#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_০৪
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
রাত হওয়ার সাথে সাথে ঠান্ডা যেনো আর ভালো।চারদিকে শীতল বাতাস বইতে শুরু করলো। আমি দুপুর থেকে মায়া আর তানহার সাথেই ছিলাম। সবে রাত ৯ঃ০০ টা ছুঁই ছুঁই। এই বাড়ির সবাই যেনো আটটা বাজার পরপর দিয়েই রাতের খাবার সেড়ে নেয়। এখন বাড়ির সবাই ঘুমার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
মায়ার রুমে আছি এখনো। মায়া আমাকে বলল,”ভাবী তোমার রুমে যাও।”
“হু!যাবো এখনই।”
উঠলাম ওদের দুইজনকে বিদায় দিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে আসলাম। দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলাম দরজা ভিড়ে বিছানার উপর তাকাতেই দেখলাম একটা টাওয়াল রাখা।আপনা আপনি ভ্রুকুচকে যায় আমার।আমি তো যাওয়ার সময় এইটা এইখানে রেখে যাই নি। ভাবতে ভাবতে টাওয়ালটা নিয়ে ভাজ করে রেখে দিলাম।
এর মাঝেই ভিড়ে রাখা দরজাটা সরিয়ে কেউ ভিতরে ঢুকলো। আকস্মিক ঘটনায় পিছনে ফিরে তাকানোর আগেই কেউ সন্দিহান কন্ঠে বলে উঠে,”এই মেয়ে কে তুমি?আমার রুমে কি করছো!”
ভয়ে গলায় শুকিয়ে যেতে লাগলো এই রুমটাতেই তো রুমা থাকতে বলে গিয়েছিলেন তাহলে?ব্যক্তিটি আবার বলে উঠে,”এন্সার মি!”
কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে পিছনে ঘুরলাম!যা হবে দেখা যাবে। ব্যক্তিটাকে দেখে যেনো মাথায় বাজ পড়লো। শেষ মেষ কিনা এইবার এই লোকের সাথে থাকতে হবে!বিভোর আমাকে দেখে কপাল ভাজ করে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,”আমার রুমে কি করছো তুমি?কে পারমিশন দিলো ঢোকার!”
তার মৃদু স্বরে বলা কথাটিতেই যেনো রেগে গেলাম!আমার ঠেকা পড়ে নি তার রুমে আসতে। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,”ঠেকা পড়েনি আমার!আর আপনি এই রুমে কি করছেন আগে সেটা বলুন!জানেন না কারো রুমে ঢুকলে পারমিশন নিতে হয়!”
আমার এইরূপ কথায় বিভোর বোকা বনে গেলেন!ভ্রুকুচকে বলেন,”ওয়াট!আমার রুমে আমি তোমার পারমিশন নিয়ে ঢুকবো মেয়ে?”
চোখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে!উনি একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে বলে,”তোমাকে চেনা চেনা লাগছে!কোথাও যেনো দেখেছিলাম!”
মুখ ঘুরিয়ে বলি,”হয়তোবা।”
বিভোর চোখ মুখ কুচকে বলেন,”কথা পেঁচাবে না!”
এই এক বছরে শারীরিক গঠন বদলেছে কিন্তু এতোটাই বদলাই নি যে চেনা যাবে না!লোকটা নিশ্চিত স্মৃতি শক্তি ভুলে খেয়ে বসে আছে!
“পেঁচাবো না!আপনার মা বলেন নি কে আমি?স্ত্রী…
বাকিটা বলতে যেয়েও থেমে গেলাম!আমার চুপ থাকা দেখে বিভোর বিরক্ত নিয়ে বললাম,”স্ত্রী?বাকিটা বললে না যে?এইটাই বলতে চাইছো তুমি আমার স্ত্রী তাই তো?”
থমকালাম তার কথায়!সব যদি মনেই থাকে তাহলে বলছে কেনো!উনি আমার নিরবতা দেখে তাচ্ছিল্য হেসে বলেন,”কি এইটাই বলতে চাইছো না?”
বললাম,”সব যদি বুঝেই থাকেন তাহলে অবুঝের মতো বসে থাকা আপনাকে মানায় না!”
অপরপাশ থেকে মৃদু হাসার শব্দ শুনলাম। বিভোর ধপ করে বিছানায় বসে বলেন,”রাত তো হলো ঘুমাবেন না!”
থমথমে মুখে তাকালাম তার পানে। জবাবে কিছু বললাম না !আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে বলেন,”চিন্তা নেই আমি শুবো না আপনার সরি তোমার সাথে!দয়া করে সোফায় যেয়ে শুয়ে পড়ুন মিস থুক্কু মিসেস বিভোর।”
‘মিসেস বিভোর’ কথাটা যেনো কানে বাজতে লাগলো!উত্তর দিলাম,”আমি কেনো শুবো সোফায়? আপনি ঘুমান সোফায়!”
মুখ ভার করে জবাব দিলাম। বিভোর শব্দ করে হেসে উঠে দাঁড়িয়ে আমার কিছুটা কাছে এসে ঝুঁকে বলেন,”রুম আমার তাহলে বিছানায়ও আমি শুবো রাইট!”
জবাব দিলাম না শুধু শুধু মুখ খারাপ করার দরকার নেই!চুপচাপ বিছানায় যে শুয়ে পড়লাম এইবার বুঝবে মজা!বাধ্য সোফায়ই শুতে হবে তার নিশ্চয়ই!”
আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনিও আমার পাশে শুয়ে ফিসফিসিয়ে বলেন,”মিসেস স্পর্শীতা!কি ভেবেছিলেন আপনি বিছানায় শুয়ে পড়লেই আমি বাধ্য হয়ে সোফায় যাবো উহু!এতোটা সোজা এই বিভোর হাসান না!
থমথমে মুখে মুখ ঘুরিয়ে তাকালাম!অতঃপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”দেখো শুতে হলে বিছানায় এসে ঘুমাও!নাহলে সোফায় ঘুমাও আমি সোফাও ঘুমাবো না মনে রেখো এটাই!”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম তার দিকে ক্ষিপ্ত গলায় কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলাম!একবার সেই সোফার দিকে চোখ বুলালাম নাহ এই সোফা ঘুমানোর মতো অবস্থায় নেই!কিছুক্ষন চিন্তা করে আরেকবার বিছানার দিকে তাকালাম। বিভোর আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছেন!উনার এই হাসি যেনো রাগটা বাড়িয়ে দিলো কোনো কথা না বলে উঠে উনার থেকে অনেকটাই দুরুত্ব বজিয়ে বিছানার শেষ মাথায় যেয়ে শুলাম!মাঝবরারবর একটা বালিশ রাখলাম। উনিও কিছুই বললেন না নির্বাকের মতো চেয়ে রইলেন।
৪.
ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন চারিপাশ!ঘুম থেকে উঠেছি কিছুক্ষন আগেই। বিভোর এখনো ঘুমুচ্ছেন আমাদের মাঝে দুরুত্ব হয়ে আছে একটা বালিশ!আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ঘরের বাহিরে যেয়ে দেখলাম সবাই বসে আছে সবাই বলতে মায়া,তানহা আর আমার শশুড় শাশুড়ি। তাহসীন সাহেব খবরের কাগজ পড়ছিলেন ছেলের বউকে দেখে মাথা তুলে একবার আড়চোখে তাকান আবার পড়ায় মনোযোগ দেন।
মায়া আমাকে দেখে ইশারায় কাছে ডাকে। আমি যেতেই আমার টেনে ওর পাশে চেয়ারে বসায়। অতঃপর হালকা চিৎকার করে তার মাকে ডাকলো। রান্না ঘর থেকে ছুটে আসেন শেফা আক্তার। একবার আমার দিকে তাকিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলেন,”কি হয়েছে ডাকলি কেনো?”
মায়া নাস্তা করতে করতে বলে,”ভাবীকে নাস্তা দেও!”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”বিভোর কোথায়?ও আসেনি কেনো!”
বললাম,”উনি ঘুমাচ্ছেন!”
উনি কিছু বললেন না রান্নাঘরে চলে গেলেন। রান্নাঘর থেকে আমাকে ইশারায় ডাকলেন। উঠে গেলাম রান্নাঘরে। আমাকে একটা রুটি আর সবজি সহিত একটা প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”তোমার শশুড়কে এটা দিয়ে আসো!তারপর তোমারটা এসে নিও যাও।”
কিছু না বলে উনার আদেশ মতো শশুড়কে প্লেটটা দিলাম।
_________
নাস্তা সেড়ে মায়া আর তানহার সাথে তাদের রুমে বসে আছি। তারা গল্প করছে কিন্তু আমার আপাতত গল্প করছে।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তানহা বলল,”ভাবী তুমি চুপ করে আছো কেনো?আমাদের সাথে ভালো লাগছে না তোমার?কোনো অসুবিধা হচ্ছে?”
মাথা দুপাশে না সূচক নাড়ালাম।ওরা নিজেদের মধ্যে পুনরায় গল্প করতে থাকলো। এর মাঝে শেফা আক্তার অর্থাৎ আমার শাশুড়ি এসে গম্ভির স্বরে বলেন,”মায়া তোর চাচা,চাচিরা আসবেন!স্পর্শীতাকে রেডি করিয়ে দিস।”
[ তানহা আর সাদাফ দুই ভাই বোন। ওরা বিভোর আর মায়ার খালাতো ভাই বোন।]
মায়ার উদ্দেশ্যে কথাটা বলেই হনহন করে বেরিয়ে পড়েন। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলাম মায়ার দিকে। মায়া আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,”বুঝলে!নতুন বউ সাজতে হবে তোমার!”
মায়ার কথায় তানহাও হাসলো। বলল,”কত বেলা হয়ে গেলো তোমার বর এখনো উঠল না ভাবী?কাল কতো রাত অব্দি জেগে ছিলে?”
ওর কথায় তাজ্জব বনে গেলাম আমি!কথার আগামথা না বুঝে বললাম,”মানে?”
মায়া তানহার হাতে চিমটি কাটতেই তানহ মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো। মায়া জোরপূর্বক হেসে বলে,”কিছু না!ওর কথায় বেশি পাত্তা দিও না আজগুবি কথা বলতে অনেক ভালো পারে ও।”
ছোট করে “ওহ” বললাম। মায়া কিছু না বলে বলল,”দেখো গল্প করতে করতে কতো সময় পার হয়ে গিয়েছে!তোমার তো রেডিও হতে হবে তাই না?তুমি বরং শাওয়ার নিয়ে আসো কেমন?”
মাথা নাড়ালাম আমি। মায়ার রুম ত্যাগ করে নিজের রুমে আসতে নিলেই……
#চলবে
[ রিচেক দেওয়া হয়নি, ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং]