Monday, October 6, 2025







কলঙ্ক পর্ব-২০

#কলঙ্ক
#২০তমো_পর্ব
#অনন্য_শফিক



অনেক অনেক দিন পর ভার্সিটিতে গিয়েছি ক্লাস করার জন্য। এখন থেকে নিয়মিত হবো। পরীক্ষা একেবারে দোরগোড়ায়। অনেকদিন ক্লাস না করায় জ্ঞাপে পড়ে গেছি। বন্ধুদের সাথে কথা বলে নোট সংগ্রহ করতে হবে।স্যার ম্যামদের অনুরোধ করে এটেন্ডেন্স বাড়াতে হবে। নয়তো আর পরীক্ষায় বসা যাবে না।

ক্লাসে বসার পর দু চার জন অবশ্য ফিসফাস করেছে।এক স্যার এসে খুব ঘেঁটেছে।
বলেছে,’অতদিন কোথায় ছিলে?’
আমি স্পষ্ট বলেছি,’স্যার বাসায় ছিলাম।বাবা মার কাছে।’
‘পড়াশোনা ক্লাস এসব রেখে বাসায় কেন?’
তখন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে মিনতির গলায় স্যারকে বললো,’স্যার,প্লিজ ওকে ঘাঁটাবেন না। কিছু জিজ্ঞেস করলে ওকে আড়ালে জিজ্ঞেস করুন।ওর বিষয়টা প্রাইভেট স্যার!’
ছেলেটার কথা শুনে একদল ছেলে মেয়ে বললো,হ্যা স্যার ওকে আপনি বিষয়টা আড়ালেই জিজ্ঞেস করুন। কিন্তু তিন চারজন ছেলে মেয়ে বলে উঠলো,তোরা কী স্যারের চেয়ে বড় পন্ডিত হয়ে গেছিস নাকি?স্যার কী করবেন না করবেন তা তোদের কাছে জিজ্ঞেস করে তারপর করবেন নাকি!’
ওদের এসবে নিজেকে এতো অসহায় লাগতে শুরু করলো তখন! ইচ্ছে হলো কাঁদতে কাঁদতে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসি। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে পড়লো মেহরাবের কথা।মনে পড়লো ম্যামের কথা।ম্যাম বলেছেন, পেছনে তাকানো যাবে না। লজ্জা পাওয়া যাবে না।কারণ দোষটা আমার না। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।
স্যার বললেন,’তূর্ণা তুমি এখন বসো। আমার সাথে পরে দেখা করো তুমি। এখন তোমাকে কিছুই বলতে হবে না!’
কিন্তু আমি বসলাম না।কারণ আড়ালে শুধুমাত্র স্যারের সাথে কথা বললে বিষয়টা শুধু স্যারই জানবেন।অন্যদের অজানা থেকে যাবে।এতে সমস্যা কমার বদল উল্টো বাড়বে। এই অজানা বিষয়টা নিয়ে ওরা আরো সাত পাঁচ করবে। তখন সমস্যাটা ক্রমাগত বড় হতে থাকবে। এরচেয়ে লজ্জা যা পাওয়ার একেবারে পাওয়ায় ভালো।
আমি বললাম,’স্যার,আমি এখানেই সবকিছু বলতে চাই!’
সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো।
আমি বলতে শুরু করলাম। বললাম, আমানের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্কের কথা।ওর সাথে গোপন বিয়ের কথা। প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা। প্রেগন্যান্সি এবং তারপর এবরোশনের কথা। তারপর ঘুরে দাঁড়ানোর কথা। সবকিছু খুলে বলেছি আমি।যেন একটুও সন্দেহ না থাকে।স্যার ভরা ক্লাসের সামনেই হাত তালি দিতে শুরু করলেন।স্যারের সাথে সাথে সবাই। তারপর স্যার আমায় ডেকে বললেন,’তূর্ণা মা এদিকে আসো তুমি।’
আমি স্যারের কাছে গেলাম।স্যার আমার মাথায় হাত রাখলেন। তারপর বললেন,’আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন।’
তারপর গলার শব্দ তিনি আরো বড় করে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,’আমি ভরা ক্লাসের সামনে বলে যাচ্ছি এই তূর্ণা সেই তূর্ণা নয়।এই তূর্ণা বদলে গেছে। মানুষ ওকে যে কলঙ্ক দিয়েছে সেই কলঙ্কে এখন দগদগে আগুন জ্বলছে।এই আগুন উত্থাল আগুন।এই আগুন সবকিছু পোড়িয়ে ছারখার করে দিবে।সব অশুচি, অশুদ্ধ আর নোংরা মানুষের চোখ পোড়িয়ে দিয়ে সে তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।সে খুব শিগগির ভোরের আলো ফোটাবে। ইনশাআল্লাহ!’
ক্লাসের সবাই আবার হাততালি দিয়ে উঠলো।যে ক্লাসে আমি লজ্জায় কোনদিন আর যেতে পারবো না ভেবেছিলাম সেই ক্লাসরুম,ক্লাসের সব বন্ধু,স্যার ম্যাম হয়ে উঠলো আমার ভরসার জায়গা। এখন শুধু মেহরাব একা নয়, আমার হৃদয়ে অনেক অনেক মানুষ জায়গা করে নিয়েছে।
সে রাতে বাসায় ফিরে আমি কী যে এক অন্যরকম উত্তেজনায়, অনুভূতিতে ঘুমোতে পারি না। কেন জানি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠি বারবার।আমি কোনদিন ভাবতেও পারিনি এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো আমি। আমি আগে জানতাম না পথ চলতে শুরু করলে পথে যেমন কাঁটা পড়ে থাকে তেমন ফুলও থাকে। আমাদেরকে শুধু জানতে হবে আমরা পা টা কোথায় রাখবো! কাঁটার উপর নাকি ফুলের উপর!

মাঝরাতে একটু চোখ লেগেছিল আমার। তারপর হঠাৎ স্বপ্ন কী বাস্তব জানি না , তবে দেখতে পেলাম আমার ভ্রুণটা আমার কাছে এসেছে।আজ সে ক্ষত বিক্ষত নয়।তার গায়ে সুন্দর জামা পরা।সে এসে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে।হাসছে মিষ্টি করে।
আমি প্রথম প্রথম তাকে দেখে চিনতেই পারিনি।তাই জিজ্ঞেস করলাম,’এই তুই কে?’
ভ্রুণ বললো,’ওমা আমায় ভুলেই গেলে।ভুলবেই তো। মানুষ সুখে পড়লে সব ভুলে যায়।’
আমি ওর আদিক্ষেতা দেখে রেগে গিয়ে বললাম,’এসব পাকা পাকা কথা রেখে বল তুই কে?তোর পরিচয় কী?’
ভ্রুণ মৃদু হেসে বললো,’আমার তো নাম নেই।নাম দেয়ার আগেই তোমরা আমায় খুন করে ফেলেছিলে।আমি তোমার সন্তান।
অতদিন খুব অশান্তিতে ছিলাম আমি মা। কিন্তু এখন আমার অনেক শান্তি। আমি এখন একটা সুন্দর ঘর পেয়েছি। ওখানে আমার অনেক খেলার সাথী। এখন তুমি যেমন আমার কথা মনে করো না আমিও কিন্তু তোমার কথা মনে করবো না আর।এই শেষবার তোমার কাছে এলাম।প্রাণ ভরে দেখে নেও আমায়। এরপর কিন্তু আর আসবো না!’
এই কথা বলেই ভ্রুণ উধাও হয়ে গেল।
আর ঠিক তখন আমার চোখ খুললো।চোখ খুলে দেখি ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে।সারা শরীর ঘেমে ভিজে আছে আমার।তেষ্ঠায় গলা ফেটে যাচ্ছে।
মোবাইলটা হাতড়ে খুঁজে বের করে লাইট জ্বালিয়ে দেখি পানির বোতল খালি। তাড়াহুড়ো করে উঠে বোতল নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। ওখান থেকে পানি এনে ঢকঢক করে গিললাম। তারপর দখিন দিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে জানলাটা খুলে দিলাম।জানলা খুলে দিতেই হো হো করে বাতাস বয়ে আসতে লাগলো ঘরের ভেতর। মুহুর্তে শরীর জুড়িয়ে এলো। শরীর জুড়িয়ে এলেও মনটা তখন কেমন খচখচ করতে লাগলো।কত কতদিন পর আমার ভ্রুণটা কাছে এসেছিলো। আগে ও আসলে আমার খারাপ লাগতো।ওর ক্ষত বিক্ষত দেহটা দেখলে নিজেকে পাপী মনে হতো। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু আজ ওকে যেভাবে দেখেছি আমার মোটেও খারাপ লাগেনি। আমার মনে হয়েছে ও খুব ভালো আছে। এখন আর ও আমায় অভিশাপ দেয়না।ও অভিশাপ দিলে আমি পোড়ে ছারখার হয়ে যেতাম। আমার সব সফলতার পথ চিরতরে রোদ্ধ হয়ে যেতো!

আমানের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। মেহরাব আমার জীবনে আসার পর ,ও যখন আমায় আশার আলো দেখালো ভরসা দিলো তখন কেবল মনে হয়েছিল আমি একটা পথ খুঁজে পেয়েছি। এখন শুধু আলো জ্বালাবার প্রয়োজন। তারপর ম্যাম এলেন আমার জীবনে আলোর সন্ধান নিয়ে।ক্লাসের সব বন্ধু বান্ধব আর স্যার ম্যামেরা একটু একটু করে আলোর যোগান দিতে লাগলেন আমায়। এই মুহূর্তে আমি আমানকে ভেবে আমার চিন্তাকে অপবিত্র করতে চাই না। এখন আমার প্রয়োজন তাদের কথা ভাবা যারা আমার কথা ভাবে।যারা আমায় বড় হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়।যারা আমায় ভালোবাসে।

রাতে যেমন হুট করে আমার মন ভালো হয়ে গিয়েছিল সকাল বেলা ঠিক তেমন ভাবেই হুট করে মন খারাপ হয়ে গেল।মা ফোন করেছেন। মেহরাবের নাকি অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। মায়ের কাছে মেহরাবের মা ফোন করে বলেছে।তার মা নাকি সবকিছু জেনে গেছে। সবকিছু জানার পর তার মা কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি না! এই জন্যই খুব দ্রুত অন্য একটা মেয়ে দেখে বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। মেহরাবের মত অমত সম্পর্কে এখনও তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে মায়ের অমতে সে কাজ করবে না এটা বলা যায়!

মার মুখ থেকে এসব শোনার পর দুপুর পর্যন্ত বিছানায় পড়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদলাম। বারবার তখন শুধু মনে হচ্ছিল আমার জীবনটা এমন কেন!যাকেই আমি ভরসা করতে যাই সেই কেমন ছেড়ে চলে যায়!
এরপর হঠাৎ করে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে উঠলাম চিৎকার চেঁচামেচি শুনে। হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসে দরজা দিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। কিন্তু সামনের দিকে তাকাতেই বুকটা কেমন ধ্বক করে উঠে আমার। দরজার সামনে চোখ রেখে দেখি সবাই দৌড়ে যাচ্ছে পিয়ার রুমের দিকে। দৌড়ে যাওয়া সবার মুখেই ভয়ের ছাপ!

#চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ