কনফিউশন পর্ব ৩৯-৪০

0
1464

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৩৯-৪০

রাত অনেক। ঘুম আসছ না আরশির। কাল খুব ভোরে কাব্যর ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে গিয়ে যে একবার দেখা করবে সেই সময় থাকবে না। ভালো লাগছে না কিছুই। কাব্যকে ফোন করবে বলে ফোনটা হাতে নিতেই কাব্য নিজেই ফোন করলো। বুক কেঁপে উঠলো আরশির। ফোন ধরতেই কাব্য বলল,
“কী খবর আরশি? ঘুমিয়ে পড়েছিলে?”
“নাহ তিরার সাথে কথা বলছিলাম অনেকক্ষণ ধরে।”
“কী অবস্থা এখন ওর?”
“ভাল না। এখনো ভাইয়ার দিক থেকে কোনো খবর আসেনি। চিঠিটা পেয়েছে কিনা তাও জানেনা তিরা।”
“হুম।”
“এমন অদ্ভুত মানুষ আমি জীবনে দেখিনি।”
“মানুষ এর থেকেও অদ্ভুত হয় আরশি।”
“আচ্ছা তিরা যে একটা গাধা এটা তো আমাদের থেকেও ভাল জানার কথা তার। সে কেন ছোট্ট একটা ভুল মাফ করে দিতে পারবে না?”
“যাদিদ হয়তো তিরাকে শাস্তি দিচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে এমন আর না হয়। কিংবা সে হয়তো নিজেকে সামলানোর জন্য সময় নিচ্ছে। কথা বললে হয়তো খারাপ ব্যবহার করে ফেলবে।”
“যেকোনো কিছু কি আলোচনা করে সমাধান করা যায় না কাব্য?”
“ব্যাপারটা সবসময় একরকম না আরশি। যখন ছোটোখাটো ভুলবোঝাবুঝি হয় তখন ইন্সট্যান্ট আলোচনা করে সমাধান সম্ভব। কিন্তু আমরা মানুষেরা মাঝেমাঝে খুব বেশি রেগে যাই। তখন আমরা আর নিজেদের কন্ট্রোলে থাকতে পারিনা। তখন আলোচনা না করাই ভাল। সময় নিয়ে মাথা ঠান্ডা করে আলোচনা করাটাই তখন শ্রেয়।”
“একটা মিথ্যে বলায় এত রাগ!”
“শুধু এজন্য না। আমি নিশ্চিত ছবি দেখে আর চিঠি পড়েই ওর মাথাটা গেছে।”
“যাদিদের জায়গায় তুমি থাকলে কী করতে?”
“আমার কথা বাদ দাও।”
“কেন? বাদ দেব কেন? আমি জানতে চাই।”
কাব্য হেসে বলল,
“আমি যাদিদের মত অত ইমোশনাল না।”
“যাদিদ ইমোশনাল? যাদিদ একটা পাথর।”
“উহু। সে ইমোশনাল। তবে প্রকাশ করতে জানেনা।”
“কিজানি! আচ্ছা তুমি কিন্তু বললে না তুমি হলে কী করতে?”
“কিছুই করতাম না। ধরো আমি এখন যদি জানতে পারি তোমার কেউ ছিল, তার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক যদি ফিজিক্যাল পর্যন্তও গড়ায় এবং সেটা তুমি আমার কাছে গোপণ করো। তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। কারণ ওটা তোমার অতীত এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার। একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত ব্যাপার গোপণ রাখতেই পারে।”
“তাহলে তুমি কেন আমাকে আগেই তোমার সব অতীত বলেছিলে?”
কাব্য হেসে বলল,
“কারণ তোমরা মেয়ে তো। একটুতেই সেন্টি খেয়ে যাও। পরে বিপদে পড়ার চেয়ে আগেভাগে ক্লিয়ার থাকা ভাল।”
“এমনওতো হতে পারে তুমি কারো সাথে ফিজিক্যালি ইনভলব ছিলে বলে আমারটা মেনে নিতে পারবে। যাদিদের তার এক্সের সাথে এরকম কিছু ছিলনা। তাই সে তিরার টা মেনে নিতে পারছে না।”
“আমি যখন তনিকার ভয়াবহ পাস্ট জানতে পারি তাও অন্য কারো মাধ্যমে তখন আমি এমন ছেলে ছিলাম যে জীবনে কোনো মেয়েকে ভালোবাসেনি, টাচ করা তো বহুদূরের কথা। আমি ছবি আর চিঠির থেকেও ভয়াবহ কিছু দেখেছিলাম। তখনও আমার মেন্টালিটি সেইম ছিল। আমি তনিকাকে সাপোর্ট দিয়েছিলাম কারণ ও প্রচন্ড ভয়ে ছিল।”
“আমার কখনো কেউ ছিল না।”
কাব্য হাসলো। আরশি বলল,
“কিন্তু আমি তনিকার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম।”
“তাই?”
আরশি ইতস্তত করে বলল,
“আমার কেন যেন মনে হতো তোমার নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড ছিল। তাই সেটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু ফিজিক্যালি ইনভলব ছিলে এটা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম।”
“সরি আরশি।”
আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কাব্য বলল,
“থাক মন খারাপ করোনা। এসব কখনো ফুরিয়ে যায় না।”
কাব্য হেসে ফেলল। আরশি লজ্জা পেয়ে বলল,
“তুমি একটা অসভ্য ছেলে৷”
আরশি ফোন কেটে মুখ ঢেকে হাসতে লাগলো। কাব্য আবার ফোন দিল। আরশি ধরলো না। এরপর কাব্য একটা মেসেজ দিল, “ফোন ধরো, ইটস ইম্পরট্যান্ট।” এবার ফোন ধরলো আরশি। কাব্য বলল,
“আজ চাঁদ দেখেছো?”
“না।”
“বারান্দায় যাও, দেখো।”
আরশি বারান্দায় গিয়ে আকাশে তাকালো। বলল,
“বাহ আজকের চাঁদটা তো খুব সুন্দর।”
“চাঁদ দেখা শেষ হলে রাস্তার দিকেও একটু তাকিও।”
আরশি রাস্তায় তাকিয়ে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে, অন্যহাতে ফোন। আরশি চমকে বলল,
“তুমি?”
“চলে যাওয়ার আগে আরেকবার দেখা হবেনা মানতে পারছিলাম না।”
“তুমি সত্যি এসেছো কাব্য?”
“দেখছো তো।”
“থ্যাংকস কাব্য। খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তোমাকে।”
“কই বলোনি তো।”
“সম্ভব না ভেবে বলিনি।”
“একবার বলেই দেখতে।”
আরশি হাসলো। তারপর বলল,
“আচ্ছা তুমি এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে আমার সাথে কথা বলছিলে?”
“না পথে ছিলাম।”
“এতক্ষণ বলোনি কেন?”
“বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো?”
আরশি আবার হাসলো। কাব্য বলল,
“এখন ঝটপট নীচে আসো।”
“এত রাতে কীভাবে সম্ভব!”
“জানিনা সম্ভব করো।”
“এত রাতে গেট খুললে সবাই আওয়াজ পাবে।”
“গেট খুলতে হবে না। দেয়াল টপকে আসব।”
“এত উঁচু দেয়াল কীভাবে টপকাবে?”
“ওসব আমি ম্যানেজ করে নেব। তুমি শুধু উপরটা ম্যানেজ করে নীচে নামো।”
“বাদ দাও কাব্য। দেখা তো হলোই।”
“না তোমাকে আসতেই হবে। ভয় পাচ্ছ কেন নীচতলা তো ভাড়া হয়নি, কেউ দেখার চান্স নেই।”
“দেখলে আমার কিছু যায় আসেনা। আর আমি আসতেও পারব। ভয় তোমাকে নিয়ে। ব্যাথা পাও যদি।”
“কিচ্ছু হবেনা।”

আরশি কাব্য দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি। আরশির একটু নার্ভাস লাগছে। অনেকদিন পর দেখা হওয়ায় ইচ্ছে করছে কাব্যকে মন ভরে দেখতে। কিন্তু পারছে না কারণ কাব্য তাকিয়ে আছে। ওদিকে কাব্য আরশিকে দেখতে দেখতে সব কথা গুলিয়ে ফেলেছে। একসময় আরশির হাত ধরে বলল,
“খুব মিস করছিলাম এতদিন।”
“আমিও।”
“পাঁচ বছর কি খুব বেশি সময় আরশি?”
“নাহ।”
“আমার পিএইচডি করতে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা কি ভুল ছিল?”
“আরে না। পাগলের মত কথা বলছো কেন?”
“জানিনা আজকে ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।”
“সব ঠিক হয়ে যাবে কাব্য। ধৈর্য্য ধরো। এখন একদম শেষ মুহুর্ত তো, সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছ বলে কষ্ট হচ্ছে।”
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কেমন একটা ভয়ও কাজ করছে।”
আরশি আর কিছু বলল না। ভয় তার নিজেরও করছে। পাঁচ বছর অনেক সময়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। তারপর আরশি চোখ সরাতেই কাব্য বলল,
“তাকাও।”
আরশি আবার তাকালো। কাব্য আরশির চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে মিস করব। তোমার হাতের চা, তোমার এই স্বচ্ছ চোখের চাহনি, তোমার হাসি, তোমার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ সবকিছু মিস করব!”
“আমিও মিস করব তোমার হাতের প্যানকেক, তোমার বুকসেল্ফ আর তোমার গায়ের সিগারেটের গন্ধ!”
“আমিও মিস করব আমাকে দূরে রাখার জন্য তোমার সেই আঙ্কেল ডাকা।”
“আমিও মিস করব আমার কাছে আসার জন্য সিগারেট খাওয়া কমিয়ে মায়ের অজুহাত দেয়া।”
কাব্য ধরা খেয়ে হেসে বলল,
“শিট! ওকে ব্যাপার না। আমিও মিস করব ভাবি বাসায় থাকা স্বত্তেও অন্ধকার রাতে আমার কাছে থাকার জন্য তোমার মিথ্যে বলা।”
আরশি এবার লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলল। কাব্য হাসছিল, আরশি হঠাৎ কাব্যর গাল টিপে ধরে বলল,
“এটা টের পেয়েছো কেন তুমি? অসভ্য ছেলে।”
কাব্য মাথা নাচিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
“আরও অনেককিছু টের পেয়েছি।”
আরশি মাটির দিকে তাকিয়ে হাসছিল। কাব্য বলল,
“আরেকটা জিনিস খুব মিস করব আরশি।”
আরশি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী?”
“এইযে আমি কাছে এলে তোমার এই নার্ভাস হয়ে যাওয়া।”
আরশি চোখ নামিয়ে হাসলো। তখনই কাব্যর ফোন ভাইব্রেট করলো। ফোন বের করে বলল,
“আরশি বড় ভাই ফোন করছে। আমাকে যেতে হবে। আমি কাউকে কিছু জানিয়ে আসিনি।”
“আচ্ছা যাও।”
“ভালো থেকো। সাবধানে থেকো। আর এভাবেই হাসিখুশি থাকবে। আমি পাঁচ বছর পর এসে এই হাসি যেন অব্যাহত দেখি।”
আরশি হেসে বলল,
“তুমি যেমনটা চাইবে।”
কাব্য আচমকা আরশির কপালে একটা চুমু দিলো। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষণ ঠোঁট চেপে রাখলো ওই কপালে। আরশির চোখ বন্ধ হয়ে গেল৷ হঠাৎ সেই চোখ ভরে গেল জলে। কাব্য আর তাকালো না। যেভাবে দেয়াল টপকে এসেছিল, সেভাবেই চলে গেল। তাকালে দেখতে পেতো, আরশি সেখানেই মাটিতে বসে পড়েছে। কপালে হাত দিয়ে কাব্যর ঠোঁটের স্পর্শটুকু ধরে রাখতে চাচ্ছিল।

চলবে..

কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ৪০

কাব্য চলে যাওয়ার পর আরশির প্রচন্ড আফসোস হচ্ছিল কেন সে একবার কব্যকে জড়িয়ে ধরল না। কাব্য যখন তার কপালে চুমু দিল তখনই তো তার কাব্যর বুকে ঝাপিয়ে পড়া উচিৎ ছিল! হায় কেন সে এটা করলো না? এইযে বুকটা খালি খালি লাগছে, এই শূন্যতা নিয়ে সে পাঁচটা বছর কী করে থাকবে!

তিরা ফোনের পর ফোন করে যায়, যাদিদ ধরে না। কখনো দেখে কখনো দেখে না। সে তার সিদ্ধান্তে অটল, তিরার সাথে কোনোভাবেই সে কথা বলবেনা যতদিন তার রাগ না কমে। আর তিরার নাম্বারটাও সে ব্লক করে না। সে চায় তিরা ফোন করুক, তিরা কত ফোন করতে পারে সেও দেখবে। প্রথম প্রথম তিরা খুব মেসেজ পাঠাতো। এখন আর তেমন মেসেজ পাঠায় না। ফোন করাও নিশ্চয়ই একসময় থামিয়ে দেবে। দিক, সবকিছু থেমে যাক। ওদিকে তিরা দেখে যাদিদ তার বাবা মা কে নিয়মিত ফোন করে, খোঁজখবর নেয়। তার কথা কি একবারো জিজ্ঞেস করে? নাকি তার কথা ভাবাই ছেড়ে দিয়েছে।

মাসখানেক পরে আরশির জন্য একটা পার্সেল এল। পার্সেল খুলে দেখে একটা লিপস্টিক। সাথে কাব্যর চিঠি। তাকে কেন লিপস্টিক পাঠালো, তাও এতদূর থেকে তা বুঝতে পারছে না। কিছুটা অবাক হয়েই চিঠিটি খোলে সে।

আরশি,
এই লিপস্টিকটা তোমার জন্য কিনেছি, হুট করেই। এটা জার্মান লিপস্টিক, খুব ভাল। তোমাকে কখনো বলা হয়নি লিপস্টিক আমার খুব পছন্দ। জানি তুমি লিপস্টিক পরো না। তোমাকে কখনো লিপস্টিক পরা দেখিওনি। তবুও দেখেই মনে হলো এটা তোমার ওই অমূল্য ঠোঁটের জন্যই তৈরি। তোমার ঠোঁট পর্যন্ত যেতে না পরলেও তোমার কাছে থাকলেই ধন্য হবে এই লিপস্টিক এবং নগন্য কাব্য।

চিঠি পড়ে আরশি লজ্জায় মুখ ঢেকে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে লিপস্টিক টা পরলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যেহেতু আরশি কখনোই লিপস্টিক পরেনি সেহেতু ঠিকভাবে পরতে পারল না। ঠোঁটের বাইরে লেগে গেল। তাই মুছে ফেলল। কিন্তু পুরোপুরি উঠলো না। সে অনেকবার তিরাকে দেখেছে তেল বা লোশন লাগিয়ে লিপস্টিক উঠাতে। সেভাবেই পুরোপুরি উঠিয়ে রশ্নির কাছে গেল। রশ্নি টিভি দেখছিল। আরশিকে দেখেই বলল,
“আয় আরশি।”
“ভাবি একটা কাজ দেব তোমাকে। একদম আমাকে লজ্জা দেবেনা আগেই বলে নিচ্ছি। তুমি ছাড়া কিন্তু আর কেউ নেই আমার যার কাছে যাব।”
“আরে শুধুশুধু লজ্জা দেব কেন? বল কী করতে হবে।”
আরশি লিপস্টিকটা বের করল। বলল,
“এটা আমার ঠোঁটে পরিয়ে দাও।”
রশ্নি মুচকি হাসছিল। আরশি মাথানিচু করে ছিল৷ রশ্নি বলল,
“ওই ছেলেটা দিয়েছে বুঝি?”
“হ্যাঁ।”
“এটা পরে বের হবি এখন?”
“নাহ পাগল তুমি। ছবি পাঠাব।”
“আচ্ছা।”
রশ্নি আরশিকে লিপস্টিকটা পরিয়ে দিয়ে বলল,
“মাশাআল্লাহ আমার বোনটাকে কত্ত সুন্দর লাগছে!”
আরশি হাসলো। তারপর নিজের ঘরে চলে গেল। ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে সেল্ফি তুলল আরশি। তারপর কাব্যকে পাঠিয়ে দিল। কাব্য অনলাইনেই ছিল। ছবি দেখে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার স্টিকার দিল। স্টিকার দেখে আরশি কিছুতেই হাসি থামাতে পারছিল না। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আরশির এই প্রাণখোলা হাসি শুনে রশ্নির ভেতরটা জুড়িয়ে গেল। ছেলেটা যেই হোক নিশ্চিত জাদু জানে! ওদিকে কাব্যর মাথা ঘোরানো শেষ হলে বলল,
“একবার ভিডিও কলে আসবে?”
“না।”
“এক মিনিটের জন্য? না থাক ৩০ সেকেন্ডের জন্য।”
“প্লিজ কাব্য আমি পারব না। যতটুকু সম্ভব না তার বেশি করেছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা তোমার অস্বস্তি হবে এমন কিছু আমি চাইনা। এক্সপেকটেশন থেকেও অনেক বেশি পেয়েছি।”

রেহানা আলম বেশ কয়েকদিন ধরেই তিরাকে খেয়াল করছেন। মেয়েটার মধ্যে বেশ পরিবর্তন এসেছে। অবশেষে একদিন জিজ্ঞেস করেই বসলেন,
“মা তুমি কি প্রেগন্যান্ট?”
তিরা চমকে উঠলো। বলল,
“মানে? কী বলছেন মা? এটা কেন বললেন?”
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি প্রেগন্যান্ট।”
তিরা নিজের পেটে হাত দিয়ে বলল,
“কই আমার পেট তো সমান আর আমি বমিও করিনি।”
এবার রেহানা হেসে ফেললেন। বললেন,
“ওরে পাগল শুধু কি বমি করলেই প্রেগন্যান্ট বোঝায়?”
তিরা এবার সত্যিই চমকে উঠলো। যদি সত্যিই সে প্রেগন্যান্ট হয় তাহলে তো যাদিদ আর রাগ করে থাকতে পারবে না! তিরা উত্তেজিত হয়ে শাশুড়ির হাত ধরে বলল,
“মা প্লিজ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলুন। আমার এক্ষুণি জানতে হবে। মা প্লিজ।”
রেহানা তিরার পাগলামি দেখে হাসতে লাগলেন। বললেন,
“আচ্ছা তৈরি হয়ে নাও। টেস্ট করতে দিয়ে আসি।”

টেস্ট দেয়ার পর তিরা বলল,
“মা রিপোর্ট কখন দেবে?”
“কাল সকালে?”
“না আমার এখন চাই। আমার যাদিদকে জানাতে হবে।”
রেহানা হেসে বললেন,
“আরে পাগল নাকি মেয়ে, এখন রিপোর্ট কীভাবে দেবে? কাল সকালেই নিতে হবে। কিছু করার নেই।”
“মা প্লিজ হেল্প করুন। আমার এখন রিপোর্ট চাই, যেকোনো মূল্যে।”
রেহানা এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“হায় খোদা! এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম! আচ্ছা চলো একটা টেস্ট কিট কিনে দেই। তবে এটায় কিন্তু সবসময় সঠিক রেজাল্ট আসেনা। তাই নেগেটিভ পজেটিভ যাই হোক এখনই যাদিদকে জানাবে না।”
“ঠিকাছে জানাব না। নিজের মন তো শান্ত হবে!”

টেস্ট কিট দিয়ে টেস্ট করে তিরা জানতে পারল সে প্রেগন্যান্ট। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে শাশুড়ির দুই গালে কয়েকটা চুমু দিয়ে দিল। তিরার পাগলামি দেখে রেহানার হাসতে হাসতে দম আটকে যাবার জোগাড়!

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে