ওয়াদা ৩৭

0
3779

ওয়াদা৩৭
না আমাদের মাঝে রাত্রি নয় মেঘ আর রাত্রির মধ্যে আমি চলে এসেছি। আসলে ভুলটা আমারই রাত্রির ব্যাপারে সবটা জানার পরও আমার মেঘের এতোটা কাছে আসা উচিৎ হয়নি। কিন্তু আমারই বা কি দোষ মেঘেই আমায় বলেছে ও আমায় ভালোবাসে। তাহলে রাত্রি,,,,? মেঘ তুমি কাকে ভালোবাসো রাত্রিকে নাকি আমাকে? তোমার মনে কে আছে রাত্রি না আমি? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। তোমার মনে যদি রাত্রি থাকে তুমি যদি রাত্রিকে ভালোবাসো তাহলে কাল রাতে কেন আমায় I love you বললে। কেন আমায় আপন করে নিলে। শুধুমাত্র আমার কাছে আসবে বলে? না না তুমি এমন নও। কিন্তু সত্যিটা কি? মেঘের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছি আর কাঁদছি। কেমন বাচ্চাদের মতো জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মুখটা একটা নিষ্পাপ শিশুর মতো লাগছে। কত পবিত্র লাগছে ওর মুখটা। এমন মানুষ কখনো খারাপ হতে পারে না। কিন্তু,,,,,,?
-নাশু?(মা ডাকলো)
-হ্যা মা।
-একটু এখানে আয়তো মা।
-আসছি।
চোখের পানি মুছে চিরুনী করে রান্নাঘরে গেলাম। মাকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করছি। মেঘ আর বাবাও চলে এসেছে একটু পরে।
আমি আর ঝুমা টেবিলে খাবার দিলাম। বাবা আর মেঘ খাচ্ছে। তখনই ঝুমা বলে উঠলো
-ভাবি তুমি আর ভাইয়া আজ এতো সকালে গোসল করেছো কেন? ভাইয়া প্রতিদিন সকালে গোসল করে কিন্তু কাজে যাওয়ার সময় কিন্তু তুমিতো কখনো সকালে গোসল করো না তাহলে আজ করলা কেন?(ঝুমা)
ঝুমার কথা শোনার পর মেঘের গলায় খাবার আটকে ও কাশতে লাগলো আমি তাড়াতাড়ি মেঘকে পানি দিলাম। মেঘ একবারেই পুরোটা খেয়ে নিলো।
-ঝুমা কোথায় কি বলতে হয় যানিস না? যা রান্নাঘরে যা।(মা ঝুমাকে ধমক দিয়ে বললো)
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে এলাম। ছিঃ কি লজ্জাকর ব্যাপার। বাবা মার সামনে,,,,,। রুমে এসে বিছানার উপর বসলাম। একটু পরে মেঘও এলো
-কেউ কোন প্রশ্ন করলে তার উত্তর দিতে হয় জানো না?(মেঘ আমার পাশে বসে বললো)
-মানে?(অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম)
-মানে ঝুমা তোমায় একটা প্রশ্ন করলো আর তুমি উত্তর না দিয়েই চলে এলে। এটা ঝুমাকে অপমান করা হলো না?
আমি ওর দিকে রাগি চোখে তাকালাম।
-তবে আমারও কিন্তু একি প্রশ্ন তোমার কাছে।
-কি প্রশ্ন?
আমার কানের কাছে মুখটা এনে কানে কানে বললো
-তুমি এতো সকালে গোসল করলে কেন? কি এমন হয়েছিলো রাতে?(বলে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো)
-ধ্যাত। (বলে রুম থেকে চলে আসলাম)
বাইরে কোনো কাজ নেই তাই একটু পরে আবার রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি মেঘ শার্ট পরছে। ও কি এখন রাত্রির কাছে যাবে? হুম এখনই বোঝা যাবে মেঘ তুমি কাকে ভালোবাসো রাত্রিকে নাকি আমাকে। আমি তোমায় এখন যেতে বাধা দিবো যদি তুমি না যাও তাহলে ভাববো তুমি আমায় ভালোবাসো আর যদি আমি বাধা দেওয়ার সত্বেও যাও তাহলে ভাববো তুমি রাত্রিকে,,,,। যেই ভাবা সেই কাজ। ও শার্টের বোতাম লাগাতে যাচ্ছে তখনই আমি ওর সামনে গিয়ে ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বোতাম লাগিয়ে দিতে লাগলাম।
-শুনন না?
-বলুন না।
-আজ একটু তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে যাবেন প্লিজ?
-কেন?
-একটু তাড়াতাড়ি গিয়ে আমি আর আপনি ফুচকা খাবো।
-কিন্তু আমিতো একটা কাজে বেরোচ্ছি কাজটা শেষ করে সোজা ভার্সিটিতে যাবো। আচ্ছা ক্লাস শেষে আসার সময় যাবো ফুচকা খেতে কেমন?
-না আমি এখনই যাবো। আমার এখন আপনার সাথে ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে।
-কিন্তু আমিতো এখন একটা কাজে যাচ্ছি।
-কি কাজ?
-তেমন কিছু না।
-তেমন কিছু না তাহলে যেতে হবে না।
-আমার যাওয়াটা জরুরি।
-আমি আজ প্রথমবার আপনার কাছে কিছু চেয়েছি আপনি সেটাও দেবেন না।(অভিমান করে বললাম)
ও আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো।
-ধুর পাগলী। আমি কখন বললাম যাবো না। আমি শুধু বলেছি এখন নয় পরে যাবো।
-আপনি যদি আজ এখন আমার সাথে না যান তাহলে ভাববো আপনি আমায় ভালোবাসেন না।
-কি হয়েছে বলোতো? হঠাৎ করে এমন করছো কেন?
-কেমন করছি?
-কেন জানিনা মনে হচ্ছে তুমি আমায় সাথে সময় কাটানোর জন্য নয় আমায় আজ বাইরে যেতে দেবে না তাই এমন করছো।
-কি,,,কি বল,,,তে চাইছেনটা কি আপনি?(ওকে ছেড়ে দিয়ে রেগে বললাম)
-আরে রেগে যাচ্ছো কেন। আমি শুধুমাত্র আমার যেটা মনে হলো সেটাই বললাম। আচ্ছা সরি। কিন্তু আমার এখন যাওয়াটা সত্যি খুব দরকার।(বলে চিরুনী করতে লাগলো)
আমি বিছানার উপর বসলাম। ও রেডি হয়ে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আমায় দাড়ান করালো।
-মেঘ পরী সত্যি খুব সরি। ফেরার পথে তুমি যা বলবে তাই করবো ওকে।
আমি চুপ করে দাড়িয়ে আছি।
-রাগ করে গাল ফুলালে আমার মেঘপরীটাকে আরো অনেক বেশী সুন্দর লাগে। (বলে আমার গালে একটা চুমু খেলো)
-সাবধানে ভার্সিটিতে যেও।
-না গেলে হয় না?(করুন চোখে ওর দিকে তাকালাম।)
ও আমার দু’চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বললো
-পাগলি একটা বাই।
বলেই চলে গেলো। আর আমি ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে শুধু মেঘ নয় ও নিজের সাথে আমার সব কিছু নিয়ে চলে যাচ্ছে। মেঘ আমায় নয় রাত্রিকেই ভালোবাসে। আমি আবারও ঠকে গেলাম। মেঘ শুভতো তাও তোমার থেকে ভালো ছিলো ওতো শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমার সাথে অভিনয় করেছিলো কিন্তু তুমিতো শুধু আমায় ভোগ করার জন্য অভিনয় করছো। শুভ আমায় ঠকালেও তোমার মতো নিচ ছিলো না। ছিঃ মেঘ ছিঃ। কত বোকা না আমি তোমার একটু মিষ্টি কথাতেই গোলে গিয়ে নিজের সব কিছু দিয়ে দিলাম। কেন করলে মেঘ আমার সাথে এমনটা। কেন করলে? কেন নতুন করে আবার আমার মনটা ভেঙে দিলে? তুমিতো জানো কতটা কষ্ট সহ্য করে নিজের মনটাকে শক্ত করেছি। নতুন করে তোমায় নিয়ে বাচার স্বপ্ন দেখেছি। কেন আবার আমার স্বপ্নগুলো ভেঙে দিলে। আমার সাথেই কেন এমনটা হয়? কেন সবাই শুধু আমার মনটা নিয়ে খেলা করে? কেন সবাই শুধু আমার সাথেই অভিনয় করে? আমি কি কারোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই যে সবাই আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে। এসব ভাবছি আর কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারিনি। যখন ঘুম ভাঙলো তখন দুপুর প্রায়। উঠে আবার গোসল করতে গেলাম। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে আবার কাঁদতে লাগলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার বুক থেকে কলিজাটা টেনে হিছড়ে বের করে ছিড়ে ফেলছে। শুভ চলে যাওয়াতেও আমার এতো কষ্ট হয়নি যতটা কষ্ট মেঘের জন্য হচ্ছে। কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো মেঘ? আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। এর থেকে তুমি আমায় গলা টিপে মেরে ফেলতে তাও সহ্য করে নিতাম। কিন্তু তোমার এই ধোকা এটা কি করে সহ্য করবো আমি। তুমি যে আমার অস্তিত্বে মিশে আছো মেঘ। মেঘ কি করে মেনে নিবো তোমার এই বহুরূপী রুপ। কি করে মানবো। ঠিক কত সময় ধরে কেঁদেছি জানি না। তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মাকে বলে আমার মায়ের কাছে গেলাম।
-কি রে হঠাৎ কি মনে করে এলি?(মা)
-কেন আসতে পারি না বুঝি।
-আমি সেটা কখন বললাম। কিছুদিন ধরে তেমন আসিস নাতো তাই বললাম।(মা)
-আপুতো এখন শ্বশুর বাড়ি ছাড়া কিছুই বোঝে না।(নিশাত)
-তাই না? দাড়া তোকেও পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।
-একটু তাড়াতাড়ি করিস যাতে এস এস সি পরীক্ষা দেওয়া না লাগে।(নিশাত)
-ফাজিল মেয়ে একটা। (ওর কথা শুনে ওর মাথায় দিলাম একা গাট্টি)
-আহ্। লাগে না বুঝি?(নিশাত)
-না লাগে না।
-দাড়া তোকেও একটা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি লাগে কি না।(বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে যাবে তখনই মা বললো)
-তোরা থামবি। নিশাত চুপচাপ খেতে বসো।(মা)
-মা আমি কি করলাম? আপুইতো,,,,(নিশাত)
-চুপ করতে বলেছি তোমায়।(মা)
-ধ্যাত। (বলে মুখ ভার করে বসে পরলো)
-নাশু তুইও বস মা। খেয়ে নে।(মা)
-না মা আমি খেয়ে এসেছি।(মিথ্যে বললাম)
-ওহ্। কিন্তু অল্প কিছু মুখে দে।(মা)
-না মা আমার পেট ভরা। কিছুই খেতেই পারবো না।
-আচ্ছা।(মা)
-মা আমি আমার রুমে যাচ্ছি একটু ঘুমাবো কেউ যেন বিরক্ত না করে।
-কেন তোর শ্বশুর বাড়িতে ঘুমানোর জন্য বিছানা নেই যে আমাদের এখানে এসেছিস?(নিশাত)
-তুই চুপ করবি। গিট্টু কোথাকার।
-তুইতো,,,,,
-নিশাত। তোমায় চুপ থাকতে বলেছি না। নাশু তুই যাতো।
তারপর আমি আমার রুমে এলাম। এসেই শুয়ে পরলাম। সাথে সাথে ঘুম চলে এলো। প্রায় সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে দেখি মেঘ আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ওর আর আমার মুখটা একদম সামনাসামনি আর কাছাকাছি। ওর নিশ্বাসেরর শব্দটাও শুনতেই পারছি। ঘুম থেকে উঠেই যে ওকে এইভাবে দেখবো ভাবতেই পারিনি। ওর জন্যই এখানে আসলাম আর ও সেই এখানেও চলে এসেছে। আমি আস্তে আস্তে উঠে মাকে বলে মেঘদের ফ্লাটে চলে এলাম। এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকুনিতে দাড়ালাম। আকাশেরও হয়তো আমার মতই মন খারাপ আজ তাই আকাশে খুব মেঘ করেছে মনে হচ্ছে এখনই বৃষ্টি হবে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরলো। জানি এটা মেঘ। আমি ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ও আমায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে।
-তুমি আজ ভার্সিটিতে যাওনি কেন?
-এমনিতেই।
-ওহ্। ক্লাসে তোমায় খুব মিস করছিলাম।
-হুম।
-ঘুম থেকে উঠে চলে আসলে আমায় ডাকলে না কেন?
-প্রয়োজন মনে করিনি তাই।(কড়া গলায় বললাম)
-মন খারাপ?
-না।
-কি হয়েছে?
-কিছু হয়নি।
-কি হয়েছে বলো না।
-বললামতো কিছু হয়নি।
-তাহলে এমন করছো কেন?
-কি করছি?
-তোমায় জড়িয়ে ধরার পর থেকেই ছাড়ানোর চেষ্টা করছো।
-আমার এইসব ন্যাকামি ভালো লাগছে না তাই।
-কি বলছো এইসব।(আমায় ছেড়ে দিয়ে)
-যা সত্যি তাই বলছি। আমার ভালো লাগছে না প্লিজ আমায় একটু একা থাকতে দিন।
-কি হয়েছে তোমার। আমায় বলো।
-কতবার বলবো কিছু হয়নি কিছু হয়নি। দয়া করে আমায় একটু একা থাকতে দিন প্লিজ।(রেগে বললাম)
-এমন ভাবে কথা বলছো কেন? তোমার কি কিছু হয়েছে?
-আপনি কি ঠিক করেই নিয়েছেন আমায় এইভাবে বিরক্ত করবেন?
-আমি তোমায় বিরক্ত করছি?
-হ্যা করছেন। প্লিজ হয় আপনি এখান থেকে চলে যান না হলে আমিই চলে যাচ্ছি।
-তোমায় কোথাও যেতে হবে না আমিই যাচ্ছি। আর মন ভালো হলে আমায় বলো কি হয়েছে।(বলে ও চলে গেলো)
আমি ওখানেই দাড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম। অনেক রাত পর্যন্ত ওখানে দাড়িয়ে ছিলাম। মা ডাকতে এসেছিলো খাওয়ার জন্য কিন্তু বলেছি ওই বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি খিদে নেই। তাই আর জোর করেনি। মেঘও আজ বাড়িতেই আছে অরুপ ভাইয়ার হলুদ অনুষ্ঠানে যায় নি। আমি রুমে এসে শুয়ে পরলাম। একটু পরেই মেঘ খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে আসলো। আমার সামনে একটা টুল নিয়ে বসলো।
-মেঘপরী ওঠো। উঠে খেয়ে নাও।
-আমার খিদে নেই।
-খিদে নেই মানে কি?
-খিদে নেই মানে খিদে নেই। আমি ওই বাড়ি থেকে খেয়ে এসেছি।
-শোনো সবাইকে বোকা বানাতে পারো আমায় না ওকে। তুমি আজ সারাদিন কিছুই খাওনি আমি জানি।
-তাতে আপনার কি?
-দেখ আমি বুঝতে পারছি তোমার কোন কারণে মন খারাপ। হয়তো সকালে তোমার কথা শুনিনি তাই আমার উপর রেগে আছো। আমার উপর রেগে আছো ঠিক আছে কিন্তু সেই রাগ খাবারের উপর দেখিওনা প্লিজ। তুমি একদমই না খেয়ে থাকতে পারো না। তোমার শরীর খারাপ করে।
-আমায় নিয়ে আপনায় এতো ভাবতে হবে না। আর আমি আপনার উপর রেগে নেই ওকে।
-ওকে মানলাম তুমি আমার উপর রেগে নেই। এবার খেয়ে নাও।
-আমি খাবো না।
-প্লিজ খাবারের উপর রাগ করো না।
-বলছিতো খাবো না আমি।
-সকালের পর থেকে আমিও কিছু খাইনি। আমার খুব খিদে পেয়েছে বিশ্বাস করো।
-আপনি খাননি কেন?(একটু নরম সুরে বললাম। ও সারাদিন খাইনি এটা শুনে আমারও খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আবার মনে হচ্ছে এটাও ওর অভিনয়)
-তুমি সারাদিন না খেয়ে আছো আমি কি করে খাই বলোতো। প্লিজ খাও।
-আমি খাবো না।
-তুমি না খেলে কিন্তু আমিও খাবো না। আর তুমি জানো আমিও না খেয়ে থাকতে পারি না।
-আপনি খাবেন কি খাবেন না সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি খাবো না ব্যস।(বলেই উঠে চলে আসতে লাগলাম)
-কোথায় যাচ্ছো তুমি?
-অন্য রুমে।
-অন্য রুমে মানে? আর কেন?
-আপনি যে আমায় ঘুমাতে দেবেন না সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমি একটু ঘুমাতে চাই তাই অন্য রুমে যাচ্ছি।
-আমিতো তোমায় সরি বলছি তারপরও এতো রাগ করছো কেন।
আমি চুপ করে আছি।
-তুমি অন্য রুমে গেলে সবাই কি ভাববে বুঝতে পারছো।
-কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আর তাছাড়া কিছুদিন পর এমনিতেও আলাদাই থাকবো তো এখন থেকে থাকলে সমস্যা কোথায়?
-আলাদা থাকবো মানে?(অবাক হয়ে)
-আমি আপনায় ডির্ভোস দিতে চায়।(কঠোর গলায় বললাম)
-কিহ্। তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কি বলছো কি এসব। (খাবারের প্লেট টা রেখে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো)
-যা সত্যি তাই বলেছি। আমি আর আপনার সাথে থাকতে পারবো না।
-কি বলছো এসব? কি হয়েছে তোমার? কেন এমন করছো?(আমার হাত ধরে খুব নরম গলায় বললো)
আমি চুপ করে আছি।
-সামান্য একটা কারণে এতো বড় একটা কথা বলতে পারলে তুমি?
-আমি কোনো সামান্য কারণে কিছু বলিনি ওকে। আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা। মুক্তি চায় আমি আপনার কাছ থেকে দয়া করে আমায় মুক্তি দিন আপনি। নাকি আপনার পায়ে ধরে মুক্তি চাইতে হবে?(অনেক জোড়ে চিল্লিয়ে বললাম।)
বলার সাথে সাথে ও আমার গালে একটা চড় মারলো। আমি গালে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ওখান থেকে অন্য রুমে চলে এলাম। আসার সময় পেছন থেকে অনেকবার ডেকেছে কিন্তু ফিরে তাকাই নি। অন্য রুমে এসে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম। ও আমায় কখনো চড় মারতে পারে ভাবতেই পারিনি। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। সকালে যখন ঘুম ভাঙলো দেখলাম মেঘ আমার বুকে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আল্লাহ এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি কি করবো। কাল রাতে এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও আবার আমার কাছে এসেছে। আমি উঠতে যাবো তখন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি যত আস্তে আস্তে ওর মাথাটা ওঠানোর চেষ্টা করছি ও ততো মাথা চেপে ধরে ঘুমাচ্ছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখি আমি আমাদের রুমেই। তারমানে আমি ঘুমিয়ে পরার পর ও আমায় কোলে করে আবার আমাদের রুমে নিয়ে এসেছে। ওর দিকে তাকালাম। মুখটা দেখা যাচ্ছে না। ওর চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে ভাবতে লাগলাম। আমিওতো চাই মেঘ রোজ তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে, সকালে তোমার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠতে। কিন্তু তুমি যে সব কিছু ওলট পালট করে দিলে। তুমি তো রাত্রিকে,,,, রাত্রির কথা মনে পরতেই রাগ বেড়ে গেলো। মেঘের চুলে বিলি কাটা বাদ দিয়ে দিলাম চুলে টান। অনেক জোরেই টান দিয়েছি।
-আউচ,,,। কি করছোটা কি চুল টেনে ছিড়ে ফেলবে নাকি?
-কখন থেকে ডাকছি উঠছেন না তো কি করবো। ষাড়ের মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছেন?
-তুমি আমায় কখন ডাকলে তুমিতো কত সুন্দর করে চুলে বিলি কাটছিলে। কিন্তু হঠাৎ করেই তুমি চুলে যে জোরে টান দিলে। খুব ব্যাথা পেয়েছি।
-তারমানে আপনি জেগে ছিলেন?
-হ্যা।
-উঠুন বলছি।(বলেই মাথা ঠেলে উঠিয়ে দিলাম)
-ব্যাথা পাচ্ছিতো?
-পান ব্যাথা তাতে আমার কি?
-তোমার কিছুই না?
-না কিছুই না।
-আমার কিছু হলে তোমার কিছু যায় আসে না তাই না?
-হ্যা তাই।
-ওকে। ভালো। (মন খারাপ করে নিচে নেমে বাইরে যেতে লাগলো তখনই দরজার সাথে জোরে ধাক্কা খেলো।)
-আহ্,,,,।
আমি তাড়াতাড়ি নিচে ওর কাছে গেলাম। মাথায় হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
-কি হয়েছে?
আমার হাতটা সরিয়ে দিলো রাগ দেখিয়ে।
-এইসব রাগ অন্য কাওকে দেখান ঠিক আছে। হাত সরান।(ধমক দিয়ে বললাম)
ও চুপচাপ হাত সরিয়ে নিলো। কপালে যেখানে লেগেছে সেখানে লাল হয়ে আছে। আমি ওকে নিয়ে খাটে বসিয়ে কপালে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি। আমার চোখে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে চোখের পাতা বন্ধ করলেই গড়িয়ে পরবে। আমি ফুঁ দিয়ে দিচ্ছি আর ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।
-আমার কিছু হলে তোমার কিছু যায় আসে না তাই না?
-(চুপ)
-তাহলে আমি ধাক্কা খাওয়াতে এমন করে ছুটে এলে কেন?
-(চুপ)
-আমি ইচ্ছা করেই ধাক্কা খেয়েছি তোমার কিছু যায় আসে কিনা সেটা দেখার জন্য।
-(চুপ)
-কেন এমন করছো?
-(চুপ)
-তুমি কি বুঝতে পারছো না তোমার এমন ব্যবহারে আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি? আমার কষ্টটা তুমি দেখতে পাচ্ছো না?
-(চুপ)
-খুব ভালোবাসি তোমায় মেঘপরী। এভাবে কষ্ট দিও না প্লিজ। আমার যে আর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই। এতোদিন অনেক কষ্ট পেয়েছি আর পেতে চাইনা প্লিজ। বাকিটা জীবন শুধু তোমায় ভালোবাসতে চায় আর তোমার ভালোবাসা পেতে চায়। প্লিজ আমার থেকে দূরে সরে যেওনা এভাবে। আমি জানি তুমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছো আর আমাকেও দিচ্ছো। প্লিজ এমন করো না।(ওরা গলাটা কেমন ভারী হয়ে আছে। ওর কথা শুনে এবার আমি জোরে জোরে কেঁদে দিলাম)
-এই মেঘপরী কি হয়েছে? কাঁদছো কেন।(মেঘ আমায় ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো। ও দাড়ানোর সাথে সাথে আমি ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম)
-এই পাগলী কাঁদছো কেন এইভাবে কি হয়েছে বলতে।
-(কেঁদেই যাচ্ছি)
-আচ্ছা তুমি যদি না বলে এইভাবে কাঁদতে থাকো তাহলে বুঝবো কি করে কি হয়েছে হুম?
-মেঘ আমি আপনায় খুব ভালোবাসি আমি আপনায় ছেড়ে থাকতে পারবো না প্লিজ আমায় ছেড়ে যাবেন না।
-আরে আমায় ছেড়ে থাকার কথা আসছে কোথা থেকে? আর আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি সেটা আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারবো না।(বলতে বলতেই মেঘের ফোনটা বেজে উঠলো)
অরুপ ভাইয়া কল করেছে। মেঘকে এখনি একবার যেতে বলছে কি নাকি দরকার আছে।
-আচ্ছা কান্না থামাও। অরুপ যেতে বলছে এখনি যেতে হবে। ফিরতে হয়তো দেরি হবে একটু তুমি রেডি থেকো আমি সময়মতো এসে তোমায় নিয়ে যাবো। আর রাতে সব শুনবো কি হয়েছে। ওকে?
-হুম।
মেঘ ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো। মেঘ ১১:০০ টার দিকে কল দিয়ে বললো আলমারিতে একটা লেহেঙ্গা আছে সেটা পরে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে। আমিও আলমারি থেকে লেহেঙ্গাটা বের করে রেডি হয়ে নিলাম। লেহেঙ্গাটা কিছুটা ধূসর রঙের। অনেক সুন্দর। কোনো ছেলের যে মেয়েদের ড্রেস পছন্দ এতো সুন্দর হতে পারে তা ওকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। আমি রেডি হওয়ার সাথে সাথে মেঘ চলে এলো। ঔ একটা ধূসর রঙের পান্জাবী পরেছে। গাড়িতে ওঠার পর ও আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ টিপ দিলো। আমিও একটা মুচকি হাসি দিলাম।
-তুমি সকালে খেয়েছো?(মেঘ)
-না।
-কেন?
-বিয়ে বাড়িতে কব্জি ডুবিয়ে খাবো তাই। হি হি হি।
-এটা কিন্তু তুমি ঠিক করো নি। পরশু রাতে খেয়েছো এখনো পর্যন্ত কিছু খাওনি শরীর খারাপ করবে তো।
-আরে না। সকালে হালকা খেয়েছিলাম। এখন চলুনতো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমরা সোজা কমিউনিটি সেন্টারে গেলাম। বিয়ে ওখানেই হবে। আমরা যাওয়ার সাথে সাথে শাওন ভাইয়ারা এলো। আমাদের দু’জনের ড্রেস কালার একি হওয়ায় সবাই অনেক হাসি-ঠাট্টা করলো। শাওন ভাইয়ারা মেঘ নিয়ে কোথায় চলে গেলো। আমি আর ইরা ভাবি স্টেজেরর সামনে গেলাম। হঠাৎ করেই মাথা ঘুরে পরে গেলাম।
চলবে,,,

#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে