ওয়াদা২৮

0
3403

ওয়াদা২৮
-নামো।(মেঘ)
-এখানে কেন?
-গেলেই জানতে পারবে।(ও নেমে হাটতে লাগলো)
আমিও ওর পিছু পিছু হাটতে লাগলাম। একটু সামনে যেতেই দেখলাম মা, নিশাত, আংকেল আর তন্নি দাড়িয়ে আছে। ওনারা এখানে কি করছে আর তন্নিই বা কখন এলো। তন্নি যে আসবে সেটা আমায় জানালো না কেন?
-তোমরা সবাই এখানে? আর তন্নি তুই কখন এলি?
-আমি একটু আগেই এলাম। খালুজান নিতে গিয়েছিলো।(তন্নি)
-কিন্তু আমরা সবাই এখানে কেন আসলাম।
-মেঘ তোর মা কোথায়?(আংকেল)
-এইতো আমি এসে গেছি।(পেছন থেকে অনু কাকিমা বললো)
-এখানে কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।(বলে আমার মায়ের দিকে তাকালাম)
মায়ের দিকে তাকাতেই একটু দুরে একটা লোককে দেখতে পেলাম। লোকটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু একপাশ হয়ে দাড়িয়ে থাকায় মুখটা দেখতে পারছি না।
-নাশু চল।(মা)
-কোথায়?
-ভেতরে।(মা)
-কেন মা। আমরা ভেতরে কেন যাবো?
-গেলেই জানতে পারবে। তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ চলো।(মেঘ)
আমরা সবাই মিলে ভেতরে গেলাম। আমি বুঝতে পারছি না আমরা সবাই মিলে থানায় কেন এলাম। কি এমন ঝামেলা হলো যে আমাদের থানায় আসতে হলো। খুব টেনশন হচ্ছে। সামনে যত এগোচ্ছি আমার ভয়ের মাত্রা তত বাড়ছে। ভেতরে গেলাম। ভেতরে যাওয়ার সাথে সাথেই শুভকে দেখতে পেলাম। শুভকে এইভাবে এখানে এসে দেখতে পাবো কল্পনাও করিনি। আমি দৌড়ে শুভর কাছে গেলাম।
-শুভ।(কাদতে কাদতে ডাকলাম। ও আমার গলার আওয়াজ শুনে বসা থেকে উঠে আমার সামনে মাথা নিচু করে দাড়ালো)
-শুভ কোথায় ছিলে এতোদিন? জানো আমি তোমায় কত খুজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। তোমার বাড়িতেও গিয়েছিলাম কিন্তু ওই দারোয়ানটা বললো ওটা নাকি তোমাদের বাড়িই নয় আমি নাকি ভুল ঠিকানায় এসেছি। এটা শোনার পর জানো কতটা টেনশনে পরে গিয়েছিলাম। কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো। তোমার কোন খবর না পাওয়ায় পাগলের মতো হয়ে গেছিলাম। শুধু মনে হচ্ছিলো তোমার কোন বিপদ হয়নি তো। তুমি তোমার ফোন কেন অফ করে রেখেছিলে? আমার উপর রাগ করে তাই না? আমি সেদিন তন্নিদের বাড়ির সামনে আসিনি তাই আমার উপর রেগে আছো তাই না,,? মানলাম আমি অন্যায় করেছি তাই বলে আমায় এত কষ্ট দেবে? একবারো মনে হয়নি তোমার যে আমি কতটা কষ্ট পাচ্ছি। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম না। জানো শুভ আমায় না তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে। অনেক কিছু জানানোর আছে। কিন্তু তুমি তুমি এখানে কি করছো? তুমি ঠিক আছোতো? তোমার কোন বিপদ হয়নি তো? তুমি এখানে কেন এসেছো।(কাদতে কাদতে কথাগুলো বললাম)
-(শুভ চুপ করে মাথা নিচু করে আছে)
-কি হলো তুমি এইভাবে চুপ করে আছো কেন? কিছু বলছো না কেন?
-(এখনো চুপ)
-এই শুভ বলনা তুমি কোথায় ছিলে এতোদিন। প্লিজ চুপ করে থেকো না।
-(চুপ)
-শুভ আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করছি প্লিজ উত্তর দাও। এভাবে চুপ করে থেকো না।
-(চুপ)
-আচ্ছা তুমি থানায় কেন এসেছো? তুমি কি কোনো সমস্যায় পরেছো? কি হয়েছে আমায় বলো দেখ আমি সব ঠিক করে দিবো? বলনা শুভ কি হয়েছে?
-(চুপ)
-এই শুভ তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।(ওর হাত ঝাকিয়ে বললাম) এতোটা রেগে আছো যে আমার সাথে কথাই বলবে না। প্লিজ শুভ আমার ভুল হয়েগেছে। প্লিজ শুভ একবার আমার কথাটা শোনো।
-(চুপ)
-বলবে না কথা আমার সাথে? আচ্ছা এই দেখো আমি কান ধরছি কান ধরে তোমার ক্ষমা চাইছি। এবার অন্তত আমার সাথে কথা বলো।(কাদতে কাদতে কান ধরে বললাম)
-নাশু পাগল হয়ে গেছিস নাকি? কি করছিস কি তুই?(মা আমার কান থেকে হাত সরিয়ে দিলো)
-হ্যা পাগল হয়ে গেছি আমি।(বলে মাকে ঠেলে আমার কাছ থেকে সরিয়ে দিলাম)
তোমরা আমায় পাগল হতে বাধ্য করেছ। তোমাদের জন্য আমার শুভ আমার উপর রাগ করে আছে। এতটাই রাগ করে আছে যে আমার সাথে কথাই বলছে না। আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর পর্যন্ত দিচ্ছে না। ঘৃনা করছে আমায় ও। আজ তোমাদের করা ওয়াদার জন্য আমায় শুভকে দেওয়া ওয়াদা ভাঙ্গতে হয়েছে আর সেজন্য আজ আমি আর শুভ আলাদা হয়ে গেছি। তোমাদের জন্য আজ আমার আর শুভর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে মা। নষ্ট হয়ে গেছে। চাইলেও সেটা আর ঠিক করা যাবে না মা।(কাদতে কাদতে চিল্লিয়ে মাকে বললাম)
-দেখ আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্ট হচ্ছে। তাই বলে তুমি কাকিমার সাথে এইভাবে কথা বলতে পারো না। তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করছো।(মেঘ)
-ওহ রিয়েলি? আমি আমার লিমিট ক্রস করছি? আর আপনারা? আপনারা সবাই আমার আর শুভর সাথে যেটা করলেন সেটা? সেটা কি তাহলে? লিমিট আমি ক্রস করিনি। লিমিট ক্রস করেছেন আপনারা। আপনিতো সব সময় সত্যর পথে চলেন তাইনা। আপনিতো কখনো অন্যায়ের প্রশরয় দেন না? তাহলে আপনি নিজে আমার সাথে এই অন্যায়টা কেন করলেন? কেন আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেন না? কেন করেন নি বলুন?(আমি মেঘকে কথাগুলো বলার সময় একজন লোক শুভর পাশে এসে দাড়ালো)
লোকটাকে দেখে আমি অনেক অবাক হলাম। কারণ একটু আগে আমি এইলোকটাকেই বাইরে দেখেছিলাম আর ইনি হলেন শফিউর আংকেল। কিন্তু উনি এখানে শুভর সাথে কি করছেন? শুভর সাথে ওনার কি সম্পর্ক।
-কি ভাবছো? শুভর সাথে উনি কি করছেন?(মেঘ)
আমি মেঘের দিকে তাকালাম।
-উনি হলেন শুভর বাবা।(মেঘের কথাটা শুনে আমি অনেক বড় একটা ধাক্কা খেলাম)
শফিউর আংকেল শুভর বাবা। কিন্তু শুভতো বলেছিলো ওর বাবা একজন বিজনেসম্যান। শুভ ওর বাবার নাম শফিউর রহমান বলেছিলো কিন্তু ওই শফিউর রহমান আর এই শফিউর রহমান যে এক আমি ভাবতেই পারি নি। কিন্তু শুভ আমায় মিথ্যে কেন বলেছিলো। সব কিছু আমার কাছে এলোমেলো লাগছে। কি হচ্ছে এসব। শুভ শফিউর আংকেলের ছেলে। ভাবতে ভাবতে পুলিশ শুভকে লকআপে ঢুকালো।
-আরে কি করছেন আপনারা? ওকে লকআপে কেন ঢুকাচ্ছেন? কি করেছে ও?(আমি)
-উনি অস্ত্র পাচারকারীদের সাথে যুক্ত আছেন তাই ওনাকে ধরে আনা হয়েছে।(একজন পুলিশ) কথাটা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেলো। শুভ অস্ত্র পাচারকারী? না এটা হতে পারে না। এটা কিছুতেই সম্ভব না।
-কি যা তা বলছেন আপনারা? এটা কখনই সম্ভব নয়। শুভ কখনই এমন কাজ করতে পারে না। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।(চিল্লিয়ে বললাম)
-ম্যাডাম ওনার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে সমস্ত প্রমান আছে।(সেই পুলিশ)
-মানি না আমি। বিশ্বাস করিনা আমি। শুভ কখনো এমন কাজ করবে না। আমি আমার শুভকে খুব ভালো করে চিনি। ও কখনো এমন জঘন্য কাজ করতেই পারে না।
-তোমার মানা না মানায় সত্যিটা বদলে যাবে না।(মেঘ)
-কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা। আমি শুধু একটা কথায় জানি। শুভ কোনো অন্যায় করতেই পারে না। পারে না ও কোনো অন্যায় করতে।
-তোর প্রবলেম কি জানিস নাশু? তুই শুভকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করিস? তুই এটা মানতেই পারিস না যে শুভ কোন অন্যায় করতে পারে। তোর চোখে ওর অন্যায় গুলো ধরা পরে না। দুই বছর আগেইও তুই শুভর অন্যায়গুলো দেখেও বিশ্বাস করিসনি আর আজ দুই বছর পরও তুই ঠিক একি কাজ করছিস।(তন্নি)
-হুম বুঝেছি। এবার সবটা আমার কাছে ক্লিয়ার হয়ে গেছে। এইসব কিছু তোর আর মেঘের প্লান তাই না? তুই আর মেঘ দুজনে মিলে প্রতিশোধ নিচ্ছিস তাই না? সেদিন আমি তোকে চর মেরে শুভর জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম তাই আজ তোরা ভাই-বোন মিলে তার প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
-নাশু তুই কিন্তু আবারও আমায় ভুল বুঝছিস।(তন্নি)
-ভুল নয়। একদম ঠিক বুঝছি। একদম ঠিক বুঝছি আমি। এজন্যই সেদিন রাতে এমন হুট করে মেঘ আমায় বিয়ে করলো। আমি ভেবেছিলাম যে মেঘও হয়তো আমার মতো বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছে কিন্তু না সেদিন আমি ভুল ছিলাম। এইসব কিছু মেঘের প্লান ছিলো শুভ আর আমাকে আলাদা করার। এবার সব কিছু পরিষ্কার আমার কাছে। কেন করলেন এমনটা?(মেঘের দিকে তাকিয়ে বললাম) বোনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য? একবারও সত্যিটা যাচাই না করে আমায় এতোবড় শাস্তি দিলেন। আমিতো আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম তাই না? আমি কোনো কারণে কষ্ট পেলে সব থেকে কষ্ট তো আপনি পেতেন তাই না? আর আজ আপনি নিজে আমায় এতো কষ্ট দিলেন? আপনার মেঘপরীকে কষ্ট দিতে আপনার একটুও খারাপ লাগেনি? বোনের প্রতিশোধের নেশায় আমাদের জীবনটা এইভাবে নষ্ট করে দিলেন?
-কাকে কি ববলছিস তুই নাশু? মেঘ তোর জীবন নষ্ট করে নি বরং তোর জীবন নষ্ট হওয়া থেকে বাচিয়েছে।(মা)
-মানে?
-মানে আমি বলছি?(পুলিশ অফিসার) তারপর উনি বলতে শুরু করলেন।
-আপনি তো জানেন আপনার বাবা আর শফিউর রহমান একি ব্যাংক এ চাকরি করতেন আর ওনারা বেশ ভালো বন্ধু ছিলেন। শফিউর রহমান ব্যাংক থেকে অনেক টাকা চুরি করেন এবং আপনার বাবা প্রমাণসহ ওনাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। শফিউর রহমান বন্ধুত্বের দোহায় দিয়ে আপনার বাবাকে বলেন ওনাকে পুলিশে না দিতেন। কিন্তু আপনার বাবা বলেছিলেন অন্যায় অন্যায় আর উনি এই অন্যায়কে কখনো প্রশরয় দিবেন না। শফিউর রহমানের তিন বছরের জেল হয়। আর তখন থেকেই শফিউর রহমান প্রতিঙ্গা করেন তিনি আপনার বাবার উপর প্রতিশোধ নিবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আপনার বাবা মারা যান কিন্তু শফিউর রহমান তার অপমান ভুলতে পারেন নি। তিনি যেকোনো মূল্যে আপনার বাবার উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছিলেন। আপনার বাবা যেহেতু মারা গিয়েছিলেন তাই উনি ওনার প্রতিশোধটা আপনার উপর নিয়ে নিজের রাগ মিটাতে চেয়েছিলন। আর সেজন্যই নিজের ছেলে শুভ আহমেদকে আপনারই কোচিং এ ভর্তি হতে বলেন আর আপনার সাথে প্রেমের অভিনয় করতে বলেন। শফিউর রহমানের কথা অনুযায়ী শুভ কোচিং এ ভর্তি হয় এবং আপনার সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু করে।
চলবে,,,

#মেহজাবিন_নাশরাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে