কিছু সমাপ্ত পূর্ণতার (পর্ব – ৪)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
বিছানায় পাশাপাশি তানজিম আর নাহিদা। প্রকৃতপক্ষে তাদের দূরত্ব যেন বেড়ে গেছে হাজার গুণ। নাহিদা প্রথমে খুব আবেগি হয়ে গেলেও এখন শক্ত হয়ে গেছে আশফিয়াকে দেখে। তখন দরজা খুলে প্রথমেই আশফিয়াকে দেখে বিস্মিত হয় নাহিদা। ভীষণ আহত চোখে ক্লান্ত দৃষ্টিটা টেনে এনে ফেলে তানজিমের মুখে। তানজিম সেই চাহনির দিকে তাকাতে পারেনি। এড়াতেও বেশ কষ্ট হয়েছে। তানজিমের নিম্নগামী মুখটা দেখে আর কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি আশফিয়া। তানজিমের হাত থেকে লাগেজটা কেঁড়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হতেই সামনে এসে দাঁড়ান ইয়াসমিন। ততক্ষণে নাহিদা লক্ষ্য করে, বাকি ফ্ল্যাটের কিছু মানুষ দরজা থেকেই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়ে সে। গুঞ্জন শুনে নাহিদা এবং তানজিম বুঝতে পারে, এরমধ্যেই আশফিয়ার ব্যাপারটা ছড়িয়ে গেছে পুরো বিল্ডিং-এ। আর ছড়ানোর দায়িত্ব যে ইয়াসমিন নিয়েছিল তা ভালোই টের পায় তানজিম।
ইয়াসমিন আশফিয়াকে দেখিয়ে নাহিদার উদ্দেশ্য বলেন, ‘ও কে?’
নাহিদা চুপ করে থাকে। তানজিম বলে, ‘এতে আপনাদের এত আগ্রহ কেন?’
ইয়াসমিন বাঁকা হাসি হেসে বলেন, ‘আমার বিল্ডিং-এ কোনো অন্যায় হতে দেবো না আমি। নাহিদার অনুপস্থতিতে তোমার ঘরে আরেক নারী—এটা কীভাবে স্বাভাবিক?’
চারপাশের গুঞ্জন আরও বেশি হয়। তানজিমের নিরুপায় হয়ে থাকা মুখটা নাহিদাকে কষ্ট দিতে শুরু করে। স্বামীর সন্মান বাঁচানোর তাগিদ অনুভব করে সব রাগ, অভিমান একপাশে রেখে সে বলে, ‘আশফিয়া আমার ছোটবেলার বান্ধবী আন্টি। ওর স্বামীর সাথে ওর একটু মনমালিন্য হয়েছে বলে এখানে এসেছে।’
‘তোমার অনুপস্থিতিতে?’
‘আমিই আসতে বলেছি।’
তানজিম শুকনো ঢোক গিলে নাহিদার হাত থেকে লাগেজ নিয়ে নেয়। মাথা নিচু করেই বলে ওঠে, ‘নাহিদা, ভেতরে চলো।’
ইয়াসমিন তখনও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ফ্ল্যাটে ঢুকে সদর দরজা লাগিয়ে দেয় নাহিদা। দরজার কাছেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সে। তানজিমের জন্য গলে যাওয়া মনটা আবার শক্ত হয়েছে। নাহিদার রাগান্বিত মুখ দেখে তানজিমও কিছু বলার সাহস পায় না। তরতর করে নিজের ঘরে চলে আসে নাহিদা। পেছন পেছন তানজিম। সেই সসয় থেকে এখন পর্যন্ত নাহিদা চুপচাপ। একটা কথাও বলেনি। মুখ বুজে সেই যে কম্বলের নিচে ঢুকেছে, বেরোনোর আর পাত্তা নেই। দুপুরের খাবার আর রাতের খাবার কারোরই পেটে পড়েনি। ক্ষুধা নিয়েই পাশাপাশি শুয়ে আছে তানজিম আর নাহিদা।
নাহিদা পাশ ফিরে শুয়ে আছে। তানজিম তার দিকে ফিরে আছে। চুল দিয়ে ইচ্ছাকৃত ঢাকা মুখটা এভাবে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। রাত এখনও গভীর হয়নি। আর কিছু পরে বারোটা বাজবে।
তানজিম নাহিদার চুলগুলো সরাতে যেতেই নাহিদা রেগে বলল, ‘বিরক্ত করো না।’
নাহিদা জেগে আছে দেখে তানজিম কাছে সরে গেল। বলল, ‘এখনও জেগে আছ?’
‘কেন? সমস্যা হচ্ছে তোমার? আমি ঘুমালে আশফিয়ার কাছে যেতে বুঝি?’
তানজিম ক্ষীণ স্বরে বলল শুধু, ‘নাহিদা!’
‘সারা বিল্ডিং সত্যিটা জেনে গেছে। শুধু একটু ভুল ভাবছে যে, আশফিয়া তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী। যদি পুরোপুরি সত্যিটা জানত, তুমি বিয়ে না করেই একটা মেয়ের এমন অবস্থা করেছ, তবে তক্ষুনি এই বিল্ডিং থেকে বের করে দিত।’
‘কী বলছো এসব?’
‘ভুল কিছু বলছি বলে তো মনে হচ্ছে না। এ কারণেই ওই বাড়ি থেকে আমাকে এখানে নিয়ে এলে? আমি ওখানে যেতে না যেতেই আশফিয়াকে জায়গা দিয়ে দিয়েছ? তোমরা পুরুষরা এমন কেন?’
‘তুমি ভুল ভাবছ। আশফিয়া আমাকে ধমকাচ্ছিল যে ও এখানে না থাকতে পেলে আমার নামে নির্যাতনের কেস করবে। তাই কোনো উপায় পাইনি আমি।’
তানজিমের দিকে মুখ ফেরালো নাহিদা। নাহিদার রক্তবর্ণ মুখ দেখে আঁতকে উঠল তানজিম। নাহিদা দ্বিগুণ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, ‘তুমি ভুল করেছ। আর তাই ভয় পেয়েছ। এমনটা কী করে করতে পারলে তুমি? আমার ভালোবাসায় এতটা খামতি ছিল?’ নাহিদার ঝাঁঝালো কণ্ঠ কান্নায় আটকে গেল।
তানজিম নাহিদাকে জড়িয়ে বলল, ‘আমি খুব ভালোবাসি তোমায়।’
নাহিদা ঝটকে হাত সরিয়ে দিল, ‘তুমি কী দূরে থাকবে নাকি আমি এ ঘর থেকে বেরিয়ে যাব?’
আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে ফেলল তানজিম৷ চিৎ হয়ে নিস্তেজ সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে থাকল। শুনতে পেল নাহিদার চাপা কান্না। তানজিম’ই শুধু মন খুলে কাঁদতে পারছে না। এতে কষ্ট বাড়ছে, সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে।
তানজিমের ঘরের দরজা থেকে কান সরালো আশফিয়া। দম্পতির মাঝে যে ভালোই মন খুনাখুনি হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে। নিজের পেটের দিকে তাকাল সে। এই সন্তানটার জন্য দম্পতির মন খুনাখুনির খুব দরকার। নইলে এই সন্তানের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে কী করে? সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেছে। আর মাত্র পাঁচ মাস। তারপর এই সন্তান ভূমিষ্ট হবে। তানজিমের কাছে সন্তানের অধিকার প্রতিষ্ঠার পর এখানে না থাকতে পারলেও আফসোস নেই আশফিয়ার।
ঘরে ঢুকে ফোনটা হাতে নিতেই কল এলো। আশফিয়া হেসে কল রিসিভ করল, ‘কেমন আছ?’
ইফতেখারের গলা শোনা গেল, ‘ভালো আছি। ওদিকের কী খবর?’
তেরো মিনিটের কথা শেষে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ল আশফিয়া। অনেক রাত হয়ে গেছে। এতক্ষণ জেগে থাকা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর ভেবে চোখ বুজলো সে। এমন সময় দরজায় হালকা ঠকঠক আওয়াজ শোনা গেল। একটু বিরক্ত হয়ে উঠল সে। দরজা খুলল। দেখল, নাহিদা দাঁড়িয়ে। শরীরে শীতের পোশাক নেই। হালকা আলোয় তার কাঁপুনি টের পেল আশফিয়া।
‘তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
আশফিয়া দরজা ছেড়ে দাঁড়াল, ‘ভেতরে এসো।’
‘ইচ্ছে নেই।’ চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করল নাহিদা, ‘তুমি’ই কী নাহার?’
সময় নিল আশফিয়া। তারপর ছোট্ট করে উত্তর দিল, ‘হুঁ।’
‘কলেজে তানজিম তোমাকেই পছন্দ করত?’
‘হুঁ।’ আবারও ছোট্ট উত্তর আশফিয়ার।
আহত হয়ে হাসল নাহিদা, ‘ওহ্। তুমি নাকি কখনও ওকে পছন্দ করোনি, তাহলে এসব কীভাবে হলো? তাছাড়া তুমি নাকি বিবাহিতা?’
‘না তো। আমি বিবাহিতা নই। আর… তানজিম হয়তো তোমাকে এসব বলতে চায়নি, কারণ তুমি কষ্ট পাবে।’
‘তানজিম তো পুরুষ। সুযোগ সন্ধানী। কিন্তু তুমি?’
‘আমিও সেদিন—’ আর কিছু বলার পূর্বেই একটা চড় এসে আশফিয়ার গালে পড়ল। আশফিয়া চকিত তাকাল।
নাহিদা দাঁত চিবিয়ে বলল, ‘এটা তোমার পাওনা ছিল। তোমার মতো মেয়েদের কারণেই অন্য মেয়েদের সংসার টেকে না। ছিঃ!’
ঠকঠক শব্দ তুলে চলে গেল নাহিদা। আশফিয়া বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল ভ্রু কুঞ্চিত করে।
__________
নাহিদার দিন রাত যেন সমান হয়ে গেছে। মাথায় ঘুরঘুর করছে বাস্তব-অবাস্তব চিন্তা। ক্ষুধার তাড়নায় খুব সকালে উঠে পড়েছে সে। রান্নাঘরে এসে নাস্তা তৈরি করছে। গ্রামে একটা কথার চল আছে, ‘শোকের চেয়ে ভোগ বেশি’ (এখানে ভোগ এর অর্থ ক্ষুধা)। তাই হাজার কষ্টেও ক্ষুধা তাকে রান্নাঘরে এনে ফেলেছে। এমতাবস্থায় নিজেকে ভেকো মনে হচ্ছে নাহিদার। পাগল বললেও ভুল হবে না। নাস্তা তৈরি শেষে রান্নাঘরেই বসে খাবার শেষ করল নাহিদা। বাকিটুকু ঢেকে রেখে দিল। তানজিম এখনও ঘুমে বিভোর। চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে তার। অন্যায় করে এখন চিন্তা হচ্ছে? ঘরে ঢুকতে চেয়েও ঢুকল না নাহিদা। মুখ ফিরিয়ে নিল। দরজার কাছ থেকে লাগেজটা নিঃশব্দে বৈঠকঘরে বের করে আনলো সে। এই জায়গায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।
নাহিদা সদর দরজা খুলল। দরজা খুলতেই ইয়াসমিনকে দেখে সে বিরক্ত হলো। রাগও হলো কিছুটা।
ইয়াসমিন একগাল হেসে বললেন, ‘কোথাও বেরোচ্ছিস?’
‘না আন্টি। ভেতরে আসুন।’ হেসে বিরক্তি ঢাকল নাহিদা।
‘আমাকে চিকেন রোলের রেসিপি শেখাতে চেয়েছিলি মনে আছে?’
‘আজকে?’
‘তো কবে?’ বৈঠকঘরে ঢুকলেন ইয়াসমিন। নাহিদার লাগেজ দেখে বললেন, ‘আজ আবার কোথায় যাচ্ছিস? কালকেই না বাবার বাড়ি থেকে ফিরলি?’
‘কোথায় যাব? কালকে এটা ঘরেই ঢোকানো হয়নি।’ লাগেজটা ভেতরে রেখে দিল নাহিদা।
‘ও আচ্ছা। আয় তো, দ্রুত রেসিপিটা শেখা আমায়।’
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নাহিদা মুখ বেজার করল। জীবনে টানাপোড়েন উঠে গিয়েছে আর ইনি এসেছেন চিকেন রোলের রেসিপি শিখতে! কিচ্ছু করার নেই। ইয়াসমিনকে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না ভেবে হেসে হেসে রান্নাঘরে গেল নাহিদা। ইয়াসমিন পাশে দাঁড়ালেন। একবার এসে নাহিদার হাতের চিকেন রোল খেয়ে ইয়াসমিন সেই স্বাদ আজও ভুলতে পারেননি। তাই এই রেসিপি শেখায় আগ্রহ তার।
সম্পূর্ণ রেসিপি শিখে চলে গেলেন ইয়াসমিন। নাহিদা একা হয়ে গেল। ইয়াসমিনকে রান্না শেখানোর চক্করে চিন্তাগুলো কিছুক্ষণের জন্য একটু কম হয়েছিল। এখন আবারও মাথায় হাতুড়ি পেটানো শুরু হলো। ফোনটা হাতে নিয়ে মা’কে কল করল সে। কয়েকবার রিং হতেই জাফরিন ফোন তুললেন। গত রাতে তাকে সবকিছু বলেছে নাহিদা। জাফরিন শুধু ধৈর্য ধরে থাকতে বলছেন। বিরক্তিকর!
‘মা, আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।’
জাফরিন চাপা গলায় বললেন, ‘ওটা তোর সংসার। দম বন্ধ হয়ে এলে হবে?’
‘কীসের সংসার মা? এটাকে সংসার বলে?’
‘হ্যাঁ বলে। জীবনে এমন অনেক কিছু হবে। তাই বলে স্বামী, সংসার ছেড়ে তুই চলে আসবি? দোষটা কী তোর?’ নাহিদা যে ফের রেগে যাবে তা বুঝে জাফরিন বললেন, ‘রান্না করছি। বিকেলে কল করব। আর শোন, শুধু ওই মেয়েটার দোষ দেখবি না, তানজিমেরও দোষ আছে।’
কল কেটে উদাশ ভঙিতে বসে থাকল নাহিদা। জাফরিন নিশ্চয় অন্যকিছু দিয়ে তৈরি। অন্য মায়েরা হলে বলত, ‘মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দে। তানজিমের কোনো দোষ নেই’। সত্যি বলতে নিজের দোষ, প্রিয়জনদের দোষ কখনও চোখে পড়ে না। এই যেমন নাহিদার শুধু আশফিয়ার দোষটাই চোখে পড়ছে। তানজিমের দোষটা তেমন চোখে পড়ছে না। আশফিয়ার দোষে সে একটা চড় দিল, এটা তো তানজিমেরও পাওনা ছিল! দীর্ঘশ্বাস ফেলল নাহিদা। সে জাফরিনের মতো না—অন্য মেয়েদের মতো তৈরি সে।
স্বামীর ভুল চোখে পড়ে না মেয়েদের! চোখে পড়লেও এড়িয়ে যাওয়ার প্রচুর ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয় তারা।
__________
গত কয়েকদিন ধরে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলেছে নাহিদা। কিন্তু ইয়াসমিনের জন্য প্রতিবার ব্যর্থ সে। ইয়াসমিন বুঝতে পেরেছে নাহিদা চলে যেতে চায়। এর কারণের মধ্যে যে আশফিয়াও সামিল তাও তিনি জানেন। বাইরে মুখ দেখানোর পথ খোলা রাখতেই তানজিমকে রেখে বেরিয়ে যাওয়ার ভাবনা প্রত্যাহার করেছে নাহিদা। এখন কোনোমতে চিন্তাগুলোকে সঙ্গী করে বেঁচে আছে এই যা! তানজিমের সাথেও সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। নাহিদাও ধীরে ধীরে আরও একা হয়ে যাচ্ছে। এখন ছাদেই বেশিরভাগ সময় কাটে তার। মাগরিবের আযান পড়তেই ছাদে শুকোতে দেওয়া কাপড়গুলো তুলতে লাগল নাহিদা। তখন’ই ছাদে উঠল আশফিয়া। ওড়নার ওপর থেকে চিকন ছিপছিপে মেয়েটার পেটটা দেখা যাচ্ছে। পাঁচ মাস পূর্ণ হয়েছে—হিসাব আছে নাহিদার কাছে। কেন হিসাবটা করে রাখা, জানা নেই নাহিদার।
আশফিয়াকে দেখে ছাদ থেকে নেমে গেল নাহিদা।
আশফিয়া মুখ মলিন করে নিজের কাপড়গুলো তুলল। ছোটবেলা থেকে মা-বাবা থেকেও নেই তার। তাই প্রচণ্ডরকম বখে যাওয়া ছিল সে। কলেজে কত প্রেম করেছে তা নিজের কাছেই হিসাব নেই। কিন্তু কবে যে সে তানজিমকে পছন্দ করে ফেলেছিল, তার নির্দিষ্ট সময় অজানা।
আপনমনে কাপড়গুলো তুলে ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল আশফিয়া। সতেরো তলায় লিফটের ব্যবস্থা নেই। তাই ষোলো তলায় গিয়ে লিফটে করে চৌদ্দ তলায় নামতে হয় তাকে। খুব সাবধানে সিঁড়িতে এক একটা পা ফেলছিল আশফিয়া। আর মাত্র আটটি ধাপ। বিপত্তি ঘটল তখন’ই। পা মচকে গিয়ে পড়ে গেল সে! চিৎকার করে উঠল—হয়তো বাচ্চাটা নষ্ট হওয়ার ভয়ে। একজন নারী যেমন’ই হোক না কেন, সন্তান তার কাছে মহামূল্যবান রত্ন। সে কোনোভাবেই তাকে হারাতে চাইবে না। সিঁড়ি থেকে মেঝেতে পড়ে জ্ঞান হারালো আশফিয়া। নাহিদা লিফটের অপেক্ষা করছিল। তখন’ই চিৎকার শুনে দৌঁড়ে আশফিয়ার কাছে এলো, মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিল। আশফিয়ার কপালের কোণ থেকে রক্ত পড়ছে।
নাহিদা চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন কেউ।’
এই মহূর্তে মানুষ্যত্ববোধ ছাড়া হিংসা, রাগ, ঘৃণা কোনোটাই কাজ করছে না নাহিদার। শত হোক, আশফিয়া একজন মা তো! আশপাশ ভরে গেছে মানুষে। ভীড়ের মাঝে উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানজিম। চিন্তিত মুখে তার ভ্রান্ত হাসির ছাপ!
(চলবে)