#এসো_আমার_গল্পে
#পর্ব_০৩
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
আমি ভাই ও মা সহিত নিচে গিয়ে দেখি আব্বু গম্ভির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন!তিনিই বোধহয় ডেকেছিলেন। আমি সামনে গিয়ে দাড়ালাম তার!ভাগ্যটাকেই মেনে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম তাকে সালাম দিয়ে বাড়ির বাহিরে পা দাড়ালাম। শেষবারের মতো ভাই,মা ও আব্বুকে পরখ করে নিলাম বাহিরের গাড়িতে আমার শশুড়,শাশুড়ি বসে আছেন। শাশুড়ির মুখে বিরক্তির ছাপ। সব দেখেও না দেখার ভান করে সবাইকে বিদায় দিয়ে এসে শাশুড়ির পাশে বসলাম। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়ালো!
বুক ফেটে কান্না আসছে!কিন্তু আমি কাঁদতে পারবো না। তাহসীন সাহেব ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেন। ড্রাইভার অনুমতি পেয়েই গাড়ি স্টার্ট দিলেন। বের হলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।
__________
বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি!বলতে গেলে বাহিরের প্রকৃতি দেখছি। কষ্টের মধ্যেও এক নিমিষেই মন ভালো হয়ে গেলো।
.
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা জার্নি করে এসে পৌছালাম আমাদের গন্তব্যে। অর্থাৎ আমার শশুড় বাড়ি। এতো কিছু এতো দ্রুতই হয়েছে যে রাবার থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগও পাই নি!ও জানলে অনেক দুঃখ পাবে কিন্তু আমারই বা কি করার?
আমি ও আমার শশুড় আর শাশুড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম। বাড়ির ভিতর থেকে অনেক আওয়াজ আসছে কিসের আওয়াজ জানি না!আমার শশুড় সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। আমার শাশুড়ি যাওয়ার আগে চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,”স্পর্শীতা!আমি রুমাকে পাঠাচ্ছি ও তোমাকে তোমার রুমে পৌছে দিবে।”
বলেই বড় বড় পা ফেলে স্থান ত্যাগ করলেন ভ্রুজোড়া কুচকে উনার যাওয়ার পানে তাকালাম এই রুমা কে?হয়তোবা এই বাড়িতে কাজ করে!মুহুর্তেই একটা আমার বয়সী একটা মেয়ে ছুটে এসে বলল,”নতুন ভাবী!বড় ম্যাম সাহেব বলল আপনারে আপনার রুম দেখায় দিতে আহেন!”
উনার পিছে পিছে যেতে লাগলাম আর সাথে সাথে বাড়িও এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। এর মাঝেই রুমের কাছে এসে পৌছালাম রুমা নামক মেয়েটার দিকে তাকাতেই একটা হাসি দিয়ে বলেন,”এইডা আপনার রুম!কোনো দরকার হইলে কইয়েন লজ্জা পাইয়েন না কিন্তু!”
জবাবে কিছু বললাম না উনার যেতেই লাগেজটা হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। লাগেজটা এক কোণে রেখে সারা রুমে চোখ বুলালাম মনে মনে বললাম,”উহ!ভালোই রুমটা!ভাগ্যিস শাশুড়িটা আমাকে চিলেকোঠায় থাকতে দিলো না!”
কিছুক্ষন বসে ভাবলাম রুমেই বসে থাকলে হবে না বেয়াদব ভাববে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যাই। যেই ভাবা সেই কাজ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলাম। এই বাড়ির কিছুই চেনা নেই!সবাইকে কোথায় খুজি এইবার?
রান্না ঘরে যেয়ে দেখলাম রুমা নামের মেয়েটা কাজ করছে। আমাকে আসতে দেখে কাজ বাদ দিয়ে উঠে বলে,”আরে নতুন ভাবী!কিছু লাগবো?কষ্ট কইরা আইলেন কেন?আমি’ই আইতাম।”
জোরপূর্বক মুখে হাসির রেখা টেনে বললাম,”না মানে!সবাই কি বাসায় নেই?”
রুমা হেসে বললেন,”আছে না!মায়া আপার রুমে আছে!যাইবেন?”
মাথা নাড়ালাম অর্থাৎ হ্যা যাবো!রুমা আমার ইশারার অর্থ বুঝে হাঁটা ধরলেন বরাবরই আমি তার পিছে পিছে যেতে লাগলাম!উনি একটা রুমের সামনে থামলেন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”এইখানে মায়া আপা,বিভোর ভাই আরো কিছু ভাই বোন আছে তাদের যান!”
‘বিভোর’ নামটা কর্ণকুহুরে পৌছাতেই বুক ধক করে উঠলে!এই সেই মানুষটা?শুকনো একটা ঢোক গিললাম।রুমা চলে গেলো কিন্তু আমার ভিতরে ঢুকার সাহস হলো না!তারা কি-না কি ভাববে?পরেক্ষনই মনে হলো কি ভাববে?আমি তো এই বাড়িরই বউ। সাহস সঞ্চয় করে দরজায় টোকা মারলাম। অপরপাশ থেকে দরজা খুলল এক কিশোরী মেয়ে। আমাকে দেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলে,”কে তুমি?”
বিস্ফোরিত নয়নে তাকালাম আমাকে চিনে নি?আমিও চিনি নি হয়তোবা এক বছর দেখেনি বলে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে তার। কিছু বলবো তার আগেই এক পুরুষালি কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।
“কে রে মায়া!”
মায়া আর আমি দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলাম। ব্যক্তিটাকে চিনতে কিছু সেকেন্ড লাগলো। চিনতে পেরেই যেনো চমকালাম!মায়া নামের মেয়েটি বিভোরের প্রশ্নে জবাব না দিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”ভাবী!আসুন ভিতরে!”
অবশেষে চিনতে পেরেছে!অবশ্য বিভোর না বললে চিনতে পারতাম না আমি উনাকে!চিনতে পারতাম কিন্তু বেশ সময় লাগতো চিনতে। যাই হোক উনার কথা জোরপূর্বক হেসে মাথা নিচু করে ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে সবাই বেশ চমকালো মনে হয়। বিভোরের পাশে বসে থাকা এক মেয়ে বলে উঠলো,”এইটা ভাবী না মায়া?”
বিভোর ভ্রুকুচকে তাকালো তানহার দিকে। কিছুই বুঝতে পারছে না ও। মায়া মাথা নাড়িয়ে বলল,”হু!”
বিভোরের অপরপাশে থাকা এক ছেলে বলে উঠলো,”ওই তনু (তানহা) উঠ!ভাবীকে বিভোরের পাশে বসতে দে মিয়া বিবির মাঝখানে বসে তুই কি করবি?”
তানহা কড়া চোখে সাদাফের দিকে তাকিয়ে উঠে ছোট আকারের সোফায় বসলো। আমার এইবার অস্বস্থিবোধ হতে লাগলো!মায়া বুঝতে পেরে বলল,”ভাবী বসো!”
টু শব্দ না করে বসে পড়লাম। বিভোর এখনো বুঝতে পারছে না কিছু। সাদাফ বিভোরকে হালকা ধাক্কা মেরে বলে,”কিরে মিয়া ভ্রুকুচকে আছিস কেন কিছুই বুঝতে পারছি না?”
ফিসফিসিয়ে কথাটা বিভোরের কানে পৌছাতেই বিরক্তি মাখা চোখে তাকালো। সাদাফ মুখ টিপে হেসে ধীর স্বরে বলল,”সবই বুঝতে পারবা মিয়া আজ রাতে!”
সাদাফের বলা কথাটা যেনো বিভোরের কানে পৌছালোই না। মায়া তানহার পাশে বসলো। আবার বসলো সবার গল্পের আসর। বিভোর একটু পরপর আমার দিকে তাকাচ্ছেন যা বেশ ভালো করেই লক্ষ্য করছি আমি। তাকে আমার চিনতে যদি বেশি সময় না লাগে তাহলে তার আমাকে চিনতে এতো সময় লাগছে কেনো?বিদেশ যেয়ে কি ভুলে গিয়েছে সব!
বিভোর মনে মনে বলল,”কে এই মেয়ে যে সবাই চিনতে পারলো শুধু আমি বাদে!”
সবার গল্প করতে করতে এক ঘন্টা পার হয়ে যায় আর আমি নিরবতা পালনই করছি এখনো। এর মাঝেই রুমা এসে বললেন,”আপারা রান্ধন হয়ে গেছে আহেন খাইতে।”
মায়া বললেন,”তুমি যাও আসছি আমরা।”
উনার যাওয়ার বেশ কিছু মিনিট পর সবাই গেলাম নিচে। আমার শশুড় খেতে বসেছেন আর শাশুড়ি উনাকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন রুমাও যোগ দিলেন তার সাথে। মায়া, সাদাফ,তানহা খেতে বসে পড়লো সাথে বিভোরও। কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বউ মানুষ শাশুড়ি রেখেই খেয়ে ফেললে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না!তারচেয়ে বরং তার সাথেই খাই!তার চোখেও ভালো হবো তাহলে আর টেবিলে বসার জন্য চেয়ারও ছিলো না। শশুড়ের খাওয়া শেষ হতেই উনি উঠে চলে যান। শেফা আক্তার আমার উদ্দেশ্যে বলেন,”খেতে বসো!”
উনার ভারী কন্ঠস্বর শুনে মিনমিনিয়ে বললাম,”আপনার সাথে বসি?”
সকলে তাকালো আমার দিকে। মনে হয় অনেক বড় কথা বলে ফেলেছি!মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে শুরু করলাম যাতে শাশুড়ির কাছে সবার সামনে ধমক খেয়ে মান সম্মানের ফালুদা না করতে হয়। আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার শাশুড়ি গম্ভির স্বরে বলে উঠে,”আমি পরে খেয়ে নিবো রুমার সাথে আগে তুমি খেয়ে নাও!”
উনার কথায় যথেষ্ট অবাক হলাম আমি কিন্তু উনার কথার উপর আর কথা বাড়ালাম না। চুপচাপ খালি চেয়ারটাতে বসে পড়লাম। রুমা এসে আমাকে খাবার বেড়ে দিলেন। কোনোরকম শব্দ ছাড়া খেয়ে নিলাম কারো দিকে তাকালামও না কিন্তু আমার খাওয়ার মাঝেই যে কেউ আমাকে দেখছিলো তা আমার অজানাই রয়ে গেলো…..
#চলবে