এসো শব্দহীন পায়ে পর্ব ১৯

0
1272

এসো শব্দহীন পায়ে
পর্ব ১৯
মিশু মনি

আজকের আবহাওয়াটা অন্যরকম। সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সাথে নেমেছে প্রবল বর্ষণ। জানালা দিলে তাকালে দূরের সুপারি গাছের লম্বা পাতার দোল স্পষ্ট দেখা যায়। কি বিশ্রামহীনভাবে দোল খাচ্ছে পাতাগুলো। বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির ছিটেফোঁটা ঘরে চলে আসে তবুও জানালা থেকে একটুও সড়ে না রূপসা। ওর মনে আজ বড়ই অশান্তি।
বিয়ে নামক সম্পর্কটা নিয়ে আগে কখনো এতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। নারীমনের ভাবনায় বিয়ে মানেই ছিলো একটা অলৌকিক কিছু, একটা স্বপ্নের মত সংসার। তীব্র ভালোবাসায় মাখামাখি একটা রঙিন ঘর। যে ঘরে একটা আদরমাখা চাদরের বিছানা থাকবে। দুটো মানুষ সেখানে শুয়ে ভালো-বাসাবাসিতে মেতে উঠবে। খুনসুটি, দুষ্টুমি, প্রেম, মান অভিমান আর বইয়ের লাইব্রেরির ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য ধুলোমাখা প্রেমের স্মৃতি জড়িয়ে থাকবে। এ সবই আজ ধূসর মরিচিকা ছাড়া কিছুই নয়। রূপসা অনুধাবন করতে পারছে, বাস্তবতা অন্য এক জিনিস। যে বাস্তবতার কোপে পড়ে তিতাসকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলো ভোরের সাথে সাথে শিউলীর ঝরে পড়ার মত ঝড়ে গেছে। তেমনই বিয়ে পরবর্তী জীবন নিয়ে মনের বাগানে ফুটিয়ে তোলা কলিগুলো ফুল হয়ে ফুটবার আগেই অকালে ঝরে পড়ছে।

এই বৃষ্টি মাথায় করে বাবা আজ শহর থেকে ফিরেছেন। রূপসা দু একবার দেখেছে বাবাকে। ওনার চেহারায় এক ধরণের দুশ্চিন্তার ছাপ। মেয়ের বিয়ে ঠিক করে আসার পর নিশ্চয় বাবাদেরকে দেখতে এরকম দেখায়। চোখেমুখে চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গী উদাস।
রূপসা নিশ্চিত হয়েই আছে বাবা বিয়ের তারিখ পাকা করে ফিরেছেন। বাবার মুখ দেখার পর থেকে মনের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুনটা আরো বেগ পেয়েছে। দাউদাউ করে জ্বলছে। আষাঢ় মাসের আকাশের মত মেঘে ঘনঘটা হয়ে আছে মনের জানালা। কিন্তু সেই মেঘের বৃষ্টিতে ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনটাকে নেভানোর ক্ষমতা ওর নেই।

রূপসা বুঝতে শেখার পর থেকেই মনেপ্রাণে চেয়েছিলো ওর বিয়েটা যেন তারাতাড়ি হয়ে যায়। মাঝেমাঝে প্রার্থনাও করতো। খুব করে চাইতো কেউ একজন ‘শব্দহীন পায়ে’ ওর কাছে আসুক। তার কাছে নিয়ে গিয়ে ছোট্টপাখির মত আগলে রাখুক। তীব্রভাবে ভালোবাসুক। আজ যখন বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে, তখন ভেতর থেকে চাপা আর্তনাদ গুলো বেরিয়ে এসে বারবার বলছে, ‘আমি তো এমন কাউকে চাই নি।’
মায়ের কথা, বাবার কথা ভেবে আজ বড় অন্যরকম লাগছে। মা যেমন আচরণ ই করুক, মা তো মা ই। মাকে প্রচন্ড ভালোবাসে রূপসা। মায়ের আচরণে কষ্ট পেলেও কখনো তাঁকে কষ্ট দিয়ে রূপসা কিছু বলে নি। সবসময় মন থেকে চাইতো, মা হাজার বছর বেঁচে থাকুক। মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবলেই কষ্টে বুকটা শূন্য হয়ে যেতে থাকে। এই বাড়িতে জেলখানার মত বন্দী জীবন কাটছে সেই ছোটবেলা থেকেই। ব্যক্তিস্বাধীনতা তো দূরের কথা, ঘরের বাইরে পর্যন্ত যেতে একটা কারণ দর্শাতে হয়। তবুও আজ এই বাড়ি, এই ঘরকেই সবচেয়ে আপন বলে মনে হচ্ছে। কেন এমন হয়? কেন?

রূপসা নিজের জিনিসপত্র, নিজের ঘরের প্রত্যেকটা আসবাবপত্রে হাত বুলিয়ে দেয়। বড় মায়া লাগছে ওদের জন্য। সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে দূর এক শহরে। সেখানে আবার গড়ে উঠবে একটা নতুন সংসার। জগতের নিয়মগুলো বড় অদ্ভুত। রূপসার এই ভেবে অবাক লাগছে যে, এতদিন মনেপ্রাণে যা ধারণ করতো, আজ সবকিছুকে মিথ্যা মনে হচ্ছে। রূপসা জানে এসব ই মায়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

বাবা মা ফিসফিস করে আলাপ আলোচনা করেন। চাচা, চাচীও যোগ দেন তাদের সাথে। রূপসা বুঝতে পারে তাদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কি আলাপ হচ্ছে শুনতে পারে না। বুঝতেও পারে না। হয়তো বিয়ের ব্যাপারেই এমন কোনো আলোচনা, যা রূপসাকে জানাতে চান না ওনারা।
সবাইকে চিন্তিত দেখায়। চাচা ও আব্বার মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ তর্কও হয়েছে। মা ও যোগ দিয়েছিলেন তাতে। কিন্তু রূপসাকে কেউই কিছু বুঝতে দেয় না। রূপসার মনটাও খচখচ করতে থাকে। রাতে বিছানায় শুয়ে শুধু ছটফট করে কাটে। কখনো উঠে বসে, আবার শুয়ে পড়ে। মাঝেমাঝে জানালা খুলে দিয়ে একদৃষ্টে বাইরে তাকিয়ে থাকে। সবকিছু স্থির। শুধু ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটা গাঢ় নিশ্বাসের শব্দ।

দুদিন পর রূপসার কাছে আসল বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেলো। যখন মা ও চাচীর মধ্যে তুমুল কথা-কাটাকাটি চলছিলো। ছেলেপক্ষের দাবী নিয়ে একটা কোন্দল বেঁধেছে। তাঁরা পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক চেয়েছে। সেইসাথে বিয়ে ধুমধাম করে আয়োজন করে বিদায় দিতে হবে, আবার দুই ভরি স্বর্ণের গয়নাও দিতে হবে। দেনা পাওয়ার চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ওনারা বিয়ের দিন পাকা করতে রাজি নন। সম্মান রক্ষার্থে বাবা কথা দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু এখন পড়ে গেছেন দোটানায়। তাঁরা যখন মেয়ে দেখে আলাপ আলোচনা করেছিল তখন তো এত দাবী দাওয়া ছিলো না। হঠাৎ করে এরকম যৌতুক চেয়ে বসলে কিভাবে হবে? বিয়ের আয়োজন করতেও তো কমপক্ষে লাখ চারেক টাকা দরকার। গয়না আছে, আবার যৌতুকও!

ছেলেপক্ষের দাবী, যেহেতু মেয়ের বাড়ি অনেক দূরে। ঘরের আসবাপত্র নিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। ছেলে সরকারি চাকুরিজীবী, তাই তাকে নগদ টাকা যৌতুক দিতেই হবে। ছেলের মা বলেছেন এরকম রাজপুত্রের মত ছেলে আমার, সরকারি চাকুরিজীবী, সেই হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা খুব নগণ্য হয়ে গেছে।

মা ও চাচীর কথা কাটাকাটি বড় আকার ধারণ করেছে। মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে। রূপসা উঠে দরজায় এসে দাঁড়ালো। মা বলছেন, ‘আমার মেয়া কি দেখতে শুনতে খারাপ? ওর চেহারা ছবি সুন্দর। লম্বায়, ফর্সায়, ফেস কাটিংয়ে আমার মেয়া আর পাঁচটা মেয়ার থেকে ভালো। ওর কি একটা ঠ্যাং খোঁড়া না চোখে কানা। এত টেকা দিয়ে বিয়া দেওন লাগবো?’

গ্রামের অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত পরিবারগুলোতে এই ব্যাপারটা খুব সাধারণ। কথায় কথায় ঝগড়া, কথা-কাটাকাটি ও কোন্দল লেগেই থাকে। সব পরিবারে এমন হয় তা নয়। বেশিরভাগ বাড়িতেই দুদিন পরপর তুমুল ঝগড়ার আওয়াজ পাওয়া যায়। এ বাড়িতে মহিলা- মহিলা ঝগড়ার রেওয়াজ রূপসা জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে। দাদী ও মা, দাদী ও জ্যাঠা মা, মা ও চাচী, চাচী ও ফুফু। এটা প্রায়ই দেখা যায়।

রূপসার চাচী বলছেন, ‘সাহিলকে দেখছি ছোটবেলা থেকে ভালো স্কুলে রেখে পড়াইছে। ভালো খাবার খাওয়াইছে। সেজন্য ছেলের বুদ্ধিসুদ্ধিও ভালো। নিজের মেয়ারে তো ভাত ছাড়া কিচ্ছু খাওয়ান নাই। বুদ্ধির ঢেঁকি বানাইয়া রাখছেন। সরকারি চাকরি কি মুখের কথা নাকি? রূপসার বাপের চৌদ্ধ গুষ্ঠির মধ্যে কেউ সরকারি চাকরি করে না। এরকম ছেলে লাখে একটা মিলে।’

রূপসার মা আরো ফুঁসে উঠলেন, ‘ও, ছেলে মানুষ করতেই খালি টেকা গেছে আমার মেয়া তো গাছের পাতা খাইয়া বড় হইছে তাই না?’
– ‘হ। কত খাওয়াইছো মেয়াকে সে তো আমি ভালো দেখছি। জীবনে একটা লেচু হাতে দিতে দেখলাম না।’

রূপসার মা এবার ভয়ানক রেগে গেলেন। উনি ছুটে গেলেন মেজো জা’য়ের দিকে। ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ‘জীবনে তো আমার মেয়াকে একবেলা ভাতও খাওয়াও নাই। নিজে তো আমার ঘরে দিনরাইত পইড়া থাকো। খাও, নষ্ট করো। আমার পায়খানায় হাগো। আবার বড় বড় কথা। একটা কলও তো তোমরা বসাইতে পারো নাই।’

এবার রূপসার চাচী প্রচুর রাগের বেগে ঘরে চলে গেলেন। ঘরে গিয়ে জোরগলায় কি কি বললেন রূপসা শুনতে পেলো না। তবে চাচী ওনার স্বামীকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলেন। বললেন, ‘তুমি কিছু বলবা না? আমাকে যা ইচ্ছা অপমান করতেছে। আর জীবনেও ওর কলের পানি খাবো না। আইজ ই কল বসাবো। পায়খানাও দেবো। উক্তি দিতেছে রে! উক্তি দিতেছে। সারাজীবন এত করলা বড় ভাইয়ের জন্য, কোনো নাম নাই। কার জন্য করছো জীবনে।’

এভাবে ঝগড়া ক্রমশ বড় আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। নিয়মানুযায়ী এখন চাচা চাচীকে রাগারাগি করবেন, দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হবে। চাচী চাচার সংসারে সারাজীবনে কিছু পান নি, সেই অভিযোগ করবেন। এরপর চাচা আবার চাচীর পক্ষ নিয়ে মাকে দুটো কথা শুনিয়ে দেবেন। মা ও প্রত্যুত্তরে কিছু বলবেন। এভাবেই আজ সারাদিন চলবে।

রূপসা ঘরে চলে আসে। স্থির হয়ে খাটে বসে থাকে। ওর ইচ্ছে করছে মাটি দু ভাগ হয়ে যাক, ও ভেতরে ঢুকে যাবে। আর সহ্য হয় না এসব। এবারের ঝগড়ার ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে খারাপ কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে। যা এর আগে কখনো হয় নি।

রূপসার চাচী তো বলেই ফেললেন, ‘তোমার মত ছোটলোকের ঘরে আমি আমার ভাগিনার বিয়া দিবো নাকি? ওর জন্য রাজকন্যা রা বইসা থাকে। হাজার হাজার মেয়া পিছে ঘোরে ‘

রূপসা এই কথাটাই শোনার আশঙ্কায় ছিলো এতক্ষণ। ওর মনেমনে ভয় ছিল ঝগড়ার এক পর্যায়ে এরকম কিছুই বেরিয়ে আসবে। সেটা মা বলুক কিংবা চাচী। সংসারে বড় ধরণের অশান্তি শুরু হয়ে যাবে এবার।

১৭
তিতাসের ওয়ার্কশপের আজ শেষ দিন।
আকাশে অস্তমিত সূর্য। এই জংগল, এই তাঁবু সবকিছুর প্রতি একটা টান অনুভব করছে তিতাস। এই কয়েকদিনে অনেক কিছুই আত্মস্থ হয়েছে। ছবির ঝুড়িতে জমা হয়েছে অসংখ্য ছবি। শেখা হয়েছে নতুন অনেক কিছুই। হাসি, আনন্দ, নতুন নতুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, জংগলে ঘুরে বেড়ানো, সবকিছু মিলে জীবনের অন্যতম একটা সময় কাটিয়েছে তিতাস। বিদেশী বন্ধুদের সাথে এত ভালো সময় পার করবে এ তো ওর স্বপ্নের বাইরে ছিলো। ফ্রেরীহার সঙ্গ তো কখনোই ভোলার মত নয়। মেয়েটা উচ্ছল, দূরন্ত। পুরোটা সময় তিতাসকে গল্পে মাতিয়ে রেখেছিল। ওয়ার্কশপ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মায়া লাগছে ভীষণ।

শেষদিনের ব্যস্ততা শেষে রাতে আড্ডার পর সবাই যখন ঘুমাতে চলে গেলো, ফ্রেরীহা তিতাসের পাশে এসে বসলো। সামনে কাঠখড়িতে আগুন জ্বলছে। সেই আগুনের আলোয় দীপ্তিমান হয়ে আছে তিতাসের মুখ। ঘুমঘুম চোখ নিয়ে বসে আছে তিতাস। ফ্রেরীহা আলতো ভাবে তিতাসের চুলে হাত বুলিয়ে বললো, ‘তোমার জন্য এক পৃথিবী মায়া নিয়ে বসে আছি, তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?’
তিতাস হেসে বললো, ‘হ্যাঁ পাচ্ছি। আমারও যে ভীষণ মায়া কাজ করছে। এই জংগলের প্রতি, সব বন্ধুদের প্রতি। স্পেশালি তোমার জন্য।’
– ‘হুম।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্রেরীহা বললো, ‘নিশ্চয় দেশে ফিরেই তুমি রূপসার কাছে যাবে?’
– ‘দেশে ফিরে আগে ঘুমাবো। উমমম, জটিল একটা ঘুম দিবো।’
– ‘সারাক্ষণ শুধু ফান তাই না? বলো না, দেশে ফিরে রূপসার সাথে দেখা করতে যাবে?’
– ‘হ্যাঁ যাবো।’
– ‘গিয়ে কি ওকে জড়িয়ে ধরবে?’

ফ্রেরীহার উৎসুক চোখের দিকে তাকালো তিতাস। খুব আগ্রহ নিয়ে ফ্রেরীহা ওর পানে চেয়ে আছে। জানতে চাইছে ও রূপসাকে জড়িয়ে ধরবে কি না। কথাটা একটা আবেগ আছে। রূপসার জন্য যে আবেগ এতদিন মনে পুষে রেখেছে তিতাস, সেই আবেগে স্পর্শ করেছে ফ্রেরীহা।

তিতাস বললো, ‘জড়িয়ে ধরতে তো ইচ্ছে করে। তবে লাস্ট কয়েকটা দিন ওকে ভেবে যতটা অস্থির হয়ে আছি, আগে ভালোবাসার কথা জানাবো।’

ফ্রেরীহা উত্তর শুনে আনমনা হয়ে গেলো। ভালোবাসা কি অদ্ভুত! মানুষ কত সুন্দর করে একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। বুকে পুষে রাখে শত শত অব্যক্ত অনুভূতি। ওপাশের মানুষটা জানতেও পারে না একজন তাকে ভেবে কি ব্যকুল হয়ে থাকে। ফ্রেরীহার জীবনে এমন করে ভালোবাসা আসে না কেন? কেন কেউ ওকে ভেবে ব্যকুল হয় না? নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় ফ্রেরীহা।
তিতাস বললো, ‘আমার ভীষণ ইচ্ছে করে রূপসাকে নিয়ে এরকম এক বনে এসে ঘর বাঁধবো। ভাবছি দেশে গিয়ে একটা বনের খোঁজ করবো। সেই বনে গিয়ে একটা ঘর করে থাকবো দুজন মিলে।’

ফ্রেরীহার বলতে ইচ্ছে করেছিল, আমাকে সাথে নিও। কিন্তু ওদের দুজনের মাঝখানে তো আর সেটা হয় না। যদি রূপসা নামে কেউ না থাকতো, তবে চোখ বন্ধ করে তিতাসের সাথে জংগলে ঘর বাঁধতে রাজি হয়ে যেতো ফ্রেরীহা।

তিতাস উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, ‘যাই। বড্ড ঘুম পেয়েছে।’

ফ্রেরীহা করুণ নয়নে চাতকের মত তাকায় তিতাসের দিকে। ওর কোলে মাথা রেখে যদি এখানে খোলা আকাশের নিচে তিতাস ঘুমিয়ে পড়তো, একটুও বিরক্তবোধ করতো না ফ্রেরীহা। বরং কাঠখড়ির আগুনের আলোয় তিতাসের মায়াবী ঘুমন্ত মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দিতো। ফ্রেরীহার করুণ দৃষ্টি উপেক্ষা করে তিতাস নিজের তাঁবুতে চলে গেলো। ফ্রেরীহা একাই বসে রইলো ঘাসের উপর, খোলা আকাশের নিচে। আজকের রাতটা এখানে বসে বসে নির্ঘুমভাবেই কাটিয়ে দিতে চায় ও।

১৮
বাংলাদেশে প্লেন থেকে নেমে নিয়াজ ভাই ও তিতাস একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। দিলু মামা এসেছেন তিতাসকে রিসিভ করতে। মামাকে জড়িয়ে ধরে তিতাস বকবক করে অনেক কথা বলে ফেললো। মামা ফ্রেরীহার দিকে তাকিয়ে মনেমনে ভাবছিলেন, ‘এই সুন্দরী মেয়ের প্রেমে না পড়ে তিতাস এখনো কিভাবে আছে! নিশ্চয় কতকিছু সেরে ফেলেছে।’

ফ্রেরীহা তিতাসের কাছে এসে বিদায় নেয়ার সময় বললো, ‘আমার গাড়িতে করে চলো। তোমাকে নামিয়ে দেবো।’
– ‘না। আমি মামার সাথে যাবো। আমার বাসা কাছেই। তুমি তোমার ফোন নাম্বারটা আমাকে দাও। নয়তো যোগাযোগ করবো কি করে?’

নিয়াজ ও দিলু মামাকে চমকে দিয়ে ফ্রেরীহা তিতাসের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে দুহাতে গভীরভাবে আলিঙ্গন করলো। তিতাস ভাবলো বন্ধুত্বের খাতিরে হয়তো ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবাক হলো তখন, যখন ফ্রেরীহা বুক থেকে মাথা তুলে বললো, ‘আমাদের আর কখনো যোগাযোগ হবে না। আমি যোগাযোগ রাখতে চাইনা। বিকজ আই লাভ ইউ।’

ফ্রেরীহা শেষ বাক্যটা উচ্চারণ করে লাগেজ টানতে টানতে গিয়ে গাড়িতে উঠলো। তিতাস দাঁড়িয়ে রইলো স্তব্ধ হয়ে। কই কখনো তো এতটুকুও বুঝতে দেয় নি! এয়ারপোর্টের হাজারো মানুষের শব্দদূষণের মাঝেও কেবল একটি কথাই তিতাসের কানে বাজতে লাগলো, ‘আই লাভ ইউ…’

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে