#কাঁচের_সংসার
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১২(অন্তিম পর্ব)
আরোহী নতুন বাসাতে উঠলো আজ বেশ কয়েকদিন হলো। বাসায় উঠার প্রথম-দিনই আশ্রমে গিয়ে খোঁজ নিল। খালা অসুস্থ ছিল বিধায় এখন আর আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারতো না। তবুও নিজের অসুস্থতা লুকিয়ে বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব পালন করার যথাসম্ভব চেষ্টা করতো। আরোহী সেদিন প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিল যে খালা ভালো নেই। উনি অসুস্থ। আরোহী জিজ্ঞেস করাতে খালা ব্যাপারটা লুকাতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না।
আরোহী খালাকে নিজের সাথে নিয়ে আসতে চাইলে তিনি বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে বলে আপত্তি জানালো। সে ওই আশ্রমের আঠারোর পর বেরিয়ে যাওয়া একটা মেয়েকেই রেখে দিল বাচ্চাগুলোর দেখা-শোনার জন্য। আরোহী মেয়েটির মধ্যে নিজেরই প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলো। যখন আরোহীর আঠারোর পর আশ্রমে থাকার দিন শেষ হয়েছিল তখন সে আশ্রম থেকে বেরিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল যে কোথায় যাবে!কী করবে! ঠিক সেসময় একজন তার পাশে দাঁড়াতেই সে যাচাই-বাছায় না করে সুযোগটা লুফে নিয়েছিল কিন্তু এই মেয়েটা কই যাবে!
আরোহী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আস্বস্ত-ভরা কণ্ঠে তাকিয়ে হাসলো। কারণ মেয়েটিও বাইরের দুনিয়ার সাথে পরিচিত না। এই শহরে চাকরির জন্যও অনেক দৌঁড়াতে হয়। মেয়েটি আরোহীর কথায় এক বাক্য’তে রাজি হয়ে গিয়েছিল।
আরোহী নিজেও ছুটির দিনে খালাকে সাথে নিয়ে বাচ্চাগুলোর সাথে সময় কাটায়।
———-
কেটে গেল আরও কয়েকদিন। আশ্রমের খালা এখন আরোহীর সাথেই থাকে। আরোহী দিনটি চাকরি করেই কাটিয়ে দেয়। সবমিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে দিন কিন্তু সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে রাত হলেই কোথাও যেন কাঁটার মতো বিঁধে। এর মাঝে ঐদিনের পর আমেনা আহমেদ আর আসেনি বা খোঁজ নেয়নি হয়ত অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে।
আরোহী বাসায় উঠার পর প্রায়দিন আমেনা আহমেদ রুহানকে সাথে নিয়ে আসতো। মাঝে মাঝে আরোহীর সাথে দেখা হতো আবার মাঝে মাঝে হতো না।
সেদিন এক সপ্তাহের মাথায় আমেনা আহমেদ আরোহীকে যেতে বললেন। মিথিলার মৃর্তুবার্ষিকী ছিল আর রুহানের জন্মবার্ষিকী। আরোহী বিনা বাঁধায় গেল। নিহানও ঘরেই ছিল। আরোহীকে দেখে নিহানের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হলো, সে হয়ত আরোহীকে আশা করেনি। আরোহীর হুট্ করে সবাইকে অন্য রকম মনে হলো। আমেনা আহমেদ কিছু বলার আগেই নিহান আরোহীকে ডেকে নিয়ে গেল। এতদিনে এই প্রথম নিহানের রুমে তাও বা সে নিজেই ডেকে এনেছে। আরোহীর কিছুই বোধগম্য হলো না। তার ভাবনার মাঝেই নিহান বলে উঠল,
‘আমি সোজাসাপ্টা কথা বলি। আপনাকে ডেকে আনার কারণও হচ্ছে এটা।’
আরোহী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। সে বুঝে উঠতে পারলো না যে কী বলবে! হঠাৎ এমন আচরণ সবার!
‘জি বলুন।’
আরোহীর সম্মতি পেয়ে নিহান আরোহীর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
‘মা-বাবা চাচ্ছেন, আমি যেন আপনাকে বিয়ে করি। অন্তত রুহানের জন্য হলেও।’
আরোহী চমকে নিহানের দিকে তাকালো। সবার এতক্ষন অন্য রকম আচরণের মানে বুঝে উঠতে পারলো সে।
আরোহী কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আসার পথে ড্রয়ইং রুমে কাউকে দেখেনি বিধায় আর কাউকে বলে আসেনি। সোজা বেরিয়ে গেল।
রাতে খালা অনেক করে আরোহীর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছে যে কী হয়েছে। এতো এতো খুশি হয়ে গিয়েছিল কিন্তু দুপুরের আগেই হুট্ করে চলে এসেছে। এসে কথাও বলছে না। আর উপায় না পেয়ে তিনি আড়ালে গিয়ে আমেনা আহমেদের কাছে কল লাগালেন। মাঝে মাঝে আমেনা আহমেদ আরোহীকে দেখতে আসতো তখন আরোহী চাকরিতে থাকতো বিধায় বাকি সময় আমেনা আহমেদ আরোহী আসার অপেক্ষা করতেন। এই সময়টাতে আমেনা আহমেদের সাথে তার গল্প-গুজব করে কাটাতো বলে আমেনা আহমেদের সাথে তারও একটা ভীষণ ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে।
কিছুসময় পর খালা আবারও এলো। আরোহী খালার অস্তিত্ব বুঝে পেছনে ফিরলো।
‘তুমি খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও খালা।’ ইদানিং খালার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। এই একমাস চাকরির টাকা আর কয়েকদিন গড়ালেই দিবে। আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই একমাস আমেনা আহমেদই সব টুকটাক নিয়ে এসেছে। তা দিয়েই আরোহীরা ভালোমতো চলে যাচ্ছে। এই মানুষটা না থাকলে এই একমাস কিভাবে চলতো আরোহী ভেবে পায় না।
আরোহী ভাবনায় ডুবে গেল। কারো আলতো পরশে পেছনে ফিরে দেখলো খালা তার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
‘কিছু বলবে খালা? ওষুধ খেয়ে নিও।’
‘আমার একটা আবদার রাখবি আরু!’ খালার কণ্ঠস্বর মলিন শুনালো। আরোহী খালার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। মানুষটাকে এখন আর আগের মতো হাসিখুশি দেখায় না। সেদিন আরোহী জোর করে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছিল, আরোহী নিজেও যেতে চেয়েছিল কিন্তু খালা একায় চলে গিয়েছিল আর আরোহী চাকরিতে। সেদিনের পর থেকেই খালার মুখ থেকে হাসি সরে গিয়েছিল। আরোহী বুঝে উঠে পায় না, হুট্ করে মানুষটাকে ভীষণ অসুস্থ মনে হয়।
মাথায় আবারও কারো স্পর্শে আরোহী ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। সে তাকিয়ে দেখলো, খালা তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইদানিং কথায় কথায় বেশি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে আরোহী। সে হেসে খালার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
‘তুমি এভাবে বলছো কেন খালা? অবশ্যই রাখবো। তুমি বলো?’
‘তুই বিয়েটা করে নেয় মা।’
আরোহী শান্ত রইল। প্রতিত্তরে কোনো জবাব দিল না।
‘তোর জীবন এখনো পড়ে রয়েছে মা। আমি আর কয়দিনই বা বাঁচবো! মানুষের সুখের জন্য হলেও একটা নিজের মানুষ থাকা দরকার। যাকে দিন শেষে সবকিছু বলা যায়। একদিন হয়ত আফসোসও করবি। এই যে তুই রাত্রে এভাবে থাকিস সেটা আমার ভালো লাগে না রে। যদি আমি না থাকি তুই আরও একা হয়ে পড়বি। আর আমেনা মানুষটা ভালো, যা শুনেছি নিহান ছেলেটাও ভালো। নিহানের সাথে সাথে তোর একটা সুন্দর জীবন পাবি। তুই একটা পূর্ণ পরিবার পাবি। আফসোস রইবে না আর। হয়ত তোর এই দুঃখগুলো ওই পরিবারে গিয়ে সুখ হয়ে পূর্ণ পাবে। আমি চাই, তুই একটা সুন্দর ভবিষ্যত পাস।’
আরোহী জানে খালা তার নিজেরই কথা ব্যাখ্যা করছে। হয়ত এই বয়সে এসে নিজের একটা কাছের মানুষের অভাবে দগ্ধ হচ্ছে। আরোহী মলিন শ্বাস ফেলে জানালার বাইরে ব্যস্ত শহরের দিকে দৃষ্টি দিল।
————
আরোহী আজ চাকরিতে গেল না। সে পাশাপাশি একটা কলেজে স্নাতকে অ্যাডমিশন নিয়েছে। একবছর আগে উচ্চ-মাধ্যমিক দিয়েছিলো বিধায় বেশি বেগ পোহাতে হয়নি। কলেজ থেকে বের হতেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল। সে দ্রুত পায়ে রাস্তার দিকে গাড়ির উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতেই ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামলো। সে দ্রুত দৌড়ে যাত্রী চাওনির দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই প্রায় ভিজে গেল। পরনের সাদা রঙের কুর্তিটা ভিজে অবস্থা কাহিল। চুলগুলো থেকে টপটপ পানি পড়ছে। কোনো গাড়িও দাঁড়াচ্ছে না। চারদিকে আস্তে আস্তে আরও অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই আরোহী উড়না দিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব আবৃত করে নিল। ঠান্ডা লাগছে বড্ড।
‘উঠে আসুন।’
কারো চেনা কণ্ঠস্বর শুনতেই আরোহী সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল রাস্তার বিপরীত পাশে নিহান গাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে বের হচ্ছে। নিহানকে এই মুহূর্তে মোটেও আশা করেনি সে। দীর্ঘ একমাস পর দেখছে।
নিহান আরেকবার বলতেই আরোহী গাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিতেই নিহান ইশারা দিয়ে ওখানেই দাঁড়াতে বললো। আরোহী দাঁড়িয়ে রইল।
নিহান রাস্তায় এসে আশেপাশে গাড়ি আসছে কিনা দেখে ছাতা নিয়ে আরোহীর সামনে এসে দাঁড়ালো।
‘চলুন।’
আরোহী একফলক নিহানের দিকে তাকিয়ে ছাতার ভেতরে আসতেই নিহান হাঁটা ধরলো। আরোহীর কানে তখন খালার কথায় বাজছে যে,’নিহানের কাছ থেকে তোর একটা সুন্দর জীবন পাবি।’
নিহান আরোহীকে পাশের সিটে বসতে বলতেই আরোহী গাড়িতে উঠে পড়লো। নিহান আরোহীর সিটের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘুরে নিজের ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল,’দুঃখিত আসলে ঐদিনের ব্যাপারটার জন্য। আমি মা-বাবার দিকেই তাকিয়ে রাজি হয়েছিলাম। উনারা আপনি না হলেও অন্য কোনো মেয়ের সাথে আমার জীবন আবদ্ধ করতে বাধ্য করতো তাই আমি ভেবেছিলাম আপনার জীবনেও তো অনেক কষ্ট তাই আপনার কথা বলতেই রাজি হয়েছিলাম। আর হয়ত বাইরের কোনো মেয়ে আমার রুহানের অতো যত্ন করতো না কিন্তু আপনি প্রথম থেকেই রুহানকে একদম নিজের মতো করে যত্ন করেছেন। যেদিন রাতে রুহানের জ্বর ছিল সেদিন দেখেছিলাম আপনার পাশে পানির গামলা। সেদিনই বুঝে নিয়েছিলাম যে আপনি আমার রুহানের জন্য একদম পারফেক্ট। তাই এরপরে মায়ের কথা শুনে রুহানের চিন্তা করে আর না করতে পারিনি কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম। সেদিনের ঘটনাটা ভুলে যান।’
আরোহী বাহিরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
তাতেই নিহান পুনরায় কথাটা বলার সাহস পেয়ে গেল,
‘আপনি কী রুহানের মা হতে পারবেন!’
‘হ্যাঁ পারবো। রুহান আমার অপূর্ন জীবনের পূর্ণতা।’মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল আরোহী।
‘সপ্তাহে তিনদিন আপনাকে ওই ব্রিজে নিয়ে যাবো কিন্তু বাকি তিনদিন মিথিলার মানে আমি একাই।’
‘আমি আপনাকে মিথি আপুকে ভুলতে বলবো না। কেউ কারো প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারে না। আমিও বাধ্য করবো না। আমার জন্য রুহানই যথেষ্ট কিন্তু আপনি যখন তিনদিন আমাকে দিবেন বলছেন তাহলে না করি কিভাবে!’ বলেই হাসলো আরোহী।
————-
পরিশিষ্ট : কেটে গেল কয়েকবছর। আরোহী রুহানকে স্কুল থেকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে এসেছে। নিহান বলেছিল, আজ কোথায় জানি ঘুরতে নিয়ে যাবে আর আরোহীকে রুহানকে নিয়ে স্কুলের গেটে দাঁড়াতে বলেছিল কিন্তু সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে নিহানের আসার কোনো খবর নেই তাই আরোহীর আর অপেক্ষা সহ্য হলো না। সে রুহানকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে।
আরোহীর কল পেয়ে নিহান তড়িঘড়ি করে ক্যাবিন ছেড়ে বেরিয়ে আসলো।
‘দুঃখিত দুঃখিত রুহি। দেরি হয়ে গেল।’
আরোহী কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই নিহানের পেছনে কেউ একজনকে নার্সের সাথে তর্ক করতে দেখে থমকে গেল।
‘বাবা রাগ করেছো তুমি!’
নিহানের কথা শুনে রুহানও মুখ ফিরিয়ে নিতেই নিহান হেসে আরোহীর দিকে তাকাতেই আরোহীকে তার পেছনে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও পেছন ফিরলো।
‘এই যে ডাক্তার।’ আরিয়ান অগোছালো ভাবে নিহানের দিকে তাকিয়ে নার্সকে ইশারা করে বলতেই নার্স এসে বাধা দিল।
‘দেখুন, স্যারের ডিউটি শেষ। আর আপনি টাকা না দিয়ে এখানে এতো উন্নত চিকিৎসার আশা করতে পারেন না।’
আরিয়ান অগোছালো ভাবে আশেপাশে তাকিয়ে নিহানকে হাত জোর করলো। নিহান কিছু বলে উঠার আগেই আরিয়ানের দৃষ্টি আরোহীর দিকে পড়তেই সে থমকে গেল। আরোহী রুহানকে কাছে টেনে নিল।
‘আরু!’ আরিয়ানের দৃষ্টি অগোছালো। আরোহী এতক্ষনে যা বুঝার বুঝে নিয়েছে। সে নিহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘আজকে না হয় ঘুরতে না যাই । আপনি উনার মায়ের চিকিৎসা শুরু করুন।’
আরোহী কথাটা বলে থামতেই আরিয়ান আরোহীর আরেকটু এগিয়ে আসলো। এসেই আরোহীর পায়ের কাছে বসে পড়লো। আরোহী সরে যেতে নিতেই আরিয়ান পা জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,
‘আমাকে মাফ করে দিও। তুমি যাওয়ার পর আমি একটা দিনও ভালো ছিলাম না। স্নেহা একবছর পেরোতেই আমাদের ধোঁকা দিয়ে বাসার সম্পদ নিয়ে চলে গিয়েছে। সে পর্যন্ত মা আর ভালো ছিল না। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর সবকিছু বলেছে আমাকে। আমাকে ক্ষমা করো।’
আরোহী জবাব দেওয়ার মতো ভাষা পেল না।
‘উঠুন। আপনার মায়ের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবেই হবে। চিন্তা করবেন না।’
নিহান আরোহীর কাছ থেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সে আরোহীকে ভালোভাবে বাসায় যেতে বলে আরিয়ানের মায়ের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
আরোহী পেছনে থেকে ডেকে বলে উঠল,
‘একটু উনার মা’কে দেখে আসি?’
নিহান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই আরোহী এগিয়ে গেল।
লুৎফা বেগমকে চেনায় যাচ্ছে না। কী শক্ত-পোক্ত শরীরের মহিলা একদম জীর্ণ-শীর্ন হয়ে গেল!
লুৎফা বেগম বাইরেই তাকিয়ে ছিলেন। আরিয়ানের ডাক শুনে ফিরতেই আরোহীকে দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে ইশারা করে কিছু বলতে লাগলো কিন্তু শোনা গেল না। উনার আওয়াজ বাহিরে এলো না। শুধু এটুকুই বুঝা যাচ্ছে উনি হয়ত আরোহীর কাছ থেকে মাফ চাইছেন।
‘আমার স্বামী নিহানের হাতেই আপনার মায়ের চিকিৎসা সফে দিলাম। আশা রাখি, আল্লাহ চাইলে সব ভালোই ভালোই হবে।’
আরোহী আরিয়ানের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে শেষবারের মতো একফলক তাকিয়ে রুহানকে নিয়ে ক্যাবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল । আরোহী একটা মলিন শ্বাস ফেলল। তার কাঁচের মতো স্বচ্ছ সংসারটাকে শেষ করে দেওয়ার আফসোস হচ্ছে লুৎফা বেগমের কিন্তু এখন আর আফসোস করে কী লাভ! কাঁচ যেমন দেখতে সুন্দর, পরিশুদ্ধ তেমন ভাঙলে আর জোড়া লাগানো যায় না। লাগলেও সেটাতে স্পষ্ট একটা দাগ বসে রই। আর আগের মতো স্বচ্ছ হয় না।
আরিয়ান পেছনে থেকেই আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরোহীর মতো একটা মেয়েকে কাছে পেয়েও হারিয়ে তার নিজেকে সবচেয়ে পরাজিত মনে হচ্ছে। এ জীবনে আর কিছুই রইল না।
বিধাতা কাউকে ছাড় দেন না। দেরি হলেও যার যার কর্মফল সে ভোগ করে আর দুঃখের পরই সুখ আসে। আরোহীর সুখ এখন নিহান। সৃষ্টিকর্তা কাউকেই হয়ত নিরাশ করেন না। ধৈর্য্য ধরলেই হয়ত ফল পাওয়া যায়।
#সমাপ্ত।