ওগো বধু সুন্দরী পর্ব-২০

0
1207

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—–২০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-আজ থেকে আটাশ বছর আগের কথা।তোমার মা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো।আর্থিক অবস্থার দিক দিয়ে তার পরিবার খুব একট স্বচ্ছল ছিলো না।তাই বাধ্য হয়ে এই পেশা বেছে নিয়েছিলো তোমার মা।অফিস থেকে ফিরতে তার অনেকদিন বেশ রাত হতো।কখনো নয়টা,কখনো দশটা।তো একদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে।সেদিন আবহাওয়াটা বেশ প্রতিকূলে ছিলো।ভারী বৃষ্টি, সাথে ঝড়ো বাতাস বয়ে চলেছে ক্রমাগত।এই সময়ে গাড়ি পাওয়া মুশকিল।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো তোমার মা,কিন্তু ভাগ্য তার সদয় হলো না।এরপর সে নিরুপায় হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হেঁটেই রওনা হয়।বেশ কিছু পথ অতিক্রম করার পরে তার মনে আশার আলো সঞ্চার করে একটা ট্যাক্সি এসে উপস্থিত হলো।তোমার মা দেখতে পায় ভেতরে দুইতিন ভদ্রমহিলা বোরখা পরে বসে আছে।পুরুষ বলতে ড্রাইভার একজনই।

বিষয়টা বেশ ইতিবাচক মনে হলো তার কাছে,তারপর সে ট্যাক্সিতে চেপে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে ছুটে চললো।কিন্তু দুর্ভাগ্য,তোমার মা নিজেও জানতো না সে সেদিন যেচে নিজের কতো বড়ো সর্বনাশ ডেকে এনেছিলো।তোমার মা একপর্যায়ে বুঝতে পারল বোরখা পরা মহিলারা বাস্তবে কতোগুলো পুরুষ।যারা একপ্রকার ছদ্মবেশ নিয়ে আছে।বাইরে ঝড়ো বৃষ্টি, তার ভেতরে নিজেকে এতোগুলো পুরুষের মাঝে একটা আটকা জায়গায় একলা দেখে ঘাবড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।সে চেষ্টা করে গাড়ি থেকে নেমে যাবার,কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেয়া হলো না।

একজন লোক তোমার মাকে টান দিয়ে নিজের ওপর ফেলে দিলো।

—কি অসভ্যতা হচ্ছে,ছাড়ুন বলছি আমায়, ড্রাইভার তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না এসব।গাড়ি থামাও বলছি, কথা না শুনলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো,

—চিৎকার করবি,তোর চিৎকার কে শুনবে এতো রাতে?

—নাহ!তোমরা এটা করতে পারো না আমার সাথে।আমি কোনোরকম একটা চাকরী করে
বাবার সংসার চলাই,ভদ্রঘরের মেয়ে আমি।দয়া করে আমার ইজ্জত নষ্ট করো না, তোমাদের পায়ে পড়ি।ছেড়ে দাও।

—আর কতোকাল বাবার সংসারে খাটবি, এবার না হয় আমাদের জন্য একটু খাট।নে খুশি কর আমাদের সবাইকে।

—নাহ,আমি এসব করতে পারবো না।মরে গেলেও পারবো না।

—তুই পারবি না,কিন্তু আমরা তো পারবো।চল,তোকে কিছু করতে হবে না।যা করার আমরাই করছি,

তোমার মা গুন্ডাগুলোদের নোংরা কথা সহ্য করতে না পারে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো একজনের গালে।এতে ওরা আরো বেশী ক্ষেপে যায় এবং হিংস্র হয়ে ওঠে।তারপর যা হবার তাই হয়েছে,
চলন্ত গাড়িতে বসে তোমার মা সেদিন কতোগুলো গুন্ডাদের হাতে ধর্ষণ হয়,গাড়ির ড্রাইভারও ওদের দলেরই ছিলো।তার হাত থেকেও ছাড় পায়নি তোমার মা।আর তুমি সেদিনের সেই গুন্ডাগুলোদের ভেতরেরই কারোর পাপের ফল,হয়তো সেই ড্রাইভারের, নয়তো তার যাকে চড় মেরিছিলো তোমার মা, নয়তো অন্য কারো।

কথাগুলো শুনছি আর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো আমার।যে ছেলেকে নিজের কানে তার মায়ের ধর্ষণ হবার গল্প শুনতে হয়, জানিনা কোন পাপ করেছিলাম যার জন্য সৃষ্টিকর্তা এতো বড়ো শাস্তি দিচ্ছেন আমায়।তবে যাই ঘটুক না কেন,আমার মৃত মায়ের ওপর থেকে এতোটুকু সম্মান বা শ্রদ্ধাবোধ কমে যায় নি আমার,বিপরীতে এখন আফসোস হচ্ছে আমার,তার এতো বড়ো ত্যাগের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পারি নি তাকে।তার আগেই মা ছেড়ে চলে গিয়েছেন আমায়।তথাকথিত আমার বাবা বলে ডাকা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলি :

—তুমি এতো সুন্দরভাবে আমার মায়ের সাথে ঘটা অন্যায়ের বর্ননা করলে আমার কাছে, আবার তাকে নষ্টা বলছো কোন মুখে।বিবেক বুদ্ধি কি সব বিসর্জন দিয়ে ফেলেছো?আর তুমি সবকিছু জেনেও কেন বিয়ে করতে গেলে আমার মাকে,যদিও তোমার চোখে এতোটাই খারাপ সে,

—নাহ!আমি তো প্রথমে কিছুই জানতাম না।হ্যাঁ,তবে আমার বুড়ো বাপ আর মা ঠিক জানতো।ওরা বাধ্য করলো আমায় বিয়েটা করতে।তখন তাদের কথা পালন করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না আমার কাছে,

—কেন উপায় ছিলো না,যখন আমার মাকে মন থেকে মেনে নিতেই পারো নি।পালিয়ে গেলে না কেন তুমি?

—পালিয়ে কোথায় যেতাম আমি, আমি পালিয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হতো আমায়।বাবার সম্পত্তির কানাকড়িও জুটতো না ভাগ্যে।তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছিলাম।আর ঠিক সেইদিন মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম তুমি জন্মানোর পরেই শেষ করে দেবো তোমায়।যাতে তোমার ঐ নোংরা,দূষিত মুখ রোজ দেখতে না হয় আমার।কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আমি বহুবার সুযোগ পেয়েও তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারি নি।বার বার আমার হাত ফসকে বেরিয়ে গেছো তুমি।

তোমায় মারতে না মারার যন্ত্রণা রোজ তাড়িয়ে বেরাতো আমায়,রাতে ঘুমাতে পারতাম না কখন তোমার লাশটা নিজের চোখের সামনে দেখবো আমি।

—আমার মাকেও তুমি মেরেছো তাই না, আমি এবার বুঝতে পেরেছি আমার মায়ের মৃত্যুর পেছনে নিশ্চয়ই তোমার হাত আছে?

—-নাহ!আমি কাউকে কিছু করি নি,

—মিথ্যে বলছো তুমি,তুমি আমাকে মারতে পারো,যেটা নিজের মুখে স্বীকার করেছো তুমি।আমার মাকে তুমিই মেরেছো।তোমার মতো জানোয়ারের পক্ষে সব সম্ভব,পৃথিবীর সবথেকে জঘন্য কাজটাও তোমার পক্ষে করা সম্ভব,

—বললাম না,আমি কিছু জানি না।তোমার মাকে মারি নি আমি,এমনিতেই তোমায় একটু পরেই মেরে ফেলবো আমি,আমার বন্দুকের গুলি তোমার বুক ঝাঝড়া করে দেবে,তোমায় মিথ্যে বলবো আমি কিসের ভয়ে? তাছাড়া এতো কেন জানতে চাইছো তুমি,তুমি জিজ্ঞেস করলেই আমি সব তো গড়গড় করে বলে দেবো না তোমায়,

আমি মনে মনে ভাবছি,সত্যিই তো।যে আমাকে একটু পরেই পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।যে নিজের সমস্ত কৃতকর্মের কথা স্বীকার করলো নিজের মুখে,মাকে খুন করলে সেটা বলতে সমস্যা কোথায়।তবে কি মায়ের খুন অন্য কারোর হাতে হয়েছে।যদিও আমার সেদিন একটি মেয়ের সাথে ধস্তাধস্তি হয়েছিলো আমার, কিন্তু তাকে তো আর আমি সরাসরি মাকে খুন করতে দেখি নি। সে আমার মায়ের খুনি এটা ধারণা মাত্র আমার।তবে কি এটা হতে পারে, মায়ের খুন নকল শ্রেষ্ঠার কাজ,যার কানের দুল পেয়েছিলাম আমি।কিন্তু ও আমার মাকে কেন মারতে যাবে শুধু নকল শ্রেষ্ঠা নয়,মাকে যদি এই লোকটা খুন না করে অন্য কেউ খুন করে থাকে তবে তার কারণটা কি,আমার মায়ের সাথে কি যোগাযোগ তার !!

—কি এতো ভাবছে,এখন আর এতো ভেবে কি হবে।আমার হাতটা যে বড্ড নিশপিশ করছে,সে চাইছে কখন আমি পিস্তলটা তুলে তোমার মাথা বরাবর শেষ গুলিটা চালিয়ে দেই…আজ যখন সব জেনেই গেছো তুমি,আর কিছুতেই বাঁচিয়ে রাখা যাবে না তোমায়।

—তুমি আমায় অনেক আগেই মেরে দিয়েছো, তোমার এই গুলি আর কি মারবে আমায়।মরতে ভয় পাই না আমি।তবে একটাই আফসোস রয়ে গেলো, মায়ের খুনি কে জেনে যেতে পারলাম না।

—জানো তো,এক জীবনে সব ইচ্ছে পূরণ হয় না মানুষের।শুভকাজে আর দেরী করতে চাই না, গুড বাই মাই সন….

এই বলে সে আমার মাথা বরাবর পিস্তলটা তাক করলো আমার,নিজের মৃত্যুকে যেন সাক্ষাৎ থেকে দর্শন করছি আমি।চোখ বন্ধ করে, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ আমি ভালো করেই জানি, আজ এই নরপশুর থেকে রক্ষা নেই আজ আমার।

হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার তথাকথিত বাবা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।আমি লক্ষ্য করলাম তার বাহুতে একটা ছুড়ি বিঁধে আছে।স্টোর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শ্রেষ্ঠা আর নকল শ্রেষ্ঠার মা…সাথে নকল শ্রেষ্ঠাও আছে…তবে ছুড়িটা কার হাত থেকে ছুটে এসেছে বুঝতে পারছি না আমি…

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে