কাঠগোলাপ পর্ব ৪

0
2618

কাঠগোলাপ?

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব চার

?

ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো গাড়ি ছাড়া তাদের..রেহেনা ভাবলো মাঝরাস্তায় কিছু খেয়ে নেয়া ভালো, উনি আবার ভাত আর মুরগী করে নিয়ে এসেছেন সাথে।।

“প্রান্ত সাইডে গাড়ি থামা খেয়ে নে?” রেহেনা বললো।।

“তুমি খাবার এনেছো আগে বলবা না?আমি কখনো থেকে গাড়ি চালাচ্ছি,খিদেই পেট চৌ চৌ করছে” প্রান্ত গাড়ি থামিয়ে বললো।।

“রাহি মা?উঠ,খেয়ে নে..রাস্তা এখনো অনেক বাকি!!” রেহেনা পিছন ফিরে রাহি কে ডাকছে।।

“নাহ ফুফি!!খেলে বমি কন্ট্রোল আর হবে না..এমনিতে বদ্ধ কিছুতে জার্নি করলে আমার অনেক বমি হয়,আর বাসা থেকে আজ আসার সময় বমির ট্যাবলেট খেয়ে বের হয়েছি তারপরেও এখন লাগতাছে..এখন যদি সে খায় কোনকিছু বমি করে ভাসিয়ে দিবে গাড়ি” রাহি চোখ বন্ধ করে জানালো।।

“না মা দিও না খেতে!!আমার সাধের গাড়িতে বমি করে নষ্ট করে ফেলবে!!” প্রান্ত দ্রুতভাবে বললো।।

“এই চুপ!!বেশি বকিস তুই?!” রেহেনা এক ধমক দিলো প্রান্তকে।।

“ফুফি?আমি সত্যি খাবো না,আমাদ জার্নিতে খেলে খুব প্রব হয়..তোমরা খাও??” রাহি কথাগুলো বলে আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।।

রেহেনা আর কি করবে..প্রান্তকে নিয়ে খেয়ে নিলো,গাড়ি এক সাইডে করে..মিনিট বিশেক পর গাড়ি আবারো চলছে আপন গতিতে.. প্রান্ত আড়চোখে মাঝেমধ্যে রাহির দিকে তাকাচ্ছে..হালকা সূর্যাস্তের আলোতে রাহির হলদেটে ফর্সা গাল কেমন চকচক করছে।।

“প্রান্ত ভুলে যাস না সে তোর কাজিন হয়??আর এরকম বোরিং মেয়ের দিকে ভুলেও নজর দিস না যে সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে..চোখ ফিরা..আর তোর আর ওর সম্পর্ক দা-কুমড়ার থেকে খারাপ..কিন্তু ও এতো সুন্দর কেন?” প্রান্ত আপনমনে বিড়বিড় করছে।।

ঘন্টা তিনেক পর তারা পৌশালি পুর গ্রামে,সন্ধ্যাও হয়ে গেছে..চারিদিক ঝি ঝি পোকাতে ডাকছে..গাড়িটা কোনরকমে পার্ক করে প্রান্ত নেমে আসলো..রাহি নিজের ব্যাগ নিজে ধরে আছে,প্রান্ত উঠানোর আগেই সে নিজে উঠিয়ে চলে আসে।।

“অলওয়েজ একরোখা” প্রান্ত নাক ফুলিয়ে বললো।।

প্রান্ত তার আর তার মায়ের ব্যাগ নিয়ে সামনে হাটা দিলো,রেহেনা আর রাহি একসাথে হাটছে..চারপাশে দেখে কিছু লোক দেখে মনে হলো কাজ থেকে বাড়িতে ফিরছে তারা।।

কলিংবেল বাজাতে একটা ১৮বছর বয়সী এক মেয়ে দরজা খুলোলো..দরজা খুলেই একটা চাপা চিৎকার।।

“প্রান্ত তুমি??” মেয়েটি বললো।।

পিছনে যেয়ে রেহেনা আর রাহি আছে বেচারি মনে হয় দেখে নি..প্রান্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।।

“রাশনা?প্লিজ সাইড হ?আমি অনেক ক্লান্ত” মেয়েটিকে সাইড করে প্রান্ত হনহন করে ভেতরে চলে গেলো।।

রেহেনা ফুফিকে সালাম দিলো মেয়েটি তারপর রাহির দিকে এক নজর তাকালো..নজরের পর্ব শেষ হলে তার রেহেনা ফুফি কে নিয়ে সে ভিতরে গেলো।।

রাহি ভিতরে ঢুকে দেখলো গ্রামের বাড়ি হলেও বাড়ির ভিতর সাজ সজ্জায় ভরপুর.. হয়তো এই বাড়ির প্রথম মেয়ের বিয়ে বলে কথা..আস্তে আস্তে গুটিকয়েক পায়ে সে ভিতরে প্রবেশ করছে..সে দেখলো রেহেনা ফুফির মতো এক মহিলা এসে ফুপি কে সালাম দিলো..কথার ধরন দেখে যা মনে হলো ইনিই ফুফির ননদ।।

“কেমন আছো রাহি মা?” রিজিয়া জিজ্ঞেস করলো।।

এইভাবে নানান কুশলাদি আদায় হতে লাগলো দুই ফ্যামিলি,আর প্রান্ত ভাইয়া সোফায় চিত হয়ে শুয়ে পরেছে..রাহি এক নজর তাকিয়ে,আবারো তাদের কথার মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নিলো।।

রাহিকে দেয়া হলো একটা ঘর সেখানে বাড়ির কর্নারে আছে..মোটমুটি ঘরটা পরিপাটি.. রাহি ব্যাগ থেকে নিজের হলুদ সালোয়ার কামিজ বের করে,ফ্রেশ হতে চললো..রাহি যখন ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসলো তখন দেখলো ঘরে আতরের সুবাস মন মাতানো..ঘরে হুট করে আতরের সুবাস??রাহি ঘর থেকে বের হয়ে গেলো,অন্যের বাড়ি বেশিকিছু ভেবে কি হবে..ঘর থেকে বের হয়ে ডাইনিং গেলো সে,রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিলো সে..ভাগ্যিস সামনে প্রান্ত ফোনে কথা বলছিলো ওর পিছু পিছু সে এসেছে।।

ডাইনিং এ বসে সবাই যে যার মতো খাচ্ছিলো..খাবারের আইটেম ও অনেক..বাড়ির লোকের কথা শুনে মনে হলো কালকে থেকে মেহমান আসা শুরু হবে..ঘর ভর্তি মানুষে গিজগিজ করবে।।

“মা?তোমার ভাতিজিকে বলে দিও এলোকেশী কন্যা সেজে এখানে এসেও যেন শোক পালন না করে জানালার কাছে বসে??প্রান্ত তার মাকে বললো।।

” চুপ তুই” রেহেনা বললো ফিসফিস করে।।

রাহি সব শুনতে পেয়েছে কিছুই বললো না..এই লোক যে তাকে দেখতে পারে না সেটা তার কাছে অজানা না..তাই তার বলা কথাগুলো গায়ে মাখিয়ে লাভ নেই।।

সেদিনের মতো খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে যে যার ঘরে চলে গেছিলো..রাহিও নিজের রুমে যেয়ে, বিছানায় যেয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুম দিলো..নতুন জায়গাতে ঘুম আসতে দেরী হচ্ছিলো তার..ঘন্টা দুয়েকের মাঝে সে ঘুমিয়ে গেছে।।

সকালবেলা,

সকাল ৮টায় রাহির ঘুম ভাঙলো বাবার কলে..এতোক্ষন ঘুমিয়েছে সে,ভাবতে মাথা চক্কর দিচ্ছে..বাবার সাথে টুকিটাকি কথা সেরে,ফ্রেশ হয়ে নিলো..রাতের জামা চেঞ্জ করে সাদা জামা পরে নিলো..ধুতি পায়জামা,সালোয়ার কামিজ..নিচে এসে দেখলো সবার অলমোস্ট নাস্তা খাওয়া শেষে..কি একটা বেশরম পরিস্থিতি..রাহিকে দেখে রেহেনা এগিয়ে এসে নাস্তার প্লেট দিলো..সোফায় বসে নাস্তাটুকু খেয়ে রাহি রুমের দিকে যাবে,তার আগে একটা পিচ্চি ছেলে হাত ধরে টানলো।।

“এই সুন্দরী পরি?আমার সাথে খেলবা?” ছেলেটা বললো।।

“ছেলেটার বয়স খুব করে ৪-৫ হবে?তোমার নাম কি?” রাহি মুচকি হেসে হাটু গেড়ে বসে ছেলেটার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বললো।।

“আমার নাম নিভ!!বলো না পরী তুমি খেলবা আমার সাথে?” নিভ বললো।।

“আচ্ছা?আমাকে পরি মনে হয় কি দেখে তা শুনি?আমার ত ডানাও নেয়?” রাহি নিজের ঠোট উল্টিয়ে বললো।।

“তোমার মতো সুন্দর আমি দেখি নাই এইজন্য!!আর মা বলে যে সুন্দর সবচেয়ে বেশি সে পরি হয়??আমার কাছে তুমি পরী” নিভ বললো কুটিকুটি দাত দিয়ে।।

“আচ্ছা?চলো কি খেলবে??আমি ত এখানকার কিছু চিনি না??আমি ত মেহমান পিচ্চি?” রাহি উঠে দাড়িয়ে বললো।।

“তুমি চলো ত আগে?” নিভ বলে রাহির হাত ধরে হাত টানতে টানতে নিয়ে গেলো।।

নিভ যেখানে নিয়ে গেলো সেখানে একটা ছোট বাগান আছে,সেখানে হরেক রকম ফুলে ভরা..নিভের সাথে আরো তার বয়সী কয়েকটা বাচ্চা খেলছে,সেখানে যেয়ে রাহি কি খেলবে ওদের সাথে বুঝতে পারছে না..তারা দেখি ছোটাছুটি খেলছে,দেখতে তাদের ভালোই লাগছে এক প্রকার।।

রাহির নজর গেলো বাগানের এক পাশে একটা ফুলের উপর..ফুল টা তার পছন্দের খুব..কাঠগোলাপ কি সুন্দর গুচ্ছ হয়ে এক জায়গাতে আছে অনেকগুলো,রাহি হাত দিয়ে একবার ছুয়ে দিলো।।

এইভাবে তাদের সাথে রাহিও খেলতে লেগে পরেছে..এরই মাঝে নিভ কাঠগোলাপের একটা ক্রাউন করে রাহির মাথায় পরিয়ে দিলো,আশেপাশে যারা ছিলো সবাই এই বাচ্চার কাজ দেখে হেসে দিছিলো..আমিও অবাক হয়েছি নিভের এরকম কাজ দেখে..নিভ হলো রিজিয়া ফুফির দেবরের ছেলে,তারাও বিয়ে খেতে এসেছে।।

“পরী তুমি ছুটো আমি তোমাকে ধরি?” নিভ বললো।।

“আচ্ছা?পরে গিয়ে ব্যাথা পেলে?” রাহি বললো।।

“আমি প্রতিদিন হরলিক্স আর দুধ খাই?আর আমি মাম্মা’স স্ট্রং বয়,কিছু হবে না তুমি যাও” নিভ বললো কোমরে হাত দিয়ে।।

রাহি নিভের এরকম কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে..এমনিতে রোদে তাদের সাথে খেলতে যেয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার,রাহি আবার ছুট দিলো..মাথায় তার এখনো কাঠগোলাপের ক্রাউন।।

দৌড়াতে দৌড়াতে সে এক পর্যায়ে বাড়ির লম্বা রাস্তায় চলে আসছে..পিছন ফিরে নিভ কে দেখতে যেয়ে রাহি খেলো এক ধাক্কা,ধাক্কা খাওয়ার ফলে সে নিচে পরে গেছে।।

রাহি চোখ তুলে তাকালে দেখে একটা পুরুষ তার সামনে..ঠিক পুরুষ না সুদর্শন পুরুষ..উজ্জল শ্যামলা গায়ের রঙ,ফর্সাই কিন্তু খুব দুধে আলতা তা না চাপা ফর্সা এইজন্য উজ্জল শ্যামলা..চাপ দাড়ি,চুলগুলো ভীষন ঘন হওয়ার কারনে উপরের দিকে তুলে রেখেছে… আর সবচেয়ে যা আর্কষণীয় যা ছেলেটার মধ্যে তার ধূসর চোখের মনি…গায়ে তার জিম করা বডিতে পার্ফেক্ট টি-শার্ট, থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পরে আছে..দেখতে মাশাল্লাহ একজন সুদর্শন পুরুষ(লেখিকার ডেসক্রিপশন)।।

রাহি ঘেমে যাওয়ার কারনে গলাতে তার চুলগুলো কেমনভাবে লেপ্টে আছে..কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম..দৌড়াবার কারনে শ্বাস ওঠানামা হচ্ছে তার..ছেলেটা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে,রাহির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে লম্বার নিঃশ্বাস নিলো।।

“মীরা!!” ছেলেটা বিড়বিড় করে বলে হালকা হেসে ওই জায়গা প্রস্থান করলো।।

রাহির খেয়াল হলো নিচে পরে যাওয়ার কারনে ওড়নাটাও সরে গেছে কোন ফাকে নিচে পরে গেছে সে বুঝতে পারে নি..ছেলেটা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে চলে গেলো।।

চলবে?

কেমন লাগছে জানাবেন??গঠনমুলক কমেন্ট করবেন যেন আমি উৎসাহিত হয়ে পরের পর্ব দেয়ার জন্য আরোবেশি উত্তেজিত থাকি,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে