ওয়াদা পর্ব: ৮ ও ৯
-আই এম সরি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে। বিশ্বাস কর সেদিন আমি তোকে ওই কথা গুলো বলতে চাইনি কিন্তু আমার মাথা ঠিক ছিলো না তাই বলে ফেলেছি। প্লিজ তুই আমায় ক্ষমা করে দে। জানিস সেদিন এর পর থেকে আমি কতটা অপরাধ বোদে ভুগেছি। অনু কাকিমার কাছে কতবার তোর নাম্বার চেয়েছি, তোর ঠিকানা চেয়েছি কিন্তু তুই নাকি এই দুই বছরে কাকিমার সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখিস নি। এমন কি তোর মাকেও নিষেধ করে দিয়েছিলি কাওকে তোর ঠিকানা দিতে। জানিস কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। কি করে এতটা স্বার্থপর হলি। তুই আমার জন্য কাকিমাকে কেন কষ্ট দিলি। কাকিমাতো তোকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতো সেই মানুষটাকে এতটা কষ্ট কিভাবে দিলি। আচ্ছা আমাদের বন্ধুত্ব কি এতটাই ঠুনকো ছিলো যে আমার কথায় তুই এইভাবে চলে গিয়েছিলি? নিজেদের মধ্য কথা বলেতো সব ঠিক করা যেত তাই না? কিন্তু না আমি অপমান করেছি বলে তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলি। কারোর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখলি না। আমার ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ দিলি না। কিভাবে পারলি তুই থাকতে? এই দুই বছরে একবারও কি আমার কথা তোর মনে পড়ে নি? আচ্ছা এতোদিন কোথায় ছিলি তুই? তুই ঠিক আছিস তো?(একদমে কথা গুলো বললাম)
-উফ। তুই সেই আগের মতই বাচাল আছিস। একটুও বদলাস নি?(তন্নি)
-কথা ঘোরানোর চেষ্টা করিস না। আমার প্রশ্নের উত্তর দে।(আমি)
-তুই এতো প্রশ্ন করেছিস যে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু শুধু একটা বলি পুরনো সব কথা আমি ভুলে গেছি। আর প্লিজ তুইও সব ভুলে যা।
-কিন্তু তুই আমায় ক্ষমা করেছিস তো? প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে। (ওর হাত ধরে বললাম)
-তুই কেন ক্ষমা চাইছিস। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিৎ কারণ ভুলটাতো আমারই ছিলো তাই না।(তন্নি)
-দেখ ভুল যার থাকুক না কেন আমায় সেদিন সবার সামনে তোকে চড় মারা উচিৎ হয় নি
-আচ্ছা তুই এইসব কথা এখন বন্ধ করবি নাকি আমি আবার চলে যাবো?(তন্নি)
-এই না না। আমি আর কখনো ওইসব কথা বলবো না। তুই প্লিজ আবার আমায় ছেড়ে চলে যাস না।(আমি)
-দেখ যেতে তো আমায় হবেই। (তন্নি)
-আবার কোথায় যাবি তুই।(আমি)
-আরে বাবা আর মাত্র কয়টা দিন পরেইতো আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। ভুলে গেলি?(তন্নি)
-নাহ ভুলি নি। কিন্তু তুই চলে যাবি কেন?(আমি)
-তোর মাথাটা পুরো গেছে। আমি পরীক্ষা দিবো না বুঝি। (তন্নি)
-ওহ্ তাই তো। কিন্তু যেদিন পরীক্ষা শেষ হবে সেদিনি তুই চলে আসবি বলে দিলাম।
-সেটা সম্ভব না রে।
-কেন? সম্ভব না কেন? তার মানে তুই এখনো আমার উপর অভিমান করে আছিস তাই না?
-সেটা নয়।
-তাহলে কি?
-আসলে কথাটা তোকে কিভাবে যে বলবো সেটা বুঝতে পারছি না।
-কেন কি হয়েছে। তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
-না মনে,,,(তন্নি একটু মন খারাপ করে)
-কি হয়েছে বলবি। তুই এমন ভাবে বলছিস কেন? আমার কিন্তু এবার টেনশন হচ্ছে।
-নাশু,,,পরীক্ষার পর আমার,,,,
-পরীক্ষার পরে কি তন্নি।
-(মাথা নিচু করে চুপ করে আছে)
-পরীক্ষার পরে কি বলবি তুই?
-আসলে পরীক্ষার পরে আমার বিয়ে।(তন্নি)
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। একটার পর একটা সারপ্রাইজ।
-তুই পাগল না কি হুম।(একটু রাগ দেখিয়ে) তুইতো আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। এমন একটা সু-খবর কেউ এইভাবে দেয় নাকি?)(বলেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম)
-সবাইকে বোকা তুই একাই বানাতে পারিস নাকি? আমরাও পারি বুঝলি।(তন্নি)
-হুম বুজলাম। কিন্তু তোমার এযি ওযি কি করে শুনি?(আমি)
-এযি ওযি মানে?
-আরে এযি ওযি মানে হলো আমাদের দুলাভাই।(জয়া)
-ওহ্। ও একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে বড় পোস্ট এ চাকরি করে।
-ও। দোস্ত তোর ও,,,,,র নাম কি রে?(নিয়ন)
-ওই তুই এমন তো,,,,ত,,লাচ্ছি,,স কেন হুম?(তন্নি)
ওর কথায় আমরা সবাই হেসে দিলাম। কিন্তু শুভ কেমন মন মরা হয়ে আছে। তন্নির ফিরে আসাটা কি ও মেনে নিতে পারি নি। ও কি এখনো পুরনো কথা মনে করে আছে। ওর সাথে এই ব্যাপারে পরে কথা বলতে হবে।
-ওর নাম তপন আহমেদ। (তন্নি)
-তপন আহমেদ? এই তপন নামে তোর এক চাচাতো ভাই ছিলো না?(আমি)
-ছিলো না আছে। কিন্তু কিছুদিন পর আর থাকবে না।(তন্নি)
-থাকবে না মানে?(তুবা)
-থাকবে না মানে, কিছুদিন পর আমার বর হয়েছে যাবে তখন তো আর ভাইয়া তাকবে না তাই না?(তন্নি)
-তার মানে তোর সাথে তোর চাচাতো ভাইয়ার বিয়ে হচ্ছে। আচ্ছা বিয়ের পর কি ভাইয়া বলে ডাকবি নাকি,,,হি হি হি?(আমি)
-উফ তোরা থামবি।(তন্নি)
-তুই লজ্জা পাচ্ছিস? (জয়া)
-নাহ্। কিন্তু আমরা যদি এইভাবেই আড্ডা দিতে থাকি তাহলে নাশু কেক কাটবে কখন শুনি?(তন্নি)
-হুম তাও ঠিক। কেক কাটার পরে নাহয় আড্ডা দেওয়া যাবে। কিন্তু নাশু তুই কি জানিস আজ তোর এই বার্থডে পার্টি টা কে এরেন্জমেন্ট করেছে?(অনিক)
-কে আবার শুভই করেছে।(আমি)
-জ্বী না। এটা শুভ করেনি। এটাতো তন্নি করেছে।(অনিক)
-কিহ্। তন্নি করেছে। তার মানে তোরা সবাই জানতিস তন্নি ফিরে এসেছে। অথচ আমায় কেউ একবার বললি না(আমি)
-আরে তুই যা ভাবছিস না নয়। আমরা আগে থেকে কিছু জানতাম না। সকালে ক্যাম্পাসে আসার পর সবাই মিলে যখন ক্যান্টিনে ঢুকলাম তখন দেখলাম পুরো ক্যান্টিনটা সাজানো। আমরাও এটাই ভেবেছিলাম যে এটা শুভ করেছে কারণ ও আমাদের সবাইকে ক্যান্টিনে বসতে বলেছিলো কিন্তু পরে তন্নির সাথে দেখা হলো আর ওর কাছ থেকে তখনই জানতে পারলাম যে ওই এইসব করেছে। আর আমাদের সবাইকে তোকে জানাতে বারন করেছিলো তোকে সারপ্রাইজ দেবে বলে। শুভও জানতো না যে এখানে এইসব হচ্ছে।(জয়া)
-তুই এতো কিছু কেন করতে গেলি বলতো?(আমি)
-আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের এর বার্থডে আর আমি এইটুকু করতে পারবো না। আচ্ছা এবার কেক কাটবি চল। (তন্নি)
-হুম চল।(আমি)
তারপর আমরা সবাই মিলে কেকের ওখানে গেলাম।
-ও মাই গড। এতো বড় কেক?(আমি)
-হুম। তোর পছন্দ হয় নি?(তন্নি)
-আরে পছন্দ হবে না কেন। খুব পছন্দ হয়েছে।(আমি)
তারপর সবাই মিলে কেক কাটলাম। আমি প্রথমে তন্নি কে কেক খাওয়ালাম তারপর শুভকে। কিন্তু শুভকে খাওয়ানোর সময় বুঝতে পারলাম শুভ কিছু একটা নিয়ে ভয় পাচ্ছে। ও কি তন্নিকে ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে যে তন্নি আবার আমাদের দু জনের মাঝে চলে আসবে কিনা? কিন্তু তন্নির তো সামনে বিয়ে তাহলে ও ভয় পাচ্ছে কেন। নাহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুভর সাথে কথা বলতেই হবে। আমরা সবাই মিলে খুব মজা করলাম। নাচ, গানও হলো। তন্নি গান গাইলো ও খুব ভালো গান গাইতে পারে আর তুবা নাচলো। সবাই মিলে ক্যান্টিনে খাওয়া দাওয়া করলাম। বিলটা তন্নি দিলো। তন্নির একটা কল এলো তাই ও বাইরে গেলো কথা বলতে আর একটু পর শুভও বাইরে গেলো।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ
.
#ওয়াদা
৯
-কেন ফিরে এসেছো তুমি?(তন্নি ফোনে কথা বলার সময় শুভ পেছন থেকে কথাটা বললো)
শুভর গলার আওয়াজ শুনে তন্নি পেছন ফিরলো আর শুভকে দেখে ফোনটা কেটে দিয়ে বললো।
-কিছু বললে?
-বললাম কেন ফিরে এসেছো আবার?
-কেন ফিরে এসছি মানে। আমি আমার নিজের মানুষদের কাছে আসতে পারি না বুঝি।
-চালাকি করার চেষ্টা করো না তন্নি। আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি কেন ফিরে এসেছো।
-জানই যখন তখন আমায় জিজ্ঞাসা করছো কেন খামোখা।
-তুমি এখান থেকে চলে যাও।
-কেন ভয় পাচ্ছো বুঝি?
-ভয় আর তোমাকে। হাসালে।
-ভয় যখন পাচ্ছো না তখন আমায় চলে যেতে বলছো কেন?
-চলে যেতে বলছি কারণ তুমি যেই খেলাটা শুরু করতে চায়ছো সেটাই তুমি কখনো সফল হবে না। দ্বিতীয়বারর যাতে তোমায় সবার সামনে অপমানিত হতে না হয় তাই চলে যেতে বলছি।
-আমায় নিয়ে তোমায় এতো ভাবতে হবে না। তুমি বরং এটাই ভাবো কিভাবে আমার কাছ থেকে বাচবে। কারণ এবারের খেলাটাই আমিই জিতবো।
-কনফিডেন্স ভালো ওভার কনফিডেন্স নয়। কথাটা মাতায় রেখো।
-কনফিডেন্স বা ওভার কনফিডেন্স যেটাই হোক না কেন জিতবো তো আমিই মি. শুভ।
-গতবার এতো অপমানিত হয়েও তোমার লজ্জা হয়নি না,,,?
-সব সময় লজ্জা পেতে হয় না। নাহলে জীবনের কিছু জিনিস যেমন পাওয়া হয়নি তেমনি কিছু অন্যায় এর প্রতিবাদও করা যায় না।
-তার মানে তুমি খেলাটা শুরু করবেই তাই তো?
-হুম করবো।
-ওকে। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো নাশু আমায় খুব ভালোবাসে আর বিশ্বাসও করে তাই তুমি আমাদের সম্পর্কে কোনো রকম ফাটল ধরাতে পারবে না।
-হাহ্ যার ভিত টাই আলগা সেটাতে ফাটল ধরাতে কি সময় লাগে মি. শুভ। আজ থেকে কোনো কিছু করার আগে এটা ভাবে যে তন্নি ফিরে এসেছে। আর এটা ভেবে একটু ভয় পেয়েও প্লিজ। তোমার ভয়ার্থ মুখটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। আজ যখন তুমি আমায় প্রতম দেখেছিলে তখন তোমার মুখটা দেখার মতে ছিলো। ভয়ে পুরো চুপসে গিয়েছিলো। আমার বেশ মজা লাগছিলো তোমায় দেখে।
ওদের কথা কাটাকাটির মধ্য নাশু চলে আসে
-কিরে তোরা দু’জন এখানে কি করছিস?(নাশু)
-না মা,,নে(শুভ কি বলবে বুজতে পারছে না)
-আসলে নাশু আমি শুভর কাছে ক্ষমা চাইছিলাম। সেদিন অন্যায়টাতো আমি শুভর উপরই করেছিলাম তাই সবার আগে আমার শুভ কাছেই ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। শুভ তুমি আমায় প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি হাত জোর করে তোমার কাছে ক্ষমা চায়ছি।(তন্নি)
-ঠিক আছে। নাশু যখন তোমায় ক্ষমা করেছে তখন আমিও তোমায় ক্ষমা করে দিলাম।(শুভ)
-থ্যাংকস শুভ।(তন্নি)
-আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার চল। ওদিকে সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
তারপর ওরা সবাই আবার ক্যান্টিনে বসে অনেক সময় ধরে আড্ডা দিলো। আড্ডা শেষে সবাই চলে গেলো। শুভ নাশুকে পৌছায় দিতে চায়লে নাশু তন্নির সাথে যাবপ বলে শুভকে চলে যেতে বলে। এখন শুধু তন্নি আর নাশু রয়েছে।
-তন্নি চল। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর কাকিমা তোকে দেখলে খুব খুশি হবে।
-নারে নাশু। আজ আমায় বাড়ি ফিরতেই হবে। আজ যেতে পারবো না। আর সামনেতো পরীক্ষা তাই থাকতে পারবো না। কিন্তু আমি কাল একবার কাকিমাদের বাড়িতে এসে সবার সাথে দেখা করে যাবো।
-ওহ্। আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যা আর কালে দেখা হবে। য়াওয়ার আগে তোর ফোন নাম্বারটা দিয়ে যা।
তন্নি ওর ফোন নাম্বারটা দিয়ে চলে গেলো। আর নাশু রিকশার জন্য ওয়েট করছে। ওহ আপনাদেরতো তন্নির পরিচয়টা ঠিক করে দেওয়াই হয়নি। তন্নি হলো মেঘ এর খালাতো বোন। নাশু যখন ক্লাস সিক্স এ পরে তখন তন্নি ওর খালাদের বাড়িতে মানে মেঘ বাড়িতে পড়ালেখা করার জন্য থাকতে আসে। তন্নির বাড়ি গ্রামে ওদের ওখানে লেখাপড়ার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই তাই অনু কাকিমা ওকে ওনাদের ওখানে রেখে লেখাপড়া করান। ওকে নাশু যেই স্কুলে পড়ে সেই স্কুলে ভর্তি করায়। তারপর থেকেই ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড। তুবা, জয়া, নিয়ন, আর অনিক নাশুর ফ্রেন্ড থাকায় ওরা তন্নির সাথে ফ্রেন্ডসিফ করে। আর তারপর থেকেই ওরা ছয় জন খুব ভালো ফ্রেন্ড। ওদের এস এস সি পরীক্ষার পর তন্নির বাবা তন্নিকে ওদের এলাকার একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। তাই তন্নি এখান থেকে চলে যায়। কিন্তু ওদের কারোর বন্ধুত্ব ভাঙ্গে না। সব সময় ওদের যোগাযোগ থাকতো তন্নি সমায় পেলেই মেঘদের বাড়িতে চলে আসতো সবার সাথে দেখা করতে। এভাবেই ওদের ইন্টার পরীক্ষা শেষ হয়। আর পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছু দিন পরই নাশুর বাবা মারা যায়। নাশুর বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর ওর আম্মু ওকে এডমিশনের জন্য একটা কোচিং এ ভর্তি করে দেয়। সেখানে তুবা, জয়া, নিয়ন আর অনিক ও ভর্তি হয়। আর ওই কোচিং এই শুভ সাথে ওদের পরিচয় হয়। শুভ খুব মিশুকে তাই খুব তাড়াতাড়িই ওর সাথে সবার ভালো বন্ধুত্ব হয়। আর এই বন্ধুত্ব থেকেই শুভর সাথে নাশুর প্রেম টা হয়ে যায়। কিন্তু ওদের মধ্য সমস্যা হয় তখনই যখন এডমিশনের মাত্র এক মাস আগে তন্নিও ওদের কোচিং এ ভর্তি হয়।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ