ওগো বধু সুন্দরী পর্ব-০৬

0
1350

#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

যা অনুমান করেছিলাম তাই,রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মেয়েটা।নিজের সামনে যেন শ্রেষ্ঠাকেই দেখেছি আমি।মেয়েটা নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতে চাইছে,কিন্তু আমার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করা যে এতো সহজ নয় তার জন্য।

—কোথায় পালাচ্ছো,তোমার সব খেলা শেষ।ধরে ফেলেছি তোমায় আমি…..
(তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম আমি)

—ছাড়ুন,আমায় ছাড়ুন বলছি!ভালো হচ্ছে না একদম,

—ভালো হচ্ছে না মানে,রাতের বেলা একটা অপরিচিত মানুষের কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে যাওয়াটা কি খুব কাজ মনে হয় তোমার কাছে?

–আমায় ছেড়ে দিন,দয়া করে ছাড়ুন আমায়।

—না ছাড়বো না,আজ তো কিছুতেই ছাড়ছি না তোমায়।সেদিন তো পালিয়ে বেঁচেছিলে,আজ কে বাঁচাবে তোমায়?

—আপনার কোনো ধারনাও নেই নেই আমার সম্পর্কে,জানেন কি করতে পারি আমি!
(মেয়েটার কথা শুনে আমি আরো বেশী অবাক হয়ে যাচ্ছি)

—কে তুমি,কেন আমার সাথে লুকোচুরি খেলা খেলছো,কি চাও তুমি…??

—-জানতে চান,কি চাই আমি….??

—হ্যাঁ, জানতে চাই, আর জানতে চাই বলেই তো ছুটে ছুটে এলাম আমি!

—ঠিক আছে, আমি বলবো, তার আগে হাতটা ছাড়ুন,

—আর তুমি ছুটে পালাও তাই না??তোমার বুদ্ধির জবাব নেই সত্যি,

—না আমি পালাবো না,যদি জানার এতই ইচ্ছা থাকে একবার হাতটা ছেড়ে দেখুন,

—একদম চালাকি করার চেষ্টা করো না,

—না,করবো না চালাকি,

অগত্যা মেয়েটার হাতটা ছেড়ে দিলাম আমি, এমনিতেই আমার আওতার ভেতরে আছে সে,তাই পালাতে চাইলেও এতো সহজে পালাতে পারবে না সে।মেয়েটা তার বুকের ভেতরে হাতটা ঢুকিয়ে দিলো,কিছু একটা বের করতে চাইছে মনে হচ্ছে!

—এই,তুমি এটা কি করছো,কি বের করছো এটা?

—ভয় পাবেন না,প্রমান বের করছি,আপনি জানতে চেয়েছিলেন না আমি কে!

এই বলে মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে ওর বুকের ভেতর থেকে একটা পিস্তল বের করে।আমি যেন পুরো বোকা বনে গেলাম তার সামনে!

—না,তুমি এটা করতে পারো না।এভাবে ধোকা দিলে আমায় তুমি….ছিহ!আমি বিশ্বাস করে ছিলাম তোমায়,

—চুপ থাকো,একদম চুপ থাকো,তোমার মুখে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের কথা মানায় না।আর ভেবোনা আমি ছেড়ে দেবো তোমায়,এক এক করে সবকিছুর শোধ তুলবো,

মেয়েটা কি বলছে এসব,আমার ওপর এতো কি রাগ ওর।আর কিসের শোধ তোলার কথা বলছে ও।আমার মাথায় ঢুকছে না কিছুই।

—তুমি কি বলছো এসব, যা বলছো ভেবে বলছো তো?আমি তোমায় চিনি না,জানি না কিসের শোধ তুলতে চাইছো আমার ওপরে তুমি?নাকি তুমি আমার পরিচিত কেউ,আচ্ছা তুমি শ্রেষ্ঠা নও তো?

প্রশ্নগুলো শেষ করতে না করতেই আমাদের পাশ দিয়ে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা আমার দিকে পিস্তলটা তাক করে রেখে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।ভারী সোয়ানা মেয়ে সে…আমি তার পিছু করেছি এটা খেয়াল করে পালানোর বন্দোবস্ত ভালো ভাবেই করে ফেলেছিলো।

এভাবে আমাকে মৃত্যুর সামনে দাঁড় করিয়ে একপর্যায়ে পালিয়ে যায় মেয়েটা।আমার হা করে তাকিয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।তবে যাই হোক না কেন,এই মেয়েটা কিছুতেই শ্রেষ্ঠা হতে পারে না,এটা আমি নিশ্চিত।শ্রেষ্ঠা এতোটা ধুরন্ধর প্রকৃতির কখনোই নয়,তাছাড়া চেহারায় মিল থাকলেও দুজনের আচার ব্যবহার আকাশ পাতাল ব্যবধান।
পরক্ষণেই বাবার কথা মাথায় আসে আমার,, আমি তো ছোটবেলা থেকেই তাকে একজন ফেরেশতার চোখে দেখে এসেছি,সেই মানুষটা যদি আমার সাথে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারে,তার ভেতরে যদি এমন একটা পশুসত্ত্বা লুকিয়ে থাকতে পারে তবে শ্রেষ্ঠার ভেতরে কেন নয়।আমি জানি না,এই মেয়েটা শ্রেষ্ঠা নাকি অন্য কেউ,তবে সে যেই হোক না কেন বাবার সাথে তার নিশ্চয়ই কোনো যোগাযোগ আছে এটা অনেকটা নিশ্চিত আমি।বাবা মারতে চায় আমায়, আর সেও ক্ষতি করতে চাইছে আমার,আবার আজকে রাতেই আমার হাসপাতালে থাকার বিষয়ে জেনে এই পর্যন্ত চলে এলো সে,কেউ সাহায্য না করলে এগুলো একার পক্ষে সম্ভব নয় কিছুতেই।তাই সবার আগে আমাকে এটা জানতে হবে,বাবার সাথে এই মেয়েটার কোনো যোগাযোগ আছে কিনা,আর সেই যোগাযোগ কিসের ওপর ভিত্তি করে?এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলে আমার রহস্য উন্মোচনের পথটা আরো সহজ হয়ে যাবে।

এতোক্ষণ ছুটতে ছুটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আবারো হাসপাতালের দিকে পা বাড়ালাম।মাথায় আবারো পেইন হচ্ছে!আর সেটা হওয়াই স্বাভাবিক,এতোক্ষন যা স্ট্রেচ গিয়েছে….
নিজের কেবিনে গিয়ে শুয়ে পড়ি,আর তারপর সকাল হবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।




সকালবেলা শ্রেষ্ঠা,মিছিল আর বাবা সবাই এলো হাসপাতালে।আমাকে রিলিজ করা হবে আজকে।আমায় সুস্থ হয়ে উঠতে দেখে সবাই বেশ আনন্দিত,বাবাও আনন্দিত।তবে আমি ভালো করেই জানি তার এই আনন্দের পেছনে লুকিয়ে আছে একরাশ ব্যর্থতার হতাশা।সুযোগ পেয়েও নিজের সন্তানকে খুন করতে না পারার হতাশা।হয়তো আবারো সুযোগ খুঁজছে সে, নিজের অসামাপ্ত কাজকে কিভাবে সমাপ্ত করা যায়।

—-ভাইয়া,আজ তোমায় রিলিজ করা হবে তাই না?(মিছিল বেশ উৎসুক স্বরে আমায় প্রশ্ন করে)

—হ্যাঁ,রে।

—তার মানে, আজকেই বাসায় যাচ্ছো তুমি…??

—হুম,,

মিছিলকে দেখে একটা বুদ্ধি আসলো আমার মাথায়।কেবিনে আমার সাথে মিছিল একাই এখন,বাবা আর শ্রেষ্ঠা বাইরে ফর্মালিটিজ সারতে ব্যস্ত।আমি মিছিলকে আমার কাছে ডাকি।

—শোন, ভাই। একটু আমার কাছে আয়।আমার পাশে বস।

মিছিল আমার কথামতো আমার পাশে বসলো।আমি জড়িয়ে ধরলাম ওকে।তারপর আরো অধিক ঘনিষ্ঠ হলাম ওর।

—দেখ তোকে একটা প্রশ্ন করি,কাউকে আবার বলবি না কিন্তু।

—কি প্রশ্ন ভাইয়া?

—কাল রাতে কার সাথে ঘুমিয়েছিলি তুই…??তোর ভাবির সাথে, নাকি বাবার সাথে,নাকি একাই।

—বাবার সাথে ঘুমিয়েছে,কিন্তু তুমি জানো ভাইয়া….

—কিন্তু কি বল (উৎসুক স্বরে)

—আমার খুব ভয় করছিলো রাতে!

—ভয় করছিলো,কিন্তু কেন?বাবা তো ছিলো তোর সাথে?

—না ছিলো না!

—ছিলো না মানে,কি বলছিস তুই?

(এতো কেঁচো খুঁড়তে যেন সাপ বেড়িয়ে আসছে ধীরে ধীরে!)

—তুমি তো জানো মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙে যায় আমার,কাল রাতে ঘুম ভেঙে যেতে দেখি বাবা নেই পাশে,,তখন খুব ভয় করছিলো আমার।

—বাবা কোথায় ছিলো,তুই জানিস কিছু?

—না,তাতো জানি না।তবে সে আবার ভোররাতের দিকে ফিরেও আসে।

—তুই কি তাহলে এতো সময়ে জেগে ছিলিস?

—না, তবে বাবা রুমে আসাতে টের পাই আমি।

—আচ্ছা,আর কি কিছু লক্ষ্য করেছিস।

—নাতো,আর কি…….

—ওহহ!

—এই শোন আমার আর একটা কাজ করে দিবি,তার বদলে যা চাইবি তাই দেবো।

–কি কাজ ভাইয়া??

—বাবার ফোনটা ম্যানেজ করে দে আমায় একটু,আর শোন ভুলেও যাতে বুঝতে না পারে আমি চেয়েছি ফোনটা।তুই গেম খেলার কথা বলে নিয়ে আয়।

—এটা কোনো কাজ হলো,আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।

মিছিল রেরিয়ে গেলো,আমার ছোট ভাইটা সত্যিই খুব কাজের।ওর থেকে এতো কিছু জানতে পারলাম,এখন বাবার ফোনটা হাতে পেলে হয়তো কোনো না কোনো ক্লু পেলেও পেয়ে যেতে পারি।তাছাড়া একবার ট্রাই করে তো দেখাই উচিত।কারণ বর্তমানে ফোনটাই একমাত্র মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম।অপরাধীর ফোন ঘাটলে অনেক সময় অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়।

একটু পরে মিছিল ফোন নিয়ে এলো,আমি ওকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে ভালো করে ফোনটা ঘাটতে লাগলাম……
বাবার সাথে নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ফাইল সেভ ওপেন করে ফেললাম।ভেতরে অনেকগুলো ফোল্ডার দেখা যাচ্ছে।হন্নে হয়ে সবকিছু খুঁজতে লাগলাম,কারণ আমি ভালো করেই জানি কিছু থাকার হলে এখানেই আছে।
খুঁজতে খুঁজতে একটা ছবির দিকে চোখ আঁটকে গেলো আমার,,,
বাবার ফোনে শ্রেষ্ঠার একটা ছবি,তবে ছবিটা ঠিক শ্রেষ্ঠার নয়।মেয়েটার বেশভূষা সম্পূর্ণ সেই মেয়েটার মতো!!যার সাথে গতকাল রাতে দেখা হয়েছিলো আমার।তার মানে আমি যা অনুমান করেছিলাম তাই, বাবার যোগাযোগ আছে ওর সাথে…..!!!!

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে