কাছে_কিবা_দূরে পর্ব-০২

0
380

#কাছে_কিবা_দূরে
পর্ব-২
মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বাড়িতে আবারও প্রাণ ফিরে এলো। শুভ্র আর তানির বিয়েটা হয়ে গেছে। বিয়ের আগে খাবার খাওয়ার রেওয়াজ নেই বলে আগে বিয়ে পড়ানো হলো। বিয়েতে তানির সাজগোজ তেমন কিছু ছিলো না। জলপাই রঙের শাড়ী পরেছে, চোখে একটু কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক। তবুও সেই সাজে অপরুপ দেখালো।

তাসলিমার শরীরের ক্লান্তিভাব ও দূর হয়ে গেল। রান্নাঘরের তদারকি করছে হাসিমুখে। ফরহাদ সাহেব খুশিমনে পান চিবুচ্ছে আর ঘরে পায়চারি করছে। সাবিনা ও দরদী গলায় বলছে, আম্মা তানি তো সারাদিন কিছু খায় নি? ওরে তো কিছু খাওয়ান দরকার। তাসলিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বর আসছে না এই টেনশন সবাই করলেও লুকিয়ে চুরিয়ে অনেকেই খেয়ে ফেলেছে। ফরহাদ সাহেব ক্ষিদে সহ্য করতে পারে না, তাই সেও খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া হয় নি শুধু তাসলিমা আর তানির। তাসলিমা একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে মেয়ের ঘরের দিকে রওনা হলো। মেয়েটা শ্বশুর বাড়ি যাবে, এরপর হুটহাট আসবে বেড়াতে। শেষ খাওয়া টা মায়ের হাতে তৃপ্তি করে খাক।

আজকের দিন টা তানির কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সকালে উঠেও অন্য দিনের মতো সাদামাটা মনে হয়েছিল। কিন্তু শেষ বিকেল টা! এতো টা চমক ও জীবনে অপেক্ষা করেছিল! তানির হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বারবার। আচ্ছা শুভ্রর কী ওর সাথে দেখা হওয়ার দিন টার কথা মনে আছে? না থাকার সম্ভাবনা ই বেশী। তানি তখন মাত্র এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে ঢাকা বড় খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। শুভ্ররও তখন বয়স কম। বোধহয় ইউনিভার্সিটি তে পড়তো। জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথেই তো দেখা হয়। কজন কে ই বা মানুষ মনে রাখে! তাছাড়া তানি দেখতে তখন কিছুটা হ্যাংলা, পাতলা বোকা বোকা চেহারার ছিলো। এখন বেশ পরিবর্তন এসেছে। চেহারায় একটা ধার এসেছে। এখন আর রোগাও নেই। কিন্তু শুভ্র আগের মতোই আছে। সেই চশমাওয়ালা চোখ, কথা বলার ধরন, পেটানো শরীর, লালচে ঠোঁট। একটুও বদলায় নি।

তাসলিমা খাবারের প্লেট তানির সামনে রেখে বললেন, নে মা খা একটু। সারাদিন তো কিছু খাস নাই।

তানি স্মিত হেসে বলল, মা তুমিও তো কিছু খাও নি। চলো একসাথে খাই।
তাসলিমার চোখে পানি এসে গেল। এতো লক্ষ্মী মেয়ে তার! তবুও এই বয়সে কতো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মেয়ের মুখের দিকে ঠিকঠাক তাকাতেও পারে নি এতোকাল। এখন যেন মেয়েটা শান্তিতে থাকে।

****

শুভ্রর ঘুম পাচ্ছে খুব। গতকাল রাত টা নির্ঘুম কেটেছে, সেই সাথে সারাদিনের ঝামেলা। মনে হয় খাওয়াও বেশী হয়েছে। মাত্র কিছুক্ষণ হলো এই বাড়ির জামাই হয়েছে। এরমধ্যে কী ঘুমাতে চাওয়া টা কী অন্যায় হবে! হওয়ার কথা না। তাছাড়া শুভ্র’র রাখডাক নেই। তানির কাছে খাবারের কথা বলতেও ওর কোনো সংকোচ হয় নি৷ তাই ঘুমের কথাও বলা যায় নির্দিদ্বায়। কিন্তু তানিকে আশেপাশে কোথাও দেখছে না। বসার ঘর থেকে ভেতরে বেশ কয়েকবার উঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত কিছুই দেখতে পারে নি।

শুভ্র’র মোচড়ামুচড়ি দেখে অভ্র ফিসফিস করে বলল, ভাইয়া বিয়ের ফিলিংস কেমন?

“ঘুম ঘুম ভাব হচ্ছে?”

অভ্র হাসি চেপে বলল, এইজন্য এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবীকে খুঁজছো?

“উঁহু তানিকে খুঁজছিলাম”।

“তোমার তানি কিন্তু আমার ভাবী হয়।”

শুভ্র চকিতে বলল, ও হ্যাঁ সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা এইভাবে কতক্ষণ বসে থাকতে হবে?

“অনেকক্ষন। কারন ফুল আনতে গিয়েছে। ফুল আসার পর ঘর সাজানো হবে তারপর।
অভ্র এক চোখ টিপে বলল, আজ তো তোমাদের বাসর রাত৷

শুভ্র ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল। এই মুহুর্তে চোখে ঘুম ছাড়া আর কিছুই দেখছে না। চোখ বন্ধ করলেই কল্পনায় দেখছে একটা নরম বিছানায়, নরম বালিশে মাথা রেখে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। পাশে আছে একটা তুলতুলে কোলবালিশ।
মাথা থেকে ব্যাপার টা যাচ্ছেই না কোনো ভাবে। অভ্রকে বলল, তুই কী কিছু একটা ব্যবস্থা করবি?

অভ্র আঁতকে উঠে বলল, আমার এতো বুদ্ধি নেই। তাই আই এ্যম স্যরি।

শুভ্র’র ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। ফরহাদ সাহেব মেয়ে জামাইয়ের খোঁজ নিতে এসেছেন। শুভ্র দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার।
ফরহাদ সাহেব ব্যতিব্যস্ত তানির ঘরে শুভ্র কে পাঠালেন।

তানি বিছানায় চুপচাপ বসেছিল। দুইপাশে ওর ছোট দুই বোন বসা। হঠাৎই শুভ্র ঘরে ঢুকে বলল, ওয়াশরুম কোন দিকে?
এ বাড়িতে ঘরের সাথে লাগোয়া বাথরুম কেবল এই ঘরটাতে। এই ঘর সাবিনা আর তারিকের। তারিক তানির বড় ভাই।

শুভ্র কে দেখে অ্যানি আর মনি দুজনেই লাফিয়ে উঠলো। শুভ্র স্বাভাবিক গলায় বলল, তোমরা দুজন পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাকে খুব দেখার চেষ্টা করেছিলে কিন্তু সাকসেসফুল হতে পারো নি। এই জন্য নিজে থেকেই বান্দা হাজির।

ঘটনার আকস্মিকতায় তানিসহ বাকী দুজন ও হকচকিয়ে গেল। মনি আমতা আমতা করে বলল, আপা আমরা যাই এখন।

তানির জবাবের অপেক্ষা না করে দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। শুভ্র বিছানায় বসতে বসতে বলল, তানি কেমন আছ?

তানি চমকে উঠলো। বলল, ভালো আপনি?

“আমিও ভালো। থ্যাংকস তানি। তুমি রাতে খেয়েছ? ”

তানি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। শুভ্র বলল, তোমার মা’কে ধন্যবাদ জানাবে তানি। আমি এতো ভালো রান্না এর আগে কখনো খাই নি।

“আপনি অভুক্ত অবস্থায় খেয়েছেন তাই এমন মনে হচ্ছে। ”

“বাহ! তুমি তো দেখছি কথা বলতে পারো। আচ্ছা তুমি যে শাড়ী টা পরেছ সেটা কী রঙের?

তানি এই রঙের নাম জানেনা। নিচু গলায় বলল, জলপাই কালার।

“কাঁচা জলপাই?”

তানি করুন চোখে তাকালো। শুভ্র সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল,
“তানি তুমি এখন একটা ভয়ংকর কাজ করবে?”

তানি বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো। শুভ্র বলল, তুমি এখন উঠে দরজা আটকে দেবে। ফুল আনা পর্যন্ত আমি ওয়েট করতে পারছি না। এখন না ঘুমালে মরে যাব। এইটুকু ফেভার করো প্লিজ।

তানি শুভ্র’র কথামতো দরজা আটকে দিলো। শুভ্র বিছানায় শুয়ে বলল, থ্যাংকস তানি। এরজন্য তোমাকে পুরস্কৃত করা হবে কিন্তু।

তানি দাঁড়িয়ে রইলো। শুভ্র চোখ বন্ধ করলো। এখন অগ্রহায়ণ মাস। দিনের বেলা তেমন শীত না পড়লেও শেষ রাতে ঝাকিয়ে শীত পরে। তানি ওয়ারড্রব থেকে কম্বল বের করে শুভ্র’র পাশে রাখতেই শুভ্র বলল, তানি তোমার একমাত্র দেবর বাইরে আছে তার একটা ব্যবস্থা করো।

“জি আচ্ছা। আপনি চিন্তা করবেন না”।

“শুভ রাত্রি তানি”

তানি আস্তে করে বলল, গুড নাইট, সুইট ড্রিম।

শুভ্র বলল, তানি সাদামাটা সাজে তোমাকে জলপরীর মতো লাগছিলো। যদিও জলপরী দেখিনি তবুও এটা ছাড়া মাথায় কিছু আসলো না।
তানি মৃদু হাসলো। শুভ্র গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে।

তানি ভেবেছিল আজ রাতে শুভ্র কে জিজ্ঞেস করবে, আপনার কী আমাকে মনে আছে? ওই যে আমি একবার ড্রেনে পড়ে গিয়েছিলাম। আপনি আমাকে তুলেছিলেন হাত ধরে। আর যাওয়ার সময় আমার হৃদয় টা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে