#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৪৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মুখরের এমন কথায় মেহবিনের অবাক হওয়ার কথা থাকলেও সে অবাক হলো না। সে শান্ত স্বরেই বলল,,
“অনুষ্ঠান টা কবে রেখেছে সেটা বলুন? নাকি আলভি ভাইয়ায় বিয়ের দিনই একেবারে?”
মেহবিনের কথায় মুখর অবাক হয়ে বলল,,
“তুমি কি আমার থেকে আগেই সব জানো? দাদি জান কি তোমায় ফোন দিয়েছিল?”
“না তবে আপনার কথা শুনেই বুঝেছি সেরকম কিছু হতে পারে।”
“ওহ আচ্ছা। আলভির বিয়ে তো সাতদিন পর তবে দাদিজান চান আগেই আলাদাভাবে আমাদের সকল আত্মীয় স্বজন ও পরিচিতদেরকে ডেকে তোমার পরিচয় করাতে।”
“নাফিয়া আপুর বিয়ে তো এখনো হয়নি তাহলে?”
“তাতে কি বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেছে। তাই হয়তো দাদিজান তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছে।”
“সবকিছুর পেছনেই কোন না কোন কারন থাকে। তবে এবার শুধু এই কারনটা লাগছে না। যাই হোক অনুষ্ঠানটা কবে রেখেছে?”
“তিনদিন পর। আর হ্যা তোমার বাপের বাড়ির লোকজন ও কিন্তু থাকবে এখানে?”
“ভালো তো !”
মেহবিন দেখলো মাহফুজ শাহরিয়ার ফোন করছে তাই মেহবিন বলল,,
“এখন ফোনটা রাখুন বাবা ফোন করেছে?”
“তোমার বাবা নাকি আমার বাবা?”
“আজাইরা কথা রাখুন তো আপনার বাবা ফোন দিচ্ছে। রাখলাম আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই মেহবিন মুখের ফোন কেটে দিল। তারপর মাহফুজ শাহরিয়ার এর ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম বাবা! কেমন আছেন?
মাহফুজ শাহরিয়ার জবাব দিলেন,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি!”
“কিছু বলার জন্য তোমায় ফোন দিয়েছিলাম?”
“জি বলুন?”
“আমি জানি না মুখর তোমাকে জানিয়েছে কি না তবুও আমি বলছি। মা তিনদিন পর একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তোমার জন্য।”
“আপনি কি বাড়িতে বাবা?”
“হ্যা বাড়িতেই?”
“তাহলে আমার জন্য অনুষ্ঠানটা যে রেখেছেন তার কাছেই দিন।”
মাহফুজ শাহরিয়ার হেঁসে আছিয়া খাতুনের হাতে ফোনটা দিল এতোক্ষণ লাউড স্পিকারে ছিল বলে তিনি শুনেছেন তাই তিনি ফোন নিয়ে বললেন,,
“আবার আমারে লাগবো কেন? একজন কইতেছে তাতে কি হইতেছে না।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“না হচ্ছিল না । সে তো আমার ওপর কোন ধারা জারি করেন নি। করেছিলেন তো আপনি তাই সেই ধারা উঠিয়ে নেওয়ার জন্যও আপনি বেশি প্রয়োজনীয় তাই নয় কি?”
“হ মুখে আল্লাহ ভালো বুলি দিছে তাই কইয়া যাইতে পারলা।যাই হোক আসল কথায় আসি। তিনদিন পর তোমার আসতে হইবো আমাগো বাড়ি নতবউ হিসেবে তাই সময় মতো আইয়া পইরো।”
“যদি না আসি তো?”
“তাইলে তোমারে আর বাড়ি উঠামু না। মুখর রে আরাটা বিয়া করামু।’
“হুম মেয়ে তো আপনার আশেপাশেই আছে করায়েন। হুদাই আমার মতো মেয়ের জন্য অপেক্ষা করবেন কেন?”
“ঐ মেহু হুশ কইরা কথা কইস? সামনে পাইলে ঠাস কইরা থাপ্পড় দিতাম তোরে।”
“আচ্ছা এই যে বললেন। কেন যেন মনে হচ্ছে, আপনার সাথে আমার পরের সাক্ষাতে থাপ্পড়ই খেতে হবে।”
মেহবিনের কথায় আছিয়া খাতুন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,,
“সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান নাতবউ সঠিক সময় আইসো।”
“ইনশাআল্লাহ!”
“খালি ইনশাআল্লাহ না ক ইনশাআল্লাহ আমি যাবো।”
“ইনশাআল্লাহ বললাম তো দাদিজান, মানে কি হলো বলেন তো আল্লাহ যদি চান। এখন এমন কিছু হলো আমি যেতে পারলাম না তখন কি হবে বলেন তো!”
“তুই আসবি মেহু! তোর জন্যই এই অনুষ্ঠান আর তোর অপেক্ষার অবসান।”
মেহবিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“আল্লাহ হাফেজ দাদিজান নিজের খেয়াল রাখবেন।”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। মেহবিনের অদ্ভুত লাগছে সাথে অস্থিরতা । ও দিকে আছিয়া খাতুন ও ভাবছেন মেহবিনের কথায় অন্যকিছু ছিল। মেহবিন বাইরের দিকে নজর দিল প্রকৃতি দেখতে লাগলো। মেহবিন নিজেই জানে না কিসের জন্য ও অপেক্ষা নিতে হয়েছিল আর কিসের জন্য এই অপেক্ষার অবসান হলো।
অতীত,,
আছিয়া খাতুন কে যে সাহায্য করেছে তাকে পরের দিন দুপুরে দাওয়াত করে খাওয়ানোর ইচ্ছে হলো। মেহবিন প্রথমে দাওয়াত রাখতে ইচ্ছে পোষণ না করলেও পরে দাওয়াতটা রাখতেই হলো। মেহবিন তাড়াহুড়োয় ওর ব্যাগটা আছিয়া খাতুনের কেবিনে রেখে গিয়েছিল সেটা নিতে আসতেই তাকে দাওয়াত রাখতে হলো। মাহফুজ আর আছলাম শাহরিয়ার বাদে আর সবাই হাসপাতালে এসেছেন আছিয়া খাতুনের জন্য। আছিয়া খাতুন বললেন,,
“দেখো আমি জানি তুমি এইসবের জন্য আমার সাহায্য করো নাই মন থেকেই করছো। কিন্তু আমার ও ইচ্ছা তোমারে আমার বাড়িতে খাওয়ানোর তাই তুমি আর না কারো না।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“না দাদি তেমন কোন ব্যাপার নেই। আসলে আমি কোথাও যেতে কমফোর্টেবল না।”
“সমস্যা নাই আমার নাতি মুখর তোমারে কাল তোমার বাড়ি থেকে নিয়া যাইবোনে। তোমার বাড়ির ঠিকানা দেও?
“আসলে দাদি আমি হলে থাকি। আর দাওয়াত টা না রাখলেই কি নয়।
কথাটা শুনে মুখর আর আছিয়া খাতুন দু’জনেই মেহবিনের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালো। আছিয়া খাতুন বললেন,,
” না, না রাখলেই নয়। তুমি কি আমার মতো বুড়ো মানুষের কথা রাখতে পারবা না।”
“না আসলে আমি কারো বাড়িতে তেমন যাই না তো তাই।
” যাও না আমার বাড়িতে কাল যাইবা । তোমার নাম্বারটা দেও। কাল মুখর তোমারে নিতে আসবো হলের সামনে আইসা ফোন দিব। ওর ফোন পাইলে তুমি চইলা আইসো নিচে।”
“দাদি,
“আর একখান কথাও না।”
মেহবিনের আর কি অতঃপর নাম্বারটা দিতেই হলো। মুখর নাম্বার সেভ করার জন্য মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনার নামটা কি মিস?”
‘মেহবিন মুসকান।”
এইটুকু বলেই মেহবিন বিদায় নিয়ে চলে গেল। এদিকে মুখর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ওর নামটাও জানতে চাইলো না। এমনকি ওর দিকে ভালোভাবে তাকায়নি পর্যন্ত মেয়েটা। হুট করে আছিয়া খাতুনের কথায় মুখরের ধ্যান ভাঙল,,
“মেয়েটা খুব ভালো তাইনা নাতি? অমায়িক ব্যবহার।”
মুখর আনমনেই বলে উঠল,,
“অমায়িক এর সাথে অসামাজিক ও আমি ওনার নাম জিজ্ঞেস করলাম অথচ উনি আমার নামটা জিজ্ঞেস করা দূর ঠিক ভাবে তাকালেন ও না।”
“কিছু কইলা নাতি?”
“না কিছু না দাদি জান। মা কাকিমনি চলো বাড়ি যাই। আলভি সব কাগজপত্রের কাজ শেষ করে এসেছে। ”
সবাই বাড়ি চলে গেল। রাতে শাহরিয়ার পরিবার এর সবাই গোল টেবিলে বসলো মেহবিন কে নিয়ে। আছিয়া খাতুন মুখর কে মেহবিনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে বলল সে কখন আসবে সেই সময় জেনে ওকে আনতে যেতে। মুখর আচ্ছা বলে চলে এলো। নিজের রুমে এসে মুখর ভাবছে কল দেবে কি না আবার ফোন দেওয়াটাও জরুরি। শেষ মেষ নয়টার সময় ফোন দিল। এদিকে মেহবিন পড়ছিল আননোন নাম্বার থেকে কল দেখে প্রথমবার ধরলো না। মুখর দ্বিতীয় বার আবার দিল তাও ধরলো না। মুখর ভাবলো আরেকবার দিয়ে আর দেবে না। সে আবার দিল এবার মেহবিন ধরে সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম!”
মুখর হেঁসে জবাব দিল,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। যাক অবশেষে ফোনটা ধরলেন?”
“কে?”
“আমি মুখর শাহরিয়ার!”
মেহবিন অবাক হয়ে বলল,,
“মুখর শাহরিয়ার আবার কে?”
“আরে যার দাদিকে আপনি আজ হাসপাতালে নিয়ে গেছিলেন। যাকে আপনাকে কাল আনতে যাওয়ার কথা।
মেহবিন এবার চিনতে পারলো।ও বলল,,
‘ওহ আচ্ছা সাদা পাঞ্জাবি ওয়ালা আপনি।”
মেহবিনের সাদা পাঞ্জাবি ওয়ালা শুনে মুখর অবাক হলো ও তো ভেবেছিল মেহবিন ওকে দেখেই নি। কিন্তু ও কি রঙের পাঞ্জাবি পরেছে এটা শুনে অবাকই হলো। ও বলল,,
“জি আমিই সে।”
“ওহ আচ্ছা তা ফোন দিয়েছেন কেন?”
‘কাল কখন আপনাকে আনতে যাবো এটা জানতে বলল দাদিজান? তাই জানার জন্য ফোন দিলাম।”
“আমাকে আপনাদের বাড়িতে নেওয়ার এতো উৎসাহ কেন বুঝলাম না।”
‘কারন আমরা মানুষের শুকরিয়া আদায় করতে জানি।কাল কখন আসবো বলুন।”
‘কাল আমার তিনটা ক্লাস আছে একটা ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস আছে। একটা পনেরো তে শেষ হবে। আপনি না হয় ক্লাস শেষেই আমাকে নিয়ে যায়েন। আমাকে আর ফোন করার দরকার নেই।
“মানে আপনি হলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে তৈরি হয়ে তারপর আমাদের বাড়িতে আসবেন না।”
প্রশ্নটা করে মুখর নিজেই আহাম্মক হয়ে গেল। আর যখন বুঝতে পারলো কি বলেছে ও তৎক্ষণাৎ বলল,,
“সরি আসলে,,
“ডোন্ট বি এরকম প্রশ্ন করা স্বাভাবিক যেহেতু আমি কোথাও যাচ্ছি। তাহলে ভালোভাবে তৈরি হয়েই যাওয়া উচিৎ। তবে আমি তো আর কোন বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি না যে সেজেগুজে তৈরি হয়ে যেতে হবে। আর না আমাকে দেখতে আসছে সেখানে এতো সাজগোজের কি দরকার। নরমাল ভাবে আমি যেভাবে ক্যাম্পাসে আসি যেভাবে গেলেও সমস্যা তো দেখছি না।”
মেহবিনের কথা শুনে মুখর মনে মনে বলল,,
“শুধু অসামাজিক না নিরামিষ ও । মেয়ে হয়েছে তাও সাজে এলার্জি মানে কি একটা নিরামিষ।”
মুখে বলল,,
‘ওহ আচ্ছা তাহলে কাল একটা বিশে দেখা হচ্ছে।”
“ইনশাআল্লাহ!”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। এদিকে এভাবে রেখে দেওয়ায় মুখর একটু মনে মনে ক্ষুব্ধ হলো। ও ভাবতে লাগলো মেয়েটা এমন কেন?
সকাল বেলা উঠেই মুখর নিচে এসে দেখলো মেন্যু নিয়ে ডিসকাস হচ্ছে। মুখর কিছুই বললো না। দুপুর হতেই মুখর ধূসর রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পড়ে মেহবিন কে আনতে গেল। মেহবিন ক্লাস শেষ করে বাইরে বের হতেই দেখলো কয়েকটা মেয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলছে। তা দেখে মেহবিন নিজেও সেদিকে তাকালো। কালকের ছেলেটাকে দেখতে পেল। ও এগিয়ে গেল ওর দিকে যাওয়া দেখে সব মেয়েরা আড় চোখে ওর দিকে তাকালো। মুখর মেহবিনকে দেখলো ধূসর রঙের একটা আবায়া আর হিজাব পরেছে নিজের দিকে তাকাতেই ও নিজেও অবাক হয়ে গেল। মেহবিন এগুতেই মুখর বলল,,
‘অবশেষে এলেন। আপনি তো বলেছিলেন একটা পনেরো তে ক্লাস শেষ?”
“হুম একজনের থেকে কিছু নোট নেওয়ার ছিল কয়েকদিন পর পরীক্ষা তো। তাই দশ মিনিট লেট হলো সরি।”
“ইটস ওকে তা কেমন আছেন আপনি?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”
“জি আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তো যাওয়া যাক।”
মেহবিন গাড়ির পেছনের দরজা খুলে বসে পড়লো। এদিকে মুখর হতভম্ব হয়ে গেল। মেয়েটা কি ওকে ড্রাইভার বানাচ্ছে। ও গাড়িতে গিয়ে বসলো ও কিছু বলবে তার আগে মেহবিনই বলল,,
“দেখুন আমি পেছনে বসেছি বলে ভাববেন না আমি আপনাকে ড্রাইভার বানাচ্ছি। বা আপানাকে অপমান করছি। হয়তো ভাবতেই পারেন আম অসামাজিক। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। তবে আমি আপনার পাশে বসতে ইচ্ছুক নই তাই পেছনে আসা। আর তাছাড়া কোন পূর্ব পরিচিতও নই আমরা যে ধাপ করেই আপনার পাশের সিটে বসে পরবো। আমি মনে করি পাশের সিটে বসতেও কিছু জিনিস থাকা উচিত। আমার বা আপনার মাঝে তেমন কিছুই নেই। ”
মুখর ওকে এইটুকুতেই বুঝে ফেলেছে তাই খুব একটা অবাক এবার হলো না। সে আয়নার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘ইটস্ ওকে।”
বলেই গাড়ি স্টার্ট করলো। আধ ঘন্টা বাদে পৌঁছে গেল শাহরিয়ার ভিলায়। মেহবিনকে দেখে মিসেস মাহফুজ এগিয়ে এলেন। ওকে নিয়ে বসালেন। মেহবিন আছিয়া খাতুনের কথা জিজ্ঞেস করলেন নাফিয়া ওকে নিয়ে আছিয়া খাতুনের রুমে নিয়ে গেল। আবার নিচে আসলো মুখর সবার সাথে মেহবিনের পরিচয় করিয়ে দিল। মাহফুজ শাহরিয়ার এর মেহবিন কে কেমন চেনা চেনা লাগলো। তাই তিনি বললেন,,
‘আচ্ছা তুমি সেইদিনের মেয়েটা যে আমাকে সাহায্য করেছিল?”
মাহফুজ শাহরিয়ার এর কথায় সবাই মেহবিনের দিকে তাকালো। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“জি আঙ্কেল আমিই সে।”
‘তুমি হাসপাতাল থেকে কোথায় চলে গিয়েছিলে।”
‘আমার কিছু জরুরী কাজ ছিল তাই গিয়েছিলাম। অবশ্য পরে এসেছিলাম আমি। তখন আপনি চলে গিয়েছিলাম।”
তখন আছলাম শাহরিয়ার বললেন,,
“তোমরা দুজন কিসের কথা বলছো আমাদের কি কেউ কিছু বলবে?
মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,
“আর বলিশ না একটা তথ্য নেওয়ার জন্য ওদের কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার এর সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কথা বলে বের হতেই কিছুদূর এগুতেই বুঝতে পারি আমার সুগার ডাউন হচ্ছে। নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারছিলাম না পরে যেতে নিলাম তখন কেউ আমাকে ধরলো। আর সেটাই ছিল এই মেহবিন। ও ধরে আমায় একটা জায়গায় বসালো আমি বললাম হয়তো সুগার ডাউন হচ্ছে। ও ওর ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে দিল। চকলেট খেয়ে একটু ভালো লাগলো। ও একজন সিনিয়র ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। তারপর চলে গেল আমি তাকে আমার সমস্যার কথা বলছিলাম বাইরে বের হয়ে দেখি সে নেই। আমার ও কাজ ছিল তাই বেশি দেরি না করে চলে আসি। আমি ভাবতেই পারি নি ওর সাথে আমার আবার দেখা হবে।”
মিসেস মাহফুজ শাহরিয়ার মেহবিনের হাত ধরে বললেন,,
‘মেহবিন মা আমাদের দুই দুই বার এতো বড় সাহায্য করেছো অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘মানুষ হয়ে মানুষের সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। এতে ধন্যবাদ এর কি আছে। তাছাড়া আমি একজন মেডিকেল স্কুডেন্ট। আমার আলাদা দায়িত্ব রয়েছে।”
“তবুও সব মানুষ কি আর এরকমভাবে সাহায্য করে।”
তখন মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,
‘হুম অনেক কথা হলো ক’টা বাজে দেখেছো মেয়েটাকে খেতে দাও।”
সবাই খাবার টেবিলে বসলো আর একসাথে খেল। মেহবিন চলে যাবে বলল সবাই বলল সন্ধ্যে পর্যন্ত থাকতে। আছিয়া খাতুন ও নিজের কাছে নিয়ে ওকে আঁটকে দিলেন। মেহবিন সবার সাথে বিকেল পর্যন্ত কাটালো তারপর এবার বলেই দিল সে এখন বাড়ি ফিরবে এবার আর কেউ মানা করলো না। মুখরকে দিয়ে আসতে বলল। মেহবিন এবারও পেছনের সিটে বসলো। মুখর এবার কিছুই বললো না। গাড়ি স্টার্ট দিল। কিছুক্ষণ পর মুখর বলল,,
‘আপনি কোন ইয়ারে এখন?”
“এই তো ফাস্ট ইয়ারের কিছুদিন পর পরীক্ষা।”
‘সেকেন্ড ইয়ারে উঠবেন তারমানে?”
“জি!”
“আমি এইবার মাস্টার্সে করছি।”
“ওহ আচ্ছা!”
মুখর আর মেহবিনের মাঝে আর কোন কথা হলো না। মুখর হলের গেটের সামনে গাড়ি থামালো। মেহবিন যেতে নিল তখন মুখর অস্ফুট স্বরে বলল,,
” কেউ নামিয়ে দিলে মানুষ ধন্যবাদ তো দেয়?”
মুখরের কথায় মেহবিন শুনতে পেয়ে থেমে পেছনে তাকালো আর বলল,,
“আপনি যেটা করছেন সেটা আপনার দায়িত্ব এবং কর্তব্য এর খাতিরে। তাই অহেতুক ধন্যবাদ দেব কেন?”
বলেই মেহবিন চলে গেল। এদিকে মুখর আহাম্মক এর মতো বসে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল,,
“অসামাজিক মেয়ে একটা!”
****
“স্যার আপনার চা তো ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
কারো কথায় মুখর ছিটকে অতীত থেকে বের হলো। এতোক্ষণ সে পুরোনো কিছু স্মৃতিচারণ করছিল। কনস্টেবল এর কথায় মুখর তার দিকে বলল,,
“কি?”
কনস্টেবল বলল,,
‘স্যার আপনার চা ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
“ওহ আচ্ছা!”
“আমি কি আবার চা দেব?”
“না দরকার নেই আপনি যান!”
‘স্যার আপনি কি কিছু ভাবছিলেন?”
‘কেন?”
‘না অনেকক্ষন যাবৎ আপনাকে ডাকছিলাম অথচ আপনার সাড়া পেলাম না।”
“না তেমন কিছু না আপনি যান।”
লোকটা চলে গেল। মুখর চায়ের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলল,,
‘যে মেয়েটাকে অসামাজিক আর নিরামিষ বলে আখ্যায়িত করেছিলাম। মুখর শাহরিয়ার সে এখন তোমার বউ। এবং তুমি তার জন্য পাগল।”
বলতে বলতেই তার ফোনে একটা নোটিফিকেশন এলো। মুখর দেখলো “কাব্যের বিহঙ্গিনী ‘ পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে। ও খুশি মনে অপেন করতেই লেখাটা দেখে থমকে গেল,,
‘অসময়ি বিচ্ছেদ আর অসময়ি পূর্নতা দু’টোই এক অদ্ভুত ভয়ঙ্কর যন্ত্রনার।”
লেখাটা দেখে মুখরের চোখ ছলছল করে উঠলো ও বুঝতে পারল না এই রকম পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ। তারমানে তার বিহঙ্গিনী কি এই মুহূর্তে পূর্নতা চায় না। এদিকে মুহুর্তেই কমেন্ট লাইকের বন্যা হচ্ছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই। ওর খেয়াল ওর বিহঙ্গিনীকে নিয়ে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে এতোক্ষণে মেহবিন ও নিশ্চয়ই বাড়ি পৌঁছে গেছে। আজ আর বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে ও কিছু পোস্ট করবে না। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুখরের হুট করেই ভিশন অস্থির লাগছে।
এদিকে মেহবিন গাড়ি থেকে নামতেই শুনতে পেল মাগরিবের আজান দিচ্ছে। ও বাড়ি পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে উযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল। নামাজ শেষ করে উঠতেই তখন বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো ,,
“ডাক্তার তুমি কি বাড়িতে ফিরছো?”
মেহবিন বাইরে বেরিয়ে দেখলো তাজেল আর ওর দাদি। মেহবিন বলল,,
‘হ্যা নেত্রী একটু আগেই এসেছি! কিছু বলবে?
“না দেখবার আইছিলাম তুমি ফিরছো নাকি নাইলে,,
‘তাহলে কি?”
‘আজ আমগো বাড়ি পিঠা বানাইছে তুমি নও রাইতের খাওন খায়া আইসেনে। তাই তোমারে নিতে আইছি।”
“আমার এখন ভালো লাগছে না নেত্রী। তুমি যাও আজ আর কিছু খাবো না।”
এবার তাজেল মেহবিনের কাছে এসে বলল,,
‘নিচু হও দেহি?”
মেহবিন নিচু হলো তখন তাদের মেহবিনের গলায় আর কপালে হাত দিয়ে বলল,,
“জ্বর তো আসে নাই। নাইলে কি হইছে খাইবা না ক্যা? আর তোমার কি হইছে ভালো লাগতেছে না ক্যা।”
‘আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না তাই।”
‘ওহ বুঝছি অনেকদূর থেইকা আইছো দেইহা।”
‘হতে পারে!”
‘তাইলে আমি খাওন নিয়া আসি তোমার আমাগো বাড়ি যাওয়া লাগবো না।”
“না নেত্রী লাগবে না।”
‘তুমি চুপ থাহো আর দাদি তুমি আমার সাথে নও।”
বলেই তাজেল চলে গেল। কিছুক্ষণ পর মাংস চিতই পিঠা আর ভাপা পিঠা নিয়ে এলো। তাজেল ওর দাদিকে চলে যেতে বলল আজ সে মেহবিনের সাথেই থাকবে আর খাবে। তাজেলের দাদি চলে গেল। তখন তাজেল বলল,,
‘আমি এনে থাকলে সমস্যা নাই তো ডাক্তার?”
“না কোন সমস্যা নেই।
‘আইচ্ছা এহন কও পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তোমারে কি কি খাওয়াইলো আর কোনে কোনে ঘুরাইলো।”
“সে অনেক জায়গায় ঘুরিয়েছে।”
“আইচ্ছা!”
‘তা আজ তোমাদের বাড়িতে কেউ এসেছিল নাকি।”
‘হ আমার বাপের বন্ধু!”
‘ও আচ্ছা!”
ওরা কিছুক্ষণ গল্প গুজব করলো। মেহবিনের মনটা ভালো হয়ে গেল। তাজেলের কথায় ও মুচকি মুচকি হাসছে । অতঃপর তাজেল খাবার আনলো আর তরকারির বাটি রেখে বলল,,
“খবরদার ডাক্তার আমার মুরগির ঠ্যাং এর দিকে একদম নজর দিবা না।”
তাজেলের কথায় মেহবিন থম মেরে একটুপর হেঁসে উঠলো আর বলল,,
“তা মুরগির পা কি তোমার অনেক পছন্দের?”
“আবার জিগায় আমাগো বাড়িতে যতো মুরগি রান্না হইছে সবগুলার একটা পা হইলেও আমি খাইছি।”
‘আগে জানতাম মুরগির রান অনেকের পছন্দের থাকে। আজ জানলাম মুরগির পাও কারো কারো পছন্দ থাকে।”
“কারো কারো না খালি শেখ তাজেলের পছন্দ। আর শেখ তাজেল আর সবাই এক হইলো নাকি।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘তা ঠিক সবাই কি আর আমার নেত্রী নাকি।”
“তোমার জন্য একখান রান আনছি আর আমার জন্য ঠ্যাং এহন খাওয়া শুরু করো দেহি।”
“আজ আমি আমার নেত্রীকে খায়িয়ে দিই?”
তাজেল মেহবিনের দিকে ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,,
‘আমার ক্যান জানি মনে হইতেছে তুমিও আমার মতো মুরগির ঠ্যাং পছন্দ করো। আর আমারে খাওয়াই দেওয়ার কথা কইয়া তুমি আমার মুরগির ঠ্যাং খাইবা। তোমারে ক্যান জানি আমার সন্দেহ হইতেছে ডাক্তার।
এবার মেহবিন জোরেই হেঁসে ফেলল আর বলল,,
‘আচ্ছা তোমার মুরগির ঠ্যাং তোমার হাতে নিয়ে খাও তাহলেই তো হয়।”
“ভালো বুদ্ধি দিছো।”
বলেই তাজেল মেহবিনের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ সে মেহবিনের মুখে এই হাঁসি ফোটানোর জন্যই এতোকিছু করলো। ওর মনে হচ্ছিল মেহবিন জোর করে হাসছে। এই জন্যই এতকিছু বললো তাছাড়া ওর ডাক্তারের মুরগির পা পছন্দ শুনলে ও নিজে না খেয়েও তাকে দিতো। তাজেল হেঁসে মেহবিনের গালে হাত রেখে বলল,,
“তোমারে হাসলে আমার অনেক ভাল্লাগে ডাক্তার। তুমি সবসময় এমন কইরাই হাসিখুশি থাইহো।”
মেহবিন তাজেলের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমার নেত্রী যদি আমার সাথে থাকে। তাহলে তার ডাক্তারকে যে হাসিখুশি থাকতেই হবে।”
তাজেল হুট করে মেহবিনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,,
“তুমি আমারে কহনো ধোকা দিওনা ডাক্তার!”
~চলবে,,,
#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫০ (বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিন শক্ত করে তাজেলকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,,
‘আল্লাহ চাইলে আমি আর তুমি সবসময় একসাথে থাকবো নেত্রী। ডাক্তার কখনো তার নেত্রীর থেকে আলাদা হবে না।”
মেহবিন তাজেল কে ছাড়িয়ে বলল,,
“এখন খেয়ে নাও নেত্রী আজ তোমার ডাক্তার তোমায় খায়িয়ে দেবে । আর হ্যা তোমার মুরগির ঠ্যাং এ তোমার ডাক্তার হাত দেওয়া তো দূরে থাক চোখ দিয়েও দেখবে না।”
তাজেল হেঁসে বলল,,
‘তোমার পছন্দ হইলে তুমি খায়া ফালাও আমার ঠ্যাং খাওয়া লাগবো না। তহন তো তোমার মুখের হাঁসি ফোটানোর লাইগা ঐগুনা কইছি।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে তাজেলের কপালে চুমু দিয়ে বলল,,
‘আল্লাহ তাআলা আমার সব হাঁসি তোমায় দিক।”
“আমিন কমুনা আমি?”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“কেন?কেন?”
‘আল্লাহ যদি তোমার হাঁসি আমারে দিয়ে দেয় তাইলে তোমার মুখের হাঁসি থাকবো নাকি।”
“আচ্ছা ভুল হয়েছে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে আর আমাকে সবসময় হাসিখুশি রাখুক।”
“এহন ঠিক আছে। আমিন আল্লাহ আমিন একশো বার।”
মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“এবার খাওয়া শুরু করা যাক।”
‘হুম!”
মেহবিন তাজেলকে খায়িয়ে দিতে শুরু করলো তিন বার খাওয়ার সময় তাজেল বলল,,
“ও আল্লাহ আমি তো খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ কইতে ভুইলা গেছি। এহন তো সব শয়তানে খায়া নিল। এহন কি হইবো?
মেহবিন বলল,,
“আরে নেত্রী দাঁড়াও আগেই হায়হুতাশ আরো না। খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলতে
ভুলে গেলে। আরেকটা দোয়া আছে সেটা পড়।
‘ঐটা তো আমি জানি না।”
“আচ্ছা আমার সাথে পড়,,
বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
তোমাদের কেউ আহার করতে বসলে যেন বিসমিল্লাহ বলে খাবার শুরু করে। সে যদি প্রথমে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলেঃ “বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু” (খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।)
[সুনানে আবু দাউদ ৩৭৬৭, তিরমিজি ১৮৫৮, ইবনে মাজাহ ৩২৬৪]
তাজেল মেহবিনের সাথে পড়লো। তাজেল ও মেহবিন কে খায়িয়ে দিল। অতঃপর তাদের দুজনে খাওয়া শেষে তাজেল বলল তার ঘুম পাচ্ছে। মেহবিন ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তাজেল ঘুমিয়ে গেলে এরপর মেহবিন পেছনের বারান্দায় গেল। ওখানে লাইট দেয় নি অনেক অন্ধকার। ও অন্ধকারের মধ্যেই সেখানে থাকা দোলনায় বসে রইলো। চোখ দু’টো স্থির অন্ধকার হলেও যেন সবকিছুই ও দেখতে পাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওর ফোনটা বেজে উঠলো। তাজেল ঘুমে দেখে ও তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে গিয়ে ফোন ধরলো।
‘হ্যালো!”
“বারান্দা খুলো।”
মেহবিন বুঝতে পারলো মুখর এসেছ। ও বারান্দায় গিয়ে তালা খুললো। ঘরে আসতেই দেখলো তাজেল ঘুমিয়ে আছে। তাই মুখর অন্যরুমে গেল আর মেহবিনকে আসতে বললো। মেহবিন ভালো করে সবকিছু লক করলো। তাজেলের হাতের নিছে একটা বালিশ দিয়ে রুমটা ভিড়িয়ে দিয়ে এলো। আরেকটা রুমেও বিছানা আছে তবে মেহবিন ইউজ করে না বলে এমনিই পরে থাকে। তবে মেহবিন সবসময় রুমটা পরিস্কার করে রাখে। মেহবিন গিয়ে ঐ রুমের লাইট অন করে দিল। মুখর চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। মেহবিন পানি এনে ওর সামনে ধরলো। মুখর ওর হাত থেকে পানি খেয়ে নিল। মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘আপনি এখানে কেন?”
মুখর মেহবিন কে নিজের পাশে বসালো । তারপর বলল,,
‘আজকের পোস্ট টা কিসের ছিল বিহঙ্গিনী?”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘কিছু তিক্ত সত্যি অভিজ্ঞতা।”
“আমাদের পূর্নতা কি অসময়ে হয়ে গেল। অথচ এই পূর্ণতার জন্য কতটা অপেক্ষায় ছিলাম আমরা।”
“অসময়ে পূর্নতার চেয়ে অপেক্ষা শ্রেয়।”
“অসময় কেন বলছো? কি আছে এখন যে এটা আমাদের অসময়।”
‘জানি না তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এটা অসময়।”
‘তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো আমার থেকে।”
‘না!”
“আজ আমি রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনী সম্পর্কে জানতে চাই।”
“তাজেল রুমে একা আছে আজ ওর সাথে থাকতে হবে। রুপকথার কাব্যের বিহঙ্গিনী কে জানতে হলে আপনাকে অনেক সময় নিয়ে আসতে হবে মুখর শাহরিয়ার।”
“তাহলে সেই দিনটা না হয় তিনদিন বাদেই হোক।”
“ইনশাআল্লাহ আল্লাহ চাইলে সেদিনই হবে।”
“তাহলে আজ উঠি?”
‘আজ কি শুধু কাব্যের বিহঙ্গিনী কে জানতেই এসেছিলেন?”
‘হ্যা!”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“চলে যাবেন?”
‘তো কি তোমার আর তোমার নেত্রীর মাঝে এলাচি হবো নাকি। ”
মুখরের কথায় মেহবিন একটু জোরেই হাসলো। মুখর ও হাসলো। আর বলল,,
‘মাঝে মাঝে তোমাদের দুজনকে দেখে আমার হিংসে হয়। কোন রক্ত বা আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও শুধু আত্মার সম্পর্ক এতটা গভীর ভাবে গড়ে উঠে।”
‘আপনি জানেন আজ নেত্রী এখানে কেন?”
“কেন?”
“আমি শুধু বলেছিলাম আমার ভালো লাগছে না আর আমি খাবো না। এই কারনে নেত্রী তার বাড়ি থেকে খাবার এনেছে আর আমার মুখে একটু হাঁসি ফুটানোর জন্য কতোকিছু বলেছে। আর আমার সাথে থাকতে এসেছে। যাতে আমার মন খারাপ না থাকে।”
“আল্লাহ তায়ালা যেন তোমাদের দুজনকে সারাজীবন এভাবেই রাখে।”
“আমিন।”
“সুম্মা আমিন। সেদিন কি আমি নিতে আসবো?”
“না আমিই চলে যাবো। মামা গাড়ি পাঠিয়ে দেবে আমি নিজেই ড্রাইভ করে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবো।”
“কালকে তোমার ড্রেস পাঠিয়ে দেব সেটা পরেই কিন্তু যাবে।”
“ইনশাআল্লাহ!”
‘আসছি আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”
“ইনশাআল্লাহ!”
‘সেদিনের জন্য কিন্তু তৈরি থেকো বিহঙ্গিনী তার কাব্য কিন্তু তার কাছে কিছু আবদার করতে পারে।”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘ঠিক আছে।”
মুখর যেভাবে এসেছিল সেভাবেই চলে গেল। মেহবিন হেঁসে রুমে গেল। তাজেল এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে। মেহবিন ওকে ঠিক করে শুয়িয়ে দিল। নিজেও শুলো ও শুতেই তাজেল ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। মেহবিন ও কিছু না বলে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
_____________
“পার্টনার এতো সকালে ফোন করেছেন কোন দরকার?
ভোরের আলো ফুটেছে কিছুক্ষণ আগেই। মেহবিন ফজরের নামাজ হাঁটাহাঁটি করছিল। তাজেল উঠে বাড়ি চলে গেছে। এমন সময় পার্টনারের এর ফোন পেয়ে মেহবিন একটু অবাকই হয়েছে। পার্টনার বললে,,
‘আপনাকে একটা কথা বলার ছিল? যা আমাকে কয়েকদিন ধরে ঘুমাতে দিচ্ছে না।
‘হুম বলুন?”
‘নিশাচর ও তার সাগরেদদের কবে তোলা হবে।’
“যতোক্ষন পর্যন্ত না তারা নতুন কোন ভুল করছে।”
‘তার মানে তাদের পরের পদক্ষেপ না ফেলা পর্যন্ত তাদের ধরবেন না।”
‘না !”
“হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত?”
‘কারন তারা না এগুলে আমরা সরাসরি ভাবে তাদের একসাথে হাতেনাতে ধরতে পারবো না।”
“আর যদি সেরকম কিছু করার আগেই তারা অন্য উপায়ে কিছু করে মানে কারো ক্ষতি করে দেয়?”
‘তাহলে সেদিনই হবে তাদের খোলামেলা ভাবে শেষ দিন।”
“আচ্ছা!’
“হুম রাখছি আশা করি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন।”
‘হুম পার্টনার নিজের খেয়াল রাখবেন।”
“আপনিও পার্টনার।”
বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল।
______________
অতঃপর কাঙ্ক্ষিত দিনটা এসেই পরেছে মুখর আর মেহবিনের জীবনে। আজকেই সেই দিন যেদিন টা আছিয়া খাতুন মেহবিনের জন্য অনুষ্ঠান রেখেছেন। গতকালকে মুখর তার বিহঙ্গিনীর জন্য সাদা গাউন আর গোল্ডেন হিজাব পাঠিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যে হয়ে আসছে আজ মুখর মেহবিনকে একটা কল ও দেয় নি। কারন ও চায় আজ সামনাসামনিই ওর বিহঙ্গিনীর সাথে দেখা হোক। শাহরিয়ার ভিলায় আজ এলাহী কান্ড আছিয়া খাতুন নিজে তদারকি করছেন সবকিছুর জন্য। আর বাড়ির সকলে অবাক হয়ে দেখছে। সকাল বেলা আছিয়া খাতুন মেহবিনকে কল দিয়েছিল বলেছে আটটায় অ্যানাউন্সমেন্ট হবে সে যেন সাতটা বা সাড়ে সাতটায় শাহরিয়ার ভিলায় পৌঁছে যায়। মেহবিন ও বলে দিয়েছে ইনশাআল্লাহ। মুখর নিজে রেডি হচ্ছে আর আয়নায় নিজেকে দেখছে। সাদা কাজ করা পাঞ্জাবিতে তাকে ভিশন স্নিগ্ধ লাগছে। এদিকে আরবাজ কে আগেই আসতে বলা হয়েছে সেই সাথে ওর পরিবারকে। সবাই সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে গেছে। আলভি মুখর কে বলল,,
‘অবশেষে আমাদের মুখরের আজ ঈদের দিন। ইশশ বেচারা বিয়ে করেও কুমার হয়েই ছিল। শান্তিতে প্রেমটাও করতে পারছিল না।”
মুখর হেঁসে বলল,,
“তোকে কে বলল রে আলভি যে আমরা শান্তিতে প্রেম করতে পারি নি। বরং আমরা শান্তিতে প্রেম ও করতে পেরেছি আর,,
মুখরের কথায় আলভি আর আরবাজ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। আরবাজ বলল,,
“আর?”
“এই আরবাজ এই তুই না সবসময় বলিশ তুই মেহবিনকে বোনের মতো দেখিস তাহলে সেগুলো শুনতে তোর লজ্জা করবে না। তাছাড়া সম্পর্কে আমি তোর বউয়ের বড় ভাই তাই রেসপেক্ট দে।”
মুখরের কথা শুনে আলভি আর আরবাজ হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। আরবাজ কিছু বলবে তার আগে নাফিয়া আর মিশু আর মারিয়া ঢুকে পড়লো। মিশু বলল,,
“মাশাআল্লাহ পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।”
“শুকরিয়া মিশুমনি!”
“আজ তো মেয়েরা তোমার থেকে চোখই সরাতে পারবে না।”
তখন নাফিয়া বলল,,
“মিশু আপু আজকের আয়োজন টা যার জন্য তাকে দেখলে ভাইয়াই চোখ সরাতে পারে না।”
“তাই বুঝি যেভাবে সেদিন ফুলের দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন জানো আমার কি মনে হচ্ছিল পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতির চোখ বলছিল আজ শহীদ হয়ে যাবো তবুও চোখ সরাবো না।”
মিশুর কথা শুনে সকলে হেঁসে ফেললো। তখন মুখর বলল,,
‘মনে হচ্ছে পুরোনো মিশুমনি ব্যাক যে আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাতোর জন্য তৈরি থাকে।”
“তোমার কোনদিন ইজ্জত ছিল বুঝি পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি। আমি তো জানি ইজ্জত মেয়েদের থাকে।”
মিশুর কথায় সবাই আরেকদফায় হেঁসে নেয়। হুট করে মুখর সিরিয়াস হয়ে বলল,,
‘হুম হাসি মজা অনেক হয়েছে। এখন শুনো মিশুমনি তোমার ফুলকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তাকে একটা ফোন লাগাও তো। দেখো সে কোন পর্যন্ত এসেছে?”
তখন নাফিয়া বলল,,
‘কেন মিশু আপু কেন দেবে তুমি দিতে পারছো না নাকি আজ পন করেছো নো ফোনকল সামনাসামনি একেবারে!”
“এই নাফি বেশি পাকনামি করবি না বলে দিলাম।”
‘তার মানে আমার কথাই সত্যি!”
‘আমি কিন্তু এখন দাদিজানকে ডাক দেব বলে দিলাম।”
“হ্যা ডাক দাও আমরা তোমার দাদিকে দেখে ভয় পাই নাকি।”
তখন পেছন থেকে আওয়াজ এলো,,
“আমার নাতিরে জ্বালাইতেছে কি রা? আবার ডায়লগ দিতাছে আমারে দেইহা নাকি ভয় পায় না।”
মুখর পেছনে তাকিয়ে দেখলো। আছিয়া খাতুন ওনাকে দেখেই মুখর গিয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো,,
“আরে আমার দাদিজান থাকতে কার এতোবড় স্পর্ধা যে আমায় জ্বালাবে।”
‘হ এহন খুব দাদিজান যহন বউ আইসা পরবো তখন আর দাদিজান, দাদিজান থাকবো না। পরজান হইয়া যাইবো।”
আছিয়া খাতুনের কথায় সবাই হেঁসে ফেললো। এখন মুখর ও হাসলো আজ আছিয়া খাতুন কে বেশ প্রানবন্ত লাগছে। সবাই মিলে বেশ হাসি ঠাট্টা করলো। অতঃপর সাতটা বাজে দেখে সবাই নিচে গেল। মেহমানরা আসতে শুরু করেছে। তখন মেহরব চৌধুরী ও তার পরিবার এলো। এদেরকে দেখে শেখ পরিবার বেশ অবাক হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় কেউ কারো দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না। এমনকি মিশু আরবাজ ও না। শেখ শাহরিয়ার তাদের সাথে শেখ পরিবার কে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দু পক্ষই বলল তারা আগে থেকেই একে অপরকে চেনে। কিন্তু কিভাবে চেনে এটা নিয়ে কথা হলো না। অনুষ্ঠানে আসা সবার মুখে একই কথা আজ কি উপলক্ষে অনুষ্ঠান কিন্তু শাহরিয়ার পরিবারের কেউ সে বিষয়ে বলছে না সবাইকে বলছে মুখরের বউয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে কিন্তু সে কে কোথায় থাকে সে সম্পর্কে কিছু বলছে না শুধু বলছে ধৈর্য্য ধারণ করতে। এদিকে প্রায় আটটা বাজতে চললো মেহবিনের দেখা নেই। শাহরিয়ার পরিবারের সাথে সাথে শেখ ও চৌধুরী পরিবারও চিন্তিত হয়ে পড়লো। আছিয়া খাতুন মুখর কে বলল মেহবিন কে কল করতে। মুখর দাদির কথা শুনে কল করলো কিন্তু মেহবিনের ফোন বন্ধ। সবাই মেহবিনের ফোনে ট্রাই করলো কিন্তু কেউ ওকে পেল না। প্রায় নয়টা বেজে গেল মেহমানদের মধ্যে গুঞ্জন উঠলো হয়তো মুখরের বউ এই বিয়েতে রাজি না তাই আসেনি। আরো নানা কিছু। সব শুনে শাহরিয়ার পরিবার লজ্জায় পরে গেল এমনকি মুখর ও । ওর ভেতর ভিশন অস্থিরতা কাজ করলো। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে মেহবিন ঠিক নেই। আছিয়া খাতুন মুখরকে মেহবিনের হাসপাতালে ফোন দিতে বলল মুখর তাই দিল সবাই একটা ঘরে গেল। লাউড স্পিকারে দিল। ওপাশ থেকে একজন বলল,,
“হ্যালো!”
“জি ডক্টর মেহবিন মুসকান কি হাসপাতালেই আছে?”
“জি উনি তো হাসপাতালেই আর আজ এখানেই থাকবে মনে হয়।”
মুখর কিছু বলবে তার আগে আছিয়া খাতুন মুখরের হাত থেকে ফোন নিয়ে কেটে দিল আর বলল,,
“মুখর তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চল?”
“দাদি?”
“না আমি জানতে চাই তোর বউ সবার সামনে আমাগো অপমান কেন করলো?”
“দাদিজান মেহু তেমন মেয়ে নয় নিশ্চয়ই কোন ইম্পোর্টেন্ট কাজে আটকে গেছে।”
‘না তোর বউ ইচ্ছে করে করলো এইসব। তোর বউরে শর্ত দিছিলাম না এর শোধ নিল।”
“মেহু এইরকম মেয়ে নয় তুমি ভালো করেই ওকে চেনো!
‘আমি কিছু শুনতে চাই না আমার জবাব চাই কেন করলো এইডা।”
তখন মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,
“মা শান্ত হও। দেখো আমরা মেহু কে সবাই চিনি ও একরম কখনো করতে তো দূর ভাবতেও পারে না।”
“আমি কিছুই জানি না আমার জবাব চাই তাও ওর থেকেই।”
আছিয়া খাতুন বাইরে বের হয়ে সবার কাছে মাফ চাইলেন আর চলে যেতে বললেন। এদিকে শেখ পরিবার আর চৌধুরী পরিবার বেশ অবাক হলো। তাদেরকেও চলে যেতে বলল আছিয়া খাতুন। শেখ শাহনাওয়াজ কিছু আঁচ করতে পারলেন। আছিয়া খাতুন মুখরকে নিয়ে বের হবে তখন পুরো শাহরিয়ার পরিবারই জানালেন তারাও যাবে। মুখর চেয়েও কিছু বলতে পারলো না। সবাই বের হলো গন্তব্য মহুয়াপুর সরকারি হাসপাতাল। এদিকে মেহরব চৌধুরী বুঝলেন কিছু তো হয়েছে তাই তারাও একবার যেতে চাইলেন তবে একজনের মেসেজ পেয়ে তারা আর গেলেন না।
রাত এগারো টা মেহবিন এক দৃষ্টিতে সামনের শুয়ে থাকা মানুষটার হাত ধরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মেহবিন একবার নিজের দিকে তাকালো এখনো তার সাদা গাউনটায় রক্ত লেগে আছে। তখন একজন নার্স এসে বলল বাইরে তার সাথে দেখা করতে এসেছে কয়েকজন। মেহবিন মানুষটার কপালে চুমু দিয়ে বলল,,
‘ডাক্তার একটু সময়ের জন্য বাইরে যাচ্ছে। তুমি কিন্তু আবার ডাক্তারকে ধোঁকা দিও না।”
বলেই বেরিয়ে এলো। এর আগে মেহবিন কে এতো বিদ্ধস্ত অবস্থায় কেউ দেখেনি। মেহবিন কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখলো বৃষ্টি পরছে। ও অস্ফুট স্বরে বলল,,
‘অসময়ি সবকিছুই ভয়ঙ্কর যন্ত্রনা দেয়।”
ও আস্তে আস্তে এগিয়ে চললো। সামনে তাকাতেই দেখলো পুরো শাহরিয়ার পরিবার দাঁড়িয়ে আছে। ও এগুবে এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। তবুও যেন মনে হলো মেহবিন সবাইকে দেখতে পাচ্ছে ও একটু একটু করে এগুলো। আছিয়া খাতুনের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,
“দাদিজান,,”
আছিয়া খাতুন ঠাস করে মেহবিন কে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। তখনি লাইট চলে এলো। আর লাইট আসতেই মেহবিনের দিকে তাকাতেই শাহরিয়ার পরিবার চমকে উঠলো। কারন মেহবিনের সাদা গাউনটায় এমন ভাবে রক্ত লেগে আছে যেন ও গোসল করেছে রক্ত দিয়ে। মেহবিন কিছুই বললো না ও সোজা হয়ে শান্ত চোখে আছিয়া খাতুনের দিকে তাকালো। আছিয়া খাতুন কিছু বলবে তার আগে মেহবিনই বলল,,
“দেখলেন দাদিজান আপনাকে বলেছিলাম না আপনার সাথে পরের সাক্ষাতে বোধহয় থাপ্পড়ই খেতে হবে। হলোই তাই। আর যাওয়ার জন্য ইনশাআল্লাহ বলেছিলাম না। আল্লাহ বোধহয় চাইছিলেন না আমি ওখানে যাই। তাই যেতে পারি নি। তবে আমি যেতে চেয়েছিলাম এই দেখুন না আপনার নাতি এই গাউন আর হিজাব টা পাঠিয়েছিল আমি যেন এটা পরে যাই। আর দেখেন এটাও আমার গায়েই আমি তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস যেতে পারলাম না। এখন কি আমাকে আর উঠাবেন না বাড়িতে। আচ্ছা আপনি কি কাব্যকে সত্যি সত্যি আবার বিয়ে করাবেন। আচ্ছা করায়েন একজন ভালো মেয়ে দেখে যে তার অনেক খেয়াল রাখবে একদম আমার নেত্রীর মতো। আমার নেত্রী আমার যেভাবে খেয়াল রাখে সেই রকম। আচ্ছা আমার নেত্রী আমার যেভাবে খেয়াল রাখে কখনো কি আমার নেত্রীর মতো কেউ কখনো খেয়াল রাখতে পারবে। পারবে না বোধহয় তাই না। কারন নেত্রী তো একটাই আমার নেত্রী, ডাক্তারের নেত্রী!”
আজ মেহবিন কে খুব অসহায় লাগছে। ওর কন্ঠটাও কেমন যেন অসহায় লাগছে। কেউ কিছু বলবে কি মেহবিনের কথা শুনেই থেমে গেছে। মুখর সবার পেছন থেকে সামনে এগিয়ে এলো। ওর চোখদুটো ছলছল করছে। ও বুঝতে পারছে তার বিহঙ্গিনী আজ খুব ভেঙে পরেছে। মুখর এসেই মেহবিনের গালে হাত রাখলো। আর বলল,,
“বিহঙ্গিনী ঠিক আছো?”
মেহবিন মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘আমার আবার কি হবে একদম ঠিক আছি আমি। তবে জানেন কি কাব্য মানুষ বরাবরই স্বার্থপর।”
“মেহু!”
“বাড়ি চলে যান কাব্য। এখন এই বিহঙ্গিনী কোথাও যাবে না। এখন আমায় যেতে হবে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে বোধহয়।”
বলেই মেহবিন উল্টো দিকে ঘুরে যেতে লাগলো। ওকে কেউ কিছু বলবে তার আগে মুখর বলল,,
‘ওকে কেউ কিছু বোলোনা প্লিজ। ওকে আজ ওর মতো ছেড়ে দাও।”
তখন সবার সামনে দিয়ে কেউ দৌড়ে এসে মেহবিন এর পেছনে গিয়ে ডাক দিল “মুসকান”। সবাই উৎসুক হয়ে সেদিকে তাকালো। মেহবিন একবার তার দিকে ঘুরে তাকালো। সে মেহবিনকে জড়িয়ে ধরলো মেহবিন কিছুই বললো না স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ও অস্ফুট স্বরে বলল,,
“আজ সেই দিনটা খুব করে মনে পরছে। সেদিন ও আমি একা ছিলাম আজ ও একা। চারপাশে এতগুলো মানুষ ছিল অথচ মনে হচ্ছিল কেউ নেই আমার। ভেতরে ভেতরে খুব দমবন্ধ লাগছিল আর মনে হচ্ছিল সেই ছোট্টবেলায় যেভাবে মাকে হাড়িয়েছিলাম আজ আবার নতুন করে একজন কে হাড়াবো। পুরোনো ভয় গুলো খুব বাজে ভাবে আমায় তাড়া করছিল।তবে সেদিনের মতো আজ আর ঘুমানোর মতো ভুল করবো না। সেবার ঘুমিয়ে ছিলাম বলে একজন সেই সুযোগে চলে গিয়েছিল কিন্তু এইবার আমি সেই ভুল করবো না। তার হাত শক্ত করে ধরে থাকবো যেন সে আমায় ধোঁকা দিতে পারে।”
জড়িয়ে ধরে থাকা মানুষটা বললেন,,,
“আপনার নেত্রীর কিছু হবে না ইনশাআল্লাহ। নিজেকে সামলান আপনাকে অসহায়ত্ব মানায় না। এই সময় কঠোরতা আনুন তাদের যে শাস্তি দেওয়ার সময় এসে পরেছে ।”
“আমি আপাতত কিছু জানি শুধু একটু কাঁদতে চাই, হ্যা আমি একটু কাঁদতে চাই। আমার ভিশন দমবন্ধ লাগছে, আমি একটু কাঁদতে চাই।”
~চলবে,,