#সূচনা_পর্ব
#ঐশ্বর্যের_উপাখ্যান
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
নিজের ছোট বোনের বয়ফ্রেন্ডকে টাংকি মারছিস, লজ্জা করছে না তোর?’
‘তুরের প্রশ্নে দমলো না ঐশ্বর্য। বরং দাঁত বের করে হেসে বলল, ‘বয়ফ্রেন্ড তখন হয় যখন দুজন দুজনের সাথে একটা সম্পর্কে যায়। সে দিক থেকে তুই একা একা নিজেকে অনল শিকদারের গফ ভাবলে তো আর সত্যিই গফ হয়ে গেলিনা তাই না?
তুর কিঞ্চিৎ মন খারাপ করে বলল, ‘সে যাই হোক আমি তাকে তোর আগে থেকে পছন্দ করি। সেটা জেনেও তুই তাকে কিভাবে পটাতে চাইছিস ঐশ্বর্য?’
ঐশ্বর্য তুরের কথার জবাব দিলো না। তারা দুজন দাড়িয়ে আছে একটি বিশাল সমাবেশের পিছনে। এই বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে একজন তরুণ নেতার জন্য। যার নাম ‘অনল শিকদার। তরুণ এই ছাত্রনেতা সদ্য এমবি হয়েছেন। অনল শিকদার একত্রিশ বছরের একজন যুবক। ফর্সা চেহারাতে সবসময়ই একটা ঝলক খেলে যায়।
ঐশ্বর্য ও তুর নিজেদের ঝগড়া বাদ দিয়ে সমাবেশের দিকে এগিয়ে আসলো। তখনই গেইট দিয়ে ঢুকলো একে একে দু’টো টয়েটো কার। গাড়ি গুলো থামতেই তা থেকে বেরিয়ে আসলেন তরুণ নেতা অনল শিকদার। যারা সমাবেশের আয়োজন করেছিল তারা হাত তালি দিয়ে ফুলের মালা পড়িয়ে স্বাগতম জানালো।
ভীড়ের মধ্যে থেকে এক পলক অনলকে দেখার জন্য উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে ঐশ্বর্য ও তুর। শুধু তারা নয় আরও অনেক মেয়ে রয়েছে যারা তাদের ক্রাশকে দেখতে এসেছে। তারমধ্যে থেকে সম্ভবত ক্লাস নাইনে পড়ে এমন একটি কিশোরী চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘আই লাভ ইউ অনল। উইল ইউ লাভ মি?’
তুর হতভম্ব হয়ে তাকালো। চারিদিকে মানুষের সমাগম। কিশোরী মেয়ের চিৎকার তেমন কানে পৌঁছালো না কারো। আর পৌঁছালেও পাত্তা না দিয়ে সবাই হাসবে। কিশোরীটি পাত্তা না পেয়ে মুখ কাঁদো কাঁদো করে দাড়িয়ে রইলো। ঐশ্বর্য জনদরদী! সেই দরদের খাতিরে সে মেয়েটির কাঁধে হাত রাখলো।
‘তোমার নাম কি?’
কিশোরীটি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রেখে বলল, ‘সুভা।’
ঐশ্বর্য অবাক হওয়ার বান করে বলল, ‘সুভা!, তুমি জানো সুভা কে?’
সুভা নামক কিশোরীটি মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। ঐশ্বর্য হেঁসে বলল, ‘হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস পড়া হয়?’
‘না।’
‘আজ গিয়ে পড়বে। হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষা উপন্যাস কিনে নিয়ে যাবে। তারপর সেটা পড়ে তোমার অনুভূতি জানাবে কেমন?’
সুভা থমথমে গলায় বলল, ‘কিন্তু আপু সেটা পড়ে আমার লাভ কি?’
ঐশ্বর্য চমৎকার করে হেসে বলল, ‘অনল শিকদারের প্রিয় লেখক হলেন হুমায়ূন আহমেদ। আর অপেক্ষা উপন্যাসটিতে ‘সুভা’ নামক চরিত্র আছে।’
সুভা নামক কিশোরীটির চোখমুখ এবার উজ্জ্বল হলো।
*
মঞ্চে উঠেছে অনল শিকদার। চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেছে সবার। মাইক প্রস্তুত করা হলো। অনল শিকদার এবার তার মহামূল্যবান ভাষণ দিবেন জনতার উদ্দেশ্যে।
‘উইল ইউ ম্যারি মি? আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন নেতা সাহেব?’
পুরো মাঠ নিস্তব্ধতা ধারণ করেছে৷ এতোক্ষণের হৈচৈ থেমে গেছে। মিডিয়া ঐশ্বর্যের দিকে ক্যামেরা ঘুরিয়ে রেখেছে। ঐশ্বর্যের হাতে একটি মিনি মাইক। যা দিয়ে সে একের পর এক প্রস্তাব দিয়ে চলেছে অনল শিকদারের উদ্দেশ্যে।
ঐশ্বর্য পুনরায় বলল, ‘আপনি কি আমার পূর্ণতা হবেন নেতা সাহেব?’
অনল থমথমে ভাব নিয়ে নিজের পিএ সোহানের দিকে তাকালো। সোহান মুখ কাচুমাচু করে বলল, ‘আমি কিছু জানিনা স্যার!
অনল কিছু বলার আগে শুনা গেলো সেই একই কন্ঠে বলা প্রস্তাব, ‘আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি নেতা সাহেব?’
অনল শিকদার ফেঁসে গেলো৷ চরিত্রে আজ পর্যন্ত কেউ দাগ লাগাতে পারেনি। প্রথম কোনো মেয়ে দাগ লাগানোর পথে রয়েছে। অনল লম্বা শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করতে চেষ্টা করলো৷ এরকম অনেক মেয়ে তাকে পছন্দ করে। কিন্তু কেউ কখনো এই মেয়েটার মতো পদক্ষেপ নেয়নি৷ মাইক হাতে নিয়ে অনল ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘নাম কি মেয়ে?’
‘ঐশ্বর্য ইরফান।’
‘আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত, আপনার প্রস্তাব আমার পক্ষে রাখা সম্ভব নয়।’
চারিদিকে হৈচৈ পড়লো আবারও। ঐশ্বর্য মন খারাপ করে বলল,’কেন সম্ভব নয়?’
অনল থমথমে গলায় বলল, ‘আ’ম অলরেডি এনগেজড!
সবাই অবাক হলো। অনল শিকদারের মতো নেতা এনগেজড অথচ কেউ জানতো না। ঐশ্বর্য আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। দৌড়ে বের হয়ে গেলো ভরা মাঠের চত্বর থেকে। পিছে পিছে তুর দৌড় দিলো।
একের পর এক ফোন আসছে ঐশ্বর্য ও তুরের মোবাইলে। দৌড়ানোর এক ফাঁকে তুর ফোন রিসিভ করলো। কল দিয়েছে তার বড়ো বাবা রুদ্র ইরফান।’
তুর সালাম দিলো। রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘তাকে যেভাবে পারো ধরে নিয়ে এসো!’
ফোন ডিসকানেক্ট হতেই তুর ঐশ্বর্যকে খুঁজতে লাগলো। এতো তাড়াতাড়ি কোন জঙ্গলে গিয়ে লুকালো কে জানে!
এদিকে অনল শিকদারের মোবাইলে একের পর এক কল এসে চলেছে। বাধ্য হয়ে সে মাইক হাতে নিয়ে বলল, ‘আ’ম স্যরি অল। আমি এনগেজড নই। মেয়েটা যাতে কখনো আমার সম্পর্কে আর না ভাবে সেজন্য মিথ্যা বলেছি।’
ব্যস বন্ধ হয়ে গেলো সব ফোনকল। নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লো সব। নেতা অনল শিকদারের জন্য পাগল ঐশ্বর্য ও বাদ পড়লো না। অনেকে ছিঃ ছিঃ করছে। অনেকে সাহসের প্রশংসা করছে। কিন্তু তার দার ধারে না ঐশ্বর্য। সে নিজের মতো চলতে ব্যস্ত। বাসায় ফিরবে সন্ধ্যার পর। সে জানে আজ তার কপালে শনি আছে। মা তাকে আজ কি করবেন কেউ বলতে পারছে না। বাবা একটা ধমক দিয়ে আর কিছু বলবে না।
সন্ধ্যা তখন ছ’টা। তুরকে মেসেজে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলো ঐশ্বর্য। তুর তৎক্ষনাৎ এসে উপস্থিত হলো। সে নিজে অনল শিকদারকে এতো পছন্দ করে না যতোটা না ঐশ্বর্য করে। অনল শিকদার শুধু তার ক্রাশ মাত্র। কিন্তু আজকাল ঐশ্বর্যের সাথে লাগতে বেশি বেশি বলতো। কিন্তু সে ভাবেনি ঐশ্বর্য এতো সিরিয়াস অনল শিকদারকে নিয়ে।
তুরকে দেখে ঐশ্বর্য হাসলো। তুর কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘কেন এমন করতে গেলি?’ অপমানিত হলি তো?’
ঐশ্বর্য এক গাল হেসে বলল, ‘বাঁচবোই বা ক’দিন? যতোদিন বাঁচি যা চা-ই তাই যাতে পাই সেই চেষ্টা করবো। আফসোস নিয়ে ম*রবো কেন?’
‘তাই বলে..!
‘নিজের মনের ভেতর আফসোস থাকতো। যে আমি অনল শিকদারকে কখনো মনের কথা বলতে পারিনি! আজ থেকে সেই আফসোস থাকবে না আর। আমার বলার দরকার ছিল বলেছি। আগে থেকেই জানতাম এরকমই কিছু হবে। সো চিল।
তুর দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই পাগল মেয়েটাকে নিয়ে যে সে কি করবে! বয়সে তার থেকে সাত বছরের বড়ো। তুরের বিশ, ঐশ্বর্যের সাতাশ। বিয়ে দিতে অনেক চেষ্টা করেছেন সবাই, কিন্তু ঐশ্বর্য বিয়ে করবে না। সে বাবার বিজনেস দেখছে। স্বাবলম্বী হচ্ছে। কিন্তু তাতে কি? সব মা বাবা-ই তো চান তাদের সন্তানকে কারো না কারো সাথে জড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে। সেটা কে বুঝাবে এই একগুঁয়ে বদমেজাজি মেয়েটিকে?’
সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঐশ্বর্য বাড়িতে পা রাখলো। দরজা আগে থেকেই খুলে রাখা। টিপটিপ করে পা পেলে যে-ই না সে ঢুকলো অমনি তার পায়ের কাছে এসে পড়লো খুন্তি। দু পা পিছিয়ে গেলো ঐশ্বর্য। সামনে এসে দাড়ালো তার সুন্দরী স্মার্ট মাম্মি ‘তটিনী ইফফাত ঐশি।’ ওয়াইফ অফ রুদ্র ইরফান।’
তটিনী হিসহিসিয়ে এগিয়ে এসে বলল, ‘এসব করার জন্য তোমাকে বড়ো করেছি?’ এসব করবে বলে তোমাকে এতো প্রশ্রয় দিতাম?
ঐশ্বর্য মাথা নিচু করে ফেললো। সে জানে সে ভুল করেছে। কিন্তু নিজের মনের কথা সে আগে শুনেছে।মস্তিষ্ক অবশ্য বলেছে এতে মা বাবার সম্মান নিয়ে টানাটানি হতে পারে। কিন্তু সে আগে মনের কথা শুনলো। এবার মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ করবে!
(চলবে)