কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ১৩+১৪
আরশি বাসায় ঢুকে কাপড়ও বদলালো না। রাতে খেলোও না। চুপচাপ শুয়ে পড়লো। কিছু ভালো লাগছে না। সিগারেটের গন্ধে টিকতে পারছিলো না বলেই তো জানালা খুলে দিয়েছিলো আরশি। তাতে দোষের কী হলো? আর একটা কথাও কেন বললো না কাব্য? সে কি জানেনা আরশি এতো কথা বলতে পারে না। কাব্য যদি বলে তবেই কথা হবে, সে যতটুকু বলবে ঠিক ততটুকুই! তারপরেও কথা বললো না কেন? পরক্ষণেই আরশি আবার ভাবলো, না বললে না বলুক। এমনিতেই তাকে পছন্দ না আরশির। সে যত দূরে থাকবে ততই ভালো। কিন্তু একটা জিনিস আরশি বোঝেনা তার সাথে দেখা হলো এতো ভালো লাগে কেন? তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেই বা এতো ভালো লাগে কেন? তার ওভাবে তাকিয়ে থাকা, তার কথা বলা সবকিছুই কেন ওকে টানে? এসবের জন্য তো মানুষটা পছন্দের হওয়া চাই। কিন্তু আরশির তো তাকে একদম পছন্দ না। তাহলে কেন এমন হয়? ভালো লাগা আর খারাপ লাগা দুই ধরনের অনুভূতিই কি একটা মানুষের জন্য থাকা সম্ভব?
সারারাত কাব্যর ঘুম হলো না। খুব অস্থির লাগলো। দশ মিনিট পর পর সিগারেট খেতে লাগলো। আরশির সাথে দেখা হবে বলে সেই সন্ধ্যা থেকে সিগারেট খেলো না। তাতে লাভ কী হলো? সেই তো আরশি সিগারেটের গন্ধ পেলোই। অথচ কাব্য চাইছিলো আজ অন্তত সে সিগারেটের গন্ধ না পাক। আরশির অনুভূতিটা যদিও পুরোপুরি বুঝতে পারছে না সে। আরশি হাসে না, কথা বলে না। তার দিকে সরাসরি তাকায়ও না তাই ওর ভেতরে কি চলছে বোঝা মুশকিল। কিন্তু নিজের অনুভূতি নিয়ে এতো কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে কেন? একবার মনে হচ্ছে আরশির প্রতি যত অনুভুতি তা ভালো লাগার অনুভূতি, সারাজীবন ঘরের মানুষ বানিয়ে নিতে চাওয়ার অনুভূতি। আবার মনে হচ্ছে সবটাই কেবল মোহ, ওকে জানার আগ্রহ। কাব্য নিজেকে বোঝাতে লাগলো, “সময় নিতে হবে কাব্য, সময় নে। তনিকার বেলায় যে ভুল করেছিস আরশির বেলায় তা করিস না। আরশি অনেক ছোটো এখনো, অনেক সময় আছে হাতে। তাড়াহুড়ো করে আবার কোনো ভুল করিস না।”
যাদিদের বাড়ি থেকে তিরাকে দেখতে এসেছে। তিরা তৈরি হয়ে ছটফট করতে লাগলো কখন তাকে পাত্রপক্ষের সামনে নেয়া হবে। সে জানে সে সুন্দরী যেকোনো পাত্রপক্ষ তাকে দেখে পছন্দ করবে। কিন্তু যদি এরা পছন্দ না করে? যাদিদকে পাবেনা তাহলে! ভাবতেই কান্না পেয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর যখন তাকে পাত্রপক্ষের সামনে নেয়া হলো সে বাঁকা চোখে যাদিদকে দেখে নিলো। কিন্তু হায় যাদিদ তো একবারো তাকাচ্ছে না! নাকি তার মতো প্রথমেই চুরি করে দেখে নিয়েছে যা সে টের পায়নি! দুই পক্ষেরই পছন্দ অপছন্দ মতামত সব মিলে গেলো। যাদিদ ও তিরার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানার জন্য তাদেরকে একা কথা বলতে দেয়া হলো। তিরা তো খুশিতে বাকবাকুম করতে লাগলো। যাদিদ সামনাসামনি ছবির থেকেও বেশি স্মার্ট। তিরার ইচ্ছে করছে যাদিদকে স্কচটেপ দিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে রাখতে, যাতে সারাক্ষণ দেখতে পারে!
কথা বলার জন্য যাদিদ ও তিরাকে ছাদে নিয়ে যাওয়া হলো। দুজন পাশাপাশি হাঁটছিলো। যাদিদ প্রথম প্রশ্নটাই করলো এমন,
“এত অল্প বয়সে বিয়ে করছেন যে? পড়াশোনা করার ইচ্ছে নেই?”
যাদিদের গম্ভীর গলায় এই প্রশ্ন শুনেই তিরার কপাল কুঁচকে গেলো। সে যথাসম্ভব কপাল সোজা রেখে দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিলো,
“বিয়ের সিদ্ধান্ত আমার বাবা মায়ের৷ আমি তাদের কথার উপর কথা বলিনা। পড়াশোনা বিয়ে হয়ে গেলেও করবো আমি। সেকথা আমার বাবা মাকে বলেছি।”
“আপনার কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে।”
তিরা ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।
“সবাই বলে আমার কন্ঠস্বর শুনলে নাকি মনে হয় খুব চেনা কেউ।”
“সেসব যারা বলে আপনাকে পটানোর জন্য বলে। আমার তো আপনাকে পটানোর প্রয়োজন নেই। আমি চাইলেই আপনাকে পেতে পারি।”
ছেলের ভাব দেখে তিরার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বললো,
“আমি না চাইলেও পেতে পারেন?”
“হ্যাঁ কারণ আপনি একটু আগেই বলেছেন আপনি আপনার বাবা মায়ের কথার উপর কথা বলেন না।”
যাদিদের একথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো তিরা। ছেলে তো আরশির মত বুদ্ধিমান। কথার পিঠে কথা ঢেলে কুপোকাত! তিরা আবার মজে গেলে যদিদপ্রেমে। যাদিদ জিজ্ঞেস করলো,
“আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চান আপনি?”
তিরার নিজেকে চিনতে এবার অসুবিধা হচ্ছিলো। যে মেয়ের মুখের আগায় কথা থাকে সে কিনা এখন একটা প্রশ্নও খুঁজে পাচ্ছে না যাদিদকে করার মতো? তিরা বললো,
“আস্তে আস্তে জেনে নেব। যা জানা খুব জরুরি তা নিশ্চয়ই আমার বাবা মা জেনে নেবেন।”
“আপনি তো দেখছি একদম ড্যাডি’স গার্ল!”
তিরা চুপ। তবে বাঁকা চোখে দেখছে যাদিদকে। যাদিদ আবার বললো,
“আমার ছুটি শেষের দিকে। হাতে সময় খুব কম। কিছু জানার থাকলে জেনে নিন। আমরা রাজী হলে কিন্তু সামনের সপ্তাহেই বিয়ে।”
তিরার হঠাৎ মনে পড়ে গেলো সিগারেটের বিজ্ঞাপণের সেই বিশেষ ক্ষতির কথাগুলো। জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি সিগারেট খান?”
“না।”
“মদ খান?”
“মাঝেমাঝে খুব রেয়ার।”
“গার্লফ্রেন্ড ছিলো কোনো?”
“হ্যাঁ।”
“ব্রেকাপ হলো কেন?”
“সেইম এজ ছিলাম। আমি যখন স্টুডেন্ট তখন তার বিয়ে হয়ে গেছে।”
“আপনাদের এখনো যোগাযোগ আছে?”
“না। সে এখন দুই বাচ্চার মা। আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিলো কোনো?”
“না।”
“আমাকে বিয়ে করছেন কি একদমই বাবা মায়ের ইচ্ছেয়? নাকি আমাকে দেখে ভালো লেগেছে বলে? নাকি আমার ভালো জব আছে বলে?”
“প্রথম দুটো কারণে।”
“গট ইট। আপনার আর কিছু জানার আছে?”
“আপনি কি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন?”
“সম্ভাবত।”
তিরা আতঙ্কিত চোখে তাকালো। যাদিদ বললো,
“যখন কেউ ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে তখন তার বুকে হাত বুলিয়ে দিলে নাক ডাকা থেমে যায়।”
“ওহ আচ্ছা। আপনার কোনো বদ অভ্যাস নেই?”
“আছে।”
“কী?”
“ঘুমের মধ্যে গায়ে পা তুলে দেই।”
“আপনার ওজন কতো?”
এই প্রথম যাদিদ হাসলো। তারপর বললো,
“ঘাবড়ানোর মতো নয়।”
চলবে…।।
কনফিউশন
লেখকঃ মৌরি মরিয়ম
পর্ব ১৪
তিরা বেলা করে ঘুমুচ্ছিলো। ফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। বিরক্ত মুখে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো তিরা কারণ যাদিদ ফোন করেছে! গলা খাকারি দিয়ে, পানি খেয়ে ঘুম দূর করার চেষ্টা করলো। এরপর ফোন ধরলো,
“হ্যালো।”
যাদিদ বিস্ময়ের সাথে বললো,
“এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছো তুমি আমার বৌ হবে কীভাবে?”
“না না ঘুমাচ্ছি না আমি।”
“তোমার ভয়েস শুনে কানাও বলে দিতে পারবে তুমি ঘুমাচ্ছিলে।”
“না কিছুক্ষণ আগে উঠেছি। গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত মায়ের সাথে কাজ করেছি তো তাই নাহলে এমনিতে আমি সকালেই উঠি বিশ্বাস করো।”
“কী কাজ করছিলে?”
“বিয়ে বাড়িতে কত কাজ থাকে!”
তিরা মনে মনে বললো,
“আমি যে শাড়ি ট্রায়াল দিতে দিতে অর্ধেক রাত পার করেছি তা তোমাকে কী করে বলি যাদিদ?”
যাদিদ বললো,
“আচ্ছা শোনো বিয়ের শপিং এ বেরিয়েছি। মা আর আপুকে বলছিলাম তোমাকে সাথে নিতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না। হবু বৌকে সাথে নিয়ে শপিং করার ট্রেন্ড নাকি আমাদের বংশে নেই। যাই হোক, আমাকেই বলে দাও বিয়েতে শাড়ি পরতে চাও নাকি লেহেঙ্গা? আর কী রঙ? আমি সেভাবে পছন্দ করে নেব।”
তিরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। ছেলেটাকে যতটা রসকষহীন মনে করেছিলো ততটা সে না। বললো,
“শাড়ি পরবো, বেনারসি। রঙ টা তুমি পছন্দ করে দিও।”
“আচ্ছা।”
“আর কসমেটিকসের ক্ষেত্রে কি ব্র্যান্ড পছন্দ?”
তিরা গড়গড় করে বলে দিলো কোন জিনিস কী ব্র্যান্ড ব্যবহার করে। যাদিদ বললো,
“থামো থামো এসব জিনিসের নাম বাপের বয়সে শুনিনি। এতো মনে রাখতে পারবো না। সব লিখে মেসেজ করো।”
আরশি বাগানে গাছে পানি দিচ্ছিলো। কাব্য তাকে পছন্দ করে জানার পর থেকে বুয়াকে দিয়ে বাগানের গাছে পানি দেয়াতো। এখন থেকে আবার নিজেই দেবে ঠিক করেছে। এই সুযোগে যদি কাব্যর সাথে প্রতিদিন একবার দেখা হয় ক্ষতি কী? যদিও আরশি জানেনা কাব্য কোন দিন কখন বাসায় থাকে। কাল যখন পানি দিতে এসেছিলো কাব্য বাসায় ছিলো না। আজ আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। জানালা যখন খোলা থাকতেও পারে।
নিজের কার্যকলাপে নিজেই অবাক হচ্ছে আরশি৷ কাব্যর সামনে যাতে পড়তে না হয় তাই সে নিজেকে একপ্রকার গৃহবন্দী করে রেখেছিলো। একমাস পর দেখা হতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। এখন সে নিজেই চায় বারবার কাব্যর সাথে দেখা হোক। তাহলে কি সে ভালোবেসে ফেলেছে কাব্যকে? এতো তাড়াতাড়ি কাউকে ভালোবাসা যায় তাও অপছন্দের কাউকে? তিরা যখন এসব জানতে পারবে তখন কি কষ্ট পাবে? কষ্ট পাওয়ার কথা না কারণ তিরার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তারই পছন্দের কারো সাথে। কিন্তু কাব্য তাকে রেখে আরশিকে পছন্দ করলো এটা ভেবে কষ্ট পাবে না তো? ঠিক তখনই কাব্য জানালা দিয়ে ডাকলো,
“এইযে ডাক্তার আপা..”
আরশির হাসি পেলো৷ হাসি আটকে সে পিছনে ফিরলো। স্বাভাবিকভাবে বললো,
“এখনো ভর্তিও হইনি।”
“তাতে কি চান্স তো পেয়েছো। অফিসে যখন শুনলাম গতকাল মেডিকেলের রেজাল্ট দিয়েছে তখনই মনে হচ্ছিলো বাসায় এসে মিষ্টি খাব। কিন্তু এক্সপেক্ট করেছিলাম মিষ্টিটা তুমি নিয়ে আসবে।”
“সারাদিন আমি বাসায় একা ছিলাম। রাতে সাহিল ভাইয়া ফেরার সময় মিষ্টি নিয়ে এসেছিলো। কেউ তার বোনকে রাত ১০ টার সময় একটা ছেলের বাসায় মিষ্টি নিয়ে পাঠাবেনা নিশ্চয়ই?”
কাব্য হাসলো৷ আরশি আবার গাছে পানি দিতে লাগলো। কাব্য বললো,
“আমি বাগানে এলে মাইন্ড করবে?”
আরশি না তাকিয়েই বললো,
“আসুন বেঁধে রেখেছে কে?”
কাব্য ঝটপট স্যান্ডেল পড়ে বাগানে এলো। আরশি হেঁটে হেঁটে সব গাছে পানি দিচ্ছিলো। কাব্য আরশির পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বললো,
“তিরার বিয়ে তো শুক্রবার। খুলনা যাচ্ছো না?”
আরশি তাকালো না, গাছে পানি দিতে দিতেই বললো,
“হ্যাঁ আমি তো কালই যাচ্ছি। সাহিল ভাইয়া বৃহস্পতিবার যাবে। আফসোস ভাবী যেতে পারছে না। বাবুর তো মাত্র এক সপ্তাহ হলো এখনই ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না।”
“একা যাচ্ছো?”
“হ্যাঁ।”
“আমাকে নেবে তোমার সাথে? মানে এতোটা পথ একা জার্নি করাটা কষ্টকর, তোমার জন্যও আমার জন্যও।”
আরশি জানেনা তার কী হলো! কাব্যর এই এতটুকু কথায় বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঝড় বইতে শুরু করলো। পা দুটো এমনভাবে কাঁপতে লাগলো যে দাঁড়িয়ে থাকা দায়! বললো,
“আপনি কি যাচ্ছেন নাকি তিরার বিয়েতে?”
“হ্যাঁ তিরা তো আমাক খুব রিকোয়েস্ট করেছে যাওয়ার জন্য। আমি যখন বললাম আমি তো চিনিনা তখন বললো তোমার সাথে যেতে। তোমাকে কিছু বলেনি?”
“না ও তো যাদিদ ভাইয়া আর বিয়ের শপিং নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত। কথা কম হয়েছে।”
“যাই হোক এখন বলো তো নেবে কিনা তোমার সাথে?”
“কিন্তু সাহিল ভাইয়া তো আমাকে ট্রেনে তুলে দেবে। একসাথে কী করে যাবো?”
“সমস্যা কী সেদিন তো সাহিল ভাইয়া তোমাকে হসপিটাল থেকে আমার সাথে বাসায় পাঠালো।”
“হসপিটাল থেকে বাসায় পাঠানো আর ঢাকা থেকে খুলনা পাঠানো এক না।”
“আচ্ছা তাহলে আলাদা আলাদা যাবো। ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পর একসাথে হবো। যদি শুধুমাত্র তোমার আপত্তি না থাকে। বাকীসব আমি ম্যানেজ করে নেবো।”
আরশির এতো জোরে হার্টবিট হচ্ছে যে মনে হচ্ছে কান ফেটে যাবে। কাব্য সব টের পেয়ে যাচ্ছে না তো? পালাতে হবে এক্ষুণি এখান থেকে পালাতে হবে। আরশি বললো,
“ঠিকাছে। টিকেট দেখে ট্রেনের ডিটেইলস আমি আপনাকে জানিয়ে দেবো।”
একথা বলে আরশি চলে যাচ্ছিলো। কাব্য থামালো,
“আরশি..”
আরশি দাঁড়ালো। কাব্য বললো,
“এক্ষুণি দিও। তোমার সাথে তো আর সিট পাব না আমি বরং ওই ট্রেনেই দুটো টিকেট কেটে ফেলি। এসি স্লিপার নিব?”
“আপনার টিকেট করতে হবে না। ভাইয়া পুরো একটা কেবিন নিয়েছে আমার জন্য। একা যেতে হবে যেহেতু অপরিচিত মানুষদের মধ্যে যাওয়া আমার কর্ম নয়।”
“একটা কেবিন মানে চারটা টিকেট করেছে ভাইয়া? এই টাকায় তুমি প্লেনে যেতে পারতে।”
“আমি ট্রেন জার্নিটা খুব উপভোগ করি তাই।”
“ওহ আচ্ছা।”
আরশি চলে যাচ্ছিলো। পেছন পেছন কাব্য। সিঁড়ি পর্যন্ত যেতেই কাব্য আবার ডাকলো,
“আরশি..”
আরশি ঘুরে তাকালো৷ কাব্য বললো,
“চা খাবে? আমার বানানো?”
আরশি হুট করেই কোনো উত্তর দিতে পারলো না। কাব্যরও তাড়া নেই, চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে উত্তরের জন্য। আরশির খুব ইচ্ছে করছে কাব্যর হাতের চা খেতে, কাব্যর কোনো বই নিয়ে এসে তার বুকমার্কের লেখাগুলো শতশতবার পড়তে! আরো বেশি ইচ্ছে হয় কাব্যর সামনে অনন্তকাল থাকতে, ইচ্ছে হয়ে কাব্যর বাসায় যেতে, কাব্যর ব্যবহৃত সবকিছু ঘেঁটেঘুঁটে দেখতে। কেন এসব অসভ্য ইচ্ছেগুলো হয় আরশির? আরশি কিছু বললো না, চুপচাপ কাব্যর ফ্ল্যাটে ঢুকলো৷ কাব্য সদর দরজা খোলাই রাখলো। আরশির ব্যাপারটা ভালো লাগলো। কাব্য বললো,
“তুমি বসো। আমি চট করেই চা টা বানিয়ে আনি।”
কাব্য রান্নাঘরে চলে গেলো। আরশি আশেপাশে সবকিছু দেখতে দেখতেই হঠাৎ অ্যাস্ট্রেতে চোখ পড়লো। আরশি অবাক হয়ে দেখলো মাত্র একটা ফিল্টার! অথচ আগের যেদিন এসেছিলো এই সময়েই এসেছিলো এবং অ্যাস্ট্রেতে ভর্তি সিগারেটের ফিল্টার দেখেছিলো। হঠাৎ আরশি খেয়াল করলো আজ কাব্যর গা থেকে আগের মতো উৎকট সিগারেটের গন্ধ আসছে না। ঘরেও তেমন সিগারেটের গন্ধ নেই। সে কি তবে সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে? যে ছেলে ওই হারে সিগারেট খায় তার পক্ষে কি সিগারেট খাওয়া কমানো সম্ভব? সিগারেটের প্যাকেটটা সেন্টার টেবিলের উপর পড়ে রয়েছে। আরশি প্যাকেট টা খুললো। প্যাকেট ভর্তি সিগারেট! ঠিক তখন শুনতে পেলো কাব্য বলছে,
“সিগারেট খাবে?”
কাব্য চা নিয়ে ঢুকছিলো। ঢুকেই আরশিকে সিগারেটের প্যাকেট খুলে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য একথা জিজ্ঞেস করলো। আরশি লজ্জা পেয়ে হেসে বললো,
“না না।”
আরশি প্যাকেট টা আবার রেখে দিলো। কাব্য আরশির মুখোমুখি বসতে বসতে বললো,
“এইতো হাসলে সুন্দর লাগে। হাসোনা কেন তুমি?”
একথায় আবার আরশির মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেলো। গম্ভীর মুখ করে উঠে বুকশেলফের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কাব্য বুঝলো এসব প্রশ্ন এত দ্রুতই করা যাবে না। চায়ের কাপ নিয়ে আরশির কাছে গিয়ে বললো,
“চা নাও।”
আরশি চা নিতে নিতে কাব্য টপিক চেঞ্জ করার জন্য জিজ্ঞেস করলো,
“আচ্ছা তিরার রেজাল্টের খবর কী?”
“ও তো মেডিকেলে পরীক্ষা দেয়নি।”
“ওহ আচ্ছা।”
আরশি চায়ে চুমুক দিয়েই বললো,
“আমার মতো করে বানিয়েছেন?”
“চেষ্টা করেছি, কতদূর হয়েছে বলতে পারছিনা।”
“অনেকটাই হয়েছে নাহলে তো একথা বলতে পারতাম না যে আমার মতো করে বানিয়েছেন।”
কাব্য হাসলো। আরশি চা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই দোতলার বেল বাজলো। দরজার সামনে গিয়ে দেখে গেটের বাইরে বুয়া দাঁড়িয়ে। আরশি কাব্যর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আজ আসি। এই বুয়া চাচ্চু ফুপি সবার বাসায় কাজ করে। আমাকে এখানে দেখলে গল্প বানিয়ে ফেলবে।”
কাব্য কিছু বলার আগেই আরশি দোতলায় চলে গেলো গেটের চাবি আনতে। কাব্য বিড়বিড় করে বললো,
“শালার বুয়া আসার আর সময় পেলো না!”
চলবে…