এসো আমার গল্পে পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
1871

#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_১১ (অন্তিম পর্ব)
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)

“আরে স্পর্শী যে,তুমি এইখানে কেনো?তাও সন্ধ্যায়।”

স্পর্শীতা ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়,”জ্বী এমনি এসেছিলাম।”

স্পর্শীতার উত্তরে হাসলো সাব্বির। ফের বললাম,”শুনলাম বিয়ে টিয়ে হইছে তোমার এক বছর আগে!কয়েকদিন আগেই শশুড় বাড়ি গেলা,তা তোমার স্বামীর চরিত্র খারাপ নাকি?না মানে তোমাকে রেখে গেছিলো তো তাই বললাম।”

স্পর্শীতা উত্তর দিলো না কিন্তু মনে মবে বেশ বিরক্ত হলো মাথার ঘোমটা আরেকটু বড় করে টেনে আল্লাহর নাম নিয়ে যেতে গেলে সাব্বির ওকে আবার থামিয়ে দেয়। সাব্বির ওদের এলাকার বখাটে ছেলে!স্পর্শীতাকে সুযোগ পেলেই জ্বালাতন করে পাশাপাশি ওর দিকে কুনজর ও ছিলো যার জন্য এক বছর আগে স্পর্শীতার বাবাকে বাধ্য হয়ে স্পর্শীতার বিয়ে দিতে হয়।

সাব্বির স্পর্শীতার হাত ধরে ফেললো। স্পর্শীতার রাগে সীমা পেরিয়ে গিয়েছে ও এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে যেতে নিলে সাব্বির বলে,”দৌড়াও দৌড়াও!যত পারো দৌড়াও আমার বাইকের স্পিড থেকে তোমার দৌড়ের স্পিড বেশি নাকি আজ দেখি।”

রাগে গা রিরি করে উঠে স্পর্শীতার। সাব্বির বাইক নিয়ে স্পর্শীতার সামনে এসে বলে,”মোটা অংকের টাকা দিবো!যাবে কি?”

রাগে দুঃখে স্পর্শীতা ঠাস করে সাব্বিরের গালে চড় বসিয়ে দেয়। বিভোরকে এখন খুব করে কাছে চাচ্ছে!মনে মনে বলছে,”বিভোর কোথায় আপনি?সবসময় তো আশেপাশে থেকে প্রচুর জ্বালান আজকে কোথায়?”

সাব্বির গালে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে স্পর্শীতার দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”বেশি বাড় বেড়েছিস তাই না!আজ তোর একদিন কি আমার দশ দিন!”

বলে স্পর্শীতার হাত ধরতে নিলেই কেউ সাব্বিরের হাত ধরে ফেলে। স্পর্শীতা চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে!সাব্বিরের হাত মুঠোয় নিয়ে ব্যক্তিটি বলে,”নষ্টামি করার আর জায়গা পাস না তোরা?ওর গায়ে হাত দেওয়ার আগে দেখে নিতি ও কার বউ।”

বিভোর সাব্বিরের হাত এমনভাবে ধরে রেখেছে যেনো পারলে সাব্বিরের হাত ভেঙ্গে ফেলে। সাব্বির ব্যাথায় বলে,”কোন শা*লা রে?আমার হাত ধরার সাহস কেমনে পাস?”

বিভোর এক নজর স্পর্শীতার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার সাহস এখন কোথায় দেখেছিস?আমি আরো কত কিছু করতে পারি সেটা তোর ধারণার বাহিরে।”

স্পর্শীতা ধীরে চোখ খুলে বিভোরকে দেখলো ওর যেনো আত্মা ফিরে এসেছে। টলমলে চোখে বিভোরের দিকে তাকালো তা বিভোরও খেয়াল করলো কিন্তু কিছু বলল না।

সাব্বিরের সাথে বিভোরের অনেক কথা কাটাকাটি হয় এমনকি মারামারিও হয়!ওদের শব্দে কয়েকজন এসে ওদের থামিয়ে দেয়। সাব্বিরকে ধরে নিয়ে যায় আর বিভোরকে চলে যেতে বলে।

১০.

বিভোর আর স্পর্শীতা পাশাপাশি হাঁটছে বিভোর স্পর্শীতার দিকে না তাকিয়েই বলে,”ভয় পেয়েছিলে অনেক?”

স্পর্শীতা বলল,”উহুম!আমি ভয় পাই না।”

বিভোর হাসলো,স্পর্শীতা আবার বলল,”আপনি না বাসায় চলে গিয়েছিলেন?তাহলে আবার আসলেন যে?”

বিভোর ভ্রকুচকে বলে,”কে বলল আমি বাসায় চলে গিয়েছি?আমি ছাদেই ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে না খুজেই ভেবেছো আমি চলে এসেছি।”

স্পর্শীতা বুঝতেই নিজের বোকামির জন্য লজ্জিত হয়!

“তাহলে আমি বুঝতে পারেনি ভেবেছিলাম আপনি চলে গিয়েছেন।”

“ওহ।”

কথা বলতে বলতেই তারা তাদের বাড়িতে চলে আসে। স্পর্শীতা মনে মনে মুচকি হাসে।

বাড়িতে ফিরার কিছুক্ষন পর স্পর্শীতা বিভোরকে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা,আপনি বিয়ের আসর থেকে কেনো চলে গিয়েছিলেন জানতে পারি?আপনার কি কোনো পছন্দ আছে?যার জন্য আমাকে ভালো লাগে নি আপনার”

বিভোর স্পর্শীতার জবাবে বলে,”কে বলল তোমাকে আমার ভালো লাগে নি?তোমার ছবি দেখেই তোমার প্রেমে পড়েছিলাম আমি কিন্তু এতো দ্রুতই আমি বিয়ে করতে চাই না যার জন্য রেগে চলে গিয়েছিলাম।”

“তাহলে করেছিলেন কেনো পরে করলেও পারতেন!”

“আব্বু তোমার সাথে আমার ওইদিন বিয়ে করাবেই মানে করাবে না করারও সুযোগ দেয় নি।”

স্পর্শীতা কিছু না বলে নিজের আব্বুর কাছে যায়। ওর বুঝতে কি কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?শুধু শুধুই কি ভুল ভাবছে ওদের নিয়ে।

স্পর্শীতা নিজের আব্বুর কাছে এসে তার পাশে বসে বলে,”আব্বু।”

আফতাব সাহেব মেয়েকে দেখে বলেন,”স্পর্শীতা তুই?বল কি হয়েছে।”

“আচ্ছা আব্বু?তুমি আমাকে ওইদিন কেনো বিভোরের মা-বাবার সাথে পাঠালে।”

“এখন এইসব প্রশ্নের মানে কি?”

“যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দেও!কথা ঘুরিও না।”

আফতাব সাহেব গম্ভির হয়ে বলেন,”শুনতে চাও তাহলে শুনো!এক মাস আগের থেকেই তুমি না করলেও আমি খেয়াল করছিলাম সাব্বির তোমাকে ফলো করছে!তোমার দিকে কুনজর ছিলো ওর। তাই বাধ্য হয়েই পাঠাতে হয়েছে তাদের সাথে নাহলে যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেলতো সাব্বির?নিজেকে মাফ করতে পারবো আমি কখনো?”

স্পর্শীতার এখন বুঝতে অসুবিধা হলো না ওর বাবা ওর ভালোরই চিন্তা করে!নিজের প্রতি লজ্জিত হলো!কেনো ভুল বুঝলো দুজনকে!

________

ওইদিনের পর রাবার বিয়ে শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরেই ওরা আবার নিজেদের বাড়ি চলে আসে। ইদানিং স্পর্শীতার বিভোরকে খুব ভালো লাগে। বিভোরের জন্য ওর মনে একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছে। সব কিছু ভুলে বিভোরের সাথে সংসার করতে চায়।

বিভোরের মাও আস্তে আস্তে স্পর্শীতাকে মেনে নিয়েছেন!না মেনেই বা কি করবেন!উনিও বুঝতে পারলেন উনার ছেলে স্পর্শীতা প্রতি দূর্বল আর স্পর্শীতাও। মনে মনে উনি খুশি ছেলে সুখী দেখে।

৫ মাস পর_

স্পর্শীতা রেডি হচ্ছে আর বিভোর বিছানায় বসে টাইম দেখছে আর বলছে,”হয়েছে তোমার??হলুদ তো শেষ হয়ে যাবে মনে হয় না তোমার সাজা শেষ হবে।”

স্পর্শীতা গরম চোখ করে বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলল,”আপনি যান আমি আসছি।”

“হেহ?রাস্তা চিনো না একা কিভাবে যাবে?”

“তো এতো বকবক করছেন কেনো?চুপ থাকতে পারেন না।”

আজ মায়ার হলুদ। মায়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে এক মাস আগে!মায়ার হবু শশুড় শাশুড়ি মায়া যত দ্রুত পারে বউ করে নিয়ে যেতে চায় এতে অবশ্য কারো আপত্তি নেই।

বিভোর আর স্পর্শীতার সম্পর্কও আরো উন্নতি হয়েছে। একে অপরকে তারা দুইজনে অনেক ভালোবাসে!

বিভোরের ধ্যানে স্পর্শীতা তুড়ি বাজিয়ে বলল,”আমি রেডি যাবেন নাকি এইখানে বসে থাকবেন?”

বিভোর ধ্যান ভাঙ্গতেই ও বলে,”চলো।”

অতঃপর ওরা দুইজন বের হয় কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে। ছেলে পক্ষ আর মেয়ে পক্ষের হলুদ একসাথেই হবে যার জন্য কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করেছে ওরা।

.
কমিউন্টি সেন্টারে পৌছার প্রায় কিছুক্ষন পর হলুদ আয়োজন শুরু হয়। দুইজনকে হলুদ দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষন থেকে ওরা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মায়াও অনেক খুশি।

বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয় স্পর্শীতা। কিছুদিন ধরে শরীরও ওর ভালো যাচ্ছে না মানে এই খারাপ এই ভালো। ভাবছে বিভোরকে আজ বলবে যেই বলা সেই কাজ ফ্রেশ হয়ে বিভোর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই স্পর্শীতা তাকে বলল,”আমাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবেন?”

বিভোর ভ্রুকুচকে তাকায় বলে,”হঠাৎ কেনো?শরীর খারাপ তোমার?”

“হ্যা!”

“কাল মায়ার বিয়ে”

কিছুক্ষন থেমে আবার বলল,”আচ্ছা ঠিক আছে রেডি হয়ে থেকো সকালে যাবো নে।”

স্পর্শীতা মাথা নাড়ায়।

সকালে_
যথাসময়ে ওরা দুইজন ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার কিছু স্পর্শীতার কিছু টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট এনে হাসি হাসি মুখে বলেন,”অভিনন্দন আপনাদের। আপনারা মা-বাবা হতে চলেছেন।”

স্পর্শীতা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে চেয়ে রইলো!স্বপ্ন দেখছে ভেবে হাতে চিমটি কাটতেই বুঝলো এটা স্বপ্ন না বাস্তব!খুশিতে ওইখানেই বিভোরকে জড়িয়ে ধরে ফেলে। পাব্লিক প্লেসে এমন করছে ভেবেই বিভোরকে ছেড়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল স্পর্শীতা।

হসপিটাল থেকে বের হতেই স্পর্শীতা বলল,”আপনি খুশি না?কেউ আপনাকে আধো আধো বুলিতে বাবা ডাকবে।আমার তো ভাবতে মন আনন্দে নেঁচে উঠছে।”

বিভোর প্রায় কান্না করার মতো অবস্থা। গাড়ি বসে বিভোর বলে,”বিশ্বস করতে পারছি না আমি জানো?আমরা বাবা-মা হতে চলেছি!”

স্পর্শীতা মুচকি হাসলো। বাবা-মা হওয়ার সুখ শুধু তারাই বুঝে যারা বাবা-মা হয়!বিভোর আর স্পর্শীতারও তাই।”

ওরা বাসায় এসে সবাইকে জানাতেই সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। স্পর্শীতার মা-বাবাকে জানালে তারাও অনেক খুশি হয়।

৮ মাস পর_
মায়া বিয়ের আট মাস হয়ে গিয়েছে। সময় খুব দ্রুতই অতিবাহিত হয়!এই কয়েকমাসে বিভোর আর স্পর্শীতার ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পেলো সাথে ওদের ভালোবাসার একটি অংশও বেড়ে উঠতে থাকলে স্পর্শীতার মাঝে। স্পর্শীতার এখন নয় মাস চলে খুব দ্রুতই একটা প্রাণ এই পৃথিবীর আলো দেখবে। এই কয়েকমাসে কোনোকিছুরই কমতি রাখে নি বিভোর।

.
হসপিটালে সবাই চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে।গতকাল মাঝরাতে স্পর্শীতার পেইন উঠে। ওকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সবাই বেশ চিন্তায় আছে,বিভোর এদিক ওদিক পায়চারি করছে চিন্তায় মরেই যাবে ও। স্পর্শীতার মা-বাবাকে খবর দেওয়া হয়েছে তারা আসছেন।

সবার চিন্তা মাঝে ভিতর থেকে বাচ্চার কান্নার শব্দ কানে আসলো। সবার বুঝতে অসুবিধা হলো না!খুশিতে কান্না করে দেওয়ার অবস্থা প্রায়,

ডক্টর একটা বাচ্চা নিয়ে বাহিরে আসলেন। বিভোর উনার কাছে যেতেই উনি বাচ্চাকে বিভোরের কোলে দিয়ে দেন। বিভোর কাঁপা হাতে নিজের সন্তানকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। ডাক্তারের উদ্দেশ্যে বলে,”আমার ওয়াইফ কেমন আছে ডক্টর?”

ডক্টর মুচকি হেসে বলেন,”উনি ভালো আছেন।”

“দেখা করতে পারি?”

“হুম আসুন।”

বিভোর ভিতরে ঢুকে দেখে স্পর্শীতা চোখ বন্ধ করে আছে। ওর সামনে যেয়ে বসে ধীর স্বরে বলে,”স্পর্শী চোখ খুলো!দেখবে না আমাদের সন্তানকে।”

বিভোরের কথা ওর কুর্ণকুহরে পৌছাতেই ধীরে চোখ খুলল স্পর্শীতা।

বিভোর বাচ্চাকে স্পর্শীতার পাশে রেখে স্পর্শীতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কেঁদে দেয়!স্পর্শীতা মুচকি হাসে। ওদের তিনজনকে দেখে পরিপূর্ণ লাগছে। হ্যাপি ফ্যামিলি।

~সমাপ্ত~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে