ওয়াদা৩২
রাত্রি নামটা দেখে মুহূর্তেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেলো। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম মেঘের জীবনে অন্য কেউ আছে। ওতো রাত্রিকে ভালোবাসে। আর আমি ওর দুইদিনের কেয়ারিং এ কিসব আজে বাজে ভাবছি। ছিঃ। মেঘ কফি নিয়ে চলে এসেছে।
-নাও।(কফির মগটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
-থ্যাংকস।(বলে মগটা নিলাম)
রাত্রির কলটা কেটে গেছে। মেঘ এখনো দেখেনি রাত্রি কল করেছিলো সেটা। আমি কি ওকে বলবো যে রাত্রি কল করেছে। না থাক কি না কি ভাববে আবার। আমি আর মেঘ চুপচাপ বসে কফি খাচ্ছি। না শুধু খাচ্ছি না আমি মেঘকেও দেখছি। মেঘের ফোনটা আবার বেজে উঠলো। রাত্রি কল করেছে। মেঘ আমার দিকে একবার তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো।
-হ্যালো।(মেঘ)
(ওপাশ থেকে কি বললো শুনতে পেলাম না)
-আমি এখনি আসছি।(মেঘ)
বলেই দৌড়ে চলে গেলো। ওকে দেখে মনে হলো ও খুব খুশি। রাত্রি কি এমন বললো যে মেঘ এতো খুশি হলো আর এই রাতেই রাত্রির কাছে গেলো। তাহলে কি ওদের মধ্য সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে? রাত্রি আর মেঘের সম্পর্কটা কি তাহলে আবার জোড়া লেগে গেছে? ওদের মধ্য সব ভুল বুঝাবুঝি মিটে গেছে? তারমানে মেঘ আর রাত্রি আবার এক হবে? ওরা নতুন করে ওদের জীবন শুরু করবে? আচ্ছা মেঘ কি এবার আমায় ডিভোর্স দিয়ে দেবে? আমি আর মেঘ চিরকালের মত আবার আলাদা হয়ে যাবো? আমায় এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে? না আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না। মা, বাবা এদের ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না। এরা যে আমায় খুব ভালোবাসে। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আমার চোখ দিয়ে কেন পানি পড়ছে? এই বাড়ির মানুষদের ছেড়ে থাকতে হবে বলে নাকি মেঘকে ছেড়ে থাকতে হবে তাই। কিন্তু আমিতো নিজেই চেয়েছিলাম মেঘ আর রাত্রির সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যাক। আমি নিজেই ওদের সম্পর্ক ঠিক করতে চেয়েছিলাম তাহলে এখন যখন ওদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেছে তখন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন। কেন মেঘের পাশে রাত্রির কথা ভাবলে এতো কষ্ট হচ্ছে? খুব কান্না পাচ্ছে তাই বসে বসে কাঁদছি আর এইসব ভাবছি।
-নাশু এতো রাতে তুই একা এখানে কি করছিস?(মা)
মা এখানে? মা কে দেখে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম।
-এমনিতেই মা। তুমি এখানে এসেছো কেন?
-তোর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ঝুমা বললো তুই নাকি মেঘের সাথে ছাদে এসেছিস। এটা শুনে আমি আমাদের ফ্লাটেই চলে যাচ্ছিলাম কিন্তু যাওয়ার সময় দেখলাম মেঘ তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো। তোকে নামতে না দেখে আবার ছাদে এলাম। মেঘ এতো রাতে কোথায় গেলো?
-ওর ফোনে একটা কল এলো তারপর চলে গেলো।
-তোকে কিছু বলে যায় নি?
-না। হয়তো কোন জরুরি কাজে গেছে।(আমার চোখে পানি টলমল করছে)
-নাশু আমার দিকে তাকা।(আমার মুখটা মায়ের দিকে ঘোরালো)
-কি হয়েছে?
-কই মা কিছু হয় নি তো।
-কিছু না হলে তুই কাঁদছিস কেন?
-কই কাঁদছি নাতো।(বলার সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি পরে গেলো আর আমি মুছে নিলাম)
-আমায় বলবি না কি হয়েছে? বলনা মা মেঘ কি কিছু বলেছে তোকে?(বলার সাথে সাথে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম)
-মেঘ তোকে কি বলেছে শুনি?(মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো)
আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
-আচ্ছা মেঘের সাথে দেখা হলে আমি ওকে খুব বকে দিবো। এখন কান্না বন্ধ করতো। দেখি।
আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
-তুই যদি না বলিস তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো মেঘ তোকে কি বলেছে।
-মেঘ কিছু বলেনি।(কেঁদে কেঁদে বললাম)
-তাহলে কি হয়েছে।
মা কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলাম।
-মা মেঘ আর রাত্রির সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে গেছে।
-রাত্রি আবার কে?
-ওই যে তন্নির বিয়েতে তন্নির একটা বান্ধবী এসেছিলো না ওই মেয়েটা।
-রাত্রির সাথে মেঘের কি সসম্পর্ক?
-মেঘ রাত্রিকে ভালোবাসে।(কেঁদে কেঁদে)
-কিহ্?(অবাক হয়ে) আচ্ছা কান্না থামিয়ে আমায় ঠিক করে বলতো কি হয়েছে।(মা)
-মা মেঘ আর রাত্রি একে অপরকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। কোন এক ঝামেলার কারণে ওদের ব্রেকআপ হয়ে যায় কিন্তু এখন আবার ওদের সম্পর্কটা ঠিক হয়ে গেছে। (কেঁদে কেঁদেই বললাম)
-তোকে কে বললো এইসব কথা?
-আমি জানি।
-কিভাবে জানিস সেটাই জিজ্ঞাসা করছি।
-আমি মেঘকে ফোনে রাত্রির সাথে কথা বলতে শুনেছি।
-নাশু তুই কি মেঘকে ভালোবাসিস?
মায়ের কথা শুনে আমি মা কে ছেড়ে দিয়ে খুব অবাক চোখে তাকালাম মায়ের দিকে।
-কি হলো বল। তুই কি মেঘকে ভালোবাসিস?
-কি যা তা বলছো মা। আমি মেঘকে ভালোবাসতে যাবো কেন?
-তার মানে তুই বলতে চাইছিস তুই মেঘ ভালোবাসিস না তাই তো?
-অবশ্যই না।
-তাহলে তুই এইভাবে কাঁদছিস কেন?
-আমি কাঁদছি কারণ,,,,,,,,,(আসলেই তো আমি কাঁদছি কেন)
-কি হলো বল।
-না মানে আমি কাঁ,,,,দছি কারণ,,,,,,(কেন কাঁদছি নিজেই তো জানি না)
-হ্যা কারণ?
-কারণ? কা,,,,রণ আমি মা আর বাবাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ওনাদের ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হবে তাই।
-সেতো তুই ওনাদের ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসিস।
-হ্যা। একসাথে থেকে থেকে অভ্যাস হয়ে গেছেতো তাই আর কি,,,,
-আর মেঘ তোর অভ্যাস হয়ে ওঠে নি?
-কি মেঘ মেঘ করছো মা।(একটু রাগ দেখিয়ে)
-মেঘ মেঘ করছি কারন তুই মেঘকে ভালোবেসে ফেলেছিস। আর তুই নিজেও সেটা বুঝতে পারছিস না।
-কি বলছো মা। আমি মেঘকে ভালোবাসি,,,,না।(একটু তুতলিয়ে)
-কেন নিজের মনের বিরুদ্ধে যাচ্ছিস? কেন তোর মুখের কথাটা মনের উপর চাপিয়ে দিচ্ছিস? মন যা চাইছে সেটা শোন মা।
-আগের বারও তো মনের কথাই শুনেছিলাম মা। কিন্তু কি হলো?
-আগের বার ভুল হয়েছে বলে এবারও ভুল হবে নাকি।
-কিন্তু মেঘতো অন্য কাউকে ভালোবাসে।
-তুই মেঘকে ভালোবাসিস তো?
আমি মা কে জড়িয়ে আবার কান্না করে দিলাম। কারণ আমি যে সত্যি সত্যি মেঘকে ভালোবেসে ফেলেছি।
-পাগলি একটা। কাঁদছিস কেন হুম?
-মা ওতো আমায় ভালোবাসে না। আর কখনো বাসবেও না।
-ও কি তোকে বলেছে ও তোকে ভালোবাসে না?
-আমি জানি বাসে না। কারণ ওর মনের সবটা জুড়ে শুধুমাত্র রাত্রি রয়েছে।
-তুই কান্না থামা। আমি মেঘের সাথে কথা বলবো।
-কি কথা বলবে।(একটু অবাক হয়ে)
-বলবো আমার মেয়েটা ওকে এতোটা ভালোবাসে। ওর সাহস হয় কি করে আমার মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার।
-না মা। তুমি মেঘকে কিচ্ছু বলবে না। প্রমিস করো তুমি মেঘকে কিছু বলবে না?
-কিন্তু কেন বলবো না। তুইতো মেঘকে ভালোবাসিস।
-মা মেঘকে আমার মনের কথা বললে ও হয়তো বন্ধুত্বের জন্য বা বাবাদের ওয়াদা পালন করার জন্য আমায় মেনে নেবে। কিন্তু ওর মনটাতো পরে থাকবে রাত্রির কাছে। আর রাত্রি ওই মেয়েটাও যে মেঘকে খুব ভালোবাসে। ওই মেয়েটার সাথে আমি কোন অন্যায় করতে পারবো না মা। ওর ভালোবাসা ওকে আমি ফিরিয়ে দেবো।
-মানে?
-মানে আমি মেঘের জীবন থেকে চিরকালের মতো সরে যাবো।
-কি বলছিস কি তুই?
-হ্যা মা আমি মেঘকে ডিভোর্স দেবো।
-নাশু কি বলছিস কি তুই? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর।
-মা আমি ঠিকই বলছি। আমি মেঘ আর রাত্রির ভালোবাসার মধ্য বাধা হয়ে থাকতে চাইনা।
-ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে তাহলে তোর যা ভালো মনে হয় তাই কর। আমি আর কিছু বলবো না তোকে। আচ্ছা আমার না ভীষণ ঘুম পাচ্ছে চল নিচে চল।(খুব স্বাভাবিক ভাবে হাই তুলতে তুলতে বললো মা)
মায়ের কথা শুনে আমি পুরো ভ্যাব্যাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এটা কি হলো একটু আগেও মা আমার কথায় রিয়াক্ট করছিলো আর এখন এমন ভাবে বললো যেন কিছুই হয়নি।
-কি হলো চল।
-হুম চলো।
হঠাৎ করে এমন আচারনের মানে কি। কি হলো মায়ের। ভাবতে ভাবতে নিচে চলে এলাম। মা চলে গেলো আর আমি সোজা আমার রুমে চলে এলাম। রুমে এসে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম। ঘুম আসছে না কিছুতেই। রাত প্রায় 1:00 টার সময় বাড়ি ফিরলো মেঘ। রুমে এসেই গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো।
*আমার স্বপ্ন যে সত্যি হলো আজ। কাছে এলো এতোদিন দূরে ছিলো যে রঙে রঙে এজীবন ভরে দিলো সে। আমার স্বপ্ন যে সত্যি হলো আজ*
ঘুরে ফিরে বার বার গানের এই লাইনটাই গাইছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আজ ও খুব খুশি। আমার সাথে থাকা কালিন ওকে কখনো এতো খুশি হতে দেখিনি। খুশি হবে কি করে আমায়তো আর ভালোবাসে না। ভাবতে ভাবতে আবার ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কান্না করে দিলাম। হঠাৎ করেই গানটা বন্ধ হয়ে গেলো। ওতো বিছানায় এখনো আসে নি। কোথায় গেলো তাহলে? আমি উঠে বসে চারিদিকে তাকালাম। না কোথায় নেই। হঠাৎ করেই ওয়াশরুম থেকে গুন গুন শব্দ পেলাম। তাই উঠে ওয়াশরুমের সামনে গেলাম। যাওয়ার সাথে সাথেই আবার গানটা শুনতে পেলাম। আমি ভালো করে কান পাতলাম। হায় আল্লাহ মেঘ গোসল করছে? এতো রাতে গোসল করছে কেন? ও তো রাত্রির কাছে গিয়েছিলো তাহলে কি রাত্রির সাথে ওর কিছু হয়েছে? ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছি। মেঘ তেমন ছেলেই না। কিন্তু ও রাত্রির কাছ থেকে ফিরেই গোসলে কেন গেলো আর এই গানটাই বা কেন গাইছে? আল্লাহই জানে কি আকাম কুকাম করে এসেছে। আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। মেঘ এমনটা করতে পারলো? ছিঃ মেঘ ছিঃ। ঘরে বউ থাকতে তুমি অন্য একটা মেয়ের সাথে এমনটা করতে পারলে? ভাবতে ভাবতেই জোড়ে জোড়ে কেঁদে দিলাম। এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।
-কি হয়েছে? তুমি এইভাবে কাঁদছো কেন?(মেঘ গোসল করে বাইরে বেরিয়ে আমায় কাঁদতে দেখে বললো)
আমি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিয়ে বললাম।
-কিছু না।
-ওহ্ আচ্ছা। সরো সামনে থেকে।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। আমি একবার কিছু না বলেছি বলে আর জিজ্ঞাসাই করলো না আমি কেন কাঁদছি। কি হয়েছে। অথচ আগে আমি কাঁদলেই কেমন অস্থির হয়ে যেতে কি হয়েছে সেটা জানার জন্য। আর এখন পাত্তাই দিচ্ছে না। রাত্রি কি এমন করলো মেঘকে যে মাত্র কয়েক ঘন্টায় মেঘ এতোটা বদলে গেলো।
-কি হলো সরবে?
আমি আর কিছু না বলে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে এখন। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এই দিনটাও দেখার বাকি ছিলো। আমি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছি আর মেঘ ফোন হাতে নিয়ে কি যেন করছে। আর গুন গুন করে ওই গানটাই গাইছে। পাশে যে কেউ একজন কাঁদছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কান্না করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। সকালে যখন ঘুম ভাংলো তখন পেটের উপর ভারী কিছু অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি মেঘ আমার পেটের উপর হাত দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে। ওর সাহস হয় কি করে বিছানার বডার ক্রস করে আমার পাশে আসার। আমি ওকে কিছু বলতে যাবো তখনই দেখলাম ও নয় আমিই ওর পাশে সরে এসেছি। ইস এখন যদি মেঘ দেখে আমি ওর পাশে চলে এসেছি না জানি কি ভাবতে। তাই আসতে করে ওর হাতটা ধরলাম সরিয়ে দেওয়ার জন্য। হাতটা ধরার সাথে সাথে ও একটানে আমায় একদম ওর কাছে টেনে নিলো। ওর হাত পা দিয়ে আস্টে পিস্টে জড়িয়ে ধরলো ঘুমের মধ্যই। আমি একদম ওর বুকের সাথে মিশে আছি। অনেক চেষ্টা করছি ছাড়ানোর কিন্তু পারছি না। যতো ওকে সরানোর চেষ্টা করছি তত ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। আল্লাহ ঘুমের মধ্য কি যে করছে ছেলেটা। আমি অনেক কষ্টে মাথাটা উচু করে ওর দিকে তাকালাম। মেঘের ঘুমন্ত মুখটা অনেক সুন্দর লাগছে। একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। মনে হচ্ছে ওর এই ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সারাজীবন পার করে দি। ও আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে আমি ওকে আর বাধা দিচ্ছি না। কারণ ওর কাছে থাকতে আমারও যে খুব ভালো লাগছে। আমিও চুপচাপ ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। অনেকটা সময় এইভাবেই শুয়ে থাকলাম। একটু পর আবার মাথাটা উচু করে ওর দিকে তাকিয়ে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলাম। সাথে সাথে মেঘ ঘুমের মধ্য বলে উঠলো
-রাত্রি তোমার শরীরটা না সেই মাপের নরম ইচ্ছা করছে সারাজীবন এইভাবে জড়িয়ে ধরে থাকি।
ওর কথা শুনে আমার রাগটা সপ্তম আসমানে পৌঁছায় গেলো।
-লাটসাহেব।(রাগে খুব জোড়ে চিৎকার দিলাম)
-কে, কে? কি হয়েছে?(ঘুমের মধ্য চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে হাপাতে হাপাতে বললো কিন্তু আমায় এখনো ছাড়েনি।)
আমি চুপ করে আছি।
-কি হলো বলবে কি হয়েছে?
আমি রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় দেখালাম যে ও আমায় জড়িয়ে ধরে আছে।
-ওহ্ এই ব্যাপার। ঘুমের মধ্য না হয় ভুল করে জড়িয়েই ধরেছি খেয়েতো আর ফেলি নি। তাই বলে এতো জোড়ে চিৎকার দিবা?
-আপনি যদি ভেবে থাকেন অন্য মেয়ের সাথে আকাম কুকাম করে রাতে বাড়ি ফিরে আবার আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাবেন আর আমি সেটা মেনে নেবো তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন ওকে?(রেগে গিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে বললাম)
-উফ্ আস্তে কথা বলো। কানের পর্দা ফাটিয়ে দেবে দেখছি। আর কি বললে? আকাম কুকাম না কি যেন বললে।(মেঘ)
এইরে রেগে এটা আমি কি বলে ফেললাম। ইস এবারতো উনি বুঝে যাবেন যে আমি সব কিছু জানি।
-কি হলো চুপ করে আছো কেন?
-কিছু না।
-কিছু না মানে? একটু আগে কি বললে তুমি। আকাম কুকাম? সেটা আবার কি?
-বললাম তো কিছু না। ছাড়ুন আমায়।(বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে চলে আসলাম।)
-আরে কি বললে সেটাতো বলে যাও। সত্যি বলছি আমি ওই কথাটার মানে জানি না।(ওয়াশরুমে ঢুকার সময় কথাটা শুনতে পেলাম)
ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম ও শুয়ে শুয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। তাও আবার হেসে হেসে। কাল থেকে দেখছি মুখে হাসি লেগেই আছে যতসব। আর এদিকে যে আমার এতোটা কষ্ট হচ্ছে সেটাতো বুঝতেই পারছে না। রাতে দেরি করে ঘুমানোর জন্য আজ উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো। সকালে নামাজ টাও পড়া হলো না।
-বিছানা থেকে নামলে আমি বিছানাটা ঠিক করতাম।(অন্য দিকে তাকিয়ে ওকে কথাটা বললাম)
ও আমার কথা পাত্তাই দিলো না। তাই ওর সামনে গিয়ে একটু জোড়ে জোড়ে বললাম।
-আপনি বিছানা থেকে নামলে আমি বিছানাটা ঠিক করে রান্নাঘরে যাবো।
কথাটা বলার সাথে সাথেই মেঘ আমার মুখ চেপে ধরলো। বুঝতে পারলাম না কি এমন বললাম। ও ফোনটা এক হাত দিয়ে দুরে ধরে আমায় আস্তে আস্তে বললো
-চুপ। ও জানে না আমার বিয়ে হয়েছে ওকে। কোনো কথা বলো না প্লিজ। না হলে খুব প্রবলেম এ পরে যাবো।(মেঘ)
বলে আবার কথা বলতে লাগলো।
-আরে কি বলছো কি তুমি। ও আমার বোন হয়। আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। মা হয়তো ওকে পাঠিয়েছে আমার বিছানা ঠিক করে দেওয়ার জন্য।(মেঘ ফোনে থাকা মানুষটাকে কথাটা বললো)
আমি ওর বোন হই? বউ এখন বোন হয়ে গেলো। নিশ্চয় রাত্রির ফোন তাই মিথ্যে বললো। আমার খুব কান্না পাচ্ছে তাই রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ