#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
শ্রেষ্ঠাকে এই সময়ে বাড়িতে তার ওপর এই বেশে দেখে যেন মাথায় বজ্রপাত হলো আমার।মনে হচ্ছে,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখছি আমি….!!!
এটা যদি শ্রেষ্ঠা হয়ে থাকে,তাহলে রাস্তায় কাকে দেখলাম আমি…??
—একি…. তুমি এখানে….??তুমি কি করছো এখন এখানে??(আমি ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করি শ্রেষ্ঠাকে)
—আমি এখানে মানে..আপনি কি বলছেন এসব,আমি আমার বাড়িতে থাকবো না কোথায় থাকবো!
—নাহ!এ সম্ভব নয়,কিছুতেই সম্ভব নয় এটা?
—কি সম্ভব নয়,দেখুন আপনি কি বলছেন কিছুই বুঝতে পারছি না আমি!
—তার মানে,তুমি কোথাও যাওনি!
—নাহ!
—কিন্তু আমি যে তোমায় এইমাত্র……
বলেই থেমে গেলাম আমি।নাহ!থাক আর কিছু বলা যাবে না এই মূহুর্তে।শ্রেষ্ঠা নিজেও অবাক হয়ে যাচ্ছে আমাকে বিচলিত অবস্থায় দেখে।
—আচ্ছা,আপনার কি কিছু হয়েছে,এমন করছেন কেন?
—নাহ!আমি ঠিক আছি। আমার কথা ছাড়ো।কিন্তু তুমি এভাবে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো?
—আর কোথায় যাবো,আজ রাতে ভাবলাম আপনার সাথে একটু বেরোবে,কিন্তু এখন আপনাকে যেরকম দেখছি…. না থাক আরেকদিন যাবো।
শ্রেষ্ঠার সাথে বাসার ভেতরে ঢুকলাম আমি।ওর সমস্ত ব্যবহার,আচরণ রীতিমত অবাক করে দিচ্ছে আমায়।রাস্তায় যে মেয়েটার সাথে দেখা হলো তার কথা মাথা থেকে সরাতে পারছি না কিছুতেই।মেয়েটা এভাবে আমার সামনে কেন এসে পড়লো,কি উদ্দেশ্য ছিলো ওর।কিছুই জানি না আমি,শুধু এইটুকু জানি আমার রহস্যের জট খুলতে তাকে ভীষণ দরকার আমার।
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বসে কথাগুলো ভাবছিলাম।হঠাৎ একটা চায়ের কাপ এগিয়ে আসলো আমার দিকে।আমি এলাচ দেয়া চা পছন্দের করি,শ্রেষ্ঠা তাই এলাচ চা তৈরী করে এনেছে আমার জন্য।ও আবার দুধ চা ছাড়া কোনো চা খায় না।আমার সামনে অন্য একটা সোফায় বসে চায়ের কাপটা মুখে নিলো শ্রেষ্ঠা।
ঠিক তখন আমি একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেই ওর দিকে
—–আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে শ্রেষ্ঠা?
—হ্যাঁ,বলুন।
—তুমি কিছু মনে করবে না তো?
—না,মনে করবো না?(চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে)
—আচ্ছা,তোমার কানের ওপরে ঐ কাটার দাগটা কিসের?
আমার কথাটা শোনামাত্রই যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো শ্রেষ্ঠা।চা আটকে যায় ওর গলায়।কেশে পুরো একাকার করে ফেলছে।আমি চায়ের কাপটা রেখে ছুটে ওর কাছে গেলাম।
—একি,কি হলো তোমার??
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি শ্রেষ্ঠা আমার করা প্রশ্নে ভয় পেয়ে গিয়েছে,কোনোভাবে সেটা এড়িয়ে যেতে চাইছে ও!
এক গ্লাস জল দিয়ে ওর কাশিটা থামালাম,এখন অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে।কিন্তু আমিও ছেড়ে দেবার পাত্র নই।ওর সামনে আবারো সেই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করি।
—কি হলো, বললে না তো দাগটা কিকরে এলো!?
—আমি জানি না,কিছু জানি না আমি।
—জানো না,জানো না মানে কি??
—না,মানে মনে নেই আমার!(দায়সারা উত্তর)
—কি বলো,তুমি এতো বড়ো একটা আঘাত পেলে,আর সেটা তোমার কিনা মনে নেই,অদ্ভুদ!
—বললাম না মনে নেই, তারপরেও কেন একই প্রশ্ন করছেন!(বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো শ্রেষ্ঠা।)
তারপর উঠে উপরে রুমের দিকে চলে যায়,আমি ওর চলে যাবার দিকে তাকিয়ে আছি।কি আশ্চর্য!একটা সামান্য প্রশ্ন করাতে এইভাবে রিয়্যাক্ট কেন করলো জানি না।ও নিশ্চয়ই কিছু একটা লুকোচ্ছে আমার থেকে।যা আমি জানি না!
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো!ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসি আমি।স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখি বাবার ফোন কল।
—-হ্যালো,কেমন আছো বাবা?
—আমি তো ভালোই আছি,তোরা কেমন আছিস বল?
—হ্যাঁ,আমরা সবাই ভালো আছি।আচ্ছা মিছিল কেমন আছে?(আমার ছোট ভাইয়ের নাম মিছিল)
—ও ভালো আছে,শোন একটা কথা।
—হ্যাঁ,বলো।
—আমরা কাল শহরে আসছি।আমার সাথে মিছিলও আসবে।তোদের কোনো সমস্যা হবে না তো?
—সমস্যা হবে মানে…যে কি বলো না।তুমি যখন খুশি, যাকে খুশি নিয়ে এসো আমার বাসায়।
—আচ্ছা, ঠিক আছে। আর তুই কিছু মনে করিস না।ওটা তো এমনি মজা করে বললাম।
–হুমম, তোমরা যতোদ্রুত সম্ভব চলে আসো!তোমাদের পেলে শ্রেষ্ঠাও খুশি হবে।
বাবার সাথে কথা বলে বেশ ভালোই লাগলো।বাবা আর ভাই আসছে অনেকদিন পরে।অবশ্য বিয়েটা আমাদের গ্রামের বাড়িতে বসেই হয়েছিলো।আমাদের বাসায় এই প্রথম আসছে ওরা।এটা ভেবে বেশী খুশি লাগছে।
কিন্তু সমস্ত ভালোলাগার ভেতরেও যখন শ্রেষ্ঠা আর রাস্তায় দেখা হওয়া সেই মহিলার কথা মনে পড়ে সকল আনন্দ,ভালোলাগা নিমেষে বিষাদ আর দুশ্চিন্তায় পরিণত হয়।আমি নিজেও জানি না এই ভয়ংকর দুশ্চিন্তা থেকে কবে বের হতে পারবো।তবে যতোদ্রুত সম্ভব আমাকে এই দুশ্চিন্তা থেকে বের হতেই হবে।কোনো মানুষের পক্ষে এতো টেনশন বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়, বিশেষ করে আমার পক্ষে।
–
–
–
–
–
পরের দিন বিকেল বেলায় বাসায় বাবা আর ছোট ভাই চলে আসে।ওরা আসাতে শ্রেষ্ঠাও বেশ আনন্দিত।আমারো ওদের পেয়ে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তার রাশটা লাঘব হলো।অবশ্য আমি বাবার সাথে শ্রেষ্ঠা আর সেই মহিলার বিষয়ে আলোচনা করি,বাবা শুনে আমায় ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিলেন।তবে উনি নিজেও খানিটা চিন্তিত হয়ে পড়েন এই নিয়ে।
–
–
–
এরপর যখন সন্ধ্যা প্রায় সাতটা।ছাদে একা একা পায়চারি করছি আমি।একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো আমার কাছে।আমি রিসিভ করতেই একটা মহিলা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো ওপাশ থেকে।
—আপনি মিস্টার সৌহার্দ্য জামান?
—হ্যাঁ, আমি সৌহার্দ্য!বলুন,,
—আপনার জন্য একটা খাস খবর আছে।
—খবর,কিসের খবর।আর আপনি কে?
—আমার পরিচয় পরে দিচ্ছি।আগে একটা লোকেশন দিচ্ছি ওখানে চলে আসুন।
—-লোকেশন,কিসের লোকেশন?
—আজ থেকে এক বছর আগে আপনার মা মারা গিয়েছিলো না,মানে আপনারা যতোদূর জানেন।
—হ্যাঁ,খুনি মাকে মেরে লাশটা নদীতে ফেলে দেয়া দিয়েছিলো।তারপর একপর্যায়ে পুলিশ তাকে আর খুঁজে না পেয়ে মৃত ঘোষণা করে দেন।কিন্তু কি হয়েছে, বলুন তো?
—ঠিক, আপনার মাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিলো,কিন্তু উনি সেদিন মারা যান নি।উনি এখনো বেঁচে আছেন?
—হোয়াট, কি বলছেন আপনি এটা??
(লোকটার কথা কিছুতেই নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না আমি!)
—দেখুন,দীর্ঘ এক বছর পরে কোমা থেকে ফিরলেন উনি!তারপর ওনার মুখ থেকে আপনাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেলাম।আর হ্যাঁ, উনি এটাও জানেন,কে তাকে খুন করার চেষ্টা করেছিলাম এবং কেন?সবটা মনে করতে পেরেছেন উনি।
মহিলার কথা শুনে যেন,হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো আমার।যেন একটা প্রচন্ড ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো শরীরটা!মা কি সত্যিই বেঁচে আছে,আর সেটা কিনা এতোগুলো দিন পরে জানতে পারছি আমি..,,নাকি আমাকে ফাঁদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে কেউ??এই মূহুর্তে কি করা উচিত আমার?
চলবে,,,