#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—২২(সমাপ্তির সূচনা)
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
রাত দশটার দিকে….
আজ থেকে এক বছর আগে যেখানে আমার মায়ের খুন হয়েছিলো সেই স্থানে উপস্থিত হলাম। জানিনা এখানে কে ডেকেছে আমায়।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা করে যাচ্ছি…
একটু পরে দেখতে পাই আমার অদূরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।শীতের রাত।কুয়াশার চাদরে চারদিক ঘিরে আছে।তাই দূর থেকে তার ছায়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
সেই ব্যক্তি কোনোপ্রকার শব্দ উচ্চারণ করছে না,নিরবে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।তার এই আচরণ আরো বেশী অবাক করে দিচ্ছে আমায়।
—কে তুমি,কথা বলছো না কেন…??
এই বলে এগিয়ে যেতে শুরু করি তার দিকে, অমনি সে আমাকে আটকে দেয়।নিজের হাত দিয়ে আমাকে তার কাছে যেতে বারণ করে।
—ঠিক আছে,আমি আসছি না তোমার কাছে। কিন্তু তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছো সেটা তো বলো?
—মনে পড়ে এই জায়গার কথা,আজ থেকে এক বছরের কিছু দিন আগে কি হয়েছিলো এই জায়গায়?
(নারী কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম আমি।এতো শ্রেষ্ঠার কন্ঠস্বর,তবে শুধু শ্রেষ্ঠার নয়।কন্ঠস্বরটা অনেকটা প্রজ্ঞার মতোও বটে।বুঝতে পারছি না ঠিক কে কথা বলছে আমার সাথে।তবে ওদের দুজনের কন্ঠস্বর অনেকটাই এক রকম।তাই বোঝা যাচ্ছে না।)
—-হ্যাঁ,মনে আছে।আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে,এই জায়গায় আমার মাযের খুন হয়েছিলো।তাকে খুন করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে নিচে নদীর জলে ফেলে দেয়া হয়েছিলো।
—বাহহ….কিছুই ভুলো নি দেখছি।
—সেদিন যে খুন হয়েছিলো,সে আমার মা হয়।যার গর্ভ থেকে জন্ম হয়েছিলো আমার।তোমার কি মনে হয় কেউ নিজের মায়ের মৃত্যুর ঘটনা এতো সহজে ভুলে যেতে পারে?
—ঠিক বলেছো,জীবনে মানুষের সাথে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটে,যা চাইলেও সে ভুলতে পারে না।তার ভিতরে তোমার মায়ের মৃত্যুর ঘটনা অন্যতম।
—তুমি আমাকে এখানে কেন ডেকেছো বললে না কিন্তু….
—বলবো,আজকে সবকিছু বলার জন্যেই তো ডেকেছি তোমায়।
—-তো এতো সময় নিচ্ছো কেন,বলো কেন ডেকেছো আমায়?
—তোমার মায়ের সেদিন খুন কিভাবে হয়েছিলো, কেন হয়েছিলো আর কার হাতে হয়েছিলো।এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য মনটা বড্ড ছটফট করছে তোমার তাই না?
মেয়েটার কথাগুলো শুনে আবারো বিষ্ময় আর উত্তেজনায় ঘিরে ধরলো আমায়।মনে মনে যা ভেবেছিলাম,তাই হতে চলেছে!ওর সাথে আমার মায়ের মৃত্যুর সম্পর্ক আছে নিশ্চিত।কিন্তু মেয়েটার পরিচয় না জেনে আমি ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না।
—কে তুমি…তুমি এতোকিছু কিকরে জানো, আগে নিজের পরিচয় দাও।
—আমার পরিচয় জানাটা জরুরী নয়,তবে হ্যাঁ তোমাকে আমার পরিচয় নিশ্চয়ই দেবো।
—না,এখন বলতে হবে কে তুমি…তুমি আমার মায়ের মৃত্যুর রহস্য জানাতে এসেছো তাই না?তবে শুনে রাখো,আমি আগে তোমার আসল পরিচয় জানবো, তারপরেই তোমার সকল কথা শুনবো।তার আগে নয়।
—যদি এমনটা হয়,তবে শোনো আমিই সেই মানুষ যার হাতে তোমার মায়ের খুন হয়েছিলো!!
—তুমি কি মজা করছো আমার সাথে,এগুলো কি বলছো তুমি?
—হ্যাঁ,সত্যি বলছি।সেদিন আমার হাতেই তোমার মায়ের খুন হয়েছিলো।দীর্ঘ একটি বছর ধরে জীবনের এই চরম সত্যিটা বয়ে বেরাতে বেরাতে বড্ড ক্লান্ত আজ আমি।তাই তোমার কাছে ছুটে এসেছি আসল সত্যিটা তোমাকে জানাতে!এই বোঝা ক্রমাগত ভারী থেকে ভারীতর হয়ে উঠছে আমার কাছে, যা বহন করা অসম্ভব।
—আমার মায়ের খুন তোমার হাতে হয়েছিলো, দেখো আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না কিছুই।যদি তাই হয়ে থাকে…তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে,আর এতোদিন পরেই বা কেন এলে…
—-বলবো, আজকে সব বলবো তোমায়।আমিও চাই নিজের ভারাক্রান্ত মনকে হালকা করতে, নিজেকে অন্তর্দহন থেকে নিস্তার দিতে।তবে এই সমস্ত কিছু তখনই সম্ভব হবে যখন তুমি আমার দেয়া শর্তটা মানবে…
—শর্ত,কিসের শর্ত??(ফের বিষ্ময়ের সুরে)
—আগে কথা দাও তুমি আমার শর্ত পালন করবে।কোনো প্রশ্ন করবে না।আর আমি জানি সেটা সম্ভব তোমার কাছে।
—তুমি হয়তো এখনো বুঝতে পারছো না,মায়ের খুনের রহস্য জানার জন্য কতোটা মরিয়া হয়ে আছি আমি,দীর্ঘ এক বছর ধরে।বলো কি শর্ত তোমার, তোমার সকল শর্ত মানতে আমি রাজি…
—কথা দিয়েছো কিন্তু…
—হ্যাঁ, দিলাম। এবার বলো,
—এই পিস্তলটা টা নাও,
(এই বলে মেয়েটা আমার দিকে একটা পিস্তল ছুড়ে দিলো,আমি লুফে নিলাম)
—পিস্তল কেন,পিস্তল দিয়ে কি হবে?
—যখন আমার সমস্ত ঘটনা বলা শেষ হবে…তুমি যদি চিনতেও পারো আমায়,আমি তোমার যতোই কাছের লোক হই না কেন আমি আদেশ করা মাত্রই এই পিস্তলটা আমার মাথা বরাবর চালিয়ে দিতে হবে তোমায়।এমন ভাবে চালাবে যাতে টার্গেট মিস না হয়, কারণ তোমার টার্গেট মিস হলে আর মরতে পারবো না আমি…
মেয়েটার শর্ত শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।এটা কি বলছে,ও এমন একটা শর্ত দিবে আমায় ভাবতে পারি নি।
—তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে কি বলছো এসব,আমি তোমাকে খুন করতে যাবো কেন… যদি তুমি কোনো অন্যায় করেই থাকো, তবে আইন বিচার করবে তোমার।আমি নই।
—বিশ্বাস করো,যে অন্যায় করেছি আমি,কোনো আইন আমার জন্য পর্যাপ্ত নয়।সেদিন তোমার মাকে খুন করেছি আমি,আজ আমায় খুন করে তুমি তোমার মাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেবে।আমি জানি প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবী নও তুমি।কিন্তু নিজের জন্য না হোক,আমার জন্য এই কাজ করতে হবে তোমায়।আজকে তোমার হাতে মরতে পারলে সেটাই হবে আমার উপযুক্ত বিচার,তোমার হাতে মরে আজ চিরশান্তি লাভ করতে চাই আমি। নয়তো মরেও আমার আত্মা শান্তি পাবে না।
—তুমি যেগুলো বলছো কিছুতেই সম্ভব নয়। এভাবে হয় না,
—তাহলে নিজের মায়ের মৃত্যুর রহস্যের ব্যপারে ভুলে যাও।আমি কিছুই বলতে পারবো না তোমায়,
অগ্যতা মেয়েটার শর্তে রাজি হলো আমায়, আসল সত্যিটা এভাবে সামনে পেয়ে হাতছাড়া করতে চাই না আমি।সত্যিই তো,এই সত্যিটা জানতে পারলে আমার অভিশপ্ত জীবনে আর কিছুই অপ্রাপ্তি থাকবে না।যদি কাউকে খুন করার পরিবর্তে জীবনের শেষ উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারি,তবে সেটাই আমার সার্থকতা।
—ঠিক আছে, তোমার শর্তে রাজি আমি,এবার বলো।সেদিন কেন আমার মাকে খুন করেছিলে তুমি…?মায়ের সাথে কি এমন যোগাযোগ ছিলো তোমার,,
—শর্তের রাজি হবার জন্য ধন্যবাদ, শোনো তবে এবার….
সেই রাতে এই ব্রিজের নিচে একটা বড়ো বইমেলা হচ্ছিল।আমিও এসেছিলাম সেই মেলায়।কোনো কারণে আমার বেশ দেরী হয়ে যায়!তাই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে পারি নি।একপর্যায়ে বুঝতে পারি কেউ বা কারা পেছন থেকে ফলো করছে আমায়।ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির ভেতরে পরে গেলাম আমি।যদিও তখন আমি নিশ্চিত ছিলাম না পুরোপুরি এই বিষয়ে।
যখন বাসায় ফেরার জন্য নিজের মনস্থির করলাম,তখন আমার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হয়..দেখতে পাই চার পাঁচজন লোক পেছন থেকে আমার ওপরে নজর রাখছে।তখন মেলা শেষের পর্যায়ে।একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছিল।বেশীরভাগ মানুষ সেই অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত ছিলো।
যখন আমি মেলা থেকে বেরিয়ে আসতে যাবো ঠিক তখন আমায় কিছু বুঝে ওঠার সুযোগ না দিয়েই লোকগুলো ধাওয়া শুরু করলো,আমি আদৌ জানতাম না,তারা কারা,আর ঠিক কোন কারণে ধাওয়া করছে আমায়….এরপর….
…….
চলবে।