#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আজ সিনথিয়ার বিয়ে। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে। এসব কিছুর মাঝে সিনিথিয়ার মন একদম ভালো নেই। অভি নামের ছেলেটার স্মৃতি কষ্ট দিচ্ছে তাকে। সিনথিয়া বুঝতে পারছে সে হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে অভিকে। সিনথিয়াকে পার্লার থেকে সাজাতে আছে। সাজগোজ হয়ে যাওয়ার পর সিনথিয়া একা রুমে বসে আছে। এমন সময় কেউ একজন ছুটে তার রুমের দিকে আসল। সিনথিয়া ঘোমটা সরিয়ে চোখ তুলে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল রাজীবকে। রাজীব মুখ ঢেকে এসেছে এইদিকে। সিনথিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজীব তাকে বলে,
‘তোমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে ভালো ছেলে নয়। তার আগের একজন স্ত্রী আছে। কিন্তু তার প্রথম স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে পারেনি। এই জন্য এখন সে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে। তোমাকে শুধু সন্তানের জন্যই বিয়ে করতে চায়। সন্তান হয়ে গেলে তোমাকে ছেড়ে দেবে।’
কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে যায় সিনথিয়া। সে তো এতকিছু ভাবতেও পারেনি। আবারো এভাবে ঠকে গেল মেয়েটা! ভেবেই খারাপ লাগছে তার। রাজীবের দিকে তাকিয়ে কান্নাজড়ানো গলায় সিনথিয়া বলে,
‘এখন তাহলে আমি কি করবো? বিয়ে করা ছাড়া যে আমার হাতে আর কোন উপায় নেই। আমাকে এখান থেকে বিদায় করতে পারলেই যে ওনারা বেঁচে যান।’
রাজীব কিছু একটা ভেবে বলে,
‘তোমাকে এখানে আর থাকতে হবে না। চলো আমি এখান থেকে তোমাকে নিয়ে যাব।’
‘কোথায় যাব আমি? আমার যে যাওয়ার কোন যায়গা নেই।’
‘তুমি কি অভি নামের ঐ ছেলেটাকে ভালোবাসো?’
‘এটা,,এটা কেমন প্রশ্ন?’
‘তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। আমি জানি তোমার মনে আমার জন্য কোন যায়গা নেই। কিন্তু সেদিন তোমাকে কাদতে দেখে আমি কিছুটা অনুমান করতে পেরেছি তুমি হয়তো অভি নামের ছেলেটার জন্য নিজের মনে কোন ধরনের অনুভূতি লালন করে চলেছ। তাই আমি আজ আসার আগে অভির সাথে যোগাযোগ করেছি। তোমার ব্যাপারে সবকিছু বলেছি ওকে। অভি তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ও। তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তোমাকে অভির কাছে পৌছে দেব।’
সিনথিয়া সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। এইরকম পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিৎ সেটাই বুঝতে পারছিল না। তার মধ্যে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ কাজ করছিল। রাজীব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে,
‘আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। যেকোন মুহুর্তে কেউ এদিকটায় চলে আসতে পারে। তুমি একটা কাজ করো চোখ বন্ধ করো। মন দিয়ে ভাবো তুমি কি চাও।’
সিনথিয়া ঠিক তাই করে। নিজের আখিযুগল বন্ধ করতেই সে অভিকেই দেখতে পায়। এর মানে তার মন অভিকেই চায়। ভালোবাসা ভীষণ অদ্ভুত! মন যে কখন কার প্রেমে পড়া যায় বলা মুশকিল। আমরা কেউ বলতে পারব না যে পরিকল্পিত ভাবে কারো প্রেমে পড়ে গেছি। কখনো কাউকে প্রথম দেখাতেই তার প্রেমে পড়েছি, তো কখনো কারো ব্যবহারে, আবার কখনো অকারণে ভালোবেসে ফেলেছি কাউকে। সিনথিয়ার ক্ষেত্রেও অন্যকিছু হয়নি।
১৫.
‘আমি পালিয়ে যেতে চাই। আমি সত্যি অভিকেই পছন্দ করি।’
সিনথিয়ার সহজ স্বীকারোক্তি। যা রাজীবের জন্য মোটেও সহজ ছিল না৷ রাজীবের মনে দারুণ ক্ষত তৈরি করে এই কথা। সে অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল লুকিয়ে বলে,
‘চলো আমি এখান থেকে সুরক্ষিতভাবে তোমাকে নিয়ে যাবো।’
সিনথিয়া রাজীবের সাথে বেরিয়ে যেতে ধরে। এমন সময় লুবনা আক্তার সিনথিয়ার রুমের দিকেই আসছিলেন। যার ফলে তিনি ধরে ফেলেন তাদের। মুহুর্তেই চিৎকার করে ওঠেন। রাজীব সিনথিয়ার হাত শক্ত করে ধরে তাকে নিয়ে দৌড় দেয়।
রাজীব সিনথিয়াকে নিয়ে বাড়ির বাইরে পর্যন্ত আসে। নিজের বাইকে উঠে সিনথিয়াকে বলে,
‘তুমি আর সময় নষ্ট করো না। তাড়াতাড়ি আমার বাইকে উঠে পড়ো। ফাস্ট। যেকোন সময় আমাদের আটকানোর জন্য সবাই চলে আসতে পারে।’
সিনথিয়া তাই করে। নিজের শাড়িটা ভালোভাবে সামলে নিয়ে উঠে পড়ে বাইকের মধ্যে। রাজীব বাইক স্টার্ট দিতে যায়। কিন্তু বাইক কিছুতেই বাইক স্টার্ট হচ্ছিল না। রাজীব চেষ্টা করতে থাকে। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর যখন বাইকটা একটু স্টার্ট হয় তখনই রায়হান ও তার বন্ধুরা এসে তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। শেষ আশাটাও যেন মোমবাতির আলোর মতো নিভে যায়।
সবাই মিলে রাজীবকে টেনেটুনে বাইক থেকে নামায়। সিনথিয়াকেও নামানো হয় বাইক থেকে। রায়হান এসে ছিনিয়ে নেয় সিনথিয়াকে। বলে,
‘আমি যখন আজ বিয়ে করতে এসেছি তখন বিয়ে করেই ফিরবো।’
রাজীব কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু সবাই এমনভাবে তাকে ঘিরে ধরেছিল যে সে চাইলেও কিছু করতে পারছিল না।
১৬.
সিনথিয়াকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে টেনে নিয়ে বিয়ের আসরে নিয়ে যেতে থাকে রায়হান। রাজীব চেষ্টা করেও কিছু আটকাতে পারে না। শুধু চিৎকার করে বলতে থাকে,
‘ছেড়ে দাও সিনথিয়াকে। আমি থাকতে ওর কোন ক্ষতি হতে দেবো না।’
এমন সময় সিরাজুল হক চলে আসে সেখানে। রাজীব তাকে দেখে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকায়। মাটিতে থুথু ফেলে বলে,
‘কেমন বাবা আপনি? আপনি আসলে বাবা নামে কলঙ্ক। নিজের মেয়ের জীবন নিজে নষ্ট করছেন। আপনার মতো বাবা থাকার চেয়ে অনাথ হয়ে জন্ম নেওয়া অনেক ভালো। যদি আপনার মধ্যে একটুও মনুষ্যত্ব থেকে থাকত তাহলে আপনি এমন করতে পারতেন না। ডাইনিও নিজের ঘর ছেড়ে আক্রমণ করে অথচ আপনি নিজের মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করতে চাইছেন।’
সিরাজুল হক মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকেন। আজ প্রথমবারের মতো তার খুব খারাপ লাগছে। নিজের করা অন্যায়ের জন্য অনুশোচনা হচ্ছে।
অন্য দিকে, রায়হান সিনথিয়াকে নিয়ে বিয়ের আসরে উপস্থিত হয়েছে। তাকে জোরপূর্বক নিজের পাশে বসায়। অতঃপর কাজিকে বলে,
‘আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করুন কাজি সাহেব। আজ আমি যখন বিয়ের উদ্দ্যেশ্যে এসেছি তখন বিয়ে করে বউ নিয়েই ঘরে ফিরব।’
কাজি তাই করে। সিনথিয়া ছটফট করছিল। কারণ সে এই বিয়ে কিছুতেই করতে চায়না। এরমধ্যে কাজি বলে ওঠে,
‘কবুল বলো মা।’
সিনথিয়া মুখে কুলুপ আটে। কিছুতেই কবুল বলবে না সে। রায়হান তখন ভয়ানক একটি কাজ করে বসে। সিনথিয়াকে হুমকি দেয়,
‘যদি তুমি কবুল না বলো তাহলে কিন্তু আমি ঐ রাজীবকে শে’ষ করে দিবো।’
সিনথিয়ার নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়। তাকে বাচাতে এসেই আজ রাজীব এত বাজেভাবে ফেসে গেছে সবকিছুতে। আজ তো রাজীব হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারতো। শুধুমাত্র সিনথিয়ার ভালোর জন্য তার কথা ভাবতে গিয়ে তাকে পালাতে সাহায্য করার জন্যই ছুটে এসেছে এতদূর। আর শুধুমাত্র তার জন্যই এখন সে এত বড় বিপদে পড়ে গেছে। এখন কি করবে সিনথিয়া? নিজের স্বার্থ দেখে চুপ করে থাকবে নাকি রাজীবকে বাচানোর জন্য এই বিয়েটা করে নিবে। এখন সবটাই নির্ভর করছে তার উপরে।
সিনথিয়া নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছিল। তার মনে নানা ভাবনা খেলা করে যাচ্ছিল। সিনথিয়াকে মৌন থাকতে দেখে ক্ষেপে যায় রায়হান। ফোন করে নিজের বন্ধুদের নির্দেশ দেয়,
‘ঐ রাজীবকে মা’রতে থাক তোরা। প্রয়োজনে ওর হাত পা সবকিছু ভেঙে দে।’
এই পর্যায়ে আর চুপ থাকতে পারে না সিনথিয়া। বলে ওঠে,
‘প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আমি আপনার সব কথা মেনে নেব। আমি এই বিয়েটা করে নিচ্ছি। রাজীব ভাইয়ের কিছু করবেন না।’
‘গুড গার্ল। এখন ভদ্র মেয়ের মতো কবুল বলে দাও।’
সিনথিয়ার মাথা কাজ করছিল না৷ রাজীবকে বাচানোর এখন আর কোন উপায় নেই। তাই সিনথিয়া নিজেকে প্রস্তুত করে কবুল বলার জন্য।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨