#কবে_হলো_ভালোবাসা
#তাশফিয়া_রহমান (লেখিকা)
#পর্ব :৬
(কপি করা নিষেধ)
দিবস গিটার হাতে সুর তুলে দীবার দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলো –
টালমাটাল, মনটা কিছু তোমায় বলতে চায়
বেসামাল, ভাবনাগুলো তোমায় ছুঁতে চায়
টালমাটাল, মনটা কিছু তোমায় বলতে চায়
বেসামাল, ভাবনাগুলো তোমায় ছুঁতে চায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
না লেখা চিঠিগুলো মন পাহারায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
রাতদিন, চেনা তুমি ছিলে অচেনা
অন্তহীন, মনে হত মিষ্টি যন্ত্রণা
সেই ব্যথা উঠলো সেরে চোখের এ ছোঁয়ায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
কতদিন, ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায়
ক্লান্তহীন, তুমি ছিলে আমার কল্পনায়
সেই ছবি উঠলো ভেসে চোখেরই পাতায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়।
গানের প্রতিটি লাইনে যেনো, দীবা কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ভীষণ অস্থিরতায় কেমন মুখ শুকনো হয়ে গেলো দীবার।
এদিকে দিবস গান শেষ করে ,দীবার অস্থিরতাময় মুখ দেখে মনে মনে হাসলো। কারো নজরে পড়লো না।
এরপর আরো কিছু গান করলো। লাস্ট গান শেষ হওয়ার আগেই দীবা বাবলিকে বললো
– আমার ভীষণ পানি পিপাসা লেগেছে। আমি একটু আসছি। বাবলিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। এদিকে বাড়ির সবাই গান দেখতে ব্যস্ত তাই কেউ খেয়াল করেনি।
গান শেষ হতেই বাবলি গেলো ,দিবস এর মেক আপ রুমের সামনে, রূম থেকে বেড়িয়ে আসতেই দিবস বললো
দিবস:তুমি একা!
বাবলি: আপু পানি খেতে গেছে।
দিবস অবাক চোখে তাকালো !তাকিয়ে একটু ধমক দিয়ে বললো
দিবস: পানি খেতে গেছে মানে কি? তোমার বোন দীবা কি কিছু চেনে? এটা ঢাকা শহর বাবলি তোমার ধারণা আছে । কত সময় আগে গেছে? বাবলি দিবস এর ধমকে কেদে ফেললো।
বাবলি ফুপাতে ফুপাতে বললো
বাবলি: ১৫/২০মিনিট ।
দিবস: আর তুমি এখন বলছো। বলেই বাবলিকে মেক আপ রুমে বসিয়ে দিবস খুজতে লাগলো।
_____________
ঐদিকে দীবা পানি নিয়ে আসতেই , সামনে হাজারো লোকের ভীড়ে ভয়ে জড়োসরো হয়ে এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে। ভীড় জিনিসটা ছোট থেকেই দীবা ভয় পায়।
দীবার মনে হচ্ছে ও হারিয়ে গেছে। এসব ভেবে চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি পড়তেই, মনে হলো কেউ এসে ওর চোখের পানি মুছে দিলো। সাথে সাথে সামনে তাকিয়ে দেখে একটি মাস্ক পরা ছেলে। মাস্ক পরলেও চিনতে অসুবিধা হয়নি দীবার ,যে এটাই দিবস । সাথে সাথেই দীবা দিবসকে জড়িয়ে ধরলো। দিবস যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
দিবসের হার্ট বিট বেড়ে গেলো মূহুর্তেই। ধীরে ধীরে দীবার মাথায় হাত রাখলো। রেখে বললো
দিবস : শান্ত হও দীবানিশি। আমি আছি তো। দীবাকে এই মূহুর্তে কিছু বললো না।
ধীরে সুস্থে দীবাকে নিজের থেকে সরিয়ে ,হাত ধরে বাবলিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো দিবস।
সারা রাস্তা নিস্তব্ধতা বিরাজ করলো গাড়ির ভেতরে।
গাড়ি থেকে বের হওয়ার পর,দিবস দুজনকেই দাড় করিয়ে বললো
দিবস: আজকে যা ঘটেছে এ বিষয়ে যেনো কেউ না জানে। আর বাবলি আম সরি । তখনকার বিহেভ এর জন্য।
বাবলি : আমিও সরি।
এদের কথার মাঝে দীবা নিরব এ অন্য দিকে চেয়ে আছে। বাবলি চলে যেতেই দিবস দীবাকে অন্যমনষ্ক দেখে বললো
দিবস: দীবানিশি।
অন্যমনস্ক থাকায় আবারও উওর দিলো দীবা।
– হুম।
দিবস হা হা করে হেসে বললো
দিবস: আমার দেয়া নাম তোমার এত পছন্দ।
– আমার ভালো লাগছে না এখন কোন মজা।।
দিবস হঠাৎ বলে উঠলো
দিবস: তোমর ফোন কোথায়?
এমন প্রশ্নে দীবা অবাক হলো !
দীবার হাতে ফোন দেখতেই ,দিবস ছো মেরে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে ,নিজের নাম্বার সেইভ করে দিলো। তারপর ফোন ওর হাতে দিয়ে বললো
দিবস: আমার নাম্বার সেইভ করছি। আর তোমর নাম্বার থেকে আমর নাম্বারে মিসড্ কল দিয়ে নাম্বার নিয়েছি। ভুলেও ডিলেট অর ব্লক করার চেষ্টা করবানা।
– আমি তো এখনি ডিলেট করে
দিবো।
দীবা ডিলেট করতে গেলেই ফোনটি ছো মেরে আবার কেড়ে নিলো দিবস। এরপর সিরিয়াস হয়ে বললো
দিবস: শোনো আজ যদি তোমার নাম্বার আমার কাছে থাকতো ,তাহলে তোমাকে আজকের মত এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো না।
দীবার সাথে সাথে চোখে পানি চলে আসলো। দিবস এর হাত থেকে ফোনটি নিয়ে দৌড়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেল।
দিবস দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
হঠাৎ রাতে দীবার ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা হাতে নিতেই দীবার চোখ কপালে কারণ স্ক্রিন এ শো করছে সুইট হার্ট। এমনিতে মন খারাপ তার উপর এসব এ মেজাজ ও খারাপ হলো।
ফোন রিসিভ করতেই দিবসের হাসির শব্দে, দীবার রাগ যেনো কোথায় হারিয়ে গেলো।
হাসি থামিয়ে
দিবস এক লাইন গান বললো
দিবস: দীবা নিশি তোমায় চাই যে কাছে রাখ না মনেরই অন্তর মাঝে।
ভুলে তুমি যেওনা দুরে আর থেকো না মন খুজে তোমাকে।
– এসব গান শোনানোর জন্য ফোন দিয়ে থাকলে ফোন রাখেন।
দিবস: এটা গান তোমাকে কে বললো?
– খুব ভালো ছিল জোকস্ ।
দিবস: গান টা তোমার জন্য ছিল।
দীবার হার্ট বিট বেড়ে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো
– তো হঠাৎ আমার জন্য গান কেনো?
দিবস: তুমি আমার ডাই হার্ট ফ্যান তোমার জন্য তো অল ওয়েজ স্পেশাল গান থাকবে আমার কাছে।
– আর কিছু?
দিবস: ইউর আইস আর লাইক দি ওশান; আই কুড সুইম ইন দেম অল ডে।
দিবস এর এসব কথায় দীবা কেমন জানি কথা বলার শক্তি হারিয়ে আমতা আমতা করে বললো
-দে দেখেন
দিবস : কি দেখবো কিউটি। মাঝে মাঝে তোমাকে একদম কিউকাম্বার এর মত লাগে। মনে হয় . .. আর বলতে পারলো না দীবা থামিয়ে দিলো।
-আপনি চুপ করবেন অসহ্য।
দীবা অলরেডি ঘেমে গেছে। তাড়াতাড়ি করে দিবস কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কেটে দিলো ।
এদিকে দিবস জোরে জোরে হাসলো। মনে মনে বললো পুরো কথাটা তো শুনলেই না কিউকাম্বার ।
______
পরের দিন সকালে দীবা তিশুকে কল করে ওদের ফুফুর বাসায় আনে। তিশু ও এসে পরেছে ইতিমধ্যে। দুজনে খাওয়া দাওয়া করে গল্প করে একসাথে বের হলো। আজ একটু তাড়াতাড়ি বের হয়েছে ইচ্ছা করে, চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো দিবস কোথাও নেয়। স্বস্তির নি:শাস ফেলে রিকশা উঠলো দুই বান্ধবী।
ভার্সিটিতে ঢুকতেই দুজনের চোখ থেমে গেলো, সামনে থাকা মানুষটির উপর । হ্যাঁ আজ আর কোন ভুল দেখছে না, সত্যিই ফাহাদ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে পাশে একটি মেয়ে খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে আছে। এসব দেখে তিশু আগেই বললো
তিশু: একদম শক্ত থাকবি বাবু। জাস্ট ইগনোর করবি।
তিশুর কথায় একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যেতেই ফাহাদ বলে উঠলো
ফাহাদ: তোমার মত মেয়ে এখানে কি করে! এখানে কি আবার নতুন কোন ওয়ে পেয়েছো?
অপমানে দীবার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। তিশু বলে উঠলো।
তিশু: একদম ফালতু কথা বলবেন না। আর আমার তো মনে হয় ওয়ে দীবা না আপনি পেয়েছেন। আপনার মতো মানুষ এগুলোই তো করেন।
তিশুর কথা শেষ হতেই চিৎকার দিয়ে বললো
ফাহাদ: জাস্ট শাট আপ।নিজের রূপ দেখানোর জন্য তোদের মত মেয়েরা এখানে আসে। এসব জায়গা আসার কোন যোগ্যতা তোদের নাই।
হাজারো মানুষ এর ভীড় জমে গেছে। অপমান জিনিসটা দীবা কখনো সহ্য করতে পারে না।শুধু বলে উঠলো
– আপনার মতো মানুষকে আমি কখনো চিনতাম !এটা ভাবতেও আমার নিজের উপরই রাগ হচ্ছে।
ফাহাদ : বেয়াদব আর কত করবি?
অপমানে লজ্জায় এক পা দু পা করে পিছনে যেতেই, হঠাৎ মাথা ঘুরে গেলো । পরে যেতে গেলেই কেউ ধরে ফেললো …
#চলবে ।।