
” তুমি ওকে চেনো নাকি?”
” কে?”
” ওই যে ছেলেটাকে মানে আবির কে?”
” না তো।”
” তাহলে এতো কথা বলছিলে কেন?”
” আমি কোথায় কথা বলছিলাম?উনি নিজে থেকে সেধে সেধে কথা বলছিলেন।”
” আচ্ছা যাও আন্টিদের সাথে বসে পড়ো।”
” আপনি বসবেন না?” মায়াভরা কন্ঠে তাজকে জিজ্ঞেস করে আস্থা।
” না আগে তোমরা খেয়ে উঠো তারপর বসবো।”
আস্থা আর কোন কথা না বলে তার মায়ের পাশে বসে পড়ে।তাজ সবার কি লাগবে না লাগবে তার দিকে খেয়াল রাখছে।এদিকে আস্থা খাচ্ছে কম তাজকে দেখছে বেশি।
” কি রে তুই না খেয়ে বসে আছিস যে?” জিজ্ঞেস করে আস্থার মা।
” কই খাচ্ছি তো।তুমি খাও,আমি খাচ্ছি।”
” তাজ বাবা শোন।”
তাজ তাড়াতাড়ি আস্থার মায়ের কাছে এসে দাঁড়ায়।
” জ্বি আন্টি বলুন,আপনার কি লাগবে।”
” আমার কিছু লাগবে না বাবা তুমি আমাকে একটু মাংসের বাটিটা এগিয়ে দেবো?”
” কাকে দেবেন আন্টি?আমাকে বলুন আমি দিয়েচ্ছি।”
” এইযে আমার মেয়েটাকে দেবো।”
” না না আমার কিছু লাগবেনা।আমার এসব মাংস-টাংস ভালোলাগেনা।আপনাকে কষ্ট করতে হবেনা।”
কিন্তু কে শুনে কার কথা।তাজ বাটি থেকে দু’পিস মাংস উঠিয়ে আস্থার প্লেটে দিয়ে দেয়।
” আপনাকে না বলেছিলাম আমার মাংস ভালো লাগেনা।” বিরক্ত নিয়ে বলে আস্থা।
” ভালো না লাগলেও খাও।না খেয়ে খেয়ে তো একদম শুকনো কাঠি হয়ে গিয়েছো।মনে হচ্ছে বাতাসে দু’দিন পর উড়ে যাবো।বেশি বেশি করে খেতে পারবোনা।”
” আরে বাবা তুমি কাকে খাওয়ার কথা বলছো,এই মেয়েকে!তুমি জানোনা যে এই মেয়ে খাওয়ার জন্য কত তোষামোদ করতে হয়।সারাদিন যদি আমি না ডাকি তাহলে না খেয়ে থাকবে,তাও নিজে থেকে কিছু খাবেনা।”
” তাই তো দেখতে পাচ্ছি আন্টি।দিন দিন শুকনা কাঠি হয়ে যাচ্ছে।”
” মা একটু চুপ থাকো তো।তুমি কি এখানে আমার নামে মানুষের কাছে নালিশ দিতে এসেছো?তাড়াতাড়ি খাও।”
বিরক্ত নিয়ে কথাগুলো মাকে বলে আস্থা এরপর তাজের দিকে তাকিয়ে হালকা মুখ বাঁকিয়ে নিজে খাওয়াতে মন দেয়।আস্থা কাজে তাজ হালকা হেসে অন্যদিকে দেখতে চলে যায়।
খাওয়া শেষ হলে আস্থা এক জায়গায় এসে দাঁড়ায়।তার মা কোন এক মহিলার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
” এক্সকিউজ মি।”
পাশ ফিরে আস্থা দেখে একটা অপরিচিত ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তবে ছেলেটাকে আস্থা কেন যেন চেনে না ঠেকছে।অনেক মনে করার পর আস্থার মনে পড়ে আরে এই ছেলেটাকেই তো সকালে কথা দেখিয়েছিলো।অগ্নিকে এখানে দেখে ভড়কে যায় আস্থা।
” জ্বি আপনি কি আমাকে বলছেন?”
” হ্যাঁ তোমাকেই বলছি।তুমি নাইরার ফ্রেন্ড না?”
” আপনি নাইরাকে চেনেন?”
” হুম চিনি,খুব ভালো করে চিনি।” দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে অগ্নি। ” আচ্ছা তুমি আমার একটা হেল্প করতে পারবে?প্লিজ না করোনা।”
” কি হেল্প?”
” এই কাগজটা তুমি প্লিজ নাইরাকে দিয়ে দিও।আর প্লিজ তুমি এটা খুলে দেখোনা।এটা শুধু মাত্র নাইরা নিজে দেখবে।প্লিজ বোন আমার এই হেল্পটা একটু করে দাও,প্লিজ।”
অগ্নির অনেক রিকুয়েষ্ট করার কারণে আস্থা আর না করতে পারেনি।সে অগ্নি থেকে কাজটা নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে।অগ্নি আস্থা ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়।
” তুমি সবসময় একা একা ঘুরো কেন?”
পেছন থেকে তাজের আওয়াজ শুনে আস্থা কেঁপে উঠে।
” আপনি কি কোনদিন সামনে থেকে আসতে পারেন না?”
” না পারিনা।ওই ছেলের তোমাকে কি দিয়েছে?”
” তা জেনে আপনি কি করবেন?আর ওটা আমার জিনিস না ওটা অন্যকারো জিনিস।”
” তাহলে থাকো তুমি তোমার জিনিস নিয়ে।আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।” তাজ আর কোন কথা না বলে হাঁটা শুরু করে দেয়।
” আরে দাঁড়ান।” আস্থা দৌড়ে তাজের পেছন পেছন নিচে নেমে আসে।
” মা,বাবারাও কি নিচে?” সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে আস্থা।
” আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাণী।আপনাকে নিচে দেখতে না পেয়ে আঙ্কেল আসতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমি এলাম,উনি আর কত হাঁটবেন।এবার তাড়াতাড়ি এসো।”
তাজের কথা শুনে আস্থা মনে মনে একটু খুশিই হয়।
পরেরদিন,
” নাইরু এই নাইরু।”
” কি হয়েছে আস্থু?এভাবে ডাকছিস কেন?”
” এই নে ধর।” অগ্নির দেওয়া কাগজটা নাইরার দিকে করে বলে আস্থা।
” কি এটা?”
” কাল বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম।একটা ভাইয়া বললো তোকে এটা দিতে।আমি প্রথমে মানা করেছিলাম কিন্তু অনেক রিকুয়েষ্ট করলো তাই নিয়ে আসলাম।”
” কোন ভাইয়া?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে নাইরা।
” আরে কাল কথা একটা ছেলেকে দেখালেনা ক্যাম্পাসে,উনিই দিয়েছেন।চিন্তা করিস না আমি খুলে দেখিনি।পড়ে দেখ কি লিখা আছে।”
আস্থার কথার কাছে চলে যায়।আস্থার কথা শুনে নাইরা বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে আস্থা অগ্নির কথা বলছে।নাইরা তাড়াতাড়ি কাজটা খুলে পড়তে শুরু করে।
” আই এম সরি নাইরা।আমি তোমাকে এই কয়েকমাস অনেক ডির্স্টাব করেছি।আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বুঝবে কিন্তু তুমি বুঝলেনা।আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি আর কোনদিনও তোমার সামনে আসবোনা।তোমার সামনে দাঁড়ানোর সাহস আমার আর নেই।তোমার ফ্রেন্ডকে দেখলাম,তাই ততক্ষণাত লিখে ফেললাম।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
লেখাগুলো পড়ে নাইরার মাথা গরম হয়ে যায়।সে তাড়াতাড়ি ক্লাস থেকে বের হয়ে,পাশের বিল্ডিং এ চলে যায় যেখানে অগ্নির ক্লাস আছে।নাইরাকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি কারণ অগ্নি বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল।নাইরাকে দেখে অগ্নি চলে যেতে নিলে নাইরা তাকে থামিয়ে দেয়।
” এসব কি?”
” আমার যা বলার ছিল আমি কাগজে লিখে দিয়েছি তো।তাহলে কেন আবার এসেছো?”
অগ্নির কথা শুনে নাইরা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।তারপর বলে,
” বিকেল বেলা রোজি পার্কে চলে আসবেন,আপনার সাথে আমার কথা আছে।ঠিক বিকেল চারটায়।”
কথা গুলো বলে নাইরা দ্রুত পায়ে স্থানটা ত্যাগ করে।এদিকে অগ্নি চিন্তা করছে নাইরা কি এমন কথা বলবে তাকে যা সে এখানে বলতে পারছেনা।
চলবে……..