ওয়াদা
শেষ পর্ব
-আমার মাথায় তো গোবর পুরা সো আমার সাথে কথা বলতে হবে না যাও।
-তুমিতো দেখছি মাইন্ড খেয়ে বসে আছো। আরে গোবর কত উপকারী জিনিস বলোতো একদিকে সার আর অন্যদিকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আর এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস আল্লাহ তোমার মাথায় এমনি এমনি দিয়ে দিলো। তুমি বুঝতে পারছো আল্লাহ তোমায় কত ভালোবাসে। হা হা হা।
-তাই না।(বলেই ওর বুকে কিল ঘুসি মারা শুরু করলাম। আর ও আমায় ওর বুকে টেনে নিলো)
-সরি।
-আবার?
-আমার সত্যিই নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে। আমি যদি তোমায় বুঝতাম তাহলে শুভ আমার জীবনে কখনো আসতো না। আর শুভ না আসলে আমি আর তুমি এতো কষ্ট পেতাম না। তুমি সত্যিই বলেছো আমার মাথায় সত্যি সত্যি আল্লাহ গোবর পুরেই দিয়েছে।
-শোনো আর কোনো দিন যদি তোমার মুখে ওই শুভ নামের অশুভটার নাম শুনেছি তাহলে কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম।(অনেক রেগে বললো)
-শাস্তি দিবা বুঝি?
-হ্যা শাস্তিই দেবো।(রেগে বললো)
-তোমার দেওয়া শাস্তি আমার কিন্তু অনেক ভালো লাগে।(মুচকি হেসে)
-Oh really! তাহলে এখন শাস্তি দি?(দুষ্টুমির হাসি দিয়ে)
-জ্বী না।
-ওমা অন্যায় করেছো আর তার শাস্তি দেবো না। আর তুমিই তো বললে আমার শাস্তি তোমার অনেক ভালো লাগে।
-ওটাতো এমনি বলেছি।
-সেটা আমি জানি তুমি কেন বলেছো?
-কেন বলেছি?
-কারণ তুমি চাও আমি তোমায় এখন ওই শাস্তিটা দি।(বলে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো)
-সামনে এগিয়ে আসছো কেন?
-শাস্তি দিবো তাই।(আর একটু এগিয়ে)
-আমিতো কোন অন্যায় করিনি।(একটু পিছিয়ে)
-একটু আগেইতো করেছো।(আর একটু এগিয়ে)
-তুমিইতো বললে আজকের পর তার মানে আজকের দিনটা বাদ।(আর একটু পিছিয়ে)
-আমি ওইটার শাস্তি দিচ্ছি না।(আরও একটু এগিয়ে)
-তাহলে আবার কিসের শাস্তি? আমিতো কিছু করিনি।
-করেছো।
-কি করেছি?
-এতোক্ষন ধরে আমার সাথে তুমি বলে কথা বলছো।
-কিহ্ (বলার সাথে সাথে দেয়ালে ধাক্কা খেলাম।)
তুমি মানে আপনি এর জন্য আমায় শাস্তি দিবেন? আমি আপনায় তুমি বলে কথা বলতে পারিনা বুঝি?
(অভিমান করে বললাম)
-পারোতো। আজকের পর থেকে তুমি বলেই বলবে। কিন্তু এখনোতো বলার পারমিশন দিনি। আমিই তোমায় বলতাম আমায় তুমি বলতে। কিন্তু তুমি আমার বলার আগেই বলেছো তাই তার শাস্তি তোমায় পেতেই হবে।
-বাহানা তাই না?
-যা ভাবতে তাই।(বলেই ওর মুখটা আমার মুখের কাছে আনতে গেলো তখনই)
-আরে মা তুমি কখন এলে।
-কোথায় মা?(বলে পিছন ফিরে তাকালো আর আমি তখনই দৌড়ে বাইরে চলে এলাম)
-এটা কিন্তু ঠিক করলে না। এর প্রতিশোধ কিন্তু নিবো।
-পরের টা পরে দেখা যাবে। হি হি হি।
বসে বসে আমি আর মা টিভি দেখছি। মেঘ সেই দুপুরেই বেরিয়েছে এখনো ফেরেনি। বিকাল হয়েগেছে। অরুপ ভাইয়াদের ওখানে গেছে মনে হয়। বেচারা আমার জন্য বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়েটাও ঠিক মতো ইনজয় করতে পারলো না। গিয়েই আবার চলে আসতে হলো। তবে এখন গিয়ে ভালই করেছে। ভাবতে ভাবতেই ও চলে এলো।
-একটু রুমে আসোতো।(বলেই ও রুমে চলে গেলো) আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম।
-এই নাও।(একটা প্যাকেট দিলো)
-কি এটা?
-খুলেই দেখো।
আমি প্যাকেট টা খুলে দেখলাম সাদা রঙের উপর গোল্ডেন রঙের কাজ করা একটা শাড়ি।
-হঠাৎ শাড়ি কেন?
-আমরা এখন বাইরে ঘুরতে যাবো।
-সত্যি??
-সত্যি। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
-ওকে আমি এখনই মায়ের কাছ থেকে শাড়িটা পরে আসছি।(বলে যেই বাইরের দিকে যাবো তখনই মেঘ বললো)
-ওয়েট।
-কি হলো।
-তোমাকে শাড়ি পরতে মায়ের কাছে যেতে হবে না। আমিই পরিয়ে দিচ্ছি।
-কি? মাথা খারাপ নাকি? আপনি আমায় শাড়ি পরাবেন?
-হুম। সমস্যা কোথায়?
-আপনি শাড়ি পরাতে পারেন?
-তোমার হয়তো মনে নেই কিন্তু ছোট বেলায় আমি তোমায় শাড়ি পরিয়ে দিয়েছি। আমি পারি শাড়ি পরাতে।
-তখন তো খুব ছোট ছিলাম এখন তো বড় হয়েছি।
-হ্যা। তখন যেমন ছোট ছিলে আর এখন বড় হয়েছো তেমনি এখন বড় হয়ে আমার বউ হয়েছো। সো পরাতেই পারি।
-আমি আপনার কাছে পরবো না।
-কিন্তু কেন?
-লজ্জা করছে খুব।(আমার কথা শুনে ও মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে আমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর কাছে টেনে নিলো। তারপর কানে কানে বললো)
-সবতো হয়েগেছে তারপরও এখনো এতো লজ্জা কেন পাচ্ছো বলোতো।(বলেই কানের লতিতে আলতো করে কামড় দিলো)
-ধ্যাত মুখে কি কিচ্ছু আটকায় না নাকি?(লজ্জায় মাথা নিচু করে বললাম)
-খামোখা মুখে আটকাতে যাবে কেন? সত্যিইতো বললাম। আর শোনো ছেলেরা যদি তোমাদের মতো এতো লজ্জা পাই তাহলে দেশের জনসংখ্যা যা আছে সারাজীবন তাই থেকে যাবে বাড়বে না। বুঝলে।
-বাংলাদেশের জনসংখ্যা এমনিতেও অনেক বেশি।
-কিন্তু আমাদের পরিবারের সদস্যা সংখ্যা অনেক কম।
-মানে?
-মানে আমাদের পরিবারে আরো একজন দরকার।(ওর ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে লজ্জায় ওকে জড়িয়ে ধরলাম) ও আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরে নাও। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
-ওকে।
তারপর ও আমায় সুন্দর করে শাড়িটা পরিয়ে দিলো। চুলে চিরুনি করে দিলো, হালকা গয়না পরিয়ে দিলো, চোখে কাজলটাও পরিয়ে দিলো। কাজলটা খুব সুন্দর করে দিতে পারেনি। একটু আকাঁবাকা হয়েছে কিন্তু আমার কাছে এটাই সব থেকে সুন্দর। সব থেকে সেরা। নিজের ভালোবাসার মানুষের হাতে কাজল পরার ভাগ্য সবার থাকে না। শাড়িটা পরলে যে এতো সুন্দর লাগতে পারে বুঝতেই পারিনি তখন। অসম্ভ রকমের সুন্দর লাগছে শাড়িটা। তারপর ও আলমারি থেকে একটা ছোট্ট পেকেট বের করলো।
-এইটাতে কি আছে?
-লিপিস্টিক।
-কি? তুমি লিপিস্টিকও কিনেছো?
-হ্যা। অনেক দামী আর ভালো ব্রান্ডের। রাতেতো এইটা আমার পেটেই যাবে তাই না? তাই আগে থেকেই ভালোটা কিনে এনেছিলাম। না হলে আবার পেট খারাপ করবে। হা হা হা।(বলতে বলতে ঠোঁটে লিপিস্টিকটা লাগিয়ে দিলো)
-ধ্যাত।
-থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন চলো।
তারপর আমরা মাকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। প্রায় এক ঘন্টা ধরে গাড়িতেই আছি কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে বুঝতেই পারছি না। রাস্তাটা অনেক চেনা চেনা লাগছে। প্রায় আরো আধ ঘন্টা পর গাড়িটা থামলো। এখন পুরো সন্ধ্যা। গাড়ি থেকে নেমেই দেখলাম জায়গাটা প্রায় ফাকা আর একটু দুরে কয়েকটা বাড়ি। আরে এখানেইতো সেই দিঘীর পাড়টা। তারমানে ও আমায় এখানেই ঘুরতে নিয়ে এসেছি। আমি আর মেঘ গলিটা শেষ করে দিঘীর পাড়ে গেলাম। ও সোজা সেই ফুচকা ওয়ালা কাকুর ওখানেই গেলো।
-আরে মেঘ বাবা। এতোদিন পর মনে পরলো বুঝি। তোমার মেঘপরীকে পেয়ে আমার আর দিঘীর পাড়টার কথা ভুলেই গেছো বুঝি।
-না কাকু। তোমাদের কথা আমি কি ভুলতে পারি বলো। আমার একাকিত্ব জীবনে এই একটা জায়গায়তো ছিলো যেখানে আমি একটু সুখ খুজে পেতাম।
-হুম। তা মা কেমন আছো?(আমাকে উদ্দশ্যে করে বললো)
-জ্বী কাকু ভালো। আপনি কেমন আছেন?
-ভালো মা। তোমাদের বিয়ের পর মেঘ বাবা একবার এসেছিলো মিষ্টি নিয়ে খবরটা দিতে। তোমাদের বিয়ের ছবিও দেখিয়েছিলো। তারপর আর আসেনি।
-এবার থেকে মাঝে মাঝে আসবো। তবে একা নয় সাথে মেঘপরী নিয়ে আসবো।
-হা হা হা। এসো বাবা এসো।
-এখন এক প্লেট ফুচকা দাওতো।(মেঘ)
-এক প্লেট? আজকে অন্তত আমার সাথে ফুচকা খাও।
-হুম দু’জন এক প্লেট ভাগ করে খাবো। তাহলে ভালোবাসা বাড়বে।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসলাম। আমরা এক প্লেট ফুচকা ভাগ করেই খেলাম। ও আমায় খাইয়ে দিলো আমিও ওকে খাইয়ে দিলাম। তারপর দু’জন পাশাপাশি দিঘীর পাড়ে হাটতে লাগলাম।
-জানো আমার খুব ইচ্ছা ছিলো আমার মেঘপরীর হাত ধরে একদিন আমি এই দিঘীর পাড়ে হাটবো।(ও কথাটা বলতে দেরি করলেও আমি ওর হাতটা ধরতে দেরি করিনি)
আমরা দিঘীর পাড়ে একে ওপরের হাত ধরে হাটছি। আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদটাও যেন আমাদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলছে। আমরা যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি চাঁদটাও আমাদের সাথে সামনের দিকে এগোচ্ছো। খুব জোড়ে বাতাস বইছে। বাতাসে চুল গুলো সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আর পুরো শরীরটাকে শিহরিত করে যাচ্ছে। আচ্ছা বাতাস কি ওর শরীরটাকেও আমার মতো শিহরিত করে যাচ্ছে? হয়তো যাচ্ছে হয়তো যাচ্ছে না। মেঘ আমি আমার মনের কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারিনা। নিজের ভালোবাসাটা হয়তো তোমার মতো করে প্রকাশ করতে পারিনা। কিন্তু তাতে আমার কোনো চিন্তা নেই কারন আমি জানি তুমি আমার মন পড়তে পারো। তুমি আমার মন পড়েই না হয় বুঝে নিও আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি।
-ওকে।
-কি ওকে?
-তোমার মন পড়েই বুঝে নিবো তুমি আমায় কতোটা ভালোবাসো।(ও কথাটা বলার সাথে সাথে দুজনেই দু’জনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম)
এই খোলা আকাশের নিচে দিঘীর পাড়ে দমকা বাতাসে ওর হাত ধরে হাটতে অসম্ভ ভালো লাগছে। এই ভালো লাগার কোনো ব্যাখ্যা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো কোন কবিই পারবে তার কবিতায় এটার ব্যাখ্যা তুলে ধরতে। তবে সেই কবিতায় এই ভালো লাগার পূর্ণরুপ প্রকাশ পাবে কিনা তা আমি জানি না।
প্রত্যেক মানুষের জীবনে সুখী হতে কি কি প্রয়োজন আমি জানি না কিন্তু আমায় নিজেকে সুখী রাখতে এমন একটা মেঘ প্রয়োজন।
সমাপ্ত
#মেহজাবিন_নাশরাহ