ওয়ারদূন আসরার পর্ব-১৫

0
1370

#ওয়ারদূন_আসরার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| পর্ব – ১৫ ||

– যীনাত, যীনাত?পূর্ণা এসেছে তোকে নিতে!(চেঁচিয়ে)

– আসছি আম্মা ওকে বসতে বলো।

যীনাতের মা আর কথা বাড়ায় না। যীনাত ভালোভাবে হিজাব বেধে ব্যাগ নিয়ে রুমের বাইরে চলে আসে এবং মাকে বিদায় জানিয়ে পূর্ণাকে নিয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা হয়। দুজন মিলে কথা বলতে বলতে হাটছে এমন সময়ই পূর্ণা পিছে আড়চোখে তাকায় এবং দেখতে পায় একটা ছেলে তাদেরকেই ফলো করছে। পূর্ণা যীনাতের হাত শক্তভাবে ধরে বলে,”যীনাত দেখ এই ছেলেটা আজকেও আমাদের পিছু নিয়েছে কে এই ছেলে যে আমাদের সবসময় পিছু নেয়?”

যীনাত আড়চোখে পিছে ফিরে দেখে সত্যিই তাদের পিছে কেউ আসছে। তবুও যীনাত বলে,”তোর কেন মনে হচ্ছে এই ছেলেটা আমাদের পিছু নিচ্ছে?”

– মনে হচ্ছে মানে? আমি ১০০% শিওর পিছু নিচ্ছে এর আগেও কয়েকদিন খেয়াল করেছি তোকে না মাত্রই বললাম।

– কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না সে পিছু নিচ্ছে। আর রাস্তা টা আমাদের একার না এখানে অনেক মানুষই চলাফেরা করে। একেকজনের গন্তব্য একেক জায়গায়!

– আচ্ছা মানলাম তোর কথা তাহলে প্রতিদিন ভার্সিটি পর্যন্ত কেন যাবে? আবার ছুটি হলেও কেন তোর বাসা পর্যন্ত যাবে বল? সে নিশ্চয়ই তোর আত্নীয় লাগে না যে তোর বাসার আশেপাশে থাকবে। দেখ বোন দুনিয়াটা এতো সহজ ভাবিস না! কার কি উদ্দেশ্য সেটা জানা বেশ মুশকিল তার আগেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।

এবার যীনাত চিন্তায় পড়ে গেলো। ছেলেটাকে খেয়াল করেনি এমন টা নয়। যখন কোনো কাজে একা বা কারো সাথে বের হয় তখনই তার পিছে ছেলেটাকে দেখে তাও সবসময়। তবুও যীনাত এখন আর মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। এতোদিন পরিক্ষার অনেক ধকল গেছে তার উপর দিয়ে এখন রেজাল্ট কি হবে আপাতত সেটা নিয়ে ভাবতে চায়।

– আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দে এসব কথা। এখন চল এমনেই আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে আরও দেরী হলে রেজাল্ট পেতে অসুবিধা হবে।

পূর্ণা আর কথা বাড়ায় না। তারপর দুইজন পা চালিয়ে ভার্সিটিতে চলে যায়। ভাগ্য ভালো দুজন ঠিক সময়ে গিয়ে পৌঁছিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ যীনাতের ভালো রেজাল্ট এসেছে তাই সে খুশিমনেই ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হচ্ছিলো এমন সময়ই কারো সাথে ধাক্কা খায়। এইটা সেই ছেলে যে যীনাতের পিছু নিয়েছিলো তা ছেলেটার পোশাক দেখেই বুঝেছে যীনাত আর পূর্ণা! ছেলেটা অপলক ভাবে যীনাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে যীনাতের পাশ কেটে চলে যায় পূর্ণা বা যীনাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। উভয়ই ছেলেটার ব্যবহারে অবাক হয়। পূর্ণা বলে,”যীনাত আমার ছেলেটাকে একদম সুবিধার লাগছে না। এর কোনো মতলব নেই তো?”

– আল্লাহ ভরসা আর তিনি-ই ভালো জানেন।

বলেই পূর্ণাকে নিয়ে রিক্সায় উঠে পড়ে। ছেলেটাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে যীনাত। কে এই ছেলে যে সবসময় তার পিছে বা আশেপাশে থাকে? সারা রিক্সায় যীনাত এসবই ভেবে গেলো। তারপর পূর্ণাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে আসে। ওহ হ্যাঁ পূর্ণা হচ্ছে যীনাতের বড় চাচার মেয়ে। যীনাত তার মা-বাবাকে রেজাল্ট জানিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে এবং ফ্রেশ হয়ে নেয়। ফয়েজ অলরেডি পুরো এলাকার সকলকে মিষ্টি খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। যীনাত টেবিলের ড্রয়ারের লক খুলে সেখান থেকে একটা গোলাপের মতো কলম হাতে নেয় এবং মুচকি হেসে সেই কলমকে সালাম দেয়। কমলার মাঝে যেনো তখনই জান আসে এবং সেই কমলের ফুলটাকে চোখ মুখ স্পষ্ট হয়। সেও মুচকি হেসে সালামের উত্তর নেয় এবং বলে,”কি খবর হুম? আজ খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে?”

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো একটা ফলাফল এসেছে তাই হাসছি।

– আল্লাহর উপর ভরসা করলে সব সম্ভব তোমাকে আমি বলেছি না?

যীনাত মাথা নাড়ায়। তারপর আবার মুখ গোমড়া করে ফেলে। গোলাপটি বলে,”কি হলো?”

– কিছু না আজ একটা ছেলেকে খেয়াল করলাম আমার পিছু নিয়েছে। শুধু আজ নয় ইদানীং লক্ষ করছি কিন্তু কেন বিষয় টা বুঝতে পারছি না।

গোলাপটি নিশ্চুপ হয়ে ভাবতে থাকে তারপর বলে,”সাবধানে চলেফেরা করো!”

– হুম। আচ্ছা তুমি কি সত্যিই জ্বীনদের স্পেশাল কিছু?

– সেটা এখন তোমাকে বলবো না তবুও বলছি আমি যার হাতে পড়বো তার বড় কিছুতেও সাফল্য আসতে বাধ্য। তবে তোমাদের মাঝে যেমন খারাপ ভালো আছে আমাদের মাঝেও রয়েছে ভালো খারাপ। আর খারাপের মাঝে সবচেয়ে খারাপ জাতি হচ্ছে ইফরিত জ্বীন! এরা শয়তানের থেকেও ভয়ংকর এবং শক্তিশালী। আমাদের গোত্র মারিন জ্বীন। আমরা উত্তম গোত্র জ্বীনজাতির মাঝে এবং আমি তাদের-ই সম্পদ! কিন্তু আমাকে ইফরিত জ্বীন রা খারাপ ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে ভেবে আমাকে যে আগলে রাখতেন সে তোমার কাছে আমায় দিয়ে গেছে যাতে তারা আমাকে তাদের হাতে না পায়।

– আচ্ছা তুমি একটা গোলাপ….

-(বলতে না দিয়ে) ‘ওয়ারদূন আসরার’ আমার নাম ওয়ারদূন আসরার।(রাগি ভাব নিয়ে)

যীনাত কিছুটা ভীতু হয়ে বলে,”আচ্ছা আচ্ছা মানলাম তোমার নাম ‘ওয়ারদূন আসরার’ কিন্তু এর মানে তো গোলাপ রহস্য? গোলাপ রহস্য আবার কারো নাম হতে পারে কি?”

– নিশ্চয়ই পারে এবং আমি কোনো সাধারণ গোলাপ নই। আমার মাঝের রহস্যের মাত্র ৫ শতাংশ তুমি জানক আর বাকি ৯৫ শতাংশই তোমার অজানা। তবে সবকিছু এতো জানতে চেয়ো না পরিস্থিতি কখন কোনদিকে যায় সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।

– হুম। আচ্ছা তোমাকে কেউ উদ্ধার করতে আসবে না?

– আসবে তো আমাদের রাজকুমার! সে যে আমার মতোই কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।(মুখ গোমড়া করে)

– হারিয়ে গেছে মানে?

– সেটা আমিও বলতে পারছি না তোমায়। রাজকুমার যখন ছোট ছিলো তখনই ইফরিত জ্বীনরা আমাদের রাজ্যে আক্রমণ করে যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমাদের রাজকুমার নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক গুণী ব্যক্তিরা বলেন তাকে নাকি নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। আবার অনেকেই বলে ইফরিত জ্বীনরা তাকে মেরে ফেলেছে। কিন্তু ইফরিত জ্বীনরা নিজেরাই তাকে আর আমাকে হন্য হয়ে খুঁজছে তার মানে নিশ্চয়ই তারা তাকে নেয়নি অথবা মারেনি। সেই ভরসায় আমি এখনো টিকে আছি। জানিনা রাজকুমার কোথায় আছে কেমন আছে।

যীনাত চুপচাপ থাকে। এমন সময়ই যীনাতের দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। কড়ার শব্দে গোলাপ্টা স্বাভাবিক কলম হয়ে গেলো আর যীনাত চটজলদি কলম টা লুকিয়ে রেখে দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলে দেখে ফুয়াদ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। ফুয়াদের খুশির কারণ বুঝতে বাকি নেই যীনাতের।

– আপুউউউইইই তোকে এত্তোগুলো অভিনন্দন কত্তো ভালো রেজাল্ট করেছিস তুই জানিস?

– আমি জানবো না?

– সেই উপলক্ষ্যে……

– মিষ্টি খাওয়াতে হবে তাইতো?

– উহু!

– তো কি?

– মিষ্টি তো আব্বুজান খাওয়ালোই আমরা নাহয় পিঠা খেয়ে আসি জানিস মরিয়ম চাচীর পিঠা বেশ সুস্বাদু!

– তাহলে তো খাওয়াই যায় কি বলিস?

– হুম কিন্তু এখন মনে হয়না বেচবে সন্ধ্যায় গেলে কেমন হয়?

– আম্মুজান তো বকবে!(মুখ গোমড়া করে)

– তাও ঠিক। আচ্ছা পূর্ণা আপুকেও সাথে নিলে কেমন হয়?

– পূর্ণা তখন তো কোচিং এ যায়।

– ওহ(মুখ গোমড়া করে) তাহলে নাহয় লুকিয়েই যাবো।

– পাগল হয়েছিস? বাসায় জানাজানি হলে আম্মা আস্ত রাখবে না।

– সেসব কিছু জানিনা আজ সন্ধ্যাতেই যাবো ব্যাস!

– দেখা যাক।

– নো দেখাদেখি তোকে আমি পারলে টেনে হিঁচড়েই নিয়ে যাবো বলে দিলাম।

বলেই ফুয়াদ হনহন করে চলে গেলো এদিকে যীনাত কি করবে ভেবে পায়না। শেষে সন্ধ্যার সময়ই ফুয়াদকে নিয়ে পালিয়ে চলে গেলো পিঠা খেতে। ফুয়াদ আর যীনাত বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। এদিকে ফুয়াদের মুখের এক্সপ্রেশন টাও দেখার মতো। পিঠা খেতে খেতেই যীনাতের হঠাৎ দূরে খেয়াল গেলো যে আবারও সেই ছেলেটা। ছেলেটাকে দেখে যীনাতের গলা দিয়ে আর পিঠা নামলো না। অর্ধেক খেতেই যীনাত বলে উঠে,”চল বাসায় যেতে হবে।”

– কেন আরেকটু থাকি না প্লিজ!

– না ফুয়াদ এতোক্ষণ তোর অনেক আবদার শুনেছি এখন চল আর সম্ভব না।

– কিন্তু আমার পিঠা….?

– বাসায় নিয়ে চল বাসায় খাবি এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না।

বলেই টাকা দিয়ে ফুয়াদের হাত ধরে টেনে নিয়ে বড় বড় কদম ফেলে হাটতে শুরু করে যীনাত। বেচারা ফুয়াদ যীনাতকে ধরতেই পারছে না এতো তাড়াতাড়ি হাটার কারণে। শেষে না পেরে দৌড়ে যীনাতের পাশে এসে হাটা শুরু করে আর বলে,”আরে আস্তে হাটো এভাবে হাটছো কেন?”

– এমনি তাড়াতাড়ি বাসায় চল নইলে দুইটারই কপালে দুঃখ আছে।

– সে নাহয় বুঝলাম….

এভাবে ফুয়াদ বকর বকর করছিলো হঠাৎ যীনাত তার পিছে সেই ছেলেটাকে দেখতে পায়। এর মানে এবারও তাদের পিছু নিয়েছে? যীনাত পারছে না এক দৌড়ে বাসায় চলে যায় কিন্তু আশেপাশের মানুষের জন্য পারলো না। ১০ মিনিটের রাস্তায় দুজন ৫মিনিটে চলে আসে। বাসায় আসতেই দুজনেই কানমলা খেলো মায়ের হাতে এভাবে একা একা বের হওয়ার জন্য।

———————————-

চলবে!!!
(এটা যীনাতের অতীত। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম)

বিঃদ্রঃ গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে