#কখনো_বা_দেখা_হবে
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সিনথিয়া চকিত হয়ে সামনে তাকালো। তার সামনে দাড়িয়ে আছে অভি। সিনথিয়া একবার দেখাতেই তাকে চিনতে পারল। এটাই তো সেই ছেলে যে আজ সকালে তাকে ভুল বুঝে থা’প্পর মে’রেছিল। আর এই ছেলেই কিনা এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা করল। সিনথিয়ার কোন রূপ অনুভূতি প্রকাশ হচ্ছে না। অভি সিনথিয়ার মুখোমুখি দাড়িয়ে বলল,
‘আমি আজ সকাল থেকেই ভাবছিলাম কিভাবে তোমাকে থা’প্পর দেওয়ার ক্ষতিপূরণ করব। এখন তো সুযোগ নিজে থেকেই আমার সামনে এসে ধরা দিল। ভাগ্যিস আমি এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হোয়াট এভার, আই থিংক তোমার ক্ষতিপূরণ আমি করে দিয়েছি। কারণ আজ আমি না থাকলে তোমার কি অবস্থা হতো বুঝতেই পারছ। এখন আমি টেনশন মুক্ত। তুমি যাও নিজের মতো। আমি যাই আমার মতো।’
সিনথিয়ার ভীষণ অদ্ভুত লাগল অভি নামের ছেলেটার কথাবার্তা। এত রাতে একটা মেয়ে বিপদে পড়েছিল অভির তো উচিৎ ছিল সিনথিয়াকে বাড়িতে পৌছে দেওয়া। পরক্ষণেই নিজের ভাবনার জন্য নিজের উপরই সিনথিয়ার করুণা হলো। সে খুব সিনেমাটিক চিন্তা ভাবনা করছে৷ একমাত্র সিনেমাতেই এমন সম্ভব। বাস্তবে তো যে যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। সিনথিয়ার মাথায় এমন সময় রাজীবের চিন্তা এলো। রাজীব থাকলে হয়তো এতটা নির্দয় হতো না।
বেশি কিছু না ভেবে সামনের দিকে পা বাড়ালো সিনথিয়া। এমন সময় পেছন থেকে অভি বলে উঠল,
‘হেই মিস। যাওয়ার আগে আমাকে থ্যাংকস তো দিয়ে যান।’
সিনথিয়া পিছনে ফিরল। স্বাভাবিক ভাবে ধন্যবাদ জানালো। অতঃপর চলতে শুরু করল নিজের মতো। কিছুটা সামনে এগোতেই মেইন রোডে চলে আসল। একটা রিক্সাও পেয়ে গেল। রিকশায় করে বাড়ির দিকে রওনা দিল সিনথিয়া।
বাড়ির কাছাকাছি পৌছে সিনথিয়ার নজরে পড়ে রাজীবের দোকানের সামনে বেশ জটলা বেধেছে। সিনথিয়া নেমে পড়ল রিক্সা থেকে। রাজীবকে এলাকার কয়েকজন ছেলে ধরে মা’রছে। সিনথিয়া হচকচিয়ে গেল। ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করল। আশেপাশে দাড়ানো কিছু মানুষের কথোপকথন শুনে যা বুঝল, রাজীব নাকি এই ছেলেদের চাদা দিতে অস্বীকার করেছিল। তাই তাদের সাথে ঝামেলা লেগে গেছে। সিনথিয়া কিছু একটা বেশ পুলিশ স্টেশনে কল করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে ঝামেলা থামিয়ে দিল। জটলা পরিস্কার হলো।
রাজীব অনেকটা আহত হয়েছে। সিনথিয়া রাজীবের ক্ষত স্থানগুলোতে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছিল। রাজীব কিছু বলতে চাইছিল। সিনথিয়া রাজীবের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করে না। তাই ওষুধ লাগানো শেষ হলে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
রাজীব উদাসীন হয়ে নিজের সাথে নিজে বিড়বিড় করে বলে,
‘তুমি কখনো আমার কথা কি শুনবে না সিনথিয়া!’
৯.
আজ বাড়িতে ফিরে নতুন সমস্যার মুখোমুখি হলো সিনথিয়া। লুবনা আক্তার সিনথিয়াকে বাড়িতে আসতে দেখামাত্রই সিনথিয়ার সামনে এসে বললেন,
‘এত দেরি হলো কেন? কোন না’গরের সাথে ছিলি?’
সিনথিয়ার রোজ আর এসব কথা শুনতে ভালো লাগছিল না। তার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল। তাই আজ অবশেষে প্রতিবাদ করল। বলল,
‘আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেন না। আমার ব্যাপারে এত খারাপ কথা বলার অধিকার আপনার নেই।’
‘তোর এত সাহস বেড়েছে। সাপের পাচ পা দেখে ফেলেছিস তাই না। দাড়া তোর আব্বু আজ আসুক। তোর একটা ব্যবস্থা করব আমি।’
সিনথিয়া কিছু না বলে রুমে চলে যায়। লুবনা আক্তার চেচামেচি করতে থাকেন। সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল এ-সব কারণে। তার তো মাঝে মাঝে মনে হয় যদি সে সব কিছু ছেড়ে দূরে কোথাও যেতে পারত তাহলে ভালো হতো। কিন্তু তার যে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। মামার বাড়ির ঠিকানা সে জানে না। তার মায়ের জীবনদশায় যখন জানতে চাইত তখন সিনথিয়ার মা সেলিনা আক্তার চুপ থাকত। বিয়ের পর থেকেই নিজের পরিবারের সাথে তার কোন রকমের কোন যোগাযোগ ছিল না। সিনথিয়ার নানা নাকি সেলিনা আক্তারকে ত্যায্য করেছিলেন। এসব কথা ভেবে গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিনথিয়া।
রাতে আর খাওয়ার কথা ভাবে নি৷ না খেয়েই ঘুমিয়ে যায় সিনথিয়া। ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজ তার মনকে প্রশান্তি দেয়। আল্লাহর কাছে নিজের সব দুঃখের কথা বলে সে নিজে একটু হালকা হয়। কারণ নিজের ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের কারণে সে কারো সাথে সেভাবে কথা বলে না। তাই নিজের সব কথা আল্লাহকেই জানায়।
ভার্সিটির সময় ঘনিয়ে এলে সিনথিয়া রান্নাঘরে গিয়ে নিজের জন্য লুডুলস বানিয়ে নেয়। অতঃপর সেই লুডুলস খেয়ে বেরিয়ে পড়ে ভার্সিটির জন্য। সবে বাড়ি থেকে বের হতে যাবে তখনই পেছন থেকে সিরাজুল হক ডাক দেয় সিনথিয়া। সিনথিয়া তখন বলে,
‘তুমি কিছু বলবে আব্বু?’
‘হ্যা বলবোই তো। তোর নাকি বেশি বাড়াবাড়ি চলছে আজকাল। শোন তোর এখন বয়স হয়েছে। আমি আর তোকে খাওয়াতে পারব না। আমার একটা ছেলে পছন্দ করা আছে। সে নতুন নতুন উকিল হয়েছে। তাকে তোর ছবি দেখিয়েছে সে তোকে পছন্দ করেছে। আজ তোকে দেখতে আসতে চাইছে। তাড়াতাড়ি ফিতে আসবি।’
সিনথিয়া মাথা নাড়ায়। যার অর্থ হ্যা। সিনথিয়া কখনো তার বাবার অবাধ্য হয় না। এসব নিয়ে তাই আর বেশি ভাবল না।
সিনথিয়া বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতেই লুবনা আক্তার খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
‘তাহলে অবশেষে একে বিদায় করা যাচ্ছে।’
১০.
অভি নিজের বাবার সাথে কথা বলছিল। অভির বাবা আব্দুর রহমান অভির সাথে নিজের বোনের ব্যাপারে কথা বলছিল। আব্দুর রহমানের বোন তার বাবার অমতে বিয়ে করেছিল। ধনী পরিবারের মেয়ে হয়ে এক মধ্যবিত্ত যুবককে বিয়ে করায় সেই বিয়ে মেনে নেননি তার বাবা। তবে শুধু এটাই নয়। আরেকটা বড় কারণ ছিল তাদের বাবা জানত যেই ছেলেকে তার বোন বিয়ে করতে চাইছে তার চরিত্র ভালো না। এই কারণটাও গুরুতর ছিল। তখন থেকেই তার সাথে আর কারো কোন যোগাযোগ নেই।
নিজের বোনের কথা স্মরণ করে আব্দুর রহমান বলেন,
‘আজ কতদিন হয়ে গেল ওকে দেখি না। বেচে আছে কিনা সেটাও অজানা। আল্লাহ তায়ালার কাছে শুধু এটুকুই চাওয়া ওর যেন সন্ধান আমি পাই।’
অভি নিজের বাবাকে আশ্বাস দিয়ে বলে,
‘তুমি কোন চিন্তা করো না আব্বু। দেখবে আমি ফুফুর খোজ এনে দিবো তোমায়। আমাকে শুধু কিছু সময় দেও।’
অভি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে। নিজের সবথেকে দামী গাড়িতে করেই আজ সে ভার্সিটিতে এলো। কাকতালীয় ভাবে অভি আজ ভার্সিটিতে আসতেই সবার আগে তার সাথে সিনথিয়ার দেখা হলো।
সিনথিয়া অভিকে দেখে পাশ কা’টিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। অভি সিনথিয়ার পথ আটকে দাড়ালো। সিনথিয়াকে আপাদমস্তক পরখ করে বলল,
‘কাল সুস্থভাবে বাড়িতে পৌছে গিয়ে ছিলেন তো?’
সিনথিয়ার অভিকে দেখে মনে মনে বলে,
‘কাল আমাকে একা ছেড়ে দিয়ে আজ এসেছেন খবর নিতে।’
কিন্তু প্রকাশ্যে বলল,
‘আমি ঠিকভাবেই পৌছে গিয়ে ছিলাম।’
অভি এবার পথ ছেড়ে দিল। সিনথিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে এলো। ক্লাসে যেতেই ঝর্ণা ঘিরে ধরল সিনথিয়াকে। বলল,
‘আগামী সপ্তাহে আমাদের এখানে একটা প্রোগ্রাম আছে। আমি নাচ দিবো৷ তুমিও থাকবে আমার সাথে। ‘
সিনথিয়া হাত গুটিয়ে নেয়। বলে,
‘আমি নাচতে পারি না।’
‘এসব শুনব না। কাল থেকে কিন্তু প্রাকটিস করব।’
সিনথিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দিলো না সিনথিয়া। অগত্যা সিনথিয়াকে রাজি হতেই হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨