#কানামাছি
#পার্টঃ৩
#জান্নাতুল কুহু (ছদ্মনাম)
একটা লম্বা, সুদর্শন ছেলেকে ভার্সিটির মাঠে দেখে সাঁঝের চোখ তার দিকে আটকে গেলো। ছেলেটার গায়ে রোদ লেগে মনে হচ্ছে তার গায়ের থেকেই রোদ ঠিকরে পড়ছে। সাঁঝ নিজের চোখ ছেলেটার দিক থেকে সরাতে পারছে না। ফোনে কথা বলতে বলতে ছেলেটা হঠাৎ সাঁঝের দিকে তাকালে ওর হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। চোখ সরিয়ে নেয় সাঁঝ। একটু পরে আবার তাকিয়ে দেখে ছেলেটা নেই। সাঁঝ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার গ্রুপ সুপার সেভেনের মেম্বার আশিক, সামি, রুনা, দীপ, ইরা, শাওনকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,
—” এই ওটা কে রে?”
আশিক উত্তর দেয়,
—” চিনতে পারছি না তো। নতুন কোন স্টুন্ডেট নাকি?”
দীপ বলে,
—” আরে কোন স্টুডেন্ট না। নাহলে এতো সেজেগুজে আসতো নাকি?”
রুনা বলল,
—”কেউ একজন পিছনে গিয়ে দেখে আয় না কোথায় গেল। তাহলেই তো হয়ে গেলো”
সামি বলল,
—” তোরা থাক আমি গিয়ে দেখে আসছি”
সামি কিছুক্ষণ পরে এসে বলল,
—” প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ঢুকে গেলো তো। স্যারের রুমে এখন ঢোকা যাবে না”
সাঁঝ বলল,
—” বাদ দে। ভার্সিটির কেউ হলে পরে নিশ্চয় আসবে। তখন জেনে নেয়া যাবে কে”
এরপর সবাই যার যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো। সবাই আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টের। এখন আশিক আর সাঁঝে বাদে বাকি সবার ক্লাস আছে। সবাই চলে গেলে আশিক বলল,
—” সাঁঝ তুই দাঁড়া। তোর সাথে দরকার আছে। আমি আসছি একটু”
—” আচ্ছা”
সাঁঝ সুপার সেভেন গ্রুপের কথা ভাবতে থাকলো। এই গ্রুপটাই সেই গ্রুপ যেটা বিভিন্ন বাজে কাজ বন্ধ করার চেষ্টা চালায়। র্যাগিং, ইভটিজিং এই টাইপের কাজগুলো। তাদের মধ্যে আশিক,রুনা আর দীপ ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। আর এদের সাথে রাজনৈতিক আর প্রসাশনিক ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সম্পর্ক আছে তাই মোটামুটি সবাই সমীহ করে চলে তাদের গ্রুপকে। মেইন সাতজন তার কিন্তু কাজের সময় আরো ছেলেমেয়ে যোগ দেয়। গ্রুপে যারা জুনিয়র আছে যেমন সাঁঝ, ইরা, শাওন,সামি এরা সিনিয়রদের সম্মান করে। কেউ বলতে পারবে না তারা কোন খারাপ কাজ করেছে। তবুও ভার্সিটিতে তাদের নামে অনেক সময় খারাপ কথা ঘুরে বেড়ায়।
একটু পরে দেখলো আশিক আসছে দুই কাপ চা নিয়ে। আশিকরা সিনিয়র হলেও তুই বলে সম্বোধন করে সবাই একে অপরকে।
আশিক চা হাতে দিয়ে বলল,
—” বস কথা আছে”
—” হুম বল”
—” অনিক মাহমুদের ব্যাপারে কিছু প্রমান চেয়েছিলি।”
—” হুম। কিছু পেলি? খোঁজ নিয়েছিস?”
—” তুই ঠিক বলেছিলি। আমি খোঁজ খবর করিয়েছি। লোকটা দূর্নীতির আস্তানা একদম। ঘুষ তো তার জন্য পানি ভাত। আরো অনেক রেকর্ড আছে। আমি একটা ভয়েস ক্লিপ পেয়েছি”
সাঁঝ চমকে উঠলো। জিজ্ঞেস করলো,
—” কি পেলি? কিভাবে পেলি?”
—” আমার সাথে তো অনেক ধরনের মানুষের পরিচয় আছে। সেখান থেকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ওর বিরুদ্ধে একটা প্রমান পেয়েছি”
তারপর আশিক একটা মেমোরি কার্ড বের করে দিলো। তারপর সাঁঝের হাতে দিয়ে বলল,
—” এটার মধ্যে আছে। এখন এটা তোর”
সাঁঝ বেশ অবাক হয়ে বলল,
—” যদি অনিকের বিরুদ্ধে কোন প্রমান হয় তাহলে তুই আমার কাছে এভাবে দিয়ে দিচ্ছিস কেন? তুই তো চাইলে ওর বিরুদ্ধে একটা স্টেপ নেয়ার চেষ্টা করতে পারিস”
—” তুই শুনলেই বুঝতে পারবি কেন আমি কিছু করছি না। আর তাছাড়া এই অনিকের খোঁজ তুই আমাকে দিয়েছিলি এর সম্পর্কে তুই ইনফরমেশন চেয়েছিলি তাই তোকেই দিলাম। এখানে যা আছে সব কিন্তু সত্যি। কোন ভাওতাবাজি নেই”
—” খরচ হয়েছে কি? হলে আমার থেকে লুকাস না। আমি দিয়ে দিচ্ছি টাকা”
আশিক একটু হেসে বলল,
—” আরে না কোন খরচ হয়নি। একটু ট্রিকস খাটিয়েছি। বাকিটা ভাগ্য”
—” আচ্ছা তোকে অনেক অনেক থ্যাংস। তুই আমার খুব উপকার করলি”
—” আরে না না। আমার বিশ্বাস আছে তুই ভালো কিছুই করবি”
সাঁঝ একটু হেসে বলল,
—” হুম। থাক। আমার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। দেখি পড়ালেখার কি হাল আমার। আসি”
—” হুম যা”
সাঁঝ মেমোরি কার্ডটা ব্যাগের মধ্যে যত্ন করে রেখে দিলো। ক্লাসে ঢোকার আগে ভাবলো ক্লাস শেষে শুনবে কি আছে এর মধ্যে।
,
,
,
🌿
ইহান নিজের বাড়িতে ঢোকার পরেই মুখে আপনা আপনি একটা হাসি চলে আসলো। অদ্ভুদ শান্তি অনুভব হলো। কতদিন পরে আজ বাসার সবার সাথে দেখা হবে। বাসার কলিংবেল চাপার সাথে সাথে খুলে গেল। সামনে ছোট বোন ইশিতা দাঁড়িয়ে। তাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। ইশিতা বলল,
—” এতো দেরী করলি কেন? সেই কখন ল্যান্ড করেছিস। এতোক্ষন লাগে এয়ারপোর্ট থেকে আসতে? ফোনও ধরছিলি না!”
ইহান হেসে বলল,
—”আসলে কি বলতো তো বর খুঁজতে গিয়ে দেরী হয়ে গেলো। কেউ তোকে বিয়ে করতে চায় না যে!”
ইশিতা কয়েকটা কিল মেরে বলল,
—” সবসময় আমার বিয়ের কথা বলিস কেন বলতো? আমাকে তাড়াতে পারলেই যেনো তোর ভালো”
—” ঘাড়ের উপর একটা পেত্নী বসে থাকলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ঘাড় থেকে নামানো উচিত”
ইশিতা ভেঙচি কেটে বলল,
—” যাতে নতুন কেউ ঘাড়ে এসে বসতে পারে তাই তো?”
তারপর সে ইহানের থেকে দূরে গিয়ে বললো,
—” তোর সাথে কথাই নেই যা”
দূর থেকে নিজের দুই ছেলে মেয়ের খুনসুটি দেখে ইহানের মা মালিহা বেগমের চোখে পানি চলে আসলো। দুই বছর পর নিজের ছেলেকে দেখছে। নিজেই যেন ছেলের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। মাঝে মাঝে মনে হয় এটা তার ছেলে? এতো সুন্দর? যেমন চেহারা সুন্দর তার থেকেও ব্যবহার, হাসি, কথাগুলো সুন্দর। তার মনে হয় মা হিসেবে সে সার্থক।
ইহান মায়ের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। বলল,
—” মা কেমন আছো?
মালিহা বেগম চোখ মুছে বলল,
—” এখন কেমন আছি না? তখন কত করে মানা করেছিলাম যাস না। কিন্তু তোর তো যেতেই হতো। কতো মনে পড়ে তোর কথা জানিস?”
—” আচ্ছা এবার তো চলে এসেছি। তোমাদের সাথেই থাকবো। আর মনে পড়বে না।”
—”হুম। যা ভিতরে যা তোর বাবার সাথে দেখা করে আয়। বসে আছে তোর জন্য”
ইহান ভিতরে গিয়ে দেখলো বাবা মাহবুব রহমান বসে আছে। তার দিকে জিজ্ঞেস করলো,
—” এতো দেরী হলো যে?”
—” আমি আমার ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম।”
ইহানের বাবা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—” হঠাৎ ভার্সিটি কেন?”
—” ভিসি এর সাথে দেখা করতে”
—” কেন?”
—” বাবা আমি আমার ভার্সিটিতে লেকচারার এর জন্য এপ্লাই করেছি। সেটা নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য গিয়েছিলাম। একটা ছোট ইন্টারভিউ আছে। সেটা দেয়া লাগবে”
মাহবুব সাহেব বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—” কিন্তু তোমার তো আমার কোম্পানিতে জয়েন করার কথা ছিলো। আর তোমার নিজেরও কিছু পরিকল্পনা আছে নিজের কোম্পানি নিয়ে। তাহলে আবার লেকচারার কেন? আর হুট করে ইন্টারভিউ পর্যন্ত সব পৌঁছে গেল কিভাবে?”
—” আমার নিজের কিছু পরিকল্পনা আছে সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়ে। কিন্তু সেটা তো একদিনে হবে না। প্রচুর সময়, খাটনি,টাকা, কর্মচারী লাগবে। তোমার ব্যবসা তো অন্য সেক্টরে। এখন আমি পড়াশোনার মধ্যে না থাকলে সব ভুলে ক্রিয়েটিভিটি কমে যাবে। যেটা আমার কোম্পানির জন্য ভালো না। আর তুমি তো জানো কোন স্টুডেন্টের রেজাল্ট ভালো হলে ভার্সিটি থেকেই তাকে জব অফার করা হয়। সেখানে তো আমার দুই বছর বাইরের দেশে লেকচারার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।”
—” আচ্ছা তুমি যেমন ভালো বোঝ। All the best for your upcoming future.”
—”Thank you বাবা”
ইহান বাবার রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে আসলো। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করতে সেই সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার কথা মনে হলো। মেয়েটার চেহারা বা অন্য কিছু সে দেখেনি তাই মনেও নেই। কিন্তু অবয়বটা মনে হচ্ছে। ইহানের ইচ্ছা হলো মেয়েটাকে কোনদিন সামনে পেলে জিজ্ঞেস করবে কেন সিগারেট খায়।
বেশ কিছুক্ষণ পরে নিচে কোলাহল শুনে নিচে এসে দেখলো বড় চাচা-চাচী এসেছে। কিন্তু চাচাতো ভাইকে দেখলো না। ইহানের একটু মন খারাপ হলো। ভাইয়ের সাথে তার সম্পর্ক খুব ভালো। কিন্তু তাও ভাই আসলো না। এরপর সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসে গেলো।
,
,
,
🌿
সাঁঝ ক্লাস শেষে বের হওয়ার পরে ভাবলো এখনই অডিও ক্লিপটা শুনবে। তার আর তর সইছিলো না। সে ফোন বের করে মেমোরি কার্ডটা ঢুকাতে যাবে তখন দেখলো অনিকের ফোন এসেছে। সাঁঝের মুখটা বিরক্ততে কুচকে গেলো। আনমনে বলল, এ আবার এখন কেন ফোন দিয়েছে?
ফোন তুলে গলা যথাসম্ভব নরম করে বলল,
—” হ্যালো?”
—” ব্যস্ত আছো?”
—” না তেমন না। তুমি এখন ফোন দিয়েছো? কাজ নেই আজ?”
একটু হেসে অনিক বলল,
—” তেমন কাজ নেই। তোমার কথা মনে হচ্ছে খুব। তাই আবার ফোন দিলাম। কথা না বললেও শুধু লাইনে থাকতেও ভালো লাগে।”
সাঁঝ কিছু বললো না। অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো,
—” বাড়িতে আছো?”
—” না ভার্সিটিতে এসেছি। কেন?”
—” আজ দেখা করবা? আমার খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে তোমাকে। প্লিজ না করো না”
—” আম.. আজ? মানে আচ্ছা৷ কখন?”
—” এখনই আসো। না তুমি ওয়েট করো আমি আসছি তোমাকে নিতে”
সাঁঝ ভয় পেয়ে বলল,
—” না না তার দরকার হবে না। তুমি কোন একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসো আমি আসছি”
অনিক একটু কেয়ার দেখিয়ে বলল,
—” আমি নাহয় আসি?”
—”না তার দরকার হবে না আমিই আসছি”
এরপর সাঁঝ একরাশ বিরক্তি নিয়ে ক্যাফের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো। অডিও ক্লিপটা শোনা হলো না। ক্যাফেতে পৌছে দেখলো অনিক একপাশে বসে আছে। গায়ে খয়েরী রঙের শার্ট। সানগ্লাস হাতে নিয়ে ফোনের মধ্যে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু দেখছে। অন্য কেউ হলে দেখে ক্রাশ খেয়ে যেতো। সাঁঝ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ক্যাফেতে বসা অনেক মেয়েই ঘুরে ঘুরে দেখছে অনিককে। সাঁঝ মনে মনে বলল “আসল রুপ তো জানে না, সেজন্য এভাবে ঘুরে ঘুরে দেখছে। ”
সাঁঝ সামনে আসতেই তাকে দেখে হেসে বলল,
—” এসে গেছো? বসো”
সাঁঝ একটু কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—” কি ব্যাপার আজ অফিসে যাওনি? ইউনির্ফম নেই যে!”
অনিক হেসে বলল,
—” আরে পুলিশ বলেই কি সবসময় ইউনির্ফম পরতে হবে? আজ তেমন কাজ ছিলো না। তাই এক পাক ঘুরে এসেছি”
—” আচ্ছা”
—” কি খাবে বলো? ক্লান্ত নিশ্চয়। ঠান্ডা, গরম, না ভারী কিছু খাবে?”
—” না না হালকা কিছু হলেই হবে”
খাবার অর্ডার হলে অনিক আবার বলতে শুরু করলো,
—” জানো সাঁঝ আমার প্রায় তোমার কথা মনে হয়। তোমার পরিবারের সবাই মা-বাবা, ভাই সবাই একটা এক্সিডেন্টে মারা গেলো। তুমি তোমার ফুফুর বাসায় থাকো। তারাও খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে আমার রানী করে নিয়ে যাবো। আমার বাবা-মায়ের মেয়ে হিসেবে নিয়ে যাবো তোমাকে। ভালোবাসার কোন কমতি হবে না ওখানে। তুমি তো এখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ো। অনার্স কমপ্লিট হোক তোমার বাসায় আমি যাবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”
সাঁঝ নিজের মনে বলল, “আমার ভাইয়া এক্সিডেন্টে মারা যায়নি। তুমি মেরেছো ওকে। মিথ্যাটাকে সত্য বলে জানো। আর এটাই মানো তুমি। যখন সত্য সামনে আসবে তখন লুকানোর পথ পাবে না। আরো দুই বছর তুমি ভালো ভাবে থাকো তারপর না বিয়ের প্রস্তাব।” সাঁঝ যথাসম্ভব চেষ্টা করতে থাকলো যাতে মুখে ঘৃণার ভাব প্রকাশ না পায়। অনিক আবার বলল,
—” এরপর আমাদের ছেলেমেয়ে হবে। একটা ছোট পরিবার হবে। যাতে ভালোবাস থাকবে অফুরন্ত ”
সাঁঝের ভিতর ঘৃণার স্রোত বয়ে গেলো। তার আর অনিকের ছেলে মেয়ে! ছি! দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনা।অনিক এবার তার হাত ধরে বলল,
—” আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। আমি জানি তুমি আমার হাত ছেড়ে কখনোই যাবে না। আর আমিও প্রতিজ্ঞা করছি তোমার হাত মাঝপথে ছেড়ে যাবো না। পাশে থাকবো সবসময়”
সাঁঝ চেষ্টা করলো মুখে একটা লাজুক হাসি আনার। এরপর অনিক একটা চিকন ব্রেসলেট তার হাতে পরিয়ে দিলো। যাতে একটা ছোট হার্ট শেপের মধ্যে S.A লেখা। অনিক হেসে বলল,
—” এখন থেকে সবসময় আমার নামের আগে তোমার নাম আসবে”
ব্রেসলেটটা সুন্দর হলেও সাঁঝের কাছে এটা একটা শিকলের মতো লাগছে। সাঁঝ মিষ্টি করে হেসে বলল,
—” থ্যাংকিউ”
খাওয়া শেষ হলে বিল দেয়ার সময় অনেক জোর করে সাঁঝ অনিককে রাজী করিয়ে নিজে বিল দিয়েছে। সে অনিকের ঘুষের হারাম টাকায় খাবে না কখনোই।
রাস্তায় আসার পরে অনিকের একটা ফোন আসলে সে কথা বলতে বলতে কোন দিকে না তাকিয়ে হাঁটতে থাকলো। পিছন থেকে একটা রিকশার চাকা অনিকের পায়ের জুতায় ঠেকলো। অনিককে আঘাত করার আগেই রিকশাওয়ালা থামিয়ে দিয়েছে। অনিকের কোন ব্যথা লাগেনি। জুতায় একটু ধুলা লেগেছে। সবটা সাঁঝের সামনেই হয়েছে।
অনিক হিংস্র চোখ পিছনে তাকিয়ে রিকশাওয়ালাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে সামনে নিয়ে আসলো। রিকশাওয়ালার শার্টে কলার ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,
—” এই চোখে দেখিস না? চোখ বন্ধ করে রিকশা চালাস নাকি? ছোটলোক কোথাকার! আমাকে চিনিস? আমি কে জানিস? রিকশা গায়ের মধ্যে যে দিয়ে দিলি জানিস আমি কি করতে পারি? একদম জেলে ঢুকিয়ে দিবো। তোর বউ বাচ্চা না খেয়ে মারা যাবে”
অনিক এগুলো বলতে বলতে ক্রমাগত চড় থাপ্পড় মারতে থাকলো। সাঁঝ অনিকের এমন কাজে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে আশেপাশে। সবাই অনিককে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু অনিক ছাড়ছে না। শেষে সাঁঝ চিৎকার করে বলল,
—” অনিক ছাড়ো”
সাঁঝের কথা শুনে অনিক ছেড়ে দিয়ে হিংস্র ভাবে রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সাঁঝ রিকশাওয়ালার দিকে তাকালো। বেচারা রিকশাওয়ালা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। হয়তো চোখ ভর্তি পানি। তাই মাথা নিচু করে আছে। উনাকে দেখে সাঁঝেরও ভিতর থেকে কান্না চলে আসলো। মনে হলো এখনই ডুকরে কেঁদে উঠবে। অনিক সাঁঝের হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে আসলো। তারপর বলল,
—” এসব লোকদের মাইরের উপর রাখতে হয়। নাহলে মাথায় চড়ে বসে।”
অনিকের কথা শুনে সাঁঝের গা গুলিয়ে আসলো। মনে হলো অনিকের গায়ের উপর বমি করে দিবে। অনিক সাঁঝকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছিলো কিন্তু একটা জরুরি ফোন অনিক আসায় একাই চলে গেল। (চলবে)