#কবে_হলো_ভালোবাসা
#তাশফিয়া_রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :১০
(কপি করা নিষেধ)
দিবস গাড়ির দরজা খুলতে যেতেই ,দীবা বলে উঠলো
– আপনি এমন করছেন কেনো?
দিবস যেন কিছু জানেনা এমন ভাব নিয়ে বললো
দিবস: কেমন?
– আবার নাটকও করেন। আপনি যেভাবে কথা বলতে বলছেন, আমি তো কখনো কারো সাথে এভাবে কথা বলিনি।
দিবস: কারো সাথে আর দিবস আলাদা ওকে দীবানিশি।
দীবা ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো
– না বললে হয় না?
দিবস এর খুব হাসি পেলেও মনের ভেতর লুকিয়ে বললো
দিবস: না হয় না। আমার মনে হয় তোমার গাড়িতে থাকার ইচ্ছা।
– এমন করেন কেনো?
দিবস গাড়ি থেকে এক পা বাইরে দিতেই দীবা বলে উঠলো
কাপাকাপা গলায়
– দি দি বস ব বেবি প্লিজ হেল্প মি।
দিবস এর ভীষণরকম ভালো লাগলো। কিন্তু বাইরে মজা করে বললো
দিবস: বেবি নো প্লিজ ,তোমাকে প্লিজ বলতে হবে না, তোমার এই আদর মাখা ডাকেই দিবস সাহায্য করবে তো।
বলেই চোখ মারলো।
দীবার কেমন অস্থির দমবন্ধ অনুভূতি হচ্ছে।
তবুও নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করলো।
দিবস সিটবেল্ট খোলার জন্য ,দীবার কাছাকাছি আসতে
দীবার বুকের ভেতর নীরব অনুভূতিরা ,যেন ঝড় তুলে ফেললো। চোখ তুলে চাইতে পারছেনা দিবস এর দিকে, নিজের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতে পারার ইচ্ছা হচ্ছে, নিজের এই লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে লুকিয়ে পরতে মন চাইছে কোথাও, দীবা একমনে এসব ভেবে চলার মাঝেই ,দিবস সিটবেল্ট খুলে একদৃষ্টেতে দীবার দিকে চেয়ে আছে।
দীবার এই লজ্জা মাখা মুখ দেখে দিবসের ভীষণ ভালো লাগা কাজ করছে।
দীবা লজ্জা অস্থিরতায় চোখ তুলে তাকাতে না পারলেও দিবস এর দৃষ্টি দীবাতে নিবদ্ধ।
তখনই হঠাৎ, দীবার ফোন এ ম্যাসেজ এর শব্দে দুজনের ঘোর কেটে বাস্তব এ আসে।
গাড়ি থেকে দুজনেই নামতে, দিবস হঠাৎ হাচি দিলো।
দীবার খুব খারাপ লাগলো ওর জন্যই দিবস অসুস্থ হলো।
– বৃষ্টির মধ্যে কে বলেছিলো আমার পাশে বসতে, এখন
ঠান্ডা লাগলো কার?
দীবার এমন কথায় দিবস অবাক হলেও ,ওর কথার অধিকার বোধ দেখে দিবস এর মন ছুয়ে গেলো।
দিবস আবার হাচি দিতেই ,দীবা ওর ওড়না দিয়ে ভালোভাবে মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো।
দিবস একদৃষ্টেতে চেয়ে আছে।
দিবসও এক নাম না জানা, কোন নতুন অনুভূতির সাথে পরিচিত হলো।
মাথা মুছিয়ে দেওয়ার পর দীবা বললো
– মাথা না মুছলে আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। দিবস কিছু না বলায় দীবা আবার বললো
– আপনি কি রাগ করলেন?
দিবস দীবার কথায় দৃষ্টি সরিয়ে বললো
দিবস : না, আমার খুব ভালো লেগেছে।
দীবা থমকালো তবুও বললো
– খুব ভালো কেনো লেগেছে?
দিবস বাকা হেসে বললো
দিবস: সময় হলে বলবো। এখন বাসায় যাও আর তুমিও ভালো ভাবে মাথা মুছে নিও।
দীবা আর কথা বাড়ালো না। বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেলো।
দিবস ও তার বাসায় গেলো।
রাতে বাবলি ঘুমানোর পর, দীবা ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঘুম আসছে না। কোন এক অস্থিরতা বিরাজ করছে মনে। নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো দীবা এই অস্থিরতার কারণ কি দিবস!
নিজের মনের উওরে নিজেই অবাক হয়ে গেলো।
অনেক ভেবে অনলাইন গেলো দীবা ।কিন্তু যেয়ে কোন লাভ হলো না দিবস একটিভ নেয়।
একবার বেলকনিতে গেলো, না সেখানেও দিবস এর কোন অস্তিত্ব নেই, আপন মনে আবার ভাবলো তবে কি দিবস এর জ্বর আসলো, অসুস্থ হয় পড়লো বেশি, আচ্ছা আমি একবার কল করে ,বকো বলে সম্বোধন করলে কি দিবস খুশি হবে, আমার জন্য শরীর অসুস্থ হয়েছে আমার জন্য এবার দিবস এর মন ভালো হবে। এসব ভেবে মনে মনে হাসলো ,তারপর দিবস এর নাম্বার এ ডায়াল করলো
প্রথম বার রিসিভ হতেই দীবা বলে উঠলো
– বকো।
দিবস শুনতেই হাহা করে উচ্চস্বরে হেসে ফেললো।
এমন জোরে হেসেছে যে দিবস এর মা রূমে চলে এসেছে। দিবস ইচ্ছা করে ফোনটি লাউডে দিলো।
এদিকে দীবা কিছু বুঝতে না পেরে আবার বললো
-বকো।
দিবস এর মা পাশ থেকে বলে উঠলো
বকো মানে ?
দীবা শুনতে পেলো। লজ্জায় ফোন কেটে দিলো।
বেশ কিছু সময় পর দিবস কল বেক করলো। রিসিভ হতেই দীবা ঝাঝালো গলায় বলে উঠলো
– আবার মজা, অসভ্য, অসহ্য লোক একটা। আপনি নিজেকে কি মনে করেন বলেনতো ?
দিবসের সহজ স্বীকারোক্তি বলে উঠলো
দিবস: ফারদিন আহমেদ দিবস।
– আমি ভাবলাম আপনি অসুস্থ হয়ে পরছেন কিনা, তাই আপনার মন ভালো করার জন্য ,বোকার মতো বকো বলে সম্বোধন করলাম। আর আপনি মজা করলেন।
দিবস এর উপর রাগ থেকে মনের কথাগুলো অজান্তেই বলে ফেলেছে।
দিবস: আমার মন ভালো নিয়ে এত ভাবার কারণ কি বেবস্ ? কে হয় তোমার?
দীবা থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বললো
– আমার আমার মনে হলো ,আমার কারণে বৃষ্টিতে ভিজে আপনার বোধহয় জ্বর এসেছে, তাই মন ভালো করতে চেয়েছিলাম। আর কিছু না।
দিবস: আর কিছু আছে কি না ,আমি তো বলি নাই?
– আচ্ছা এসব কথা বাদ দেন। আগে বলেন আপনার শরীরের কি অবস্থা?
দিবস মৃদু হেসে বললো
দিবস: আজ এত আমার কথা ভাবছো বেবি, তোমার চিন্তাতে অন্য কিছু নেই তো?
দীবা মনে মনে ভাবতে লাগলো , দিবস এর সাথে কথা নিজে থেকে বলা মানে মাথা ব্যথাকে নিজে থেকে আমন্ত্রণ করা। এসব ভেবে আবার বললো
– দেখেন আমি আপনাকে বলতে চাইছি যে ….
দিবস থামিয়ে দিয়ে বললো
দিবস: আমি জানি তুমি আমাকে কি বলবে তোমার বলার দরকার নেই।
দীবা অবাক হয়ে বললো
– কি জানেন?
দিবস: আমি জানি তুমি আমাকে আনলিমিটেড ভালোবাসো ।আর তোমার মন আমাকে আই লাভ ইউ বলার জন্য ছটফট করছে। যেদিন তুমি আমাকে প্রথম দেখেছিলে । বলেই আবার হা হা করে হাসলো।
দীবা রেগে বললো
– ও মাই আল্লাহ্ আমি কোথায় যেয়ে আমার মাথা ফাটাবো । কোন দু:খে আপনার সাথে কথা বলতে আসছিলাম।
দিবস : বেলকনিতে যাও।
দীবা অবাক হয়ে বললো
-কেনো?
দিবস: বেলকনির গ্রিলে মাথা ফাটাতে পারো। বলেই আবার হাসলো।
– ভেরি ইর্রিটেটিং। বলে কল কেটে দিলো।দীবা
শুয়ে পড়লো।
সকালে তিশুকে কল দিলো আসার জন্য। তিশু একটু পর আসতেই দুজনে একসাথে নাস্তা করে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিকশা নিলো।
এরপর ভার্সিটি পৌঁছে গেলো।
ভার্সিটিতে দুটি ক্লাস পরে সিনিয়র ভাইয়া আপুদের সাথে স্যারও এলেন। এসে জানালেন আমাদের নবীন বরণ হবে।
নবীন বরণ নিয়ে অনেক শুনেছি, আমার কাজিনদের কাছে। ফাইনালি আমাদেরও নবীন বরণ হবে। শুনে বেশ আনন্দ হচ্ছে।
সার বললেন
আর ১০ দিন পর নবীন বরণ। সিনিয়ররা সব বুঝায়ে দেবে কে কি করতে চাও। আলাপ করে নিও।
এরপর আর ক্লাস হলো না।
তিশু বলে উঠলো
তিশু: বাবু আমি ডান্স করবো।
– কর ভালো তো।
তিশু ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো
তিশু: তুই ও করবি।
দীবা অবাক হয়ে বললো
– পাগল নাকি, আমি পারিনা তোর মতো।
তিশুর জন্য রাজি হলেও নাম দিতে গিয়ে দেখলো সব কাপল ডান্স। যা দেখে দীবা কিছুতেই রাজি হলো না।
তিশু রাজি করানোর জন্য বললো
তিশু : তুই আমাকে আর ভালোবাসিস না?
– এখানে ভালোবাসা আসছে কোথায় থেকে!
তিশু: আমি তোকে ভালোবাসি বলে তোর সব কথা বিনাবাক্যে মেনে নেয়। আর তুই?
– তিশু আমি তো তোর মতো ডান্স পারিনা বাবু।
তিশু: তুই ও যথেষ্ট ভালো পারিস। আর তাছাড়া এখনো টাইম আছে শিখে নিবি । পারবিনা আমার জন্য?
তিশুর জোরাজুরিতে রাজি হতে হলো দীবাকে।
চলবে।