#কবে_হলো_ভালোবাসা
#তাশফিয়া_রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :১১
(কপি করা নিষেধ)
নাম দিতে যাওয়ার সময় ফাহাদকে দেখলেও, না দেখার ভান করে দুজনেই চলে যায়।
সিনিয়র আপুরা কাপল ঠিক করে দিলো।
দীবা কাপল হিসেবে দিবসকে পেল । তিশু কাপল হিসেবে দিবসের বন্ধু আকাশকে পেল।
প্রাকটিস শুরু হতেই দীবা অবাক হয়ে ফিসফিস করে বললো
-আপনি ডান্সও পারেন!
দিবস ভাব নিয়ে বললো
দিবস: ইয়া আরো অনেক কিছু পারি।
দীবা অবাক হয়ে যেতেই দিবস আবার বলে উঠলো
দিবস: ছি ছি তুমি কি ভাবছিলে, আমি তো গান ডান্সএগুলোর কথা বলছিলাম।
দীবা রাগ করে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই ,দিবস বললো
দিবস: দীবানিশি আরে মজা করছি তো বাবু।
দীবা ঝাঝালো গলায় বললো
– একদম বাবু বলবেন না।
দিবস দুষ্টু হেসে বললো
দিবস: ওকে বাবুর মা।
দীবা চুল ধরতে গেলেই দিবস পিছিয়ে যায়।
তারপর সিনিয়র আপু এসে গান সিলেক্ট করলেন দিলডুবা গানটি।
প্রাকটিস এর শুরুতে, দীবা ভীষণ নার্ভাস হলেও দিবসের সাপোর্ট এ অনেক টায় সহজ হয়ে যায়।
প্রাকটিস শেষে তিশু আর দীবার সাথে দিবস ও গেইটের কাছে আসতেই ,তিনজনের চোখ পড়লো গেইটে দাড়িয়ে থাকা ফাহাদ এর উপর, ফাহাদ চোখ তুলে তাকাতেই দিবস দীবা ও তিশুর হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। দীবা কিছু বলতে গেলেও দিবস ইশারায় থামিয়ে দেয়।
গাড়িতে দিবস বেশ কিছু সময় নীরব থাকলো সবাই। নীরবতা ভেঙে তিশু বলে উঠলো
তিশু: দিবস আপনি গান করবেন না ,শুধু কি ডান্স দিবেন?
দীবা দিবসের উওর শোনার জন্য তাকাতেই
দিবস বলে উঠলো
দিবস: গান ওটা নাহয় সারপ্রাইজ থাক।
তিশু এক্সাইটেড হয়ে বললো
তিশু: তার মানে তুমি গান করবে।
দিবস: হয়তো।
দীবার সাথে দিবস একটাও কথা না বলায় দীবার ভীষণ রাগ হলো। কেনো রাগ হচ্ছে তাও জানেনা। গাড়ি থেকে তিশু কিছূ সময় আগে নেমে গেছে।
দীবার ফুফুর বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই দীবা গাড়ি থেকে নেমে হন হন করে ভেতরে চলে গেলো।
দিবস দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এরপর নিজেও বাড়ি চলে গেলো।
পরের দিন শুক্রবার। ছুটির দিনগুলোতে দীবা নিজের বাড়িতে থাকলে পরিবারের সবার সাথে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যেতো।
দীবার মা হাজার বার বলতো ছুটির দিনে রান্না শিখতে, কিন্তু কখনো দীবার মন চায়নি।
দীবা মন মনে ভাবলো, আচ্ছা দিবসের জন্য কিছু রান্না করলে কেমন হয়। ওনি কি কোন কারণে রাগ করেছে আমার উপর, এত অস্থির কেনো লাগছে, অনেক ভেবে দিবসকে ফোন দিলো
সাথে সাথে রিসিভ হলো। দীবা বললো
– বিরিয়ানি কেমন লাগে?
দিবস আচমকা এমন প্রশ্ন আশা করে নি তাই একটু অবাক হয়ে বললো
দিবস: খুব ভালো লাগে। কেনো বলোতো?
– না মানে আমি রান্না করবো।
দিবস: তুমি রান্না করবা ঠিক আছে, কিন্তু আমার পছন্দে কি যায় আসে?.
দীবা আমতা আমতা করে বললো
– দে দেখেন আমি এত ঘুরিয়ে কথা বলতে পারি না, আমি রান্না করবো, আপনি ভালো মানুষ এর মত খেয়ে যাবেন।
দিবস শব্দ বীহিন হাসলো।
দিবস: আচ্ছা বউ।
– বউ!
দিবস: হুম বউয়ের মত অর্ডার করছো, আর বললেই দোষ!
-বাজে কথা রাখেন। আর ঠিক দুপুরবেলা চলে আসবেন। আমি ডেকেছি এটা যেন ফুফু না বোঝে ওকে।
দিবস: কি ব্যাপার আমাকে এইভাবে ডাকার কারণ আবার পাপিয়া ঝাপিয়া নয়তো?
-আপনার মাথা।
বলেই ফোন রেখে দিলো।
ইউটিউব দেখে বেশ ভালো ভাবে বিরিয়ানি রান্না করলো দীবা।
গোসল করে নামাজ পড়া শেষ করতেই ,দিবসের ভয়েজ শুনে অজান্তেই দীবা হেসে ফেললো।
নিচে নেমে চোখে চোখ পরতেই দিবস হাসলো। যাতে দীবার হার্ট বিট বেড়ে গেলেও নিজেকে নরমাল করে দিবসের সামনাসামনি বসলো।
ফুফু বললো আজ আমার দীবা মা রান্না করেছে বিরিয়ানি, প্রথম চেষ্টা করেছে তাও অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। দিবস টেবিলে এসো আমাদের সাথে খেয়ে যেতেই হবে।
দীবা ও দিবস দুজনেই মিটিমিটি হাসছে।
খাবার মুখে দিতেই দিবস বললো
দিবস: সত্যি অসাধারণ গুড জব।
দীবা মৃদু হাসলো।
দিবস দীবার পাশে বসায় বললো
দিবস ফিসফিস করে
দিবস: সত্যি আমার বউ হয়ে গেলে নাকি এত লজ্জা পাচ্ছো?
এভাবেই খুনসুটির মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে নয়দিন।
আজ নবীন বরণ।
দিবস এর সাথে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে দীবা।
দিবস রেডি হয়ে দীবাকে ফোন দিলো
দিবস: দীবানিশি আর কত সময় লাগবে? এত সেজে কাকে দেখানোর ইচ্ছা বলোতো?
-আপনাকে হয়ছে?
দিবস খুশি হলো।
– আর ১০ মিনিট আসছি।
দীবা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতে দেখে ,দিবস একটা নীল পাঞ্জাবি সাথে জিন্স, নাগরায় জুতা, রিস্ট ওয়াস, হেয়ার স্টাইল ব্যাক ব্রাশ করা, ম্যাচিং সানগ্লাস উফ আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। এসব ভাবনার মাঝেই দিবস ও দীবার দিকে তাকিয়ে সানগ্লাস খুলে একদৃষ্টিতে দেখতে লাগলো শাড়িতে আজ এই প্রথম দেখলো
নীল জামদানি শাড়ি, ম্যাচিং কাচের চুড়ি, ম্যাচিং দুল, টিকলি, চোখে মোটা করে কাজল, আইলাইনার চিকন করে দেওয়া, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক কোমর ছাড়ানো লম্বা চুলগুলো খুলে রাখা, মেক আপ এর কোন ছাপ নেয় মুখে, অথচ দিবস এর কাছে আজ তার দীবানিশিকে পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবীনি মনে হচ্ছে।
দুজনের দৃষ্টি দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কারো কোথাও মন নেয়, মনে হচ্ছে তারা ছাড়া পৃথিবীতে আর কোথাও কেউ নেই।
এসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ, দিবস এর ফোন বেজে ওঠায় ঘোর কাটলো দুজনেই বাস্তব এ ফিরে এলো।
এরপর গাড়িতে দুজনেই নীরব থাকলেও সারা রাস্তা চোখাচোখি হলো অগনিতবার।
এরপর ভার্সিটিতে পৌঁছে দীবা তিশুকে পেয়ে গেলো।
আজ সব মেয়েরা শাড়ি পরেছে। তিশুকেও সুন্দর লাগছে।
চারিদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো দীবা ও তিশু। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। যা ভাষায় প্রকাশিত করার মতো নয়।
বেশ ভোরে আজ বৃষ্টি হয়েছে, তাই পরিবেশ বেশ ঠান্ডা ও মেঘলা যুক্ত আকাশ আর ঠান্ডা বাতাস। এক কথায় বৃষ্টির পর মিষ্টি আবহাওয়া। নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর পুরো ক্যাম্পাস। কেউ পাশের জনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, কেউবা কুশল বিনিময় করছেন।
মুঠোফোনের ক্যামেরায় প্রথম দিনের স্মৃতিটা ধরে রাখছেন কেউ কেউ।
এর মধ্যেই ঘোষণা আসে অনুষ্ঠান শুরুর। পবিত্রধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, জাতীয় সংগীত, এরপর ফুল দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ, করলেন সিনিয়র ভাইয়েরা আপুরা।
সিনিয়র এর মধ্যে ফাহাদকে দেখলো দীবা ,কেমন বাজে নজরে তাকিয়ে ছিলো।
ফাহাদ এর থেকে ফুল নিতে চাইছিলোনা । তবুও সবার সামনে হাত বাড়িয়ে দিতেই, কোথায় থেকে দিবস আগে এসে দীবার হাতে রজনী গন্ধ্যা হাতের মধ্যে দিয়ে দিলো।
ফাহাদ হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
দীবা মৃদু হেসে ফাহাদকে পাশ কাটিয়ে দিবসের সাথে চলে গেলো।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরুতেই, দিবসের নাম বলা হলো।
গিটার হাতে স্টেজএ উঠার সময় ,দীবার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে সুর তুললো, মিষ্টি মধুর আবহাওয়ার সাথে যেন মিল রেখে গান শুরু করলো দিবস। গানের শুরুতে দিবস মিষ্টি হেসে বললো
এই গানটি আমার জীবনের বিশেষ কারো জন্য।
বলেই গাইতে শুরু করলো
ভেজা সন্ধা অঝর বৃষ্টি,
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ, বইছে বাতাস
আড়ালে দাড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা,
শুধু হয়েছে অনুভূতি।
হয়নি বলা কোনো কথা,
শুধু হয়েছে অনুভূতি।
হালকা আঁধার দিচ্ছে ঘিরে
আবছা আলো নিচ্ছে ছুঁয়ে
অল্প করে হোকনা শুরু
ভালবাসা এখনো ভীরু। (x2)
হয়নি বলা কোনো কথা,
শুধু হয়েছে অনুভূতি।
হয়নি বলা কোনো কথা,
শুধু হয়েছে অনুভূতি।
#চলবে ।।।