কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব দুই
?
“প্রতিদিন গ্রিল ধরে নিজের শোক রাস্তার মানুষকে দেখানো কি তোর প্রত্যেক দিনের কাজ?” ছেলেটি বলে উঠলো।।
রাহি নখ কাটছিলো নেইল কাটার দিয়ে চোখ তুলে দেখলো প্রান্ত ভাইয়..ফুফির ছেলে উনি,পড়াশোনা কমপ্লিট করে একটা কোম্পানিতে ভালো পজিশনে আছেন..উনি প্রায় আমাকে এইটা সেইটা নিয়ে তুই তুকারি মেজাজ দেখায়..আমি উনার কথাতে মুখ তুলে তাকিয়ে,সেখান থকে উঠে নিজের ঘরে যেয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।।
“কত বড় সাহস তোর??আমার মুখের উপর দরজা লাগাস??দাড়া আজকে মামু আসুক শুধু??মামুর লাই পেয়ে পেয়ে একদম উড়তে শিখে গেছিস” প্রান্ত চিবিয়ে চিবিয়ে কথাগুলো বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলো অফিসের টাই খুলতে।।
আমরা যেহেতু ফুফির বাড়ির নিচ তলা ভাড়া নিয়ে আছি,তাই আমাদের বাড়ির দরজার সামনে..আমার হাতের নখগুলো কাটছিলাম নেইলকাটার দিয়ে,আর উনার অফিস থেকে আগমন..অফিস থেকে বাড়ির ভিতর না ঢুকে,আমার সাথে তার পকপক করতে হলো।।
প্রান্ত নিজের ঘরে এসে নিজের অফিস ব্যাগ ছুড়ে মারলো বিছানাতে,জুতা, টাই কোর্ট এইভাবে চারিদিকে ছিটিয়ে ফেলছে..মেজাজ গরম হয়ে আছে তার..রাহি প্রায় তার সাথে এরকম করে,সে যদি কোন কথা বলে তাকে পিঠ দেখিয়ে ধুমধাম করে ঘরে ঢুকে যাবে??কেন সে বাঘ না ভাল্লুক??আর ওর মুখে প্রান্ত যদি বোম মেরেও দেয় তারপরেও তার মুখ দিয়ে কথা ফুটবে না..সবসময় এমন প্রেতাত্মার মতো গ্রিল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে থাকবে,আর জিজ্ঞেস করলে মুখে তালা লেগে যায়।।
“ডিসগাস্টিং” প্রান্ত চিল্লিয়ে বলে কফির মগ ফেলে রেখে চলে গেলো।।
রেহেনা(রাহির ফুফি) দৌড়ে উপরে আসলেন,দেখলেন ছেলের রাগ বেচারা কফির উপরে তুলেছে..তিনি বুঝতে পারছেন না এমন রগচটা ছেলের কপালে কোন বাড়ির মেয়ে তাকে তার বাড়ির বউ করতে দিবে..বুয়া ডেকে পরিষ্কার করিয়ে নিলো প্রান্তর রুমটা।।
প্রান্ত গোসল সেরে ডাইনিং এ খেতে আসলো,মাথার চুল এখনো ভিজা..এই ছেলে এই এক অভ্যাস,মাথার চুল না মুছেই টাউজার আর টিশার্ট পরেই বের হয়ে আসবে..চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পরলো,রেহেনাও আসলো তার হাতে খাবার নিয়ে।।
“মাথা মুছা কখন শিখবি?রেহেনা জিজ্ঞেস করলো।।
” আমাকে শিখানোর আগে তোমার ওই নবাবজাদী ভাগ্নিকে বলে আসো রাত বিরাতে এলোকেশী কন্যা হয়ে গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে শোক পালন না করতে?”প্রান্ত এক নিঃশ্বাসে রেগে হরবর করে বলে দিলো।।
রেহেনা বুঝলো প্রান্ত আজ আবারো রাহির উপরে রেগে আছে..সে তার ছেলেকে বুঝাতে পারে না,ওই ওর ঘরে যা পারুক তা করুক এই সব বিষয়ে নাক গলাবে কেন??কিন্তু প্রান্ত রাগ চটা স্বভাবের জন্য কিছু বলতে পারে না।।
রাহি চুল খোপা করে ফুফির জন্য ক্ষীর নিয়ে এসেছিলো..ক্ষীর তার বাবার খুব পছন্দ যখনি সে ভালো কিছু বানায় তার ফুফির জন্য সে নিয়ে আসে..দরজাতে দাড়িয়ে ক্ষীরের বাটি নিয়ে প্রান্তর বলা সমস্ত কথা শুনেছে সে,এখনো স্থিরভাবে দাড়িয়ে আছে..ডাকবে সে সুযোগ টাও এসে পায় নি।।
রেহেনা পিছন ফিরে রাহিকে দেখে চমকে গেলো,অপ্রস্তুতবোধ করছে রাহির সামনে..সব শুনে ভাগ্নি যদি কষ্ট পায়??।।
“আরে রাহি মা যে??কখন এলি আর হাতে কি??” রেহেনা আমতা আমতা সুরে রাহির কাছে এগোলো।।
প্রান্ত তখন খাওয়া বন্ধ করে দিলো তার মার মুখ থেকে রাহি নামটা শুনে..রাহিকে দেখে তার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো,উঠে দাড়িয়ে গেলো সে।।
“পারমিশন নিয়ে যে ঘরে আসতে হয়,এই শিক্ষাও পায় নাই??আজীবন শোক পালন করার শিক্ষা পেয়ে গেছিস তুই??” প্রান্ত বললো।।
“ফুফি আমি বাবার জন্য তার ফেভারিট ক্ষীর রান্না করেছিলাম,ভাবলাম তোমাকেও দিয়ে যাই??এখন আসি আমি” রাহি প্রান্তর কথাগুলো শুনে কিছু না বলে রেহেনাকে ক্ষীরের বাটি দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে।।
“হ্যা তোর ক্ষীর খাওয়ার জন্য বসে আছে যে??তোর ক্ষীর না খেতে পেলে আমরা যাবো?” প্রান্ত রাহির ইগনর কখনো মেনে নিতে পারে না,এখনো এভোয়েডনেস দেখে সে চেতে যেয়ে কথাগুলো বললো।।
“আহ হা?প্রান্ত তুই চুপ করবি??” এইবার রেহেনা বিরক্তি সুরে বললো।।
“কেন আমি চুপ করবো??আমি কি কারো মতো বোবা নাকি??যে সবসময় নিজের শোকপালন করতে থাকবো?” প্রান্ত রাহির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।।
রাহি পেছন ফিরে এসে,আস্তেধীরে একটু করে প্রান্তর কাছে আসলো..রাহির এমন তার সামনে আসা প্রান্তকে ভড়কে দিলেও সে নরমাল থাকলো।।
“প্রান্ত ভাইয়া??খুব গরম পরেছে তাই না??আমি জানি আপনাদের Samsung নতুন ফ্রিজ কিনেছেন,সেখানে নিশ্চয় ফুফি আপনার মতো রগচটা মানুষের জন্য ঠান্ডা পানি রেখেছে?সেটা খেয়ে মাথার মধ্যে যে আগুনের ক্লাব খুলে বসে আছেন না??পানি খেয়ে তা ঠান্ডা হয়ে যাবে??আমার শোকসভার দেখার দায়িত্ব আর নিয়েন প্রান্ত ভাই,অনেক ত এসিস্ট্যান্টগিরি করলেন??আমার ত টাকা নাই যে আপনাকে বিনা বেতনে পুষবো??” রাহি এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে রেহেনার ডাইনিং ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।।
প্রান্ত এদিকে শকে চলে গেছে কারন রাহির আসা এখানে এক বছরের বেশি হয়ে গেলো সে প্রান্তকে দুচোখ তুলে দেখে নি,আর এতোগুলো কথা বলে চলে গেলো..রাগে প্রান্তর কান গরম হয়ে আসছে।।
“দেখছো মা তোমার ভাগ্নি কি পরিমান বেয়াদব??বড়দের মুখে মুখে জবাব দেয়??” প্রান্ত রাগে গজরাতে গজরাতে ডাইনিং ত্যাগ করলো।।
রেহেনা বেগম অবশ্য অনেক খুশি হয়েছেন মনে মনে যে আজকে তার রগচটা খেলেকে রাহি একদম মোক্ষম জবাব দিয়েছে..তিনিও খেতে বসে গেলেন,তার প্রেশারের ওষুধ নিতে হবে যে।।
রাহি নিজের রুমে এসে তার বাবাকে কল দিলো,যে তিনি কতদূর অব্দি পৌছালো..১৫মিনিটের মাঝে আসবে তার বাবা তাকে জানালো।।
রাহি নিজের ঘরে ওয়ারড্রব গুছাতে তার হাতে মেরুন কালারে জামা হাতে পরলো,জামা হাতে নিয়ে তার অতীতের একটা অংশ উকি দিলো।।
ফ্ল্যাশব্যাক,
মেরুন কালারের জামা বানিয়েছে রাহি,রাহির ফর্সা শরীরের অনেক মানিয়েছে..তার বাবা এনে দিয়েছে নিউ মার্কেট থেকে,উনার যখন যা পছন্দ হয় তাই নিয়ে আসে মেয়ের জন্য।।
রাহি নতুন কিছু যাই কিনুক না কেন মিথিলাকে জানাতে ভুলে না,তাই সে তাৎক্ষণিকভাবে মিথিলাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো যে তার বাবা তার জন্য নতুন জামা এনেছে..এই নিয়ে টুকটাক অনেক কথা বললো।।
রাহি পরের দিন সেই নতুন জামা পরে কলেজে গেলো,সেখানে গিয়ে দেখলো সামির মিথিলার সাথে কথা বলছে..তার পরনেও মেরুন কালারের জামা।।
“তোমরা এখানে??” রাহি জিজ্ঞেস করলো অবাক হয়ে।।
“ইয়ে মানে,আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম তখন দেখি মিথিলা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে তাই আমিও তোমার জন্য অপেক্ষা করছি” সামির অপ্রস্তুতভাবে জবাব দিলো।।
মিথিলার মুখের রঙ উড়ে গেছে রাহিকে দেখে,একে ত রাহিকে তার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে..মেকাপ ছাড়াও রাহি পরী!!অথচ সে এতো সুন্দর করে সেজে এসেও রাহির মতো সুন্দর লাগছে না।।
“তোমরা আমাকে কত ভালোবাসো” রাহি খুশি হয়ে বললো।।
এদিকে সামির আর মিথিলার ও বুকের উপর থেকে মনে হচ্ছে ভয় কেটে গেলো।।
সামির সাইডে রাহি মাঝে আর তার পাশে মিথিলা..তিনজন মিলে একসাথে হাটছে..সামিরের পাশে রাহিকে দেখে মিথিলা চোখ মুখ কেমন বিশ্রি করে আছে..তখনি রাহির অগোচারে সামির পিছন দিক থেকে মিথিলার হাত ধরে,রাহি এদিকে আপনমনে টুকিটাকি কথা বলে হাটে।।
বর্তমান,
ঘড়ির কাটার আওয়াজে তার পুরোনো স্মৃতি থেকে ফেরত আসলো..সেদিন ও বুঝতে পারে নি তার উপস্থিতে তার অগোচারে তাদের প্রেম চলছিলো।।
“কলসের পানির মতো পরিপূর্ণ হতে চেয়েছিলাম”
“সেখানে তারা আমাকে শুন্যতার গহবরে ফেলে দিয়েছে”
চলবে?
কেমন লাগছে জানাবেন??গঠনমুলক কমেন্ট করুন যেন আমি উৎসাহিত হয়ে, পরের পার্ট দ্রুত লিখতে পারি..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।