ওয়াদা ১৪

0
3770

ওয়াদা ১৪
একজন কমার্স এর স্টুডেন্ট যে কিনা একাউন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করেছে সে সাইন্স এর ম্যাথের টিচার হয় কিভাবে তাও আবার ভার্সিটির। এটা শুনলে যে কারোরই মাথা ঘুরবে। আর মেঘ এর নাম শাফিন এহসান কবে থেকে হলো। আমিতো এজীবনে শুনি নি ওর নাম শাফিন এহসান। যদিও আমি মেঘ ছাড়া ওর অন্য কোন নাম জানিনা। জানার চেষ্টাও করিনি। নামটা আসল হতেও পারে কিন্তু ও ম্যাথের টিচার কিভাবে সম্ভব। ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ধুর ওর মাথা তো দু বছর আগেই গেছে কিন্তু এমনটা করার কারণ কি। এই ছেলেটার জন্য কখন না আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। সেদিন আমায় কত অপমান করলো, তারপর আবার জড়িয়ে ধরে কাদলো, হঠাৎ কি হলো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আর আজ আবার ভার্সিটির টিচার হলো তাও আবার ম্যাথের। সেদিন রাতে ও একটা মেয়ের কথা বলছিলো। কি নাম বলেছিলো যেন হুম মনে পড়েছে রাত্রি। মেঘের হঠাৎ করে এতো বদলে যাওয়ার পিছনে এই মেয়েটির কোন না কোন ভুমিকা নিশ্চয় আছে তা না হলে ও মেয়েটিকে লোভী বলতো না। যদিও আমাকেও বলেছিলো, কেন বলেছিলো জানি না।। যাই হোক আমার ব্যাপারটা নিয়ে পরে ভাববো আগে এই রাত্রি মেয়েটির ব্যাপারে জানতে হবে। কে এই মেয়ে, মেঘের সাথে মেয়েটির কি সম্পর্ক ছিলো আর মেঘ ওকে এতোটা ঘৃনায় বা কেন করে। সবটা জানতে হবে আমায় যে ভাবেই হোক। আই এম সরি মেঘ আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েও তোমায় বোঝার চেষ্টা করি নি। আমি শুধু তোমার বদলে যাওয়াটাই দেখলাম কিন্তু তার কারণটা জানার চেষ্টা করিনি। আসলে ভুলটা আমারই তুমি আমার সাথে যেদিন ফাস্ট খারাপ ব্যবহার করেছিলে সেদিন যদি আমি তোমায় ভুল না বুঝতাম, যদি এটা না ভাবতাম যে তুমি লন্ডন থেকে পড়াশোনা করে এসেছো বলে অহংকারী হয়ে গেছো, যদি তোমার উপর রাগ করে আমিও কথা বলা বন্ধ না করতাম তাহলে হয়তো তুমি আমার সাথে সবকিছু শেয়ার করতে। কারণ তুমি দেশে ফেরার দু’মাস আগেও তোমার সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপটা আগের মতই ছিলো। তোমার সাথে রোজ কথা হতো, আমরা ফোনে কত ফাজলামি করতাম। তারপর হঠাৎ করেই আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলে। হয়তো ওই সময়ই কিছু একটা হয়েছিলো রাত্রি সাথে। আচ্ছা এমনটাও তো হতে পারে যে মেঘ রাত্রিকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু মেয়েটি মেঘকে কোনো কারণে ঠকিয়ে ছিলো আর সেজন্য মেঘ মেয়েদের ঘৃনা করে। হয়তো নয় এটাই হয়েছে। আর আমিও একটা মেয়ে তায় হয়তো ও আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করে কিন্তু আমি তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম মেয়েদের ঘৃনা করে বলে আমাকেও করবে। নাহ আজ থেকে মেঘের কোনো কথায় আর কষ্ট পাওয়া যাবে না। ও আমার সাথে যত খারাপ ব্যবহারই করুক না কেন আমায় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আমি যদি ওর সমস্যা না বুঝি তাহলে আর কে বুঝবে। কিন্তু মেঘের ভার্সিটিতে জয়েন করার রহস্যটা কি? মেয়েটি কি আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে? কিন্তু মেঘতো লন্ডন এ ছিলো। ফেসবুক বা রং নাম্বার এ পরিচয় হতে পারে আর পরে প্রেম? হুম এটা পসিবল। তারমানে রাত্রি আমাদের ভার্সিটির স্টুডেন্টন আর আমাদের ডিপার্টমেন্টেই পড়ে তা না হলে মেঘ এভাবে ম্যাথের টিচার হয়ে ভার্সিটিতে যেতো না। এখন আমার কাজ হচ্ছে পরীক্ষা শেষ হলে রাত্রিকে খুজে বের করা। বাহ আমিতো অনেক বুদ্ধিমতী এইটুকু সময়ে কত কিছু বুঝে গেছি।
-কি রে কখন আসলি? আর একা একা কি বক বক করছিস?(মা)
-ওহ্ মা। তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে।
-আজ স্কুলে একটা মিটিং ছিলো, মিটিং শেষে স্কুল ছুটি হয়ে গেছে তাই।
-কিন্তু তুই আসলি কেন?
-একটু শরীর খারাপ লাগছিলো তাই চলে আসলাম।
-কেন পায়ের ব্যাথা কি আবার বেড়েছে নাকি।
-না। পায়ে আর কোনো সমস্যা নেই। হালকা মাথা ব্যাথা করছিলো তাই।
-ঔষধ খেয়েছিস?
-না। এসেই শুয়ে পরেছি তাই আর খাওয়া হয়নি।
-আচ্ছা তুই শুয়ে থাক আমি ঔষধ নিয়ে আসছি।
-ওকে।
মা ঔষধ আনতে গেলো। আমি এই ফাকে ওয়াশরুম এ গেলাম হাত মুখ ধুতে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলাম মা ঔষধ আর খারাব নিয়ে এসেছে। মা নিজের হাতে আমায় খাবার খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে মা চলে গলো। মা চলে যাওয়ার পর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। দুপুর ২:৩০ এ ঘুম ভাঙ্গলো। আমি উঠে গোসল করে ডাইনিং রুমে গেলাম। মা আর একটা লোক বসে আছেন। পেছন দিকে ঘুরে বসায় মুখ দেখতে পারছি না তাই সামনে গেলাম।
-কেমন আছিস মা?(মাহবুব আংকেল)
-আরে আংকেল তুমি? কখন এলে?
-এইতো একটু আগেই এলাম। এসে দেখি তোর কাকিমা আর মেঘ কেউ নেই। আর অনেক দিন তোদের সাথেও দেখা হয়নি তায় চলে আসলাম।(আংকেল)
-খুব ভালো করেছো। কিন্তু কাকিমা কোথায় গেছে?
-সকালে নাকি মেঘের নানু হঠাৎ করে অসুস্হ হয়ে পড়েছে তাই সেখানে গেছে। আমি ভেবেছিলাম আজ বাড়িতে ফিরে সারপ্রাইজ দিবো তা আর হলো না।(আংকেল)
-তুমিতো প্রতি বার ব্যবসার কাজে বাইরে যাও আর যেদিন ফেরার কথা তার আগে এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দাও। কিন্তু এবার তুমি অনেক দেরি করে ফিরেছো। তোমার আরও অনেক আগে ফেরার কথা ছিলো।
-হ্যা রে মা। কিন্তু একটু সমস্যা হয়েছিলো সেগুলো ঠিক করে ফিরতে দেরি হয়ে গেলো। না হলে অনেক টাকার লস হতো।(আংকেল)
-হুম ভালো করেছো।
-শুনলাম তোর নাকি পা ভেঙ্গে গেছে?
-আরে না পা ভাঙ্গেনি। একটু মচকে গেছিলো। কিন্তু তোমায় কে বললো? নিশ্চয় কাকিমা?
-হ্যা তোর কাকিমায় বলেছিলো। আমার তো খুব টেনশন হচ্ছিলো কিন্তু ওখানে খুব নেটওয়ার্ক এর প্রবলেম তাই তোর কাকিমা কে দিনে একবার করে কল দিতাম আর তোদের সবার খোজ নিতাম।(আংকেল)
-হুম। কিন্তু কাকিমা একটু বেশিই বলেছে। আমার তেমন কিছু হয়নি।(আমি)
-তুই তো তোর কাকিমার চোখের মণি। তুই যতদিন অসুস্হ ছিলি তোর কাকিমা তো দিনে কত বার করে আসতো তোকে দেখতে।(মা)
-হুম আমার মা টা এতো কিউট যে ওকে সবাই খুব ভালোবাসে।(আংকেল)
-আর আমি বুঝি খুব পচা?(নিশাত স্কুল থেকে ফিরেই কথাটা বললো)
-আরে আমার ছোট মা যে? আসো আমার কাছে এসো।(আংকেল)
-তুমি যাওয়ার পর একবারও আমার সাথে কথা বলো নি। আমি তোমার কাছে যাবো না। আর তাছাড়া তোমরা কেউ আমায় ভালোবাসো না কারণ আমিতো আপুর মতো অতো সুন্দরি না।(নিশাত গাল ফুলিয়ে কথা গুলো বললো)
-কে বললো যে আমরা তোমায় ভালোবাসি না আর তুৃমি সুন্দর না। তুমি তো আমাদের লিটিল এনজেল। আর তুমিতো নাশুর থেকেও সুন্দরি।(বলে আংকেল নিশাতকে জড়িয়ে ধরলো)
-এতো বড় হয়েছিস ক্লাস নাইন এ পড়িস তাও তোর ঢং করা সভাব গেলো না।(আমি)
-আমি তোর মতো নাকি যে ঢং করবো।
আর আংকেল আমায় তোর থেকে সুন্দরি বলেছে তাই তুই হিংসা করছিস আমায়।(নিশাত)
-ইস তোকে হিংসা করতে আমার বয়েই গেছে। আয়নায় নিজের চেহারা ভালো করে দেখেছিস পুরা কয়লার ড্রাম। একদম পেত্নীদের মতো দেখতে তুই।(আমি)
-হি হি হি। তুই নিজে আয়নায় তোর চেহারা দেখ পুরাই মহারাণী কটকটি।(নিশাত)
-আমি কেমন দেখতে সে আমি খুব ভালো করেই জানি। ওকে?(আমি)
-জানিস যখন তাহলে এতো কথা কিসের? আর তুই জানিস স্কুলের সব ছেলেরা আমার জন্য পাগল। সবাই আমায় কত লাভ লেটার দেয়? আর তোকে তো আজ পর্যন্ত কেউ একটাও দেয় নি। তোর কপালে বিটকেল জুটবে বুজলি।(নিশাত একটু ভাব দেখিয়ে বললো)
-ওই তোর এখনো নাক টিপলে দুধ বের হবে আর তুই লাভ লেটারের কথা বলছিস?(আমি)
-কি টিপলে কি বের হয় সেটাও ঠিক করে জানিস না আবার বড় বড় কথা বলিস(নিশাত)
-মানে?(আমি)
-নাক টিপলে সর্দি বের হয় সর্দি, দুধ নয় বুঝলি?(নিশাত)
-ছিঃ। কিসব কথা বলিস।(আমি)
-ওমা এতে নাক শিটকানোর কি আছে। সর্দি তো সবারই হয়।(নিশাত)
-নিশাত তুমি অনেক দুষ্টু হয়ে গেছো। যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি খেতে আসো আমরা ওয়েট করছি।(মা একটু গম্ভীর গলায় বললো)
-ওকে মা।(বলে চলে গলো। যাওয়ার সময় আমায় মুখ ভেংচি দিয়ে গেলো। আর আংকেল ও চেয়ারে বসলেন)
আমি নিশাত এর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এইটুকু মেয়ে বলে কি। ওকে নাকি ছেলেরা লাভ লেটার দেয়। লাভ কি সেটা বোঝারও বয়স হয়নি আর এতো পাকা পাকা কথা। আজকাল কার পোলাপান গুলা এতো পেকে গেছে আল্লাহ গো। আমরা সবাই নিশাতের জন্য ওয়েট করছি এর মধ্য আর একজনের আগমন ঘটলো। মেঘ এসেছে।
-মেঘ আয়। কখন থেকে ওয়েট করছি তোর জন্য।(মা)
ও কোন কথা না বলে চুপচাপ আমার সামনের চেয়ার টাতে বসে পরলো।
-তুই কিছু দিন ধরে অফিস যাচ্ছিস না কেন?(আংকেল)
-একটু কাজ ছিলো।(মেঘ)
-তাই বলে এতো দিন? অফিসে এখন অনেক কাজ। তাই এখন অফিসে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না।(আংকেল)
-বাবা তোমায় কিছু বলার ছিলো।(মেঘ)
-কি?(আংকেল)
-আমি আর অফিস এ যাবো না।(মেঘ)
-অফিস এ যাবি না মানে?(মেঘ)
-বাবা আমি একটা জব পেয়েছি। আর আমি জবটা করতে চায়?(আংকেল)
-জব করবি মানে। আমার এতো বড় ব্যবসা, দুই তিনটা কম্পানি থাকতে তুই চাকরি করবি?(আংকেল)
-বাবা তুৃমিতো জানো। ছোট বেলা থেকেই আমার টিচার হওয়ার ইচ্ছা ছিলো। আজ সেই সুযোগটা পেয়েছি আর সেটা আমি হাত ছাড়া করতে চায় না।(মেঘ)
-তাই বলে তুমি আমার ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে দিয়ে শিক্ষকতা করবা।(আংকেল)
-বাবা এটা আমার ইচ্ছা।(মেঘ)
-সে যাই হোক। আমি এইসব মানছি না। তুমি কাল থেকেই অফিসে যাবে।(আংকেল রেগে গেলে মেঘের সাথে তুমি করে বলে)
-কিন্তু বাবা(মেঘ)
-আমি আর কোন কিন্তু শুনতে চায় না। তুৃমি অফিসে যাবে এটাই ফাইনাল।(আংকেল)
মেঘ নিশ্চয় রাত্রির জন্যই ভার্সিটিতে থাকতে চায়ছে। আর ও ভার্সিটিতে টিচার হয়ে থাকলে রাত্রিকে খুজে বের করতে আমারও সুবিধা হবে। তাই যেভাবেই হোক আংকেল কে বোঝাতে হবে। রাত্রিকে খোজার এই সুযোগটা কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।
চলবে,,,

#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে