ওয়াদা ১৫

0
3727

ওয়াদা ১৫
আমি আংকেলের কানে কানে বললাম।
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। একটু ওই দিকে চলো।
-কি কথা?
-আরে আগে চলই না তারপর বলছি।
-ঠিক আছে চল।
তারপর আমি আর আংকেল চেয়ার থেকে উঠে বেলকনিতে এলাম।
-কি বলবি বল।
-বলছি। কিন্তু তার আগে আমায় প্রমিজ করো কাওকে বলবে না?
-আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।
-আর আমি যা বলবো তাই করবে।
-কি করতে হবে?
-নাহ্। আগে প্রমিজ করো তারপর বলবো।
-ওকে। প্রমিজ।
-তুমি মেঘের বিয়ে দিতে চাও না?
-হুম চায়তো।
-তাহলে ওকে জবটা করতে দিতে চায়ছো না কেন?
-মানে?
– মানে? মানে হলো আমার মনে হয় মেঘের কোনো মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। আর মেয়েটা আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে সেজন্য ও জবটা করতে চায়ছে যাতে মেয়েটিকে ভালো করে চিনতে পারে, জানতে পারে।
আংকেল কিছু সময় চুপ করে থেকে বললো
-ও তোদের ভার্সিটিতে জয়েন করেছে?
-হুম। আর মেয়েটি আমাদের ডিপার্টমেন্টই পড়ে মনে হয়। কেননা ও আমাদের ডিপার্টমেন্টের টিচার হিসাবে জয়েন করেছে।
-কিন্তু তোর সাবজেক্টতো ম্যাথ আর ওতো একাউন্টিং নিয়ে পড়েছে।
-তাহলে তুমি নিজেই ভেবে দেখ। কতটা পছন্দ না হলে ও এমনটা করেছে।
-বুজলাম। তুই কি মেয়েটিকে চিনিস?
-না চিনিনা তো। তবে খুব তাড়াতাড়িই চিনে যাবো।
-কিভাবে?
-আরে মেঘ যখন আমাদের ক্লাস নেবে তখন নিশ্চয় ওই মেয়েটির দিকে বার বার তাকাবে, তার সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবে তাই না। তখন ঠিক বুঝে যাবো।
তুমি প্লিজ আর না করো না।
-ঠিক আছে। আমি আর মানা করবো না। কিন্তু তুই মেয়েটিকে চিনতে পারবি তো?
-অবশ্যই পারবো। তুমি শুধু দেখ। আমি মেয়েটিকে তোমার সামনে এনে হাজির করবই।
-তাই যেন হয়। তুই যেন মেয়েটিকে খুব তাড়াতাড়ি খুজে বের করতে পারিস।( আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কথাটা বললো)
-নাশু আংকেলকে নিয়ে আয় নিশাত চলে এসেছে। (মা)
-আসছি মা। চলো আংকেল।
-চল।
তারপর আমরা খেতে বসলাম। খেতে খেতে আংকেল বললো
-মেঘ তুই এই জবটা কতদিন করতে চাস?(আংকেল)
-বাবা আমি জাস্ট এক বছরের কন্টাক্ট এ জবটা করতে চায়।(মেঘ)
-ঠিক আছে। আমার কোনো সমস্যা নেই।
-থ্যাংক ইউ বাবা। (বলে আমার দিকে তাকালো)
ওর তাকানো দেখে মনে হচ্ছে ও বোঝার চেষ্টা করছে আমি আংকেল কে কি এমন বললাম যে আংকেল রাজি হয়ে গেলো। ভাবো ভাবো সারাদিন ভেবেও জানতে পারবে না আমি আংকেলকে কি বলেছি। আর আমার প্লান কি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছি। ও একটু রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে এবার। হয়তো আমার হাসি দেখে ওর রাগ হচ্ছে। আমিও পাজলামি করে ওকে চোখ মেরে দিলাম। চোখ মারার পর ও আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন এখনি আমায় গিলে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে খেতে থাকলাম। কারণ আংকেল আছে এখানে তাই আমায় কিচ্ছু বলবে না আমি জানি। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে আমার রুমে চলে এলাম। বসে বসে ল্যাপটপে গেইম খেলছি তখনই মেঘ আমার রুমে এলো। এবার আমি কোথায় যাবো। তখন আংকেল ছিলো বলে কিছু বলেনি আর আমারতো মনেই ছিলোনা যে এখন কিছু না বললেও পরেতো বলতে পারে। মাঝে মাঝে আমার এই কমন জিনিস গুলো মাথাতেই থাকে না কেন। এখন কি হবে।
-তুমি বাবাকে কি বলেছো?
-আমি আবার কি বলবো? কিছু বলিনিতো।
-দেখ আমি তোমায় খুব ভালো করেই চিনি সো এই ড্রামাটা বন্ধ করো।
-আমি কোনো ড্রামা করছি না। আমি সত্যিই আংকেলকে উল্টা পাল্টা কিছু বলিনি।
-আমি জানতে চায়ছি তুমি বাবাকে কি বলেছো।(একটু ধমক দিয়ে)
-আমিতো তেমন কিছু বলিনি। বলেছি যে মেঘ ভাইয়াতো তোমাদের জন্য কত কিছু করে। তোমাদের সব কথা শোনে। তোমাদের জন্য ইচ্ছা না থাকার স্বত্তেও বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করেছে। নিজের সব থেকে বড় শখ গান সেটাও ছেড়ে দিয়েছে। তোমাদেরতো উচিত ওর কিছু ইচ্ছাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এতটুকুই বলেছি।(এবার ওর মনটা একটু নরম হয়েছে। যাক বাবা এই যাত্রায় বেচে গেছি)
-কিন্তু খাবার টেবিলে তুমি আমাশ চোখ কেন মারলে? (আবার রেগে গিয়ে বললো)
-নিজেকে কি মনে করেন আপনি। আমারতো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আপনাকে চোখ মারতে যাবো। আমার চোখে কি যেন পড়েছিলো তাই ওমনটা হয়েছিলো। আমি আপনাকে চোখ মারিনি।
-উদ্দেশ্য কি?
-কার?
-তোমার।
-মানে?
-মানে বুঝতে পারছো না।
-না। আমি সত্যি বুঝতে কোন না আপনি কিসের উদ্দেশ্যর কথা বলছেন।
-আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তোমার মাথায় কোনো শয়তানি বুদ্ধি কিলবিল কিলবিল করছে। তায় বলছি ভালোই ভালোই বলে দাও।
-কি আশ্চর্য। কি বলবো আমি?
-দেখ তুমি যে এমনি এমনি আমায় সাহায্য করোনি সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। বাবাকে রাজি করানোর পেছনে তোমার নিশ্চয় কোনো উদ্দেশ্য আছে।(মেঘ)
এইরে এবার কি বলি। ধরা খেয়ে যাবো নাতো।
-এ্যা এ্যা এ্যা এ্যা এ্যা(জোড়ে জোড়ে কান্না শুরু করে দিলাম)
-আরে কাদছো কেন। প্লিজ চুপ করো বাইরে সবাই রয়েছে। প্লিজ চুপ করো।
-(আমি কেদেই যাচ্ছি)
-আরে বাবা কি এমন বললাম যার জন্য এইভাবে কাদতে হবে। প্লিজ চুপ করো।
-যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। আমি আপনার জন্য এইসব করলাম আর সেই আপনিই আমাকে,,,,এ্যা এ্যা(বলে আবার কান্না শুরু করে দিলাম)
-আমার জন্য ভাবতে তোমায় কে বলেছে।
-কে বলবে আবার কেউ বলেনি। আমার মনে হলো আপনাকে সাহায্য করা প্রয়োজন তাই নিজে থেকেই করেছি। এ্যা এ্যা এ্যা (কেদে কেদে বললাম)
-ওহ্। আচ্ছা ঠিক আছে। এবার কান্না থামাও। আমি আর কিচ্ছু বলছি না। আমি আমি চলে যাচ্ছি হুম। চলে যাচ্ছি।
বলেই চলে গেলো। যাক বাবা বাচা গেলো। কান্নার ড্রামাটা না করলে লাটসাহেবটা যে কি করতো। শুভ কল করেছে ওর সাথে কিছু সময় কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। সামনে পরীক্ষা তাই এখন এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়তে হবে। তাই পড়তে বসলাম। পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাই উঠে একটু বেলকনিতে হাটাহাটি করলাম। তারপর আবার পড়তে বসলাম। নয়টার সময় উঠে রাতের খাবার খেয়ে আবার পড়তে বসলাম। এর মধ্য শুভ একবার কল করেছিলো। দেখতে দেখতে পরীক্ষার দিন চলে এলো। প্রথম পরীক্ষাটা ভালই হয়েছে। একে একে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। সব গুলো পরীক্ষায় খুব ভালো হয়েছে। আশা করি রেজাল্টও ভালো হবে। পরীক্ষার জন্য শুভর সাথে ভালো করে কথাও বলতে পারিনি আর দেখাও করতে পারিনি। তাই আজ আমি আর শুভ একটা রেস্টুরেন্ট দেখা করবো ঠিক করেছি। আমি একটা হালকা পিংক ক্লারের থ্রি পিচ পরেছি। চুল গুলো কোনো রকম বেধেছি। ঠোটে লিপজেল দিয়েছি। কেন জানিনা আজ সাজতে ভালো লাগছে না। তাই একদম সাদামাটা ভাবেই গেলাম। বাইরে এসে একটা রিকসা নিয়ে রেস্টুরেন্টেরর সামনে নামলাম। ভাড়া দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখলাম শুভ এক কোণার টেবিলে বসে আছে। আমিও ওর সামনের চেয়ারটা টেনে বসলাম। আমরা দুজন কথা বলছি তখন শুভ বললো
-নাশু?
-হুম। বলো।
-এটা শাফিন স্যার না?
-কোথায়?
-ওই যে। ওই কোণার টেবিলে বসে আছে।
-আমি একটু পেছন দিকে ঘুরে তাকালাম দেখার জন্য। হুম এটা মেঘই আর ওর সাথে একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটা আমাদের দিক থেকে পেছন দিকে ঘুরে বসে আছে বলে মুখটা দেখা যাচ্ছে না। মেঘকে দেখে মনে হচ্ছে ও বেশ রেগে আছে। আর বেশ রেগে কথা বলছে। কিন্তু কি বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। আচ্ছা এটা রাত্রি নয়তো। হতে পারে। যেভাবেই হোক মেয়েটাকে দেখতেই হবে। শুভর একটা কল এলো তাই ও একটু অন্য পাশে গেলো কথা বলতে। আর এদিকে আমি অনেক উকি ঝুকি মেরে দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছি। উকি ঝুকি মারতে মারতে ধপাস করে চেয়ার থেকে পরে গেলাম।
-ওমা গো। আমার কোমড়টা আজ বোধায় ভেঙ্গে গেলো।(আমি)
-আরে তুমি পড়ে গেলে কিভাবে?(শুভ কথা বলতে বলতে আমার পড়ে যাওয়া দেখে চলে এলো)
-উফ। আমাকে টেনে তুলবে নাকি এভাবেই পড়ে থেকে তোমার প্রশ্নের উত্তর দিবো। (আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।)
-ওহ্ সরি।(তারপর ও আমাকে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো)
কি লজ্জাকর ব্যাপার। এইভাবে সবার সামনে চেয়ার থেকে পড়ে গেলাম। সবাই কি ভাবছে আল্লাহই জানে। এই সব কিছু হয়েছে ওই লাটসাহেবটার জন্য। (মনে মনে বলছিলাম আর পেছন ফিরে তাকালাম)
এমা লাটসাহেবটা রাত্রিকে নিয়ে চলে গেছে। এতো চেষ্টা করেও রাত্রিকে দেখতে পেলাম না। সবার সামনে পড়ে গেলাম যাকে দেখার জন্য তাকেই দেখতে পেলাম না।
-তোমার কি কোথাও লেগেছে?(শুভ)
-হুম? নাহ কোথাও লাগেনি। শুভ আমি বাড়ি যাবো।
-এইতো সবে আসলে এখনই চলে যাবে।
-তো কি করবো। এখানে বসে থাকবো। দেখতে পারছো না সবাই আমার দিকে কেমন আড় চোখে তাকাচ্ছে।
-কিন্তু খাবার ওডার দিলাম। ওই গুলোর কি হবে।
এবার আমার মাথা আরও গরম হয়ে গেলো। আমার সম্মান নিয়ে টানাটানি পরছে আর উনি আছেন ওনার খাবার নিয়ে।
-ওই খাবার গুলো তুমি একাই গেলো।(বলেই চলে এলাম)
অনেক বার ডেকেছিলো কিন্তু তাকাই নি। চলে এসেছি।
চলবে,,,

#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে