ওয়াদা১৭
রুমে এসে পায়চারী করছি আর ভাবছি এতো অপমান করার পরও রাত্রি মেঘের সাথে কথা বলতে চায়ছে। কতটা ভালো না বাসলে ওর অপমান গুলো সহ্য করছে। মেঘও তো ওকে ভালোবাসে। ওতো নিজেও কতটা কষ্ট পাচ্ছে। নিজেও কষ্ট পাচ্ছে আর মেয়েটিকেও কষ্ট দিচ্ছে। হয়তো অনেক অভিমান জমে আছে মনে তাই দুজন দুজনকে ভালোবাসার স্বত্বেও এতো দূরে আছে। মেঘের অভিমানগুলো ভাঙ্গাতে হবে। তার জন্য রাত্রিকে খুজে বের করতেই হবে যেভাবেই হোক। আমার ছোট্ট বেলার বন্ধুকে আমি এইভাবে কষ্ট পেতে দিবো না। আমি আবার আমার আগের মেঘকে ফিরিয়ে আনবো। রাত্রি আর ওকে একও করবো। ওদের মধ্য যত সমস্যা আছে সব আমি ঠিক করে দিবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। মেঘকে এইভাবে আমি আর দেখতে পারছি না।
-নাশু খেতে আয়।(মা)
-হ্যা মা আসছি।
মা খেতে ডাকছে তাই খেতে গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম। জামা কাপড় সব গুছিয়ে নিতে হবে। তারপর আলমারি থেকে বেছে কয়েকটা থ্রি পিচ, হলুদে পরার জন্য একটা শাড়ি আর বৌ ভাতে পরার জন্য একটা লেহেঙ্গা নিলাম। আর যা যা লাগবে সব কিছু প্যাক করে নিলাম। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দরকার না হলে সকালে উঠতে দেরি হয়ে যাবে। তাই ঘুমিয়ে পরলাম। খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে বেলকুনিতে গেলাম। ভালো করে আলো ফোটেনি এখনো। চারিদিকে আবছা আবছা অন্ধকার। আমার রুমের বেলকুনি আর মেঘের রুমের বেলকুনি পাশাপাশি। মাত্র কয়েক ফুট দূরে। আমি বেলকুনিতে খুব একটা আসি না কিন্তু আগে সব সময় এই বেলকুনিতে দাড়িয়ে মেঘের সাথে কত শয়তানি করতাম। ও ওই বেলকুনি থেকে আর আমি এই বেলকুনি থেকে দুজন দুজনের হাত ধরার চেষ্টা করতাম। কিন্তু পারতাম না অল্প একটুর জন্য। আমিতো অনেকটাই ছোট ছিলাম তাই আমার হাতটাও ছোট ছিলো। ও এটা নিয়ে কত হাসাহাসি করতো। ইস কত মজারই না ছিলো দিন গুলো। ও বাইরে চলে যাওয়ার পরে বেলকুনিতে আসলে ওর কথা খুব মনে পড়তো তাই আর এখানে আসতাম না প্রয়োজন না পরলে। চারিপাশ একদম স্তব্ধ। কিছু পাখির মিষ্টি ডাক আর সাথে হালকা বাতাস। এই মুহূর্তটা অসম্ভ ভালো লাগছে। আমিতো অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠি তাই আগে কখনো এমন ভাবে পরিবেশটা উপভোগ করিনি। শুভকে খুব মিস করছি। যদি ওর কাধে মাথা রাখতে পারতাম তাহলে হয়তো এই মুহূর্তটাকে আরো অনেক বেশি ভালো লাগতো। আমার মতো সুখি মানুষ হয়তো আর কেউ হতো না। জানিনা কবে এমন দিন আসবে। কিন্তু আপাতত এক কাপ কফি হলে খুব ভালো হতো। কিন্তু এখন কফি কোথায় পাবো আমিতো বানাতে পারি না। আর মাকে এখন বলা ঠিক হবে না। তার থেকে হাওয়াটাই খাই। বাতাসে চুল গুলো বার বার উড়ে যাচ্ছে আর আমি সেটা আটকানোর বৃথা চেষ্টা করছি। কিছুতেই আটকাতে পারছি না। তবে বেশ ভালই লাগছে। আমি মুচকি মুচকি হাসছি। চুল গুলো আমার বাধা কিছুতেই মানছে না। এতক্ষণ আমি সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম মেঘের রুমের বেলকুনির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম মেঘ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ওর এইভাবে তাকিয়ে থাকাতে একটু অপ্রস্তত হয়ে গেলাম।
-চুলগুলো উড়াতে যদি এতই বিরক্তবোধ করে থাকেন তাহলে বেধে ফেললেই হয়। এমন ঢং করার কি আছে।
-কিহ্,,,?
-কিছু না। কফি খাবেন?
-কফি? মানে আপনি আপনাকে কফি অফার করছেন? আপনার কি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেছে?
-মানে?
-না। সকাল সকাল আমায় কফি অফার করছেনতো তাই বললাম।
-সকাল সকাল আপনার সাথে ঝগড়া করার মুড নেই। আমারই ভুল হয়েছে। খেতে হবে না।(বলেই চলে যাচ্ছিলো)
-আরে আরে আমি কখন বললাম খাবো না। নিজে খেতে বলে নিজেই বলছেন খেতে হবে না।
-তোমাদের মেয়েদের স্বভাবই এমন। ভালো ভাবে বললে শোনো না খারাপ ভাবে বললেই শোনো।
-আচ্ছা সরি। ভুল হয়ে গেছে।
-এখন সরি বলেও কোনো লাভ নেই। কফি তুমি আর পাচ্ছো না।(বলেই চলে গেলো)
যাহ বাবা। সত্যি সত্যি চলে গেলো। দোষটা আমারই আমাকেতো ভালো ভাবেই কফিটা অফার করেছিলো। আর আমি কি করলাম? ধুর। ওর মুড টা বেশ ভালো ছিলো। এটাই সুযোগ ছিলো ওর সাথে কথা বলার। একদিনেতো সব ঠিক করা যাবে না। আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে ফ্রি হতে হবে। আর আমি প্রথম সুযোগটাই এইভাবে হাত ছাড়া করলাম। পাখি নিজে এসেই ধরা দিচ্ছিলো। কিন্তু আমি সুয়োগটা নিজেই হাত ছাড়া করলাম। এখন নিজের গালে নিজেকেই চড় মারতে ইচ্ছা করছে।
-আপু তাড়াতাড়ি ওঠ মা ডাকছে।(নিশাত)
-আসছি।
তারপর বাইরে গেলাম। মা বললো
-খেয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। তোদেরতো আবার সাজতে সাজতে দিন শেষ হয়ে যাবে।(মা)
-মা আমার মোটেও এতো দেরি হয়না রেডি হতে। দেরিতো হয় নিশাতের।(আমি)
-আচ্ছা একটা জায়গায় বেড়াতে যাবো তো ভালো করে সেজে গুজে যাবো না। আর সাজতে গেলেতো দেরি হবেই।(নিশাত)
-এতো সেজে কি হবে হুম?(আমি)
-দেখ তোর বয়স হয়েছে তাই তোর এইসব ভালো লাগে না। কিন্তু আমার তো এখন সাজ গোজ করারই বয়স। তাই না?(নিশাত)
-আমার বয়স হয়েছে মানে কি?
-বয়স হয়েছে মানে বয়স হয়েছে। তোর চোখ মুখে বয়সের ছাপ পরে গেছে। মা তুমি তাড়াতাড়ি আপুর বিয়ে দিয়ে দাওতো না হলে পরে ছেলে পাবে না।
-মা তুমি ওকে চুপ করতে বলবে?(আমি)
-নাশু ওতো তোর সাথে ফাজলামি করছে। তুই এমন খেপছিস কেন। আর নিশাত বড় আপুর সাথে এমন ভাবে কথা বলতে নেই।
-সরি মা। কিন্তু সত্যিই তো বলেছি। তুমি আপুর জন্য পাত্র খোজা শুরু কর।(নিশাত)
-ওই তুই থামবি?(আমি)
-মা তুমি আমার কথাটা একটু ভালো করে ভেবে দেখো। আপুরতো বিয়ের বয়স হয়েছে। ওরতো এবার বিয়ে দেওয়া উচিত।(নিশাত)
-কথাটা তুই একেবারে খারাপ বলিস নি।(মায়ের কথা শুনে নিশাত মিটি মিটি করে হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে।)
-মা তুমিও ওর সাথে শুরু করলে। ভালো লাগে না।( বলেই না খেয়ে চলে আসলাম)
-আরে খাবারটা তো খেয়ে যা।(মা)
-আরে মা থাক না। আপু বেশি খেলে মোটা হয়ে যাবে তখন তো পাত্র খুজতে আরো প্রবলেম হবে।(বলে জোরে জোরে হাসছে)
শয়তান মেয়ে একটা সারাদিন আমার পিছে পরে থাকবে। আর মাও ওর সাথে মিলে আবল তাবল বলছে। এসব ভেবে মুড নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আমি বরং তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নি। কতদিন পর তন্নির সাথে দেখা হবে। আর ওর বিয়েতে খুব মজা করবো। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম। ব্যাগ রাতেই গোছানো ছিলো তাই খুব একটা সময় লাগেনি। আমি জানি নিশাতের আগেই আমার হয়ে গেছে। আমি ব্যাগ নিয়ে বাইরে এলাম এসে দেখি নিশাত আমার আগেই চলে এসেছে। মিষ্টি ক্লারের একটা থ্রি পিচ পরেছে। খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে আমার বোন টাকে। কিন্তু ওকে বলা যাবে না বললে ভাব বেড়ে যাবে। কিন্তু ও আমায় বললো
-আপু তোকে খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে। আর তখন ফাজলামি করার জন্য সরি।(আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো)
এইভাবে বললে কি আর রাগ করে থাকা যায়।
-তোকেও অনেক বেশি মিষ্টি দেখাচ্ছে।
-সে আমি জানি। আমি দেখতে অনেক কিউট।(বলে একটু ভাব নিয়ে চুল ঠিক করলো)
-ফাজিল একটা। চল।
-হি হি হি। চল।
আমরা সবাই গাড়ির কাছে এলাম। দুইটা কার যাবে। একটাতে কাকিমা, মা, আর ঝুমা যাবে আর একটাতে আমি নিশাত আর মেঘ যাবো একটাতে এটাই টিক হলো। কিন্তু নিশাত মায়ের সাথে যাবে। একটু লং জার্নি করলেই ও অসুস্ত হয়ে যায় তাই। কাকিমা মায়ের সাথে ছাড়া যাবে না। দুজনে গল্প করতে করতে যাবে। আর ঝুমা কাকিমাদের গাড়িতেই যাবে কাকিমার দরকার পরতে পারে তাই। তো আর কি আমার মেঘের সাথে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমাকে মেঘের সাথেই যেতে হবে একা। আল্লাহ তুমি রক্ষা করো। আমি যেন কোনো ভুল ভাল কাজ না করি আর ওর মাথাটা যেন সকালের মতোই ঠান্ডা থাকে।
চলবে,,,
#মেহজাবিন_নাশরাহ