কাছে আসার গল্প শেষ পর্ব

1
4231

কাছে আসার গল্প শেষ পর্ব

লেখা আশিকা
আমাকে ওটিতে নেয়ার কিছুক্ষন পর হিমেল আসে পাগলের মত ছুটে..।
মা আর ভাবী হিমেলকে দেখে পুরা থ..
হিমেল ছুটে এসে মা কে বলে..
– মা হিয়া কোথায়??
কই ও??
দেখতে পাচ্ছি নাহ কেন??
উত্তর দিন??
মা র কোন কথা নাই..
চুপ…
– মা হিয়া কোথায়?? উত্তর দিন..
ভাবি আমতা আমতা করতে করতে বললো..
আসলে হিমেল, হিয়াকে না ওটিতে নেয়া হয়েছে…
এই কথা বলা মাত্রই হিমেল মাটিতে বসে পড়লো…
সবাই ছুটে আসলো কি হইছে এখানে…
হিমেল কাদঁতে লাগলো…
– আল্লাহ আমার ভুলের শাস্তি স্বরুপ আমার অনাগত সন্তানকে তুমি কেড়ে নিতে পারোনা…
আর আপনাদের আমি ছাড়বো না..
আমি কেস করবো আপনাদের নামে..।
আপনাদের একবারো মনে হলো না, এই খবরটা আমার জানার দরকার আছে…
আপনারা খুনি…
আমি ছাড়বো না..
মা হিমেলকে ধরতে আসে…
বাবা আমার কথাটা শোনো…
– হিয়া তুমি আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারো না..
এইটা বলেই হিমেল সেন্সলেস হয়ে যায়…
কিছুক্ষন পর আমি ওটি থেকে বের হয়ে দেখি মা আর ভাবি কাকে যেন ধরে বসে আছে। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলাম।
এ যে হিমেল, আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। ও এখানে কেন?? সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। ভাবি হিমেলের চোখে মুখে জল দেয়ার কিছুক্ষণ পর হিমেলের সেন্স ফিরে..
চোখ খুলেই হিমেল আমাকে দেখতে পায়…
হিমেল লাফ দিয়ে উঠে এসে আমাকে ধরে…
-হিয়া তুমি আমার সব এইভাবে শেষ করে দিতে পারলে…?
একটা মেয়ে হয়ে কি করে পারলে..
বল উত্তর দাও..
এইভাবে প্রতিশোধ নিলে?.
আমাকে এইভাবে হারিয়ে দিলে…
বল??
কেন জানালে না আমায়..?
এত সাহস তুমি কি করে পাও বলো??
হিমেল আমাকে সমানে ঝাকাতে থাকে ওর সমস্ত শক্তি দিয়ে…
আমি প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম..
ও এইগুলা কি বলছে আমি কিছুই বুঝতেছিনা। তাই কিছুই বলছিলাম না শুধু অবাক হচ্ছিলাম ওর কথা শুনে…
ডাক্তার হিমেলের থেকে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে….।
– আপনি শান্ত হোন, ওনাকে ছাড়ুন আমি সবটা আপনাকে বলছি…।
হিমেল রেগে গেলো
– কি বলবেন আপনি আমাকে??
আমার বউ আর আপনারা সবাই মিলে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছেন, এইতো।
আমি শান্ত হবো না, কাউকে ছাড়বো নাহ..
হিমেল বসে পড়ে কাঁদতে লাগলো..
আমি হিমেলের পিঠে হাত রাখলাম
কেমন অস্বস্তি হচ্ছিলো তবুও…
কিন্তু হিমেল হাতটা সরিয়ে দিলো..
ডাক্তার সামনে এসে বললো..
– দেখুন এখনো কিছুই শেষ হয় নাই। আপনাদের বাচ্চা অক্ষত রয়েছে..
ওকে শেষ করার ক্ষমতা কারো নেই..।
হিমেল চোখ মুছে উঠে পড়লো, আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো…
– হিয়া উনি সত্যি বলছে?? বলনা??
বল??
আমি মাথা দিয়ে সম্মতি বুঝালাম। অঝরে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিলো কথা বলতে পারছিলাম না..
হিমেলের দিকে তাকালাম তার চোখে ও জল চিকচিক করছে…
হিমেল আমাকে জড়িয়ে ধরলো..
আমিও সায় দিলাম..
কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো এইখানে কেউ নেই শুধু আমি আর হিমেল।
ভাবির চিল্লানিতে আমি আর হিমেল।বর্তমানে ফিরে এলাম..
– কি বলছেন এইগুলা??
মানে কি??
এতক্ষণ ওটিতে নিয়া আপনি কি করলেন ওকে??
ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বললেন,
– আমি ওটিতে নিয়া যাবার পর থেকে ওনার চোখের জল কোন বাধা মানছিলো না। উনি আমার পায়ে পর্যন্ত পড়েছেন এবরেশনটা না করার জন্য।
আমি তাকে সব কিছু জিজ্ঞাস করলে, আমাকে পুরা বিষয় খুলে বলে। আমি আর পারিনি এই কাজটা করতে। আমি আপনাদের কাছে সরি।
আসলে আমার কোন বাচ্চা নেই তাই বাচ্চা না থাকার যন্ত্রনা আমি বুঝি। আচ্ছা আমি আসি.
ডাক্তার চলে গেলো…
মা,আমার একহাত ধরে বললো
চল বাসায় যাব…
– বাসায় যাবে মানে কি??
আমার বউ আমার সাথে যাবে.
হিয়া চল..
হিমেল আমার আরেক হাত ধরে টানত লাগলো…
– হিয়া তুই ওর সাথে যাবি??
যদি যাস তবে এইটা মাথায় রাখিস,ও যদি আবার তোকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের বাসায় তোর কোন স্থান নেই..
মনে রাখিস…
আমি কি করবো.
কিছুই মাথায় আসছে না। একবার মার দিকে আরেকবার হিমেলের দিকে তাকাচ্ছিলাম।
শেষে আমার পেটের দিকে তাকালাম বাচ্চার কথা ভেবে বললাম
– মা, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার সন্তানের জন্য তার বাবার সাথে আমি তার সেইফ যায়গায় যাব..
সরি..
আমি হিমেলের হাত ধরে চলে আসলাম..
তার বাসায়…
শ্বশুর বাড়িতে আসার পর সবাই আমাকে সাদরে গ্রহন করে।
শাশুড়ি মা আর মিথি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো…
– হিয়া তুই এসেছিস আমরা খুব খুশি হয়েছি। আমার সংসার এবার কানায় কানায় পূর্ন হয়ে যাবে। তোকে ছাড়া আমার হিমেলটা বড় অসহায় রে। দেখ কেমন চেহারা বানিয়েছে, কোন কিছু ঠিক নায়, খায়না ঘুমায় না কি অবস্থা…
তুই এবার সব ঠিক করে দে মা..
– মা প্লিজ এবার থামো, ও একটু অসুস্থ ওকে রুমে নিয়ে যাই..
– আচ্ছা বেশ যাহ..
হিমেল আমাকে রুমে নিয়াসে..
রুমে এসে দেখি আমার সব জিনিস ঠিক ঠাক আছে, কিচ্ছু চেঞ্জ হয় নাই..
আমি ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ি..
হিমেল আমার হাত ধরে বসে থাকে অনেক্ষন…
– হিয়া, আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি , প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে আর কোনদিনো কষ্ট পেতে দিবনা.
আমি হাতটা সরিয়ে নিলাম..
অন্যদিক ফিরে কাদতে লাগলাম.
– হিয়া, প্লিজ এমন করেনা.
ও আমাকে জোর করে ওর কাছে টানতে থাকে..
– বিশ্বাস করো হিয়া আমি তোমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার থেকে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি, আমি আর পারছিলাম না তোমাকে ছাড়া থাকতে…
– ও এই তার নমুনা..
এই জন্যই তো ডিভোর্স লেটার পাঠাইছো তাই না..
– সব কি আমার একার দোষ, তুমি কেনো চাইছিলা ডিভোর্স, এত বড় কথা তুমি কি করে বলছ আমাকে বল??
আমারতো দেখার ছিলো তুমি সাইন করো কিনা??.যদি তুমি সাইন করতা বিশ্বাস কর আমি সেইদিনি সুইসাইড করতাম। তোমাকে ছাড়া বেচে থাকা আমার কাছে মরে যাওয়ার মত..
আমি হিমেলের শার্ট এর কলার ধরে জোরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললাম..
– এই তুমি কি? আমার ইচ্ছা হইছে যত খুশি তত বার বলছি, আরো বলবো তাই বলে তুমি সত্যি সত্যি পাঠাবা।
একটুর জন্য আজকে কি হতে যাচ্ছিলো..
আমি কাদতে কাদতে হিমেলের বুকে মাথা রাখলাম।
হিমেল আমাকে জড়িয়ে ধরলো…
– লক্ষিটি দেখো, এইভাবে কাদে না, তাহলে আমাদের বাবুও কান্না করে দিবে, প্লিজ চোখ মুছো…
হিমেল আমার চোখ মুছিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিলো…
আমি হিমেলকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম…
কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…
সন্ধ্যার সময় মিথি এসে দরজা ধাক্কাচ্ছিলো..
হিমেল ঘুমঘুম চোখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে…
কি হইছেরে?? এইভাবে ডাকছিস ক্যান??
– তো কি করবো, আজান দিচ্ছে ভাবি কে বল উঠতে, এই টাইমে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ঘুমাইতে হয় না..
আর আসো মা ডাকছে তোমাদের…
আমি আর হিমেল ফ্রেস হয়ে মার সাথে দেখা করতে গেলাম।
রাতে খাওয়ার পর আমরা রুমে গেলাম।
– হিয়া আজকে যা ঘুমটাই দিলাম..
এখন কি করবো??
– কিছুই না…
কি আবার??
– কিছুই নাহ…
-সত্যিইতো
হিমেল আমার দিকে আগাতে থাকে…
এই একদম নাহ…
ভালো হবে না কিন্তু…
তখনি ফোন বেজে উঠে…
– নাও ফোনটা ধরো??
– নাহ তোমার ফোন আমি ধরবো কেন??
– নাও ধরো, তুষার ফোন দিয়েছে..
কথা বল..
আমি ভয়ে চুপসে গেলাম ওর কথা শুনে…
– আরে তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? নাও কথা বল??
আমি হিমেলের কাধে মাথা রেখে ফোনটা কানে ধরলাম..
– হ্যালো…
– কেমন আছিস??
আশা করি খুব হ্যাপি আছিস.
প্রে করি বাকী জীবন এইভাবেই হাসি খুশি থাক, স্বামী, সন্তান, নিয়ে।
তোকে বলা হয়নি…
আমি কালকে অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছি, বাবার কাছে..
অনেকদিন ধরে প্রসেসিং চলছিল তোকে বলা হয় নাই।
দেখ আমি বুঝে গেছি তূই হিমেলকে কতটা ভালোবাসিস, আর আমি কখনো তোর বাচ্চাকে নষ্ট করতে চাই নি।
তাই আমি কালকে হিমেলের সাথে দেখা করে, আমার সমস্ত দোষ স্বিকার করে নেই। তারপর হিমেলকে নিয়ে হস্পিটালে আসি, বাকিটা তোর জানা। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস, যদিও আমার অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না , তবুও যদি পারিস…
তুষার আর কথা বলতে পারছিলো না কান্না করছিল।
পরে কেটে দেয়…
আমি মন খারাপ করে বসে পড়ি..
হিমেল আমার দুই গালে তার দুই হাত দিয়ে ধরে বলে..
– হিয়া প্লিজ পুরোনও সব কিছু মনে করে সুন্দর মূহুর্তটা নষ্ট করে দিও না।
হিমেল আমাকে জড়িয়ে ধরলো..
আমিও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম.
একটু পর হিমেল বলে
– কি আজকে ছাড়বা নাহ..
– না..
– আমি ওয়াশরুমে যাবো..
আমি লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দেই…
আমি বিছানায় এক কাত হয়ে শুয়ে পড়ি..
হিমেল পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে..
একটা হাত আমার পেটের উপর দেয়…
আমি ওর দিকে ঘুরছিলাম না।
হিমেল আমার ঘাড়ে কিস করতে থাকে, এইবার আমি ওর দিকে ঘুরতেই ও আমার ঠোটে কিস করতে আসে..
-হিমেল প্লিজ সর, বাবু…
আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
– চুপ, আজকে কোন কথা হবে না,
ধুর আমি কতদিন তোমাকে টাচ করি নাই..
আজকে কোন কথা বলবা না..
হিমেল আমাকে আদর করতে থাকে।।
এইভাবে হিমেলের ভালবাসায়, সবার আদর যত্নে আমার ৯ টা মাস কেটে যায়…
কিন্তু সবসময় আমার খারাপ লাগতো আমার ফ্যামিলির কেউ আমার সাথে তখনো কথা বলতো না। আমি এইগুলা,নিতে পারছিলাম না।
তারপর আমার ডেলিভারির দিন এগিয়ে আসে, আমার বারবার মা – বাবাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, কিন্তু কাউকে বলতে পারছিলাম না।
আমি হস্পিটালে যাওয়ার পর থেকে হিমেলকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।
আমি ভয়ে অনেক কাদছিলাম, সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছিলো এই টাইমে হিমেলকে পাশে না পেয়ে..
ওটিতে যখন আমাকে নিয়ে যাবে ঠিক তখনি হিমেল আমাকে ডাকে..
আমি পিছনে তাকায় দেখি হিমেল, সাথে মা- বাবা, ভাইয়া- ভাবি..
ওরা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে…
যাওয়ার আগে হিমেল আমার কপালে কিস করে..
আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ছিলাম, কিছুতেই ছাড়ছিলাম না।
পরে আমাকে ওটিতে নেয়া হয়..
আমার কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান আসে…
ওকে দেখে আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
আমার ছেলে আমার আর হিমেলের মাঝে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে। ও এলো বলেই আমার হিমেলের সমস্ত দুরত্ব মিটে গেল।
পাশাপাশি আমার বাবা-মা র আমার উপর যত রাগ ছিলো তা পানি হয়ে গেল ওকে দেখে। ও আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠতম উপহার।
এরপর থেকে আমার আর হিমেলের মাঝে আর কোন ঝামেলা হয় নাই।
শুধু ভালবাসার আকাশে উড়তে থাকি আমরা দুজন।
হ্যাপি এন্ডিং❤️❤️❤️
সবাই হ্যাপি???❤️❤️❤️

1 মন্তব্য

  1. অনেক ভালো হয়েছে আপু গল্পটা ধন্যবাদ জানাই আর অন্যান্য গল্প কবে দেবেন thanks sister many many thanks iam wait for next story ❤️❤️❤️❤️❤️?????

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে