#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫৩(বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
“নাম্বার শেখ আমাজাদের নামে করা । অথচ কথা বলেন আরিফ জামান যদিও ভয়েজ চেন্জার দিয়ে। যদিও আপনাদের দুজনের মধ্যে আমি প্রথমে শেখ আমজাদকেই ভেবেছিলাম। তবে মগজের ধোলাই করে কললিস্ট চেক করতেই ধরা পরে গেলেন দ্য গ্ৰেট নিশাচর। মানে দুইজনই এই সিম ব্যবহার করতেন আর ভয়েজ চেঞ্জার করেছেন যেই কথা বলুক না কেন সবার মনে হবে একজনই করেছে। মানে নিশাচর সবার কাছে একজনই কিন্তু মুলত নিশাচর একটা না দু’টো। দুজনেরই বাইরের দুনিয়ার কাছে আলাদা পরিচয় আছে। দুজনে সময় মতো একইসাথে করতে পারবেন না বলে এটা করেছেন। আর দুজন যেহেতু একসাথে রাজা হতে পারে না। তাই একজনের নাম দিয়ে রাজা হয়েছেন আপনাদের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। তো এখন বলুন ফেলুন তো শেখ আমজাদ ও আরিফ জামান থেকে নিশাচর হওয়ার গল্প।
মেহবিনের কথায় শেখ আমজাদ বলতে লাগলেন,,
“যেহেতু সব জেনেই ফেলেছো তাহলে লুকিয়ে কি লাভ? আমি শেখ বংশের ছেলে হলেও আমার বাবা একজন কৃষক ছিল। তার পড়াশোনা ভালো লাগতো না তাই তার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল না। অথচ কাকা শেখ শাহেনশাহ ছিলেন শিক্ষিত মানুষ তার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে দাদা উনাকে ঢাকায় পরিয়ে শিক্ষিত করেছিলেন। কিন্তু কাকা যখন শিক্ষিত হয়ে প্রথমে চাকরি আর পরে ব্যবসা করে অনেক আয় উন্নতি করলো। তখন দাদা মারা গেল দাদি তো আগেই মারা গিয়েছিলেন। আমার বাবা কৃষক দেখে আমাদের সাথে থাকা সেটা কাকির পছন্দ ছিল না। তাই তিনি কাকাকে আলাদা হতে বলেন আর কাকাও আলাদা হয়ে যায়। এই শেখ বাড়িটা দাদার বাবা বানিয়েছিলেন। সে জমিদার ছিলেন। এরপর একা দাদা ছিলেন সেই সুবাদে আমার বাবা ও কাকা এই বাড়িটার সমান ভাগিদার। বাড়ি আলাদা হয়ে গেল। তবে যেহেতু কাকারা বেশি টাকা ইনকাম করতো। তাই তারা ভালোমন্দ খেতো। আর আমার বাবা কৃষক ছিল সে রকম আয় রোজগার আসতো না তাই আমরা ভালো খেতেও পেতাম না। এগুলো দেখে আমার খুব রাগ হতো এক বাড়িতে আছি তবুও কতোটা বৈসাদৃশ্য। শাহনাওয়াজ কতোকিছু নতুন দামি দামি জিনিস পেত আমি শুধু দাড়িয়ে দেখতাম। একদিন আমি ওর একটা জিনিস দিয়ে খেলার সময় ওটা ভেঙে যায় তাই কাকি আমাকে ভিশন মারে আর বকাবাজি করে। আর বাবা মাও আমাকে মারে। তাই মনে মনে পন করি আমিও একদিন অনেক টাকার মালিক হবো। বাবা বুঝতে পেরেছিলেন ওদের এইসব ভালো সবকিছু আমার সহ্য হচ্ছে না। তাই বাবা আরেকটা বাড়ি ছিল ওখানে উঠে যায় ওটা টিনের ছিল। আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। ওদের প্রতি রাগ আরো বেড়ে গেল।কয়েকদিন বাদেই গ্ৰামে কলেরা এলো আর সেইখানে কাকি মারা যায় কি যে খুশি হয়েছিলাম তা বোঝাতে পারবো না। কিন্তু তার পরের দিন বাবা মা দু’জনেই কলেরায় মারা গেল । তখন আমি এতিম আমার কথা শুনে শেখ শাহেনশাহ আমাকে তার কাছে নিয়ে এলো। আমি আর শাহ দুজন একসাথেই বড় হতে লাগলাম মিথ্যা বলবো না কাকা কখনো আমাদের মাঝে কখনো বড় বৈসাদৃশ্য করেনি। তবুও অনেক বিষয়ে তিনি শাহের ব্যাপারে বেশি করতেন যা আমার পছন্দ হতো না। সবকিছুর মধ্যে ছোটবেলায় কাকির কথা আর মার গুলো আমার ভেতর বড় ক্ষত সৃষ্টি করেছে। শাহ কে দেখলেই আমার রাগ হতো ওর জন্যই আমি কাকির থেকে মার খেয়েছিলাম আর বাবা মায়ের থেকেও মার খেয়েছিলাম। আমি আর শাহ দু’জনেই মেডিকেল এ ভর্তি হই।যখন কলেজে পড়ি আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করতাম কিন্তু সেই মেয়েটা শাহ কে পছন্দ করতো। তুমি জানো সেটা কে?সেটা হলো তোমার মা। শাহ ও মেয়েটাকে পছন্দ করতো। ওদের দেখি বুঝতে পারছিলাম ওরা দুজন দুজনকে চায় যদি এভাবেই হতে থাকে তাহলে দুজনের বিয়ে নিশ্চিত। তাই আমিই গিয়ে শাহেনশাহ কে বলি ছেলের বিয়ে দিতে। আমার কথা শুনেই শেখ শাহেনশাহ আরিফার সাথে বিয়ে ঠিক করেন শাহের মতামত না নিয়ে। আমি ভেবেছিলাম মেহের কে আমি পেয়ে যাবো। এই জন্য মেহেরের বাবার কাছে প্রস্তাব ও দিয়েছিলাম কিন্তু মেহের বিয়ে করতে রাজি নয়। তাই বিয়ে হলো না। এদিকে পড়াশোনা শেষ এই জন্য কাকা আমার জন্য মেয়ে দেখলেন ওনার কাছে ভালো থাকার জন্য আমি আর না করতে পারলাম না। এদিকে মেহের ও বিয়ে করবে না। আমার বিয়ে হয়ে গেল।তখন আরিফ জামানের বাবা মারা যায় আরিফা জামান ইনিয়ে বিনিয়ে তার ভাইকে এই বাড়িতে আনেন। মেহের ও আমার আর শাহের সাথে এস.এপ. হাসপাতালে যোগ দিল। আমি মেহের কে পেতে চাইতাম তাই একদিন সুযোগ বুঝে ওর কেবিনে গেলাম সেদিন মেহের আমায় থাপ্পড় মারলো। আরব দল এরপর ওর দিকে তাকালে কাকাকে বলে দেবে। কাকার ভয়ে কিছু বললাম না। তার কয়েক বছর চলে গেল শাহের বাচ্চা হলো না তখন শাহের বিয়ের কথা বলল আর মেহেরের সাথে হয়েই গেল যা আমার মনে রাগ ঘৃনা দুটোই হচ্ছিল। আমি এতো কিছু করেও পেলাম না অথচ শাহ একটা বিয়ে করেও ওকে পেয়ে গেল। শাহ আর কাকার ওপর ভিশন রাগ হলো। ওকে কি করে শেষ করবো সেটাই ভাবছিলাম। তবে মনে মনে একটা ভাবলাম টাকা আর বাবা থাকলে পৃথিবীতে সব সম্ভব।
এইটুকু শেষ করে তিনি থামলেন তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“ঠিক বলেছেন শেখ আমজাদ টাকা আর বাবা থাকলে সব সম্ভব। তারপর?
“আমি টাকা কামানোর জন্য রাস্তা খুঁজতে লাগলাম। অন্য একটা হাসপাতালে আমার সিনিয়র অপারেশন এর জন্য আমায় ওনার সাথে নিলেন। কিন্তু আমি জানতাম না অবৈধভাবে উনি কারো হার্ট পেশেন্ট এর গায়ে দিচ্ছে। পরে আমি জানতে পারি আমি ওনার সাথে কথা বলতে গেলেই উনি বিষয়টা জানান। আর বলেন এই কথা কাউকে জানালে আমাকে ফাঁসিয়ে দেবেন। উনি অফার দেন আমি যদি এভাবে কাজ করি তাহলে আমি টাকা পাবো। টাকার জন্য আমি এই লাইনে আসি। আর তার কিছুদিন পরেই জানতে পারি অর্গানের ব্যবসায় আরিফ ও রয়েছে। এরপর থেকেই আমাদের একটা বড় চক্র এই অবৈধভাবে অর্গানের ব্যবসায় কাজ করে। আমরা দুজন যেহেতু দুজন কে চিনি খুব ভালো কাজের জন্য আমরা বসের নজরে পরি। তিনি অনেক প্রাইভেট জায়গায় আমাদের নিয়ে যেতেন।সবার সাথে পরিচিত হলাম।অনেক টাকা আয় হচ্ছিল। মেহের মরার পর শেখ শাহনাওয়াজ ডাক্তারি ছেড়ে দিল। আমি এস এস হাসপাতালের অনেক পেশেন্ট কে ভুল ওষুধ দিয়ে অসুস্থ করতাম তারা কোমায় চলে যেত গ্ৰামের ভেতর হওয়ায় তারা বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে পারতো না এই জন্য কাজটা সহজ হলো। আমি আর আরিফ প্ল্যান করলাম যেহেতু আমরা দুজনেই সবকিছু জানি তাহলে আমরাই ব্যবসা করবো। দুজনে একসাথে হাত মেলালাম তবে দুজন তো রাজা হতে পারে না। তাছাড়া কেউ যাতে কোনদিন আমাদের ধরতে না পারে তাই দুজন এক হলাম। হয়ে উঠলাম সবার ট্রাস নাম দিলাম নিশাচর। যার মাধ্যমে কাজ শিখলাম তাঁকেও পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে গেলাম। তার কিছুদিন পর সেই বস ধরা পড়লো যা আমাদের উচ্চ চূড়ায় পৌঁছিয়ে দিল। বসের সাথে থাকা সব লোকদের আমরা কিনে নিলাম। সাথে আরো মানুষ যুক্ত করলাম। কিছু জন আমাদের গ্ৰামের হাসপাতাল এর ওপর অর্গান পাচারের সন্দেহ করছিল তাই ওখান থেকে শাহেনশাহ কে বলে এস.এস. হাসপাতাল ঢাকায় শিফট করলাম। যাতে আমরা সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ পরি। সরকারি হাসপাতাল হলো বাবুলকে রাখলাম কাজে।ও ভুল ওষুধ দিয়ে আমাদের হাসপাতালে লোক পাঠাতো। হাসপাতাল থেকে আমরাই মেরে ফেলতাম আর অর্গান নিতাম। আমাদের গ্ৰামে যতো মেয়ের ধর্ষন হতো সব আমরা করাতাম।শাহ কে আমিই বলেছিলাম গোসলের জন্য লোক রেখে দিতে সে তাই করলো আমরা তাদের টাকা খায়িয়ে নিজেদের দলে নিলাম। নুপুরের বাবা সহ আমরা অনেক হাসপাতাল আর ডক্টর কিনে নিয়েছিলাম। তোমার আগে যে ছিল সে ডক্টর বাবুল এর সাথে আমাকে দেখে নিয়েছিল তাই তাকে মরতে হলো। এভাবে আরো কতোজন মরেছে আমাদের কাজে তার ইয়ত্তা নেই।
সব শুনে মেহবিনের হাত শক্ত হয়ে গেল। ইচ্ছে তো করছে কুঁচি কুঁচি করে তাদের কেটে ফেলতে। কিন্তু এই মুহূর্তে মাথা গরম করা চলবে না। ও শান্ত স্বরে বলল,,
“শেখ আমজাদ এর থেকে তো সব শোনা হলো। তো আরিফ জামান আপনি বলুন আমার মা কি ক্ষতি করেছিল যে তাকে এই দুনিয়া ছাড়তে হলো আর আমিই বা আপনাদের কি ক্ষতি করেছিলাম যে আমাকেও দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন?
আরিফ জামান বললেন,,
“আমার বোনের তোমার মাকে আর তোমাকে সহ্য হতো না। আরিফা শাহ কে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু একটা সন্তানের আশায় তোমার মাকে বিয়ে করলেন। তবে তোমার বাবা আমার বোনকে ফেলে তাকেই বেশি সময় দিতো। আমার বোনের চোখের সামনে তোমার মাকে নিয়ে রাত কাটাতেন সেটা ওর সহ্য হয় নি। আর তুমি বড্ড দূরন্ত আর তোমার মায়ের সবথেকে প্রিয় ছিলে বলে তোমাকেও তার সহ্য হতো না। আমার কাছে আবদার করে তাকে সরিয়ে ফেলতে তাই এসব করেছি? আর ওকে বলেছি নিশাচর নামের কেউ আছে যে এসব কাজ খুব ভালো করে তার সাথে কথা বলে তোমাদের খতম করে ফেলবো। আর তোমাকেও করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি কুসুমের হাত থেকে পালিয়ে যাও।
“তারমানে আরিফা জামান জানেন না নিশাচর কে?”
‘না!”
“ওহ আচ্ছা তো এখানে শেখ শাহেনশাহ কিভাবে সব জানলেন উনিও তো জানতেন?”
“আমি আর আরিফা এই বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম উনি বাইরে থেকে সব শুনেন। হুট করে উনি ঘরে ঢুকে আসেন। আরিফা অনেক কান্নাকাটি করে আর বলে তিনি মেহের কে এতো সুখী দেখতে পারছেন না। তাছাড়া ওনারা তো স্বার্থের জন্য বিয়ে দিয়েছিলেন। এখন তো ওনার ওয়ারিস আছে তাহলে মেহের কে রেখে কি লাভ। তাছাড়া মেহেরের মেয়ে মানে তুমি কোন কথা শুনতে চাওনা। তোমাকে রেখেও কি লাভ। আরবাজ ওয়ারিস তাই তাকে কিছু করা যাবে না। মিশু আরিফার কথা শুনে তাই সে থাকলেও আরিফার ক্ষতি নেই। সব শুনে তিনি বলেছিলেন না মরতে তবে আমরা শুনি নি। আরিফা আরো অনেক কিছু বোঝায় এরপর উনি আর কিছু বলেন নি।
মেহবিন সব শুনে শান্ত স্বরে বলল,,
“এখানে তো শেখ আমজাদ আপনিও ছিলেন আপনি তো আমার মাকে ভালোবাসতেন। তাহলে কি হয়েছিল আপনার।আপনি ভোগ করতে পারেন নি বলে তাকে আপনার সহ্য হতো না তাইনা এসবে ছিলেন?”
শেখ আমজাদ বলল,,
“হ্যা এর জন্য আমি ওকে ভোগ করতে পারি নি তাই। ও যখন আমার না তাহলে কারো না। তাছাড়া ও আমাকে থাপ্পর মেরেছিল যা আমি আজ ও ভুলতে পারি নি। তাছাড়া ওর পাশে আমার শাহনাওয়াজ কে সহ্য হতো না। তাই করেছি আমার তো ইচ্ছে হতো শাহকে মেরে দিই। কিন্তু ওকে মারতে পারতাম না আমি কিভাবে যেন বেঁচে যেত। তুমি জানো কয়েকবছর আগেও ওর গাড়ি একদম ট্রাক দিয়ে পিষে ফেলেছিলাম তবুও মরেনি। সাতদিন খবর নাই তারপর দেখি কে যেন ফোন করে বলল হাসপাতালে। শালার কই মাছের জান। এতো কিছু করি তবুও মরে না।
কথাটা বলতেই মেহবিন একটা সুইচ টিপ দিল সাথে সাথে কারেন্ট খেল। তা দেখে পার্টনার হেঁসে ফেললো। মেহবিন তার দিকে তাকিয়ে আবার শেখ আমজাদের দিকে তাকালো। আর বলল,,
‘বুঝলাম এখন বলুন অনুভব কে কেন মারা হলো? মিশুকে কেন পাগল করা হলো?
“ও আমাদের বিষয়ে সব জেনে ফেলেছিল তাই। মিশু ও জেনেছিল ওদের বাড়ির কেউ ওর মায়ের পেছনে আছে। তাই যাতে ও এই বিষয়ে কখনো কারো সামনে মুখ না খুলতে পারে এই জন্য পাগল করে রেখেছি।”
মেহবিন বলল,,
‘ বাপরে বাপ এই কেউ চকলেট আনো। এরা এমন সহজভাবে সব বলছে মনে হচ্ছে এগুলো করা কোন ব্যাপারই না।”
মেহবিনের কথা শুনে আরিফ জামান বলল,,
“তোমাকেও দেখে মনে তুমি আগে থেকেই সব কিছু জানতে? তবে এতো কিছুর পরেও এটা ভুলে যেও না। শাহ কিন্তু তোমায় খুঁজে নি। তোমার মায়ের কারন হিসেবে কিন্তু তোমাকেই দায়ী করে। তাছাড়া তাজেল নামের বাচ্চাটার এই হাল কিন্তু তোমার জন্যই এটা ভুলো না। তোমার জন্য বাচ্চাটা তার বাবা হাড়িয়েছে।
মেহবিন কিছুই বললো না শুধু মুচকি হাসলো। আর বলল,,
“তোরা তো বলদ দেখছি। দুনিয়াতে কি সব মানুষ তোদের মতো পশু নাকি যে তাদের দ্বারা কারো খারাপ হবে অথচ তাদের কিছুই যায় আসবে না।”
‘মানে?”
“মানে হলো এই নেত্রীর এক্সিডেন্ট তোদের জন্য হয় নি। একজন ট্রাক চালকের গাড়ি ব্রেকফেল হয়েছিল তাই ওটা হয়েছে। এই জন্য গাড়ি চালক ও আরো সামনে গিয়ে এক্সিডেন্ট করেছিল তাই একটু সুস্থ হতেই চারদিন পর এসে নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে গেছে এবং দশ লাখ টাকাও দিয়ে গেছে তাজেলের বাবা মারা যাওয়ার জন্য। আমাকে অনুশোচনায় দগ্ধ হতে তোদের খুব দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আফসোস পারলাম না তোদের ইচ্ছে পূরণ করতে।”
তখন একজন দশটার মতো চকলেট এনে রাখলো। মেহবিন একটা হাতে নিয়ে বলল,,
“পার্টনার হাঁপিয়ে উঠেছেন নিশ্চয়ই! নিন একটা চকলেট খান।”
পার্টনার চকলেট নিল ছিঁড়ে মাস্ক টা সরালো। পার্টনারের চেহারা দেখে শেখ আমজাদ ও আরিফ জামানের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। দুজনেই একসাথে বলল,,
“শাহনাওয়াজ!”
মেহবিন আর শেখ শাহনাওয়াজ হেঁসে ফেললো। শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কি বললি আরিফ আমি মুসকান কে খুজিনি? তাহলে বলি কেউ হাঁড়িয়ে গেলে না তাকে খোঁজে মানুষ ।আমি তো মুসকান কে আমার চোখের আড়াল করি নি। তার প্রত্যেকটা খবর আমার কাছে পৌঁছে যেতো। আর আমি তাকে ঘৃনা নয় ভালোবাসি।”
“তুই! তুই! এখানে?”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘এই কেউ আরেকটু কারেন্ট খাওয়াও যদি তাহলে একটু বুদ্ধি খোলে।”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘আপনার হাতেই সুইচ টা?
“এখন তো আমি চকলেট খাবো তাই একটু বিজি। তাহলে চকলেট চিয়ার্স করে খাওয়া যাক পার্টনার।”
দুজনে চকলেট চিয়ার্স করে খেতে লাগলো। এদিকে এই দুই বাপ মেয়ে কে দেখে ওদের দুজনের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। চকলেট খাওয়া শেষ হলে মেহবিন বলল,,
“নিশ্চয়ই তোদের প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে এখানে উনি কেন? তাহলে শোন যেদিন রাতে আমার মাকে মারার কথা প্ল্যান করিছিলি সেদিন আরিফা জামানের কুসুমের সঙ্গে বলা সব কথা তিনি শুনে ফেলেন। আর এটাও বলেন যদি আমি বেঁচেও যাই তাহলে এই বাড়িতে আনলেও আমাকে মেরে ফেলবে। আর নিশাচর নামের কারো হাতে আমায় তুলে দেবে তারা আমার অর্গান নিয়ে নেবে। আর এখানে যা হয়েছে সব নাকি নিশাচরই করিয়েছে। কুসুম কে হায়ার করা থেকে মাকে বিষ খাইয়ে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেওয়া পর্যন্ত সব নাকি নিশাচর করেছে। আর নিশাচর এর নজর পরেছে আমার ওপর আমাকে সে কোনমতেই ছাড়বে না। আমার সবকিছু নাকি ডিল করে ফেলেছে নিশাচর। ততক্ষণে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি দৌড়ে বের হোন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে কোন হাসপাতালে তিনি জানতেন না। আমাদের ঢাকার বাড়ি থেকে যতোগুলো হাসপাতাল ছিল সব ক’টায় আমাদের খুজেন। খুঁজতে খুঁজতে আমাকে দেখেন রাস্তায়। নিশাচর এর কথা শুনে তিনি ভয় পেয়ে যান এই জন্য আমাকে ইচ্ছে করে হাড়িয়ে ফেলেন। তবে এরপর থেকে আমার ওপর নজর ও রাখেন। আমি যেন সেফলি ঐ বাড়িতে থাকি তাই পুলিশের মাধ্যমে মিস্টার আলমকে ভয় দেখালেন। যাতে আমাকে তার বাড়িতে রাখে।
এইটুকু বলে মেহবিন থেমে শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘কি ঠিক বললাম তো? এই গল্পটাই তো শুনিয়েছিলেন আমাকে।”
শেখ শাহনাওয়াজ মেয়ের দিকে তাকালেন তা মেহবিন উল্টো দিকে ঘুরে গেল। আর বলল,,
“অনেক হয়েছে এবার শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আর শেখ আমজাদ আপনাকে তো একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। আপনার ছেলের এই অবস্থার জন্য দায়ী কিন্তু আরিফ জামান?
~চলবে,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিনের কথায় শেখ আমজাদ চমকে উঠেন আর বলেন,
“মানে?”
“মানে হলো, উনি আপনার ছেলেকে একজন ধর্ষক বানিয়েছেন। উনি আপনার ছেলেকে এমন একটা ওষুধ দিতো যার কারনে সায়িদ নারী সঙ্গ ছাড়া থাকতে পারতো না। এবং রাতের অন্ধকারে হিংস্র পশুর মতো হয়ে উঠতো। আর ওর জন্য কতো মেয়েরা যে এ ধর্ষনের স্বীকার হয়েছে আপনি জানেন না। আর সেই মেয়েগুলোর আলাদাভাবে উনি অর্গান সেল করেন। আর এক সময় সায়িদ ওনার বিষয়ে জেনে গেলে। তখন উনি সায়িদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। শেষ বার নিশাচর হিসেবে তো উনিই আমার সাথে কথা বলেছিলেন। আর একটা গোপন খবর জানেন কি? আরিফ জামান এর কিন্তু আপনার বউয়ের ওপর নজর ছিল ফাঁক পায়নি তাই কিছু করতে পারেনি।
মেহবিনের কথায় শেখ আমজাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। কিন্তু আনফরচুনেটলি এখন আরিফ জামানের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। তা দেখে মেহবিন হাসলো। পর্দা উঠানোর আগে তাকে একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। যার কারনে তার ত্রিশ মিনিট পর কথা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তিনি চিৎকার অবশ্যই করতে পারবেন। আরিফ জামান চিৎকার করছে আর মাথা দিয়ে না না করছে। তবে তিনি সত্যি সত্যি সায়িদের সাথে এটা করেছিল। আর সত্যিই আমজাদের বউয়ের দিকে নজর ছিল। এমনিতে তো মেহবিনের মায়ের দিকেও ছিল । মেহবিন শেখ আমজাদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“কি শেখ আমজাদ এখন কি করতে ইচ্ছে করছে? হাজার হোক নিজের ছেলে আর ছেলেরা সবসময়ই বাবাদের কাছে প্রিয় হয়।”
“আমি খারাপ কাজ করেও সায়িদকে এসব থেকে দূরে রেখেছি। কিন্তু ও কি করে পারলো এমনটা করতে। ওকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারলে শান্তি লাগতো। আফসোস হয়তো পারবো না।”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“পারবি আমজাদ পারবি। আমরা দেব তোকে সুযোগ।”
মেহবিন বলল,,
“আপনি তো ডক্টর এতো দিন কতো মানুষের অর্গান বের করেছেন। আজ না হয় একটা একটা করে উনার শরীর থেকে সবকিছু বের করুন। মানে একটা চোখ, একটা কিডনি, পারলে দুই টা হাত ,দুইটা পা কেটে দিন আর হার্ট না হার্ট টা থাক ওটা নিয়ে বাঁচতে হবে তো। তবে হ্যা এসব কিন্তু কোন অবশ করার ইনজেকশন দিয়ে হবে না। এমনিই করতে হবে।”
মেহবিনের কথা শুনে শেখ আমজাদ আঁতকে উঠলেন। এরকমটা একটা মানুষের সাথে করলে বাঁচবে তো। মেহবিন বলল,,
“আরে ভয় পাবেন না আরিফ জামান মরবে না। সেই ব্যবস্থা আমি করবো।”
শেখ আমজাদের সামনে সব রাখা হলো। তিনি চোখ বুঝলো তখন সায়িদের মুখটা আর ওর অবস্থা মনে পড়লো। তিনি চিৎকার করে উঠলো। ছেলের ঐ অবস্থা কোন বাবাই সহ্য করতে পারবে না। তিনি এগিয়ে গেলেন ততক্ষণে মেহবিন এর লোক একটা টেবিলের ওপর আরিফ জামান কে শুয়িয়ে দিয়েছে আর টেবিলের সাথে হাত পা লোহার শেকলের মতো কিছু দিয়ে আটকে দিয়েছে। যদিও ওটা একটা সুইচের মাধ্যমে আটকানো ও খোলা হয়। যার মাধ্যমে আরিফ জামান কিছুই করতে পারছেন না। উনি মাথা দিয়ে না না করছে । শেখ আমজাদ প্রথমে কিডনি বের করলো আর আরিফ জামান গগন বিদারক চিৎকার করতে লাগলো। মেহবিন আর শেখ শাহনাওয়াজ সেদিকে শান্ত ভাবে দেখলেন। এরপর চোখ ও তুলে ফেলল। আরিফ জামান এর চেহারা দেখে আমজাদ ভয় পেল ওর আর সাহস হলো না। তখন হুট করেই আরিফ জামানের হাত পা খুলে গেল। আরিফ জামান হিংস্র পশুর মতো হয়ে উঠলো। সামনে যা পেল তাই দিয়েই শেখ আমজাদ কে ছুড়ে মারতে লাগলো। শেখ আমজাদ নিজেকে বাঁচাতে তার ওপর হামলা করলো। কারন তারা এখন যে রুমে আছে সেই রুমটা বন্ধ। আরিফ জামান ও কম নন সে ও একটা ছুরি নিয়ে শেখ আমজাদের কিডনি বরাবর ঢুকিয়ে দিল। তিনি অনেক জোরে চিৎকার করে উঠলো। এতোক্ষণ এগুলোই মেহবিন আর শেখ শাহনাওয়াজ আয়নায় বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন। মেহবিন বলল,,
“এরা নিজেকে বাঁচানোর জন্য একে অপরের সাথে লড়াই করছে। অথচ এতো দিন এতো গুলো মানুষ কে নির্ধিদ্বায় মেরে ফেলেছে। এই জন্যই বলে মানুষ বড্ড স্বার্থপর।”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“এভাবেও শাস্তি দেওয়া যায় হাত না দিয়েও!”
“সবসময় হাত দিয়ে শাস্তি দিতে পারলেই যে আপনি অনেক বড় কিছু একটা করে ফেললেন তেমনটা কিন্তু নয়। বুদ্ধি খাটিয়েও কিছু করতে হয় আল্লাহ তায়ালা এমনি এমনিতো আমাদের মস্তিষ্ক দেয় নি তাই না। মা বলেছে শাস্তি দেবে কিন্তু অন্যায়ভাবে নয়। এখানে আমি কোন অন্যায় দেখছি না। আমি শুধু সত্যি গুলো সামনে তুলে ধরেছি যা করার এরা নিজেরাই করছে। তবে আমি নিজের হাতে শাস্তি দিলে এরা নিশ্চয়ই মরে যেত। কিন্তু আমি তা চাইনা। আমি চাই তারা বাঁচুক কিন্তু প্রতিটা মুহূর্তে নিজের মৃত্যকামনা করুক। ঐ যে দেখেন শেখ আমজাদ আরিফ জামানের হাত কেটে ফেলেছে। আর আরিফ জামান শেখ আমজাদের পা। পুরো শরীরে জখম।এর থেকে পচন ধরবে আর দুজনে বেড রেস্ট থাকতে থাকতে এভাবেই দুজনে একদিন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবে।”
মেহবিন ভেতরে কিছু লোক পাঠালো তাদের থামিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। তাদের সরিয়ে ফেলা হলে। শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“এরপর?”
“মুখর শাহরিয়ার ওদের দুজনকে গ্ৰেফতার করবেন এবং রিভিল করবেন। প্রমান সব পৌঁছে গেছে মুখর শাহরিয়ার এর নিকট। কালকের ব্রেকিং নিউজ নিশাচর নামক চুরাবালিকে উড়িয়ে নিয়েছে কোন ঝড়। এদের দুজনের কোনকিছু নিয়ে কথাকাটাকাটি হয় এর পর হাতাহাতি এরপর খুনাখুনি। তখন মুখর শাহরিয়ার গিয়ে ওনাদের থামিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে।
“অতঃপর আপনাকে শুভেচ্ছা আপনি আপনার মনজিলে পৌঁছে সেটাকে জিতে গেছেন ।”
“আমার আর আপনার পার্টনারশিপ এখানেই ভেঙ্গে গেল শেখ শাহনাওয়াজ ওরফে চেয়ারম্যান সাহেব।”
“এখনো একজন কে শাস্তি দেয়া বাকি এখনি কিভাবে ভাঙে?”
“তার শাস্তিটা না হয় আপনার ওপরেই ছেড়ে দিলাম।”
“আপনি কি ফিরবেন না আম্মা?”
“কেন ভালোবাসি, কেন কষ্ট পাই
আপনিও যেমন জানেন আমিও তো তাই!
তবুও তো ভালোবাসি, তবু ভেজে চোঁখ
এভাবেই বেঁচে থাকা, এভাবেই শোক!
~নূর মহল ( কাব্যের বিহঙ্গিনীর পাঠক মেহবিনের কষ্ট তুলে ধরার জন্য লিখে পাঠিয়েছেন)
বলেই মেহবিন সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। শেখ শাহনাওয়াজ এর চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। মুখরকে মেহবিন আগেই জানিয়েছিল সে তাই বাইরেই অপেক্ষা করছিল। ওনাদের নিয়ে যাওয়া হলে মুখর ও তাদের সাথে চলে যায়। মেহবিন বাড়ি ফিরেই দেখলো তাজেল টেডিবিয়ার জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। কালকেই মেহবিন তাজেলকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। এই তিনদিনে মেয়েটা আগের মতো একটাও কথা বলেনি। আজ মেহবিন একটা টেডিবিয়ার এনে দিয়েছে। আর যাওয়ার আগে ঘুম পারিয়ে দিয়ে গেছে। মেহবিন তাজেলের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,
“আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী নেত্রী। তাই তো ডাক্তারের কাছে তার নেত্রীকে পার্মানেন্ট ভাবে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন এই নেত্রী নিজের আকাশ নিজে তৈরি করবে মুক্ত বিহঙ্গিনীর মতো উড়ে বেড়ানোর জন্য। আর পেছনে থাকবে নেত্রীর ডাক্তার যাতে নেত্রীর পথে কোন বাঁধা না আসে।”
তাজেল মেহবিনের হাত জড়িয়ে ধরলো। তার আজ আনন্দে কাঁদার কথা থাকলেও সে কোন রিয়াক্টই করছে না। মেহবিন শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম কি আসবে। উঁহু আজ তার রাতটা নির্ঘুম যাবে। এই মুহূর্তে ওর মুখরকে দরকার ছিল। ওর মানসিক শান্তি। কিন্তু এখন সম্ভব নয় তবে তার নেত্রী তো আছে। মেহবিন নেত্রীকে ওর বুকের ওপর উঠালো আর ওকে জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
_____________
সকাল বেলা টিভি অন করতেই সারা দেশ বাকরুদ্ধ। নিশাচর তার নাম সবাই শুনে এসেছে তার কৃর্তিকলাপ সব ফাঁস। আরিফা জামান দেখেই পরে গেলেন সাতদিন ধরে দুজন নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি দুজন শেষ মুহূর্তে এই। তার ভাই এসব করতো ভেবেই আরিফা জামান স্তব্ধ হয়ে গেলেন। শেখ বাড়িতে শোকের ছায়া। অথচ চারিদিকে মুখর শাহরিয়ার এর জয়জয়কার। তবে সে বলেছে তাকে দুজন মানুষ সাহায্য করেছে কে করেছে সেটা কাউকে বলে নি।পুলিশ থেকে মুখর কে সম্মাননা দেওয়া হবে সেই সাথে সেই আরো দুজনকে। মুখরের আবারো প্রমোশন হয়েছে সে এখন ওসি থেকে ডিসি হয়েছে। যা দেখে শাহরিয়ার পরিবারে খুশির জোয়ার। তবে শেখ শাহনাওয়াজ এর পরিবারের জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। তাই বলে সেই পরিবারের এতোবড় স্ক্যাম দেখে তারা কিন্তু বিয়ে ভেঙে দেয় নি।
আরিফা জামান খবর দেখে স্তব্ধ হয়ে নিচে বসে আছে। তখন শেখ শাহনাওয়াজ তার সামনে বসে মুচকি হেসে বললেন,,
“ওরা তো ওদের শাস্তি পেয়ে যাবে আরিফা তবে তোমার? তোমার কি শাস্তি হওয়া উচিত বলো তো? তুমিও তো খুনী আমার মেহেরের।”
আরিফা জামান চমকে শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকালো। আর পুরো শেখ পরিবার চমকে উঠলো। মিশু আর আরবাজ ও বাদ যায় নি। মিশু বলল,,
“বাবা এসব মামনি মানে?”
শেখ শাহনাওয়াজ এতো বছরের রাজ সবাইকে বলে দিল। মিশু আর আরবাজ কাঁদতে লাগলো। মিশু আরিফা জামান এর সামনে গিয়ে বলল,,
“কেন মামনি? আমি তো তোমায় মামনি বলি আর মায়ের আসনেই বসিয়েছিলাম তাহলে তুমি একজন মা হয়ে কি করে আরেক মা কে মেরে ফেললে? আচ্ছা মা কি ক্ষতি করেছিল তোমার যার জন্য তার ইতি এভাবে ঘটলো? আচ্ছা আমার ছোট বোনটা কি দোষ করেছিল কেন ওকে এতিমের মতো বড় হতে হলো? জবাব দাও?”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বলল,,
‘আমি সবজানি আরিফা সেই উনিশ বছর ধরেই আমি জানি । আর এই সব তিক্ত অভিজ্ঞতা নিজের মনে চেপে রেখেছিলাম শুধুমাত্র আমার মেয়ের জন্য। আচ্ছা তুমি তো নিজ ইচ্ছেতে মেহেরকে আমাদের সাথে জড়িয়েছিলে তাহলে কেন তার সাথে এমনটা করলে? কি ক্ষতি করেছিল ও তোমার। ও তো চায় নি আমাদের সাথে ওর জীবন জড়াতে তোমরাই জোর করে এনেছো ওকে। তাহলে নিজের স্বার্থ হাসিলের পর ওকে ছুড়ে ফেললে কেন? ও তো তোমায় নিজের বড় বোন মনে করতো তাহলে তুমি কি করে পারলে তার বড় বোনের জায়গা নিয়ে তাকে মেরে ফেলতে?”
তখন আরিফা জামান চিৎকার করে বললেন,,
“তাহলে কি করতাম আমি। আপনি তো আপনার ভালোবাসাকে অন্য কারো সাথে দেখেন নি। আপনি কি করে বুঝবেন ভালোবাসার মানুষের ভাগ দেওয়া কতোটা যন্ত্রনার। কতোদিন আমি আপনাদের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর ভেতরে আপনাদের প্রেমের আলাপ শুনতাম। আপনি কি করে বুঝবেন এতটা কতোটা ভয়ঙ্কর যন্ত্রনা দেয়। শুধু কি আমি জড়িয়েছিলাম সেখানে তো আপনার ও স্বার্থ ছিল আপনিও তো আপনার ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য বিয়ে করেছিলেন। একটা পুরুষ কে বিয়ের বিষয়ে কেউ কোনদিন জোর করতে পারে না। যারা ভাবে যে পরিবারের চাপে পরে করেছে এটা ভুল। একটা পুরুষকে কেউ কোনদিন জোর করতে পারে না। আপনি আমার থেকে মেহেরকে ভালোবাসতেন এটা আমি কি করে সহ্য করতাম। তবুও ও তো ওকে আমি বারো বছর মানে এক যুগ সহ্য করেছি। সহ্য হচ্ছিল না আমার ওকে । আমি মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার জন্য ওকে এনেছিলাম। কিন্তু তখন বুঝিনি ভালোভাসার ভাগ দেওয়ার কথা যতটা সহজ ভাবে বলা গেলেও করা কতটা কঠিন। আপনি ওর সাথে কত সুন্দর ভাবে কথা বলতেন তেমনি ভাবে কোনদিন করেছেন। হ্যা আপনি সমতা রক্ষা করে চলতেন তবুও আমার মনে হতো মেহেরের দিকে ভারী। নিজেকেই নিজের কাছে ছোট মনে হতো। আপনি যখন ওর সঙ্গে রাত কাটাতেন সারারাত আমি ছটফট করতাম। কখন সকাল হবে আর আপনাকে আমি দেখবো। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি আমি কি করে আপনাকে কারো সাথে ভাগ করতাম। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে একান্ত করে একেবারে নিজের করে চাওয়া টা কি অন্যায়?
তখন পেছন থেকে কারো আওয়াজ আসলো,,
‘না অন্যায় নয়, কাউকে একান্ত করে একেবারে নিজের করে চাওয়া টা অন্যায় নয়। তবে এর জন্য কাউকে পৃথিবী থেকে উচ্ছেদ করা অন্যায়।”
সবাই পেছনে তাকাতেই দেখলো মেহবিন সে চকলেট খেতে খেতে আসছে। মেহবিন এসেই সোফায় বসলো আর আয়েশ করে চকলেট খেতে লাগলো। ব্যপারটা সবাইকে অবাক করলো। মেহবিন চকলেট খেতে খেতে বলল,,
“আপনার বিষয়টা আমি বুঝলাম আরিফা জামান। তবে চেয়ারম্যান সাহেব আপনার দোষ ছিল একটু বই কি? আপনার মেহেরুন্নিসার প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্য তাকে জীবন হারাতে হলো। সেই হিসেবে আপনিও দোষী।”
তখন আরিফা জামান চিৎকার করে বলল,,
“এই মেয়ে তুমি আমার পারিবারিক বিষয়ে কথা বলবে না।”
“বিষয়টা তখন পারিবারিক থাকে যখন সেটা শুধু পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু আপনার পারিবারিক বিষয়টা তো কতো জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। এই ধরুন চেয়ারম্যান সাহেব এর শ্বশুরবাড়ি। শেখ আরবাজ শাহনাওয়াজ এর হবু শ্বশুরবাড়ি।”
তখন এন্ট্রি নিল মুখরের পরিবার ও মেহরব চৌধুরীর পরিবার। শেখ শাহনাওয়াজ তাদের আসতে বলেছেন তাই। আরিফা জামান সব দেখে ভয় পেলেন। তার পেছনেই পুলিশ। যা দেখে আরিফা জামানের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। তার হাত পা অস্বাভাবিক কাঁপতে লাগলো। মেহবিন মুচকি হেঁসে আরিফা জামান কাছে গিয়ে বসলো আর এর কানে কানে বললেন,,
‘যেই দূরন্ত মেয়েটাকে আপনি সহ্য করতে পারতেন না। মেহেরুন নিসার সাথে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। সেই মেয়েটা কে জানেন? এই আমি মেহবিন মুসকান শাহনাওয়াজ। আর হ্যা নিশাচর এর সাথে সায়িদের সাথে যা হয়েছে সবকিছু আমি করেছি। নুপুর নুপুরের বাবার সব ধ্বংস করার পেছনেও আমি আছি। আপনার সবকিছু সবার সামনে আসার পেছনেও আমি। আর হ্যা এখন যা হবে এটার পেছনেও আমি।”
কথার সুযোগে মেহবিন কখন ইনজেকশন পুশ করেছে আরিফা জামান টেরই পান নি। সব শুনে আরিফা জামান মেহবিন কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আর ওর গলা চেপে ধরলো। আকস্মিক ঘটনায় সবাই কিংকর্তবিমূড় হয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ কোনদিন যা করে নি আজ তাই করলেন। আরিফা জামানকে উঠিয়ে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারলেন। এদিকে মুখর তাড়াতাড়ি করে মেহবিন কে ধরলো ওর মুখে অদ্ভুত হাঁসি। মুখর গিয়ে বলল,,
‘ঠিক আছো?”
মেহবিন মাথা নাড়লো। এদিকে আরিফা জামান অস্বাভাবিক আচরন করতে লাগলেন। সবাইকে মেরে ফেলার জন্য তেড়ে গেলেন। মেহবিন আর শেখ শাহনাওয়াজ বুঝতে পারলেন ওনাদের কাজ সম্পূর্ন। পুলিশ এসে আরিফা জামান কে ধরলেন। কিছুক্ষণ পর আরিফা জামান অজ্ঞান হয়ে গেল। পুলিশ তাকে নিয়ে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ নিজের ঘরে গেলেন দু’টো চকলেট নিয়ে এলেন। একটা মেহবিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,,
“লাস্ট চকলেট চিয়ার্স ফর আওর ভিক্টরি পার্টনার।”
না চাইতেও মেহবিন হেঁসে ফেললো। ও চকলেট নিল প্যাকেট খুললো তারপর শেখ শাহনাওয়াজ এর সাথে চকলেট চিয়ার্স করে খেতে লাগলো। এদিকে ওদের দুজনকে এভাবে দেখে সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। চকলেট খাওয়া শেষ করে মেহবিন বলল,,
‘তাহলে আমি আসি চেয়ারম্যান সাহেব। আপনাদের পারিবারিক ডিসকাশন না হয় এখন করে নিন।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘মুসকান আম্মা এটা আপনার বাড়ি আপনি কোথায় যাচ্ছেন। আর আপনাকে ছাড়া পারিবারিক ডিসকাশন সম্পূর্ণ হবে কি করে?’
শেখ শাহনাওয়াজ এর এই কথাই মুখরের পরিবার চমকে উঠে। মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,
“শাহনাওয়াজ ভাইসাব এসব কি?”
শেখ শাহনাওয়াজ মুচকি হেসে বললেন,,
“আপনি একবার বলেছিলেন না আমি মেহবিনের মতো কথা বলি। কারন তো এটাই ও আমার মতো কথা বলে আর ও আমার মেয়ে মেহবিন মুসকান শাহনাওয়াজ। আমার সর্ব কনিষ্ঠ আর আদরের মেয়ে।”‘
মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনার মেয়ে বুঝি? তাহলে এতো দিন কেন বলেন নি?”
‘সবকিছুই আপনার ভালোর খাতিরে?”
“থাক আমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি গেলাম?”
বলেই মেহবিন হাঁটা ধরলো। শেখ শাহনাওয়াজ সহ সবাই ডাকলো কিন্তু মেহবিন থামলো না। মুখর গিয়ে হাত ধরলো। মেহবিন তার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“এমন কোন আবদার করবেন না। যার জন্য আমাদের মাঝে কোন মতপার্থক্য তৈরি হয়। আমার হাত ছাড়ুন। আপনার খুব ইচ্ছে ছিল না রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনী কে জানার। যান ভেতরে যান চেয়ারম্যান সাহেব এর থেকে অনেকটাই জানতে পারবেন। কারন তিনি এই বিহঙ্গিনীকে ভালোভাবেই জানেন।”
মেহবিনের কথায় মুখর হাত না ছেড়ে আরো শক্ত করে বলল,,
“আমি তো রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনীর সম্পর্কে আমার বিহঙ্গিনীর থেকেই শুনবো। আজ রাতটা না হয় বিহঙ্গিনী তার কাব্যের নামে লিখে দিক।”
“আজকেই কেন?’
“যাতে আজ আমার ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বিহঙ্গিনীর সব দুঃখ ঘুচে যায়।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘আজ আপনি ভার্সেস নেত্রী যে জিতবে আমি তার সাথে থাকবো।”
“মানে?”
“মানে নেত্রী তো আমার সাথেই থাকে। এবং আমি ছাড়া সে এক পাও ফেলে না। ওর বাবার কথা জানার পর একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। আর আমাদের পুরোনো নেত্রী কে আমার ফেরত চাই। এই জন্য আজ আপনি নেত্রীর পুরোনো ভার্সন ফেরাতে সাহায্য করবেন। যদি করতে পারেন। তাহলে কালকের পুরো দিন ও রাত আপনার নামে লিখে দেব প্রমিস।”
‘তাহলে তো করতেই হবে। হাজার হোক বউ আমার বলেছে।”
“ব্যাপারটা যতোটা সহজ ভাবছেন ততটা নয়।”
‘চেষ্টা করা যেতে পারে।”
“ওকে আমি গেলাম নেত্রীকে বলেছি ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আসছি।”
“আমিও যাবো।”
“আমি নেব না !”
“তুমি নেত্রীর টোনে কথা কেন বলছো?”
“আমার ইচ্ছে সরুন তো এখন সরুন বাড়ি যেতে হবে।”
“আমি যাবো?”
‘আমি নেব না।”
বলেই মেহবিন হাঁটা ধরলো। মুখর ও পাশে পাশে চলতে লাগলো আর বলল,,
‘আমার বউয়ের বাড়ি আমি যাবো তাতে কার বাপের কি?”
মেহবিন না চাইতেই হেঁসে উঠলো। মুখর জানে আজ তার বিহঙ্গিনী ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পরেছে। যদিও প্রকাশ করছে না কিন্তু মুখর বুঝতে পারছে। তাই সে আজ তার বিহঙ্গিনীকে একা ছাড়বে না।
___________
শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিন কে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে আলম আহমেদ এর বাড়িতে উঠান। এবং পুলিশ দিয়ে তিনিই ভয় দেখান যার কারনে আলম আহমেদ বাধ্য হয়েই তাকে রাখে। কুসুমকেও ধরে কিন্তু ও শুধু নিশাচর এর নাম বলেই মারা যায়। এতে শেখ শাহনাওয়াজ দিশেহারা হয়ে পরে। মেয়েকে ভালো রাখার জন্য শেখ শাহনাওয়াজ ও মেয়েকে নজরে রাখে। তার কোন অসুবিধা হয় কিনা। দুই বছর পার হওয়ার পর শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের সাথে দেখা করে। এবং ওকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মেহবিন রাজি হয় না। মেহবিন দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়। উনি ওকে বোঝাতে থাকে সবকিছু কিন্তু মেহবিন ওনাকে সুযোগই দেয় না। এভাবে মেহবিন বড় হতে থাকে যখন ওর তেরো বছর তখন একজন ছেলে মেহবিনের সাথে অসভ্যতামি করে । তখন শেখ শাহনাওয়াজ ওকে বাচায় আর বলে এসবের জন্য হলেও নাকি তার শেখ শাহনাওয়াজ এর দরকার পরবে। কারন মেহবিন একটা মেয়ে ও একা কিছুই করতে পারবে না। এতে মেহবিনের মনে রাগের সঞ্চার করে যখন ওর সবাইকে দরকার ছিল তখন কেউ ওর সাথে ছিল না। এখন ও ওর কাউকে দরকার নেই। পরে একদিন আরেকটা ছেলে মেহবিনের সাথে অস্যতামি করে শেখ শাহনাওয়াজ এগিয়ে আসবে তা দেখে মেহবিন নিজেই ছেলেটার হাত ভেঙ্গে ফেলে। এভাবেই মেহবিন ওর বাবার সাহায্য যাতে না নিতে হয় একা একা সব শিখছিল। মুলত একা একা নয় শেখ শাহনাওয়াজ ওকে বাস্তবতার মাধ্যমে শেখাচ্ছিলেন। উনি মেহেরুননিসার মৃত্যুর পর এই কারনেই ডাক্তারি ছেড়ে দেন যাতে মেহবিনের ওপরে নজর রাখতে পারে। তবুও কিছু তো করতে হবে। শেখ শাহেনশাহ জিজ্ঞেস করে কিসের জন্য ছাড়লো তখন তিনি বলেন রাজনীতি করবে তাই ছেড়ে দিয়েছে। তার পরেরবার তিনি চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ান আর হয়েও যান।
আরবাজ ঢাকায় পড়াশোনা করতো একদিন ওর বাবাকে দেখে মেহবিনের কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন মেহবিন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পরতো।আরবাজ এগিয়ে যায় আর তার বাবাকে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। যদিও মেয়েটাকে ওর চেনা চেনা লাগে কিন্তু চিনে উঠতে পারে না। এভাবে বেশ কয়েকবার ও ওর বাবার ওপর নজর রাখে। দুই মাসে চারবার দেখার পর সরাসরি বাবার সাথে কথা বলে। তখন তিনি জানান এটাই মেহবিন তিনি খুঁজে পেয়েছে কয়েকদিন ধরে। আরবাজ কে পুরো সত্যি জানায় না। আরবাজ বলে বাড়ি কেন যাচ্ছে না তখন বলে মেহবিনই বাড়ি ফিরতে চায় না। পরে একদিন আরবাজ চকলেট নিয়ে মেহবিনের সাথে দেখা করে মেহবিন ভাইকে দেখে খুশি হয় কিন্তু এটা বুঝতে দেয় না। তবুও আরবাজ জেদ ধরে কয়েকদিন ওর কলেজে যায়। সবাই ভাবে হয়তো ওর বয়ফ্রেন্ড তাই বাধ্য হয়ে মেহবিন আরবাজের সাথে খোলাখুলি কথা বলে। আর এটাও বলে ও যেন না আসে আর ও বাড়ি ফিরবে না। এরপর থেকে আরবাজের সাথে যোগাযোগ হয়। আরবাজ ফোনের মাধ্যমে ওর সাথে যোগাযোগ রাখে আবার মাঝে মাঝে দেখাও করে। মেহবিন কে যখন আলম আহমেদ বের করে দেন। তখন শেখ শাহনাওয়াজ আর আরবাজ অনেকবার চেষ্টা করেছে ওকে টাকা দিতে বা বাড়ি নিয়ে যেতে কিন্তু মেহবিন নারাজ সে কিছুতেই তাদের কোনোকিছুতে হাত লাগাবে না। সে হলে উঠে টিউশনি করিয়ে আর পার্ট টাইম জব করে পড়াশোনা করতে থাকে। এভাবে প্রায় একবছর কেটে যায়। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বাধ্য হয়ে মেহরব চৌধুরী কে মেহবিনের ব্যাপারে জানান। মেহরব চৌধুরী ভাগনির খোঁজ পেতেই ছুটে যায় সেখানে। মেহবিনের সাথে কথাও বলে কিন্তু মেহবিন প্রথমে তার কথায় গলে না। পরে মেহেরুনিসা কে নিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। মেহেরের তাকে নিয়ে অনেক আশা ইচ্ছে। আর তার ভাগের সব সম্পত্তি তিন ভাগের এক ভাগ মেহবিনের নামে উইল করে দেয়। তবুও সে বলে তাদের সাথে থাকবে না। মেহরব চৌধুরী বলে না থাকুক ও যেন টিউশনি না করে আর জব টা ছেড়ে দেয়। মেহবিন তাতেও প্রথমে রাজি হয় না। তবে যখন মুখর আর ওর বিচ্ছেদ হয় তখন সে তার ভাগের টাকার ওখান থেকে বিদেশে চলে যায় পড়াশোনা করতে। তার সাথে ছোটখাটো একটা বিজনেস ও করে। দেশে ফিরতেই শেখ শাহনাওয়াজ ওর সাথে দেখা এবার মেহবিন সব ঠান্ডা মাথায় শোনে। এবং তার মায়ের মৃত্যুর পেছনে যারা দায়ী তাদের শাস্তির কথা বলে। এরপর থেকেই দুই বাবা মেয়ে হয়ে যায় একে অপরের পার্টনার। যদিও উনি গ্ৰামে যেতে মানা করেছিলেন কিন্তু মেহবিন নিজেই যায় তাই দেখেই শেখ শাহনাওয়াজ প্রথমে অবাক হয়েছিলেন। মেহেরের টিনের ঘর খুব পছন্দের ছিল তাই তিনি মেহেরের জন্য নতুন ঘর দিয়েছিল। কিন্তু মেহের সে ঘরে থাকতে পারেনি। তার আগেই মারা যায় তাই তিনি ঐ বাড়িটাকে আলাদা করে যত্ন করতেন। তিনি জানতেন মেহবিন তার বাড়িতে থাকবে না তাই ঐ বাড়িটার কথা বলেন। মেহবিনের রাগের কারন সে কি তার কাছে নিয়ে তাকে আগলে রাখতে পারতো না। দূর থেকেই কেন ওকে আগলাতে হলো । ওকে যে অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছিল তখন সবথেকে বেশি মেহবিনের ওনার দরকার ছিল। আর সেই রাগ থেকেই মেহবিন মুখ ঘুরিয়ে থাকে। এমনকি ও বাড়িতে খাবার অব্দি খায় না। কারন রান্না টা আরিফা জামান করে আর বাজার টা শেখ শাহনাওয়াজ করে। তাছাড়া শেখ পরিবারের জন্য ও ওর মাকে হাড়িয়েছে। মেহবিন তাকে শর্ত দিয়েছিল শুধু ওর মায়ের মৃত্যুর পেছনে যারা আছে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্যই তার সাথে মিলিত হয়েছে অন্য কোন কারন নেই। যেদিন সব শেষ হবে সেদিন ওদের পার্টনারশিপ ও শেষ হয়ে যাবে। আর আজ হলোই তাই। মেহবিন সব ভুলে গেলেও তার মায়ের কথা আর তার বাবার না এগিয়ে আসা ভুলে নি। তাই আজ ও তাদের মধ্যে এতটা দূরত্ব।
~চলবে,,