#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_০৯
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
সবাই যেতেই স্পর্শীতা ধীর গতিতে বিভোরের পাশে বসলো। কিছু সময় অতিবাহিত হতেই স্পর্শীতা অপরাধী সুরে বলে উঠে,”ঠিক আছেন আপনি?আসলে আমি জানতাম না পরিস্থিতি এইরকম হয়ে যাবে। ক্ষমা করবেন।”
“ব্যাপার না!আমি ঠিক আছি। তুমি রেডি হতে থাকো হালকা বিশ্রাম নিলেই আমি একদম সুস্থ হয়ে যাবো।”
“আপনি অসুস্থ এই শরীর নিয়ে যাবেন?আপনার মা তো বকবে।”
“কিছুই বলবে না। আর এইরকম কতবার হয়েছে আজই প্রথম নাকি।”
স্পর্শীতা কিছু বলল না কিচেনে যেয়ে নাস্তা নিয়ে আসে। বিভোরের পাশে বসে খাবারটা টেবিলে রেখে বলল,”আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি খেয়ে নিন!”
বিভোর স্পর্শীতার দিকে এক নজর তাকিয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ কুঁচকে বলে,”এইগুলা খাবো আমি?রুটি আর ভাজী?কোথায় ভেবেছিলাম স্যুপ এনে কোমল গলায় বলবে,”আপনার জন্য স্যুপ।” আমি না খেতে চাইলে জোর করে খাওয়াবে আর তুমি কিনা রুটি আর ভাজি আমার সামনে রেখে বলো খেয়ে নিন!তুমি অনেক আনরোমেন্টিক।”
লাস্টের কথাটা আফসোরের সুরে বলল বিভোর। স্পর্শীতা ভ্রুকুচকে বলল,”খাওয়ার মাঝে আবার কিসের আনরোমেন্টিক আর রোমেন্টিক জলদি খান!”
বিভোর উত্তর দিলো না। ক্ষিদে লাগার দরুণ বেশি কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিলো। স্পর্শীতা হেসে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
রুমে ঢুকে দেখে বিভোর শার্টের হাতা ফোল্ড করছে। স্পর্শীতা ভ্রুকুচকে বলে,”রেডি হচ্ছেন যে?আজ যাওয়া লাগবে না বললাম না। আম্মু-আব্বুকে আমি বুঝিয়ে দিবো নে।”
স্পর্শীতাকে ধমকে বিভোর নিজের কাজ করতে করতে বলে,”চুপচুপ রেডি হও।”
“কিন্তু….
” মার চিন্তা করো না আমি মানিয়ে নিবো।”
স্পর্শীতা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই বিভোর ঠেলে রেডি হতে পাঠালো।
_________
রেডি হয়ে ওরা বাহিরে গেলো। তাহসীন সাহেব দেখেও কিছু বললেন না। শেফা আক্তার আড়চোখে দুইজনের দিকে তাকালেন
“তারমানে আমার কথা অমান্য করে তোমরা যাচ্ছই যাচ্ছ?”
“তোমার কথা কোথায় অমান্য করলাম?আমি তো সুস্থই। ওই সময় হালকা অসুস্থ হয়ে পরেছিলাম এখন আমি ঠিক আছি তাই যেতে তো কোনো সমস্যা নেই।”
শেফা আক্তার কিছু বললেন। শেফা আক্তারের নিরবতায় যা বুঝার বুঝে গিয়েছে বিভোর আর স্পর্শীতা। দুইজনই মনে মনে অনেক খুশি হলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে আসতে নিলে মায়ার জন্য অনেক খারাপ লাগে স্পর্শীতার। মেয়েটাকে ছাড়া কয়েকদিন থাকতে হবে!ইশ।
শেফা আক্তার এক নজর স্পর্শীতাকে দেখলেন কিন্তু কিছু বললেন না। সবাইকে বিদায় দিয়ে ওরা ওদের গাড়িতে এসে বসলো।
৮.
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা জার্নির পর বিভোররা গাজীপুর স্পর্শীতাদের বাড়ি এসে পৌছালো। বিভোর আর স্পর্শীতা গাড়িতে থেকে বের হয়। স্পর্শীতা একবার নিজের বাড়িটায় চোখ বুলায় যেনো কয়েকদিন না এক মাস পর ফিরছে।
গাড়ির শব্দে তাফিদা বেগম বেরিয়ে আসেন। মেয়েকে দেখে খুশি হন অনেক। এক প্রকার দৌড়ে এসেই স্পর্শীতাকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নেন।
“কেমন আছিস মা?আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো তোর?”
স্পর্শীতা নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,”উহু না।”
উনি আরো কিছু জিজ্ঞেস করবেন তার আগেই উনাকে থামিয়ে স্পর্শীতা বলে উঠে,”ভিতরে যেতে দিবা নাকি এইখানেই দাড় করিয়ে রাখবে?”
“তা কোথায় বললাম ভিতরে আয়!”
মেয়েকে দেখে এতোই খুশি হয়েছেন যে মেয়ের জামাইও যে সাথে এসেছে মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো। উনি বিভোরের সামনে যেয়ে দাড়ায়। বিভোর সালাম করলে উনি সালামের জবাব দিয়ে বলে,”ভিতরে আসো।”
বিভোর গাড়ি থেকে ব্যাগ নামাতে গেলে উনি বলেন,”তোমার নামানো লাগবে না ভিতরে যাও।”
বিভোর মাথা নাড়িয়ে স্পর্শীতার সাথে চলে যায়।
তাফিদা বেগম একজনকে ডেকে বলেন ব্যাগ বাড়ির ভিতর দিয়ে রেখে যেতে।এই বলেই তিনিও ভিতরে যান। স্পর্শীতা আর বিভোরকে তাদের রুম দেখিয়ে রান্নাঘরে ওদের জন্য শরবত বানাতে যান।
“তোমাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর ও বড়।”
চারদিকে চোখ বুলিয়ে বিভোর বলল।
“হ্যাঁ!কখনো দেখেন নি?”
বিভোর বলল,”না।”
স্পর্শীতা কিছু বলল না। ওদের কিথার মাঝেই ঘরে তাফিদা বেগম প্রবেশ করলেন। উনি টেবিলে রেখে ওদের দুইজনের উদ্দেশ্যে বলে,”তোমরা ফ্রেশ হয়ে এই শরবত খেয়ে নিও। আমি যাই রান্নার কাজ আছে।”
বলে উনি চলে যান। বিভোর ফ্রেশ হতে চলে যায় ও বের হতেই স্পর্শীতাও ফ্রেশ হয়ে নেয়।
“আপনি এইখানে থাকুন আমি যাই”
“কোথায় যাবে?”
“বাহিরে যাব দুই/তিনদিন পর আসলাম সবার সাথে দেখা করতে হবে না?”
“এমন ভাবে বলছো মনে হয় এক মাস পর এসেছো।”
“আপনি বুঝবেন না।”
বলে হনহন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজের রুম থেকে বের হয়ে সোজা কিচেনে চলে গেলো যেইখানে ওর মা আর মনুর মা ছিলো। স্পর্শীতাকে আসতে দেখে তাফিদা বেগম বলে,”স্পর্শী?তুই আবার বের হলি কেন জামাইকে রেখে?”
স্পর্শীতা উনার কথায় পাত্তা না দিলো না।
“কখন বের হয়েছিলি বাসা থেকে?”
“সকালে।”
“এখন তো দুপুর হয়ে গিয়েছে মাত্রই আজান দিলো। এতো দেরী হলো কেন তোদের?”
স্পর্শীতা বলল,”জ্যামে আটকে পরেছিলাম তাই।”
“ওহ।”
স্পর্শীতা তাফিদা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,”আব্বু কোথায়?স্পর্শ কেও তো দেখছি না।”
“তোর আব্বুর কাজ ছিলো তাই বাহিরে গিয়েছেন। একটু পরেই এসে পড়বেন আর স্পর্শের কথা বলিসই না সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে পরে থাকে।”
স্পর্শীতা প্রতুত্তরে হাসলো। তাফিদা বেগম মুখ কাচুমুচু করে বলেন,”ঠিক আছিস তো?”
স্পর্শীতা ভ্রুকুচকে বলে,”আমার আবার কি হবে?”
“এই কয়েকদিন ওই বাড়িতে কেমন ছিলি?কেউ কি কিছু বলেছে?”
“ভালোই ছিলাম!খারাপ না।”
তাফিদা বেগম স্পর্শীতার কথা শুনে একতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। স্পর্শীতা আড়চোখে উনাকে দেখলেন। এর মাঝেই স্পর্শ বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। নিজের বোনকে দেখে অনেক বড়সড় ঝটকা খেলো। খুশিতে স্পর্শীতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আপু তুই এসেছিস?”
“না আসি নি তুই আমি রূপি ভুতকে দেখছিস।”
স্পর্শীতার এহেন কথায় স্পর্শের মুখ কালো হয়ে গেলো। বলল,”আবার দুষ্টুমি করছিস!ভালো লাগে না ধ্যাত।”
স্পর্শীতা একগাল হাসলো।স্পর্শের সাথে কথা বলতে বলতে হল রুমে গেলো।আচমকাই স্পররশ জিজ্ঞেস করলো,”ভাইয়া কোথায় আপু তাকে তো দেখছি না।”
স্পর্শীতা বলল,”আমার রুমে আছে!আগে তুই ফ্রেশ হয়ে নে বাহির থেকে এসেছিস মাত্র। তারপর নাহয় উনার সাথে দেখা করে নিস।”
স্পর্শ মাথা নেড়ে নিজের রুমে চলে যায়। স্পর্শীতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে আসলো। বিকালে বাহিরে বের হবে ঠিক করেছে মনে মনে।
নিজের রুমে এসে দেখলো বিভোর বসে বসে ফোন দেখছে। স্পর্শীতার এতে খুব রাগ হলো। শশুড়বাড়ি এসেও মানুষ কিভাবে ফোন দেখতে পারে?ও এগিয়ে ছোঁ মেরে বিভোরের ফোন নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,”আর কতো ফোন দেখবেন?আমার তো মনে হচ্ছে ফোন দেখতে দেখতে ফোনের ভিতরে কোনদিন না কোনদিন ঢুকেই যান। শশুড়বাড়ি এসেছেন একটু শাশুড়ির সাথে দেখা করবেন তা না সে ফোন দেখতে বসে গেলেন।”
বিভোর ভ্রুকুচকে তাকালো অতঃপর বলল,”ফোন দাও।”
এতে যেনো স্পর্শীতা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। বলল,”দিবো না কি করবেন?যদি বলেন ফোন দেখবেন তাহলে দেওয়ার কথা ভাবতে পারি।”
“দেখো আমার রাগের পরীক্ষা নিও না।”
স্পর্শীতা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলে,”হাহ?আমি আপনার নাকি আপনি আমার রাগের পরীক্ষা নিচ্ছেন?”
বিভোর ছোট ছোট চোখ করে স্পর্শীতার দিকে তাকালো। মেয়েটার এতো রাগ আজ প্রথম দেখলো।
স্পর্শীতা নিজের মতো বক বক করেই যাচ্ছে ওকে শান্ত রাখতে বিভোর ওকে অবাক করে দিয়ে………
#চলবে
[ রিচেক দেওয়া হয়নি, ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং]