কাঠগোলাপ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব এক
?
আমার চোখের সামনে আমার ভালোবাসা এক মেয়ের সাথে গভীর চুম্বনে লিপ্ত আছে..আমার চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে..তারা যে আমাকে দেখিয়ে এই চুমুর প্রতিভা প্রদর্শন করছে??আমার সামনে যারা এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছে তা হলো আমার প্রাক্তন সামির এবং তার সাথে যে মেয়েটি এই সাদৃশ্যের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে তা হলো আমার কলিজার টুকরা বান্ধবী মিথিলা..আশ্চর্য লাগছে তাই না??তাহলে আমার কথাই ভাবেন,আমার কেমন লেগেছে.. তারা আমার সামনে এইভাবে নিজেকে জড়িয়ে ধরে এইভাবে উজাড় করে ভালোবাসে একেবারে??
আমি ইশরাতুল ইসলাম রাহি..অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি সাইকোলজি নিয়ে..আমার বয়স ১৯..আমি আমার বাবার একমাত্র পুতুল,আমার বাবার নাম রুবেল ইসলাম..মাকে জ্ঞান হবার পর পাই নি,বাবার কাছ থেকে শুনেছি মার খুব বড় অসুখ হবার কারনে মা আমাদের ছেড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছে..কিন্তু আমার বাবা আমাকে রেখে বিয়েও করেন নি দ্বিতীয়বার..আমাকে মানুষ করার জন্য উনি সবসময় আমার কথাকে প্রাধান্য দিতেন,যা চাইতাম চোখের সামনে এনে দিতেন..কিন্তু আহ্লাদী ছিলাম না কখনোই..আমার বাবা কোম্পানিতে ম্যানেজার ডিরেক্টর পদে আছেন..আমার বাবা আমার চোখ মুখ পরে বুঝে নেয়,আমি কি চাই??।।
যে আমার সামনে চুমু দেখাতে ব্যস্ত সে আমার প্রেমিক,ওহ হো দুঃখিত আমার প্রাক্তন..আমার সাথে তার তিন বছরের সম্পর্ক.. সেই এস.এস.সি র পর থেকে রিলেশনে ছিলাম..আমার মনে হতো দুনিয়াতে আমাকে সবচেয়ে যদি কেও ভালো বুঝে তা হলো সামির আর আমার বান্ধবী মিথিলা..কিন্তু তারাও যে একে অপরকে এতো ভালোভাবে আমার জানা ছিলো না।।
“ত??কেমন লাগলো আমাদের একসাথে দেখতে??নিশ্চয় খুব মানিয়েছে তাই না??” সামির এই কথা বলে মিথিলার ঠোটে আরেকবার শব্দ করে চুমু খেলো।।
“আউচ??বেবি!ধৈর্য্য ধরো??এখন আমার বেষ্টফ্রেন্ড উফফ তোমার এক্স দাড়িয়ে আছে তাকে শান্তনা দেও??” মিথিলা রাহিকে খোটা মেরে বললো।।
“শুনো??তোমাকে তিন বছর ধরে বেডে আনার চেষ্টায় ছিলাম??কিন্তু তুমি ইমোশনাল ফুলের মতো আমার এই কামনাকে ভালোবাসা হিসেবে ধরে নিয়েছো??তুমি যা দিতে পারো নাই,তা আমাকে মিথিলা দিয়েছে??দেখছো কে বলবে এই তোমার কলিজার টুকরা বান্ধবী??” সামির অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।।
সামির আজকে আমাকে এখানে ডেকেছে,বিয়ের প্রোপোজাল দিবে এইজন্য..আমিও খুশি হয়ে নাচতে নাচতে চলে এসেছি,কিন্তু আগে থেকেই তারা প্রি প্ল্যান করে আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো যে আমি সত্যি ইমোশনাল ফুল একটা।।
সামির হাটু গেরে মিথিলাকে বিয়ের জন্য প্রপোজাল করলো,রাহি চলে যেতে লাগলে..মিথিলা তাকে আটকে দাড়ালো।।
“বেষ্টফ্রেন্ড তার এক্সের থেকে বিয়ের প্রপোজাল পাচ্ছে..সে কিনা তা না দেখে চলে যাচ্ছে??নট ফেয়ার!” বলেই আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে..তাদের প্রপোজাল দেখালো, সামির মিথিলাকে আংটি পরিয়ে..আবারো তাদের চুমুতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।।
রাহির মনে হচ্ছে পা চলছে না,কোনমতে রিক্সা নিয়ে বাড়ি আসলো সে..চাবি দিয়ে ভিতরে ঢুকে ডুকরে কান্নায় ফেটে পরলো সে..বুকের বা পাশটায় যে ভীষনভাবে চিনচিন ব্যাথা করছে কি হবে এটার??
রাতেরবেলা,
আজকে রাতের খাবার খেতে আসে নাই রাহি..রুবেলা সাহেব চিন্তায় পরে গেছে,তার হাসিখুশি থাকা মেয়ে এমন নেতিয়ে গেছে কেন??
অনেকক্ষন নিজের ঘরে পায়চারি করে রুবেল সাহেব থামতে না পেরে রাহির ঘরে গেলো..রাহি তখন বেডের নিচে বসে দুই হাত ভাজ করে ডুকরে কেদে উঠছে..সে যে কাদতে কাদতে কেপে উঠছে রুবেল বুঝতে পারলো..তার বুকটাও কেমন চিনচিনে ব্যাথাতে উঠে গেছে,দ্রুত পদে মেয়ের কাছে আসলো তিনি।।
“কি হয়েছে আমার মায়ের??বল বাবাকে??কেও কিছু বলেছে??কি লাগবে বল??” রুবেল অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করছে।।
রাহি কিছু বলছে কিন্তু রুবেল কে ধরে হাউমাউ করে কেদে উঠলো,মেঝেতে বসা অবস্থায় রুবেল মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো..রাহি কিছু বলছে, শুধু এক ধারে কেদেই চলে যাচ্ছে।।
“বাবা আমি শহরে থাকবো না,প্লিজ তুমি আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চলো??আমি এখানে থাকলে মরে যাবো প্লিজ বাবা” রাহি তার বাবাকে ধরে কাদতে কাদতে বললো।।
“যাবো মা,আমি সাতদিনের মধ্যে আমার বদলীর ব্যবস্থা করছি..চিন্তা করিস না তুই একদমি” রুবেল রাহিকে এইসব বলে শান্তনা দিতে লাগলো,রাহি অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে নইত কখনো এই শহর ছাড়া নাম নিতো না..তার মেয়ে যা চাইছে,তাই দিবেন উনি।।
সাতদিন পর বাবা ঠিক বদলি নিয়ে চলে গেলেন উনি সিলেটে..সিলেটে একটা ফুপি আছে আমাদের,উনার বাসার নিচ তলাতে আমি আর বাবা উঠলাম..বাবা মেয়ের মতো নিজেদের সংসার সাজালাম।।
এক বছর পর,
জানালার গ্রিল ধরে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি..আকাশে মেঘের খেলা চলে,বিদ্যুৎ চমকায়..কিন্তু আমার মনে যে এক বছর আগে তুফানটা চলেছিলো সেটা এখনো বইছে..সামির আর মিথিলা আমার সাথে যা করেছে আমি কখনো ভুলতে পারবো না আর না মাফ করতে।।
এই একটা বছরে আমার আমিকে অনেক চেঞ্জ করেছি,চঞ্চল স্বভাব থেকে লক্ষী শান্ত মেয়েতে পরিনত হয়েছি..বাস্তবতাকে মানতে শিখেছি..রান্না করা শিখেছি,পড়াশোনাতে মনোযোগ দেয়া শিখেছি..কিন্তু এই চেঞ্জ হওয়া আমি টাকে বাবা যে মনে মনে মেনে নিতে না পেরে মনে মনে কষ্ট পায় আমি জানি কিন্তু কি আমার যে আর পুতুল পুতুল খেলতে ভালো লাগে না!!
চলবে?
নতুন গল্প কেমন লাগছে জানাবেন??গঠনমুলক কমেন্ট করে উৎসাহিত করবেন যেন পরের পর্ব আমিও লিখে আপলোড দেয়ার জন্য তাড়াতে থাকি,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।