#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
” আবির তুই এখানে!”
তাজ দরজা খুলে আবিরকে দেখে চমকে যায়।আবির তাজের বাসায় দুই বা তিন বার এসেছিলো।হঠাৎ করে আবিরকে এই সময় তাজ মোটেও আসা করেনি।
” কিরে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবি নাকি?”
” না না ভিতরে আয়।”
তাজ দরজা সামনে থেকে সরে আবিরকে ভিতরে আসার পথ করে দেয়।ভেতরে এসে আবির কিছু বলতে যাবে কিন্তু আস্থাকে দেখে সে চুপ হয়ে যায়।
” তুলি!তুমি এখানে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আবির।
” তুলি?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে তিথি।
” এই তুলিটা আবার কে?” তাজ প্রশ্ন করে।
” আরে ওই তো তুলি।” আস্থাকে ইঙ্গিত করে বলে আবির। ” তো তুলি তুমি এখানে কি করছো?”
” আমার বাসাও এই বিল্ডিং এ।” কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে আস্থা।
” ও আচ্ছা,তাই বলো।”
” আস্থা মা এখন যাস না,তিথি ওকে যেতে দিসনা।আরে আবির বাবা যে কেমন আছো তুমি?”
” আমি ভালো আছি আন্টি।আপনি কেমন আছেন?”
” আমিও বেশ ভালো আছি বাবা।তুমি বসো বাবা,আমি এখুনি আসছি।আস্থা তুই কিন্তু যাস না।”
তাজের মা আবারো রান্নাঘরে চলে যায়।তাজ আবিরকে বসতে বলে।আবির আস্থার পাশে থাকা সিঙ্গেল সোফাটাতে বসে পড়ে।আবির বসলে আস্থা কিছুটা সরে বসে।
” তা তুলি কেমন আছো তুমি?”
” এই তুলিটা কে ভাইয়া?”
” আরে ও তোদের বিল্ডিংই থাকে আর তুমি ওর নামই জানোনা।” কিছুটা হেসে বলে আবির।
তিথি ভ্রু-কুচকে আস্থার দিকে তাকায় তারপর চোখের ইশারায় তাজকে জিজ্ঞেস করে আবির এসব কি বলছে।তাজ চোখের ইশারায় তিথি শান্ত থাকতে বলে।
” আস্থা তুমি তিথির সাথে ভিতরে গিয়ে বসো।তিথি ওকে ভিতরে নিয়ে যা।”
” চলো আস্থা।”
তাজের কথা শুনে আস্থা হাফ ছেড়ে বাঁচে।আরেকটু হলেই তো সে অস্তিত্বতে মরেই যেতো।আস্থা তাড়াতাড়ি করে তিথির সাথে তিথির রুমে চলে আসে।
” কিরে তাজ তোরা সবাই ওকে আস্থা বলে ডাকছিস কেন?ওর আরেকটা নাম কি আস্থা?”
” না ওর একটাই নাম আর সেটা হচ্ছে আস্থা।” সোফায় বসতে বসতে বলে তাজ।
” তাহলে সেদিন যে ও আমাকে বললো ওর নাম তুলি।” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আবির।
” জানিনা কিন্তু ওর নাম আস্থা।আচ্ছা তুই বস আমি আসছি।”
তাজ উঠে রান্নাঘরে চলে যায়।আবির বসে বসে এটাই চিন্তা করছে কেন আস্থা তাকে মিথ্যা কথা বলেছে।
এদিকে তিথির রুমে,
” আস্থা আবির ভাইয়া তোমাকে তুলি বলছিলো কেন?”
” আসলে সেদিন তিনা আপুর বিয়েতে উনি আমার নাম জিজ্ঞেস করেছিলো।কেন যে আমার ওনাকে নিজের নাম বলতে ইচ্ছে করেনি তাই তুলি বলেছিলাম।কিন্তু আমি তো জানতাম না উনি তোমার ভাইয়ের বন্ধু।” অস্বস্তি নিয়ে বলে আস্থা।
তিথি এদিক-ওদিক তাকিয়ে আস্তে আস্তে আস্থাকে বলে,
” শোন আস্থা তোমাকে একটা কথা বলি কাউকে বলোনা কিন্তু।”
” বলো।”
” আমারও না ওই আবির ভাইকে পছন্দ না।কিরকম যেন।অদ্ভুত ধরনের লাগে আমার।”
” আমারো ওনাকে অদ্ভুত ধরনের লেগেছে।সেদিক নিজে সেধে সেধে কথা বলছিলো।ভাগ্যিস তাজ চলে এসেছিলো,নয়তো আমার মাথা খেয়ে ফেলতো।”
” আমার ওনাকে দেখলে মনে হয় ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে টপকে পড়েছে।”
তিথির কথা শুনে আস্থা হেঁসে ফেলে।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিজের বাসায় ঢুকতে যাবে সেই সময়ই পেছন থেকে কেউ আস্থার নাম ধরে ডাকে।আস্থা পেছন ফিরে দেখে আবির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে।আবিরকে দেখে আস্থা ভড়কে যায়।
” আমাকে সেদিন মিথ্যা কেন বলেছিলে তোমার নাম তুলি?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে আবির।আস্থা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
” কি হলো বলো?”
” আ…আমার কিছু কাজ আছে।”
এটা বলেই আস্থা তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে।এদিকে আবির আস্থার কাজে থতমত খেয়ে যায়।
অন্যদিকে,
ক্লাসের পড়া রেডি করছে নাইরা।হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠে।ফোনটা নিয়ে নাইরা দেখে আননোন নম্বর,তাই আর সে রিসিভ করেনা।ফোন কেটে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারো বেজে উঠে।
” হ্যালো কে বলছেন?”
” আমি।”
” আমিটা কে?” বিরক্ত নিয়ে বলে নাইরা।
” আমি অগ্নি বলছি।”
” ও আচ্ছা।কেন ফোন করেছেন?আর আমার নম্বর কোথা থেকে পেয়েছেন?”
” তোমার নম্বর আমার কাছে আগে থেকেই ছিলো কিন্তু ভয়ে তোমাকে ফোন করিনি আগে।”
” ও আচ্ছা।”
” কেমন আছো?”
” বিকালেই তো দেখলেন কেমন আছি।তাহলে এখন আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?” বিরক্তি নিয়ে বলে নাইরা।
” তোমাকে কি বিরক্ত করলাম?”
অগ্নির কথা শুনে নাইরা চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
” না সেরকম কিছু না।বলুন কি বলবেন?”
” কি করছো তুমি?”
” কিছু না।”
” কাল আসবে ভার্সিটিতে?”
” হুম।”
এরপর কিছুক্ষণ কেউ আর কোন কথা বলেনা।
” আচ্ছা আমি এখন রাখছি আমার কিছু কাজ আছে।আর হ্যাঁ আমাদের মাঝে বিকেলে যে কথাগুলো হয়েছে সেগুলো যেন অন্য কেউ জানতে না পারে।”
” তুমি টেনশন করোনা আমি কাউকে কিছু বলবোনা।তু….”
অগ্নি আর কিছু বলবে তার আগেই নাইরা ফোনটা কেটে দেয়।অগ্নি ফোনের দিকে তাতে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।এদিকে ফোন কেটে দিয়ে নাইরা টেবিলের সাথে মাথাটা লাগিয়ে দেয়।তার এখন সবকিছু অসহ্য লাগছে।
পরেরদিন,
” চল না কথু বেপি।”
” না আস্থু আমি ওখানে যাবোনা।তোর যেতে হলে তুই যা।”
” আচ্ছা যেতে হবে না তোকে আমি নাইরাকে নিয়ে যাচ্ছি।নাইরা চল।”
” আরে আস্থা… ”
কিন্তু আস্থা কারো কথা শুনেনা।সে নাইরাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।
সাবধানে হেঁটে হেঁটে সামনে এগোচ্ছে নাইরা আর আস্থা।তারা সেই বিল্ডিংটাতে এসেছে যেখানে কাজ চলছে।ভার্সিটিতে আসার পর আস্থার হুট করেই ইচ্ছা জেগেছে সে তাজকে দেখবে আর আস্থা জানে তাজকে কোথায় পাওয়া যাবে।আস্থার একা যেতে ভয় লাগছিলো তাই সে জোর করে নাইরাকে নিয়ে এসেছে।
” আস্থু চল এখন।দেখ এখানে কেউ নেই,কেউ আমাদের দেখলে আস্তো রাখবেনা।”
” আরে কিছু হবেনা।”
আস্থা আগে আগে আর নাইরা তার পেছন পেছন হাঁটছে।হুট করেই নাইরা নিচে বসে পড়ে।
” আ….আস্থা।”
নাইরার কন্ঠ শুনে আস্থা তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকাই।সে দেখে নাইরা তার পা ধরে নিচে বসে আছে।আস্থা তাড়াতাড়ি নাইরার কাছে আসে।
” নাইরু কি হয়েছে তোর?”
” আস্থা আমার পায়ে প্রচুর ব্যথা করছে।মনে হচ্ছে পা মচকে গিয়েছে।”
” কি বলছিস তুই?দেখি আমি।”
আস্থা নাইরার পায়ে হাত দিলে নাইরা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে।
সেইসময় সেদিক দিয়ে নিজের কলিগের সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো তাজ।নাইরার আওয়াজ শুনে তারা দুজনেই সেদিকে তাকাই।তাজ তাড়াতাড়ি তাদের দু’জনের কাছে এসে দাঁড়ায়।
” তোমরা এখানে কি করছো?আর কি হয়েছে ওর?”
” পড়ে গিয়ে পা মচকে গিয়েছে।”
” কি বলছো?যাও তাড়াতাড়ি ওকে স্টাফ রুমে নিয়ে যাও।”
নাইরা উঠতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না বিধায় তাজ তাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে।এরপর নাইরা আস্থার কাঁধে ভর করে ওখান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।
কিছুদূর গিয়েই তারা অগ্নির দেখা পায়।আস্থা নাইরাকে ধরে আছে দেখে অগ্নি হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি হয়েছে?”
” আসলে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে।”
” কি বলছো!দেখি দাও ওকে আমাকে দাও।”
” না থাক ঠিক আছে।আস্থা চল।”
আস্থা একবার অগ্নির দিকে তাকিয়ে নাইরাকে ধরে ধরে স্টাফ রুমে নিয়ে আসে।সেখানে একজন স্টাফ নাইরার পায়ে কিছু ওষুধ লাগিয়ে দেয়।
” ঠিক আছিস এখন?”
” হুম।”
” সরিরে আমার জন্য তুই আজ ব্যথা পেলি।” মাথা নিচু করে বলে আস্থা।
” আরে ধুর ব্যথা তো কত পায়,এর এটা সামান্য মোচ এসেছে আর কিছু না।এতো মন খারাপ করার কিছু নেই।কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
নাইরার কথা শুনে আস্থা হালকা করে হাসে।
আস্থার কাঁধে ভর করে বাইরে বেরিয়ে আসে নাইরা।নাইরাকে দেখে হন্তদন্ত হয়ে অগ্নি জিজ্ঞেস করে,
” কেমন লাগছে?”
” ঠিক আছি আমি।আস্থা চল ক্লাসে নয়তো স্যার বকা দেবো।”
আস্থা আর কোন কথা না বাড়িয়ে নাইরাকে নিয়ে চলে যায়।অগ্নি একদৃষ্টিতে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।নাইরার এধরণের ব্যবহারে অগ্নি কষ্ট পেয়েছে।
চলবে…..