ওয়াদা ১৬
বাড়িতে এসেই শুয়ে পড়লাম।
রাগে আমার পুরো শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে। রাত্রিকে সামনে পেয়েও দেখতে পেলাম না। সবার সামনে এইভাবে ধপাস করে পড়ে গেলাম আর শুভ আমার সম্মানের কথা না ভেবে খাবার নিয়ে টেনশন করছিলো। সব মিলিয়ে রাগে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে। আমি যদি একটু সাবধানে চেষ্টা করতাম তাহলে এভাবে পড়তাম না আর রাত্রিকেও দেখতে পেতাম।
-কি রে এসেই শুয়ে পরলি যে? শরীর ঠিক আছে?(মা)
-হ্যা মা। শরীর একদম ঠিক আছে। এমনিতেই শুলাম। কিছু বলবে?
-হ্যা। তোর জিনিস পত্র সব রাতেই গুছিয়ে নিবি। নাহলে সকালে তাড়াহুড়ু করে গোছাতে গেলে সব ভুলে যাবি আর লেটও হয়ে যাবো।
-সব গুছিয়ে নিবো মানে? কোথায় যাবো আমরা?
-কোথায় যাবি মানে? তুই ভুলে গেলি কাল সকালে না আমাদের তন্নিদের বাড়িতে যাওয়ার কথা।(মা)
এমা এই এতো সব ঝামেলার কারণে আমিতো তন্নির বিয়ের কথা ভুলেই গেছি। শেষ পরীক্ষার দিন তন্নি ফোন দিয়ে ওর বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলো। মা, নিশাত আর আমাকে বিয়ের দু দিন আগেই যেতে বলেছিলো অনু কাকিমাদের সাথে। কাল সকালে আমাদের যাওয়ার কথা আর আমি ভুলেই গেছি। জয়ারা সবাই গায়ে হলুদের দিন যাবে।(মনে মনে)
-না আসলে খেয়াল নেই।
-হুম। জিনিস পত্র সব গুছিয়ে নিস।
-সে না হয় নিবো। কিন্তু গিফট কেনা হয় নি তো
-আমি আগেই বুঝেছিলাম তোর মনে নেই তাই সকালে আমি আর নিশাত গিয়ে কিনে এসেছি।
-ও ভালো করেছো।
-হুম। আমি এখন আসছি।
-ঠিক আছে।
মা চলে গেলো। আচ্ছা শুভ কি তন্নির বিয়েতে যাবে? তন্নিকি শুভকে বলেছে? শুভর কাছে জিজ্ঞাসা করি। তারপর শুভকে কল করলাম।
-হ্যালো।(শুভ)
-কি করছো?
-তেমন কিছু না। বসে আছি। তুমি কি করছো?
-আমিও বসে আছি।
-তখন রেস্টুরেন্ট থেকে ওইভাবে চলে গেলে কেন?
মাথামোটা একটা। আমি কেন চলে এসেছি সেটা উনি এখনো বুঝতে পারেনি।
-এমনিতেই। ভালো লাগছিলো না তাই।
-ওহ্।
ওহ্? এটাকে নিয়ে আমি কি করবো। আমি ওর উপর রাগ চলে এসেছি এটা কি ও বুঝতে পারছেনা। যতসব।(মনে মনে)
-বলছি তন্নি কি তোমায় কল করেছিলো?
-হুম। করেছিলো।
-আমায় বলোনি তো?
-মনে ছিলো না।
-ওহ্। কি বলেছিলো তোমায়?
-কি আর বলবে। বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলো। কিন্তু আমি না করে দিয়েছি।
-না করে দিয়েছি মানে?
-না করে দিয়েছি মানে আমি বলেছি আমি যেতে পারবো না।
-যেতে পারবে না কেন? এখনতো তুমি একদম ফ্রি আছো।
-নাশু তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কেন যেতে পারবো না।
-শুভ? তুমি কি এখনো তন্নিকে ক্ষমা করতে পারো নি?
-নাশু আমি এই টপিক নিয়ে কোন কথা বলতে চায় না।
-কিন্তু শুভ মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর তন্নি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ও নিজের ভুলের জন্য সত্যি খুব অনুতপ্ত। তোমার ওকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।
-নাশু তুমি ভুলে যেতে পারো সব কিছু কিন্ত আমি পারছি না। ও আমার আর তোমার সাথে যা করেছে সেটা আমি কোনোদিনও ভুলতে পারবো না। ও আমার আর তোমার মাঝে এসে আমাদের সম্পর্কটা নষ্ট করতে চেয়েছিলো।
-কিন্তু ওতো নিজের ভুল বুজতে পেরেছে। প্লিজ শুভ তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও। দেখ ও একটা ভুল করেছিলো আমাদের উচিত ওকে ক্ষমা করা। প্লিজ শুভ আমার জন্য হলেও ওকে ক্ষমা করে দাও।
-কিন্তু,,,,
-আমি আর কোনো কিন্তু শুনতে চায় না। তুমি ওকে ক্ষমা করে দেবে ব্যস আর ওর বিয়েতেও যাবে।
-ওকে মেডাম। যেমনটা আপনার ইচ্ছা।
-তুমি যাবেতো বিয়েতে? আমি কিন্তু তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
-ওকে যাবো। কিন্তু তুমি আমার সাথেই যাবেতো?
-না গো। তন্নি বার বার করে মা আর নিশাতকে নিয়ে অনু কাকিমাদের সাথে দু দিন আগে যেতে বলেছে। তুমি প্লিজ জয়াদের সাথে গায়ে হলুদের দিন চলে এসো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-এখন রাখছি বাই।
-বাই।
ফোনটা কেটে দিয়ে বাথরুমে গেলাম গোসল করতে। শরীরটা কেমন লাগছে তাই গোসল করে নিলাম। এখন কিছুটা ভালো লাগছে কিন্তু অনেকটা ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পরলাম। সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। পরীক্ষা শেষ এখন কোন পড়াও নেই। আর রুমের মধ্য বসে থাকতে ভালোও লাগছে না বাইরে সুন্দর বাতাস হচ্ছে। ছাদে গেলে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু এখন একা একা ছাদে যাওয়াটা কি ঠিক হবে। এতো ভেবে কাজ নেই এইভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই ছাদের যাওয়ার জন্য বেরিই পরলাম। ছাদের গেইট রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছি। ছাদের গেইট এর কাছে আসতেই কারোর গলার আওয়াজ পেলাম। এটা মেঘের গলা। বেশ রেগে রেগে কথা বলছে কারোর সাথে। আমি ভালো করে শোনার জন্য গেইট এর মুখে এসে কান পাতলাম। ওইপারে কে কথা বলছে আর কি বলছে বুঝতে পারছি না। কিন্তু মেঘের কথা গুলো এমন
-দেখ আমি তোমাকে আগেও বলেছি আর আজও বলছি তুমি আমায় আর কখনো কল করবে না। এগুলো তুমি কি শুরু করেছো?
কার সাথে এভাবে কথা বলছে। সবার সাথেই এখন ও এমন খারাপ ব্যবহার করে।
-দেখ তুমি আমার সাথে দেখা করতে চায়ছিলে আমি করেছি। তারমানে এটা নয় আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি। তুমি যেটা করেছো তার জন্য আমি তোমায় কোনোদিনও ক্ষমা করবো না। তুমি প্লিজ আমায় আর ডিস্টার্ব করো না।(মেঘ)
কে ওকে ডিস্টার্ব করছে। রাত্রি নয়তো। ওকি রাত্রির সাথে এইভাবে কথা বলছে।
-আমি তোমায় শুধু ঘৃনা করি রাত্রি। আমায় আর কখনো কল করবে না।
বলেই ফোনটা ফ্লোরে আছাড় মেরে দিলো। আল্লাহ গো এতো দামী ফোনটা রাগ করে ভেঙ্গে দিলো। তারমানে এখন রাগতো ওর প্রতিটা রক্ত বিন্দুতে টগবগ টগবগ করে ফুটছে আর আমায় এখানে দেখলে হয়তো,,,,,, না বাবা এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না। তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে এলাম।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ