ওয়াদা
৩১
আমি চুপ করে ওর কথাগুলো শুনছি।
-নাশু চলতি পথে আমাদের হাজারও বাধা আসে তাই বলেতো আমরা চলা বন্ধ করি না। তেমনি আমরা যতদিন বেচে থাকবো আমাদের জীবনে এমন ছোট খাটো বাধা আসতেই থাকবে আর আমাদের সেই সব বাধা, প্রতিকূলতা কাটিয়ে নতুন করে বাঁচতে হবে। একটা ঘটনায় কখনো কারোর জীবন থমকে যেতে পারে না। জীবন একটাই আর কারোর জন্য নিজের জীবন নষ্ট করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। আত্মহত্যা কখনো কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তোর বাবাতো মারা গেছেন তাই বলে তোর মা কি আত্মহত্যা করেছেন? তার কষ্টটা কিন্তু তোর থেকে অনেক বেশি নাশু। কিন্তু সে প্রতিনিয়ত তার মনের সাথে যুদ্ধ করে বেচে আছেন শুধু মাত্র তোদের জন্য। তার আপন মানুষের জন্য। তার কাছের মানুষের জন্য। আন্টি বেচে আছেন তাদের জন্য যারা আন্টিকে ভালোবাসেন। তোকেও বাচতে হবে নাশু। নিজের জন্য না হলেও যারা তোকে ভালোবাসে তাদের জন্য তোকে বাচতে হবে। তোকে ভালো থাকতে হবে তাদের জন্য যারা তোকে ভালো রাখার জন্য এতো কিছু করছে। তোকে সুখী হতে হবে তাদের জন্য যারা তোকে সুখী রাখার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাশু একজনের না পাওয়া ভালোবাসার কাছে এতোগুলো মানুষের ভালোবাসাকে হেরে যেতে দিস না। তুই কষ্ট পেলে যে তাদেরও কষ্ট হয়। এতটা স্বার্থপর হইস না নাশু। সবার ভালোবাসাকে এইভাবে অবহেলা করিস না। যাদের কাছে এমন একটা পরিবার থাকে তারা কখনো অসুখী হতেই পারে না। তুই একবার এই দুই পরিবারের মানুষদের তোর প্রতি ভালোবাসাটা বোঝার চেষ্টা কর দেখবি সুখী হতে তোর আর কারোর ভালোবাসার প্রয়োজন পরবে না। এই পরিবারেরর প্রত্যেকটা মানুষ তোকে খুব ভালোবাসে নাশু। এই ভালোবাসাকে তোর অবহেলার মাঝে হারিয়ে যেতে দিস না। আমার কথাগুলো একবার ভেবে দেখিস।(বলে চলে গেলো)
আর আমি ওখানেই বসে আছি। আসলেই আমি কার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছি, কার জন্য চোখের পানি ফেলছি যার কাছে এসবের কোনো মূল্য নেই। আর কাদের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে নিজেকে শেষ করতে চাইছি যারা আমায় এতো ভালোবাসে তাদের? না আমি আর কারোর জন্য কষ্ট পাবো না। আমি আমার জীবনটাকে নতুন করে শুরু করবো। আমি নিজে সুখী হবো আর সবাইকেও সুখী রাখবো।
-ভাবি তোমার খাবার কি ঘরে দিয়ে যাবো নাকি সবার সাথে টেবিলে খাবে?(ঝুমা)
-ঝুমা তুই আমায় ভাবি বলে ডাকলি কেন? আগেতো কখনো ডাকতিস না।
-ওমা আগে কি তুমি মেঘ ভাইয়ার বউ ছিলে নাকি যে ভাবি ডাকবো। এখন তুমি মেঘ ভাইয়ার বউ তাই এখন থেকে তোমায় ভাবি বলেই ডাকবো।(ঝুমা)
আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি কারোর বউ। বউ? কার বউ? মেঘের? শুভর মতো মেঘও আমায় ছেড়ে চলে যাবে নাতো। ধুর কিসব ভাবছি মেঘ থাকলেও কি আর না থাকলেও বা কি আমিতো আর ওকে ভালোবাসি না। শুধু ওকে কেন আমি হয়তো আর কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না।
-কি এতো ভাবছো বলোতো?(ঝুমার কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো)
-না কিছু না।
-বললে নাতো তোমার খাবার কোথায় দেবো?
-টেবিলে দে আমি আসছি।
-ঠিক আছে।(ঝুমা চলে গেলো)
আমি বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম। কিন্তু ঠিক করে দাড়াতে পারছিনা। আসতে আসতে হাটার চেষ্টা করতে লাগলাম। দরজা দিয়ে যেই বেরোতে যাবো তখনই খেলাম ধাক্কা আর সাথে সাথে পরে গেলাম আর চোখ বন্ধ করলাম।
-ওমা গো আমার কোমড় হয়তো আজ ভেঙ্গেই গেছে রে।(বলে চিল্লায় চিল্লায় কাঁদতে লাগলাম)
-নাশু কি হয়েছে কাদঁছিস কেন?(কাকিমা)
-মা পরে গিয়ে আমার কোমড় ভেঙ্গে গেছে। এ্যা এ্যা এ্যা।( চোখ বন্ধ রেখেই কাঁদতে কাঁদতে বললাম)
-মা ওকে ন্যাকা কান্না বন্ধ করতে বলো প্লিজ আমার সহ্য হচ্ছে না।(মেঘ)
-নাশু তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? তুইতো পরিসই নি তাহলে কোমড় ভাঙ্গবে কিভাবে?(কামিমা)
-মানে?(বলে চোখ খুললাম)
চোখ খুলে দেখি মেঘ আমায় ধরে আছে। যেমনটা সিনেমায় নাকিয়ারা পরে যাওয়ার সময় নায়করা ধরে তেমন ভাবে। তারমানে আমি পরে যাওয়ার আগে মেঘ আমায় ধরে ফেলেছিলো। আমি শুধু শুধু ভয়তেই এতো চিল্লালাম।
ইস কি লজ্জাকর ব্যাপার। ভিষণ লজ্জা লাগছে এখন। আমিও না মাঝে মাঝে কি করি।
-এইটুকুতেই এই অবস্থা আর উনি গিয়েছিলেন আত্মহত্যা করতে।(মেঘ রাগি গলায়)
-উফ্ মেঘ। চুপ করবি তুই। মেয়েটাকে আগে সোজা করে দাড় করাতো। বেচারি কতটা ভয় গেছে।(কাকিমা)
মেঘ আমায় সোজা করে দাড় করিয়ে ধরে রাখলো।
-হি হি হি। নাশু তুই পারিসও বটে। আদেও পরেছিস কিনা সেটা না দেখেই কোমড় গেলো কোমড় গেলো করে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছিস। হি হি হি।(তন্নি)
-তোর এই রাক্ষসী রানি কটকোটি মার্কা হাসি বন্ধো করতো। বিশ্রী লাগছে দেখতে।(আমি)
-কি বললি? আমার হাসি রাক্ষসী রানি কটকোটির মতো?(তন্নি)
-হি হি হি। তা নয়তো কি শুনি?
-আর তোর হাসি কেমন শুনি?(তন্নি)
-আমার হাসি অনেক কিউট। সেটা আমি জানি।(আমি)
-ওনার হাসি শুনলে কাকও ভয়ে পালায় আর উনি বলছেন কিউট।(মেঘ বিড় বিড় করে বললো)
-কি বললেন? কি বললেন আপনি?(আমি)
-বলছি আমি কি আপনায় সারাদিন এইভাবে ধরে দাড়িয়ে থাকবো নাকি। আমার আর কোনো কাজ নেই। ঠিকমতো দাড়াতে পারছে না আর মুখ দিয়ে খই ফুটছে।(মেঘ)
-আচ্ছা অনেক ঝগড়া হয়েছে। মেঘ তুই ওকে বিছানায় বসিয়ে দে আমি ওর খাবার আনছি।(কামিমা)
-না না। আমি একা একা রুমে বসে খাবো না। আমি সবার সাথে টেবিলে বসেই খাবো।(আমি)
-কিন্তু,,,(কাকিমা)
-প্লিজ মা।(একটু মন মরা হয়ে)
-আচ্ছা ঠিক আছে। মেঘ ওকে নিয়ে টেবিলে আয়। সাবধানে আনিস।(কাকিমা)
-হুম। চলুন।(একটু রাগি ভাবে)
তারপর মেঘ আমায় একটা চেয়ার টেনে বসতে দিলো। মা খাবার বেড়ে দিলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দু’দিন ধরে সেলাইন দেওয়ায় ডান হাতেও খুব ব্যাথা। তাই খাবার ঠিক মতো তুলে খেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
-মেঘ তুই নাশুকে একটু খাইয়ে দে তো। ওর হাতের ব্যাথা মনে হয় এখনো কমে নি। মেয়েটা ঠিক মতো ঠিক করে খেতে পারছে না।(আংকেল)
-না না বাবা। আমি একদম ঠিক আছি। আমার খেতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।(আমি)
-সেটা দেখতেই পারছি। মেঘ তুই খাইয়ে দে তো।(কাকিমা)
-মা আমি?(মেঘ)
-হ্যা তুই। ওতো তোর বউ। এখন থেকে ওর সব সুবিধা অসুবিধা তোকেই তো দেখতে হবে।(কাকিমা)
-তাই বলে খাইয়ে দিতে হবে।(মেঘ)
-থাক না মা। প্লিজ।(আমি)
-নাশু তুই চুপ থাক। মেঘ তোকে যেটা বললাম সেটা কর।(কাকিমা)
মেঘ আমার দিকে খুব রাগি ভাবে তাকালো। তারপর ওর খাবারের প্লেট টা হালকা ধাক্কা দিয়ে উঠে চলে গেলো।
-মেঘ খাবার ফেলে এইভাবে উঠে যাস না বাবা। আমিতো,,,,,,(কাকিমা আর কিছু বললো না)
বুঝতে পারলাম খুব রেগে গেছে আমার উপর। কিন্তু আমিতো মানা করেইছিলাম। তাহলে আমার উপর রাগ করলো কেন। আমার জন্য ওরও খাওয়া হলো না। খুব খারাপ লাগছে। চোখে পানি টলমল করছে। খাওয়ার সময় এমন একটা কান্ড ঘটে যাবে বুঝতেই পারি নি। আমিও উঠতে যাবো তখনই মেঘ আবার আমার পাশের চেয়ারটায় বসলো। সবাই মেঘের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
-কি হলো সবাই এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(মেঘ)
-না মানে তুই ওইভাবে উঠে চলে গেলি আবার ফিরে এলি। তাই আর কি,,,(তন্নি)
-আমিতো বেচিং এ হাত ধুতে গিয়েছিলাম। ওকে কি আমার এটো হাত দিয়েই খাইয়ে দিবো নাকি।(বলে আমার প্লেট ওর দিকে একটু এগিয়ে নিলো)
-মেঘ তুই মাঝে মাঝে এমন ভাব নিস না,,, (কাকিমা)
-মা,,,।(মেঘ একটু রাগি গলায়)
-না কিছু না।(বলে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো সাথে বাকি সবাইও)
মেঘ ভাত ভালো করে মেখে লোকমা বানিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো আর আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আমি ভাবতেও পারছি না মেঘ আমায় খাইয়ে দিচ্ছে। এটাও সম্ভব।
-আমাকে দেখা শেষ হলে বলো তখন খাইয়ে দিবো।(মেঘের কথা শুনে সবাই একটু জোড়েই হেসে দিলো আর আমি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম)
-এবার হা করো।(বলে মেঘ আমায় খাইয়ে দিতে লাগলো)
এর আগেও মেঘ আমায় খাইয়ে দিয়েছে ছোট বেলায়। আমরা এক প্লেটে কত খেয়েছি। সেই সব দিনের কথা খুব মনে পরছে। যদি সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যেতো।
-তুমি চাইলে সব কিছু আগের মতই থাকতো।(মেঘ বিড় বিড় করে বললো)
এই লাটসাহেবটা আমার মনের কথাগুলো কিভাবে বুঝে ফেলে কে জানে। ওর জন্য মনে মনে কিছু বলেও শান্তি নেই। আর কি বললো আমি চাইলে সব কিছু আগের মতো থাকতো? আমিতে সব সময় চেয়েছি সব কিছু আগের মতো থাকুক। ওইতো পুরোপুরি বদলে গেছে। আমিতো বদলাই নি।(মনে মনে) খাওয়া শেষে মেঘ আমায় রুমে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেলো। বিকালে তন্নিও চলে গেলো। সন্ধ্যার দিকে মা এসেছে সকাল থেকে অবশ্য মা আর নিশাত অনেক বার দেখতে এসেছিলো। দুপুরে মা খাইয়ে দিয়েছিলো। এখন মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি। আমার পাশে আমার দুই মা আছে। দুজনই আমায় হাসানোর জন্য কত রকম গল্প শোনাচ্ছে। আসলেই কাছের মানুষের ভালোবাসার কাছে বাকি সব তুচ্ছ। তন্নি তুই ঠিকই বলেছিলি এমন একটা পরিবার থাকলে কেউ কখনো অসুখী থাকতে পারে না। সেটা আমি মাত্র এই কয়েক ঘন্টাতেই বুঝতে পেরেছি। মা’রা গল্প করছে আর আমি শুয়ে শুয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছি এমন সময় মেঘ এলো রুমে।
-কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি বলতো?(কাকিমা)
-একটু কাজ ছিলো। কাকিমা নিশাত কোথায়?(মেঘ)
-নিশাত তো পরছে।(মা)
-ওহ।(মেঘ)
-মেঘ আজ থেকে তুই আপাকে মা বলে ডাকবি।(কাকিমা)
-আমি পারবো না। ছোট বেলা থেকে কাকিমা কে কাকিমা বলে ডেকে এসেছি এখন কিভাবে মা বলবো।(মেঘ)
-নাশুও তো ছোট বেলা থেকে আমায় কাকিমা বলে ডাকতো কিন্তু এখনতো আমায় মা বলে ডাকে। তাহলে তোর প্রবলেম কোথায়?(কাকিমা)
-ও ডাকে বলে আমাকেও ডাকতে হবে?(মেঘ)
-হ্যা তাই। ও ডাকে এখন থেকে তোকেও ডাকতে হবে।(কাকিমা)
-ঠিক আছে। কিন্তু আমি শুধু মা ডাকতে পারবো না।(মেঘ)
-তাহলে আবার কি বলে ডাকবি?(মা)
-আমি তোমায় শাশুড়ি মা বলে ডাকবো।(বলে হাসতে লাগলো)
ওর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দিলাম।
-ঠিক আছে তাই ডাকিস। পাগল ছেলে।(মা)
তারপর মা’রা চলে গেলেন। রাতে আবার মেঘ খাইয়ে দিলো। এবার আর ওকে কেউ খাইয়ে দিতে বলেনি। ও নিজ থেকেই খাইয়ে দিলো। এইভাবেই কিছুদিন পার হয়ে গেলো। সকালে জয়া কল করে বললো কাল থেকে আমাদের ক্লাস শুরু হবে। জয়াকে এর মাঝে শুভর ব্যাপারে সব কিছু বলেছি কিন্তু আমার যে বিয়ে হয়েছে সেটা কাউকে বলিনি। জয়া আর বাকিরা সবাইতো বিশ্বাসই করতে পারছিলোনা শুভ এমনটা করতে পারে। ওরা সবাই খুব আপসোস করছিলো এতোদিন একসাথে থেকেও কেউ ওকে চিনতে পারলো না। শুভকে নিয়ে আমার আর কোন আক্ষেপ নেই। ওকে যে এইভাবে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাবো আমি ভাবতেই পারিনি। কেন জানিনা ওর কথা এখন ভাবতেও ইচ্ছা করে না। এই বাড়ির সবাইকে নিয়ে খুব ভালো আছি। এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। তাই ভাবছি কাল থেকেই ক্লাস করবো। এই কয়দিন মেঘ আমার অনেক খেয়াল রেখেছে। ডাক্তার দেখানো, ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করা, ঔষধ খাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে গোসল করা, হাটা চলা করা, কখন কি লাগবে সব দিকে খেয়াল রেখেছে। সব সময় আমার পাশে পাশেই থেকেছে। এই কইদিনে মেঘ যেন আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। ও আমার আশে পাশে থাকলে কেন জানি না খুব ভালো লাগে। ইচ্ছা করে ও সব সময় এমনভাবে আমার আশে পাশেই থাকুক, আমার খেয়াল রাখুক।
-এতো রাতে বেলকুনিতে এইভাবে দাড়িয়ে আছো যে?(মেঘ)
পেছন ফিরে দেখি মেঘ দাড়িয়ে আছে।
-না এমনিতেই।
-ছাদে যাবে?
-এতো রাতে?
-খুব বেশি রাত নয়।
আমি ওর মুখের উপর না করতে পারছি না। কিন্তু আমারতো ওকে না বলাই উচিৎ। তাহলে কেন পারছি না বলতে।
-চলো।(মেঘ)
আমিও কিছু না বলে ওর পিছু পিছু ছাদে গেলাম। ছাদে ওঠার সাথে সাথেই মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো। জোৎস্না রাত সাথে হালকা বাতাস। পরিবেশটা সত্যিই খুব দারুন। আমি আর মেঘ চেয়ারে বসলাম। আমি বসে বসে পরিবেশটা উপভোগ করছি। চারিপাশ দেখতে দেখতে হঠাৎ মেঘের দিকে চোখ পরলো। মেঘ চুপচাপ একমনে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আমি মেঘের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছি। হলুদ হাপ হাতা টি-শার্ট, সাদা ট্রাওজার, চোখে চশমা, এলোমেলো চুলে বেশ লাগছে দেখতে ওকে। এমনিতে অনেক ফর্সা তার উপর চাঁদের আলোয় মেঘকে যেন অনেক বেশি মায়াবী লাগছে। আচ্ছা ছেলেরা কি মায়াবী হয়? জানি না। কিন্তু আমার কাছে এই মুহূর্তে মেঘকে মায়াবী লাগছে। ওর চুলগুলো অনেক সুন্দর একটু বড়। ওর মুখের সাথে চুলের স্টাইলটা দারুন লাগে। আগে কখনো ওকে এমনভাবে দেখা হয়নি। ওযে অতি মাত্রার সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলে সেটা জানতাম কিন্তু কখনো সেইভাবে ওর দিকে তাকাই নি। আগে কখনো তাকাতে ইচ্ছাও করেনি। এই মুহূর্তে শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। আমি চুপ করে ওকে দেখছি। যত দেখছি তত আরও কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছা করছে। দুজনের কেউই কোনো কথা বলছি না। এই সময় এক কাপ কফি হলে দারুন হতো।
-তুমি পাঁচ মিনিট বসো এখানে আমি কফি আনছি।(বলে নিচে চলে গেলো)
এই ছেলেটাকে আমি সত্যি বুঝতে পারি না। আমার কখন কি দরকার, কখন কি ইচ্ছা করে, কখন কি ভাবি এইসব ও কিভাবে বুঝতে পারে। কই আর কেউতো আমার মনের কথাটা এইভাবে বোঝে না। শুভতো কখনো আমার মনের কথা এইভাবে বুঝতে পারতো না। অবশ্য শুভ কিভাবে বুঝবে? ওতো কখনো আমায় ভালোই বাসে নি। আচ্ছা সিনেমায় দেখেছি নায়ক ঠিক এইভাবেই নাকিয়ার মনের কথাগুলো বুঝতে পারে কারণ নায়ক নায়িকাকে ভালোবাসে তাই। কিন্তু মেঘ কেন আমার কথা বুঝতে পারে তার মানে ও কি আমায়,,,,,,,, এটা ভাবার সময় ঠোটের কোণায় নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো।(ভাবতে ভাবতেই ফোনের রিংটন বেজে উঠলো)
আমার নয় মেঘের ফোন। ও যাওয়ার সময় ফোনটা টেবিলের উপরই রেখে চলে গেছে। আমি মোবাইলের ইসক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাত্রি কল করেছে।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ