#এসো_আমার_গল্পে
#সূচনা_পর্ব
#আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
১.
তিনবার কবুল বলেই উঠে দাড়ালেন আমার বর বিভোর। বিনা বাক্যে মঞ্চ থেকে নেমে হনহন করে বেরিয়ে পড়লেন। সকলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে বিশেষ করে তার মা-বাবা অর্থাৎ আমার শশুড়-শাশুড়ি। তারা এইরকম কিছুই আশা করেননি তাদের মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হট্টগোল লেগে গেলো চারদিকে। প্রতিবেশিরা কানাঘুষা করছেন। আমার মা-বাবা আমার শশুড়-শাশুড়ির কাছে যেয়ে বলেন,”বেয়াইন এইসব কি?আপনাদের ছেলে কোথায় গিয়েছে?সম্মানের ব্যাপার স্যাপার আছে নাকি!”
আমার শশুড় নিজেও বুঝতে পারছেন না কিছু আশ্বাস দিয়ে বললেন,”বেয়াইন শান্ত হোন। দেখবেন কিছুক্ষন বাদেই চলে যাবেন।”
আমার মা-বাবা প্রতুত্তরে কিছু না বলে আমার কাছে আসলেন তারাও বেশ বিরক্ত!
আফতাব সাহেব আর তাফিদা বেগম যেতেই শেফা আক্তার ক্ষিপ্ত গলায় তার স্বামী তাহসীনকে বলে উঠেন
“বলেছিলাম ছেলেকে এমন কোথাও বিয়ে দিও না যেইখানে ওর মত নেই!আর সেই বেহায়াপনা করেই আমার ছেলেটার জীবণ নষ্ট করে দিলে!বেশ!”
তাহসীন সাহেব হালকা নড়েচড়ে উঠেন। স্ত্রীর কাছে এইগুলাই শুনতে হবে এই মুহুর্তে সেটা তিনি জানতেন তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
“আমি কি জানতাম তোমার ছেলে কবুল বলেই উঠে যাবে!”
শেফা আক্তার কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলেন,”এখন ছেলেটা একা আমার হয়ে গেলো তাই না?তোমার তো এখন কিছুই না!ছেলেকে না খুজে বসে আছো!থাকো তুমি মদনের মতো বসে আর কি কাজই বা পারো।”
স্ত্রীকে তিনি যমের মতো ভয় পান!কিছু একটা বিরবির করে বললেন,”আহসানকে ফোন দাও!আহসান তোমার ছেলের পিছে পিছে থাকে সারাদিন আহসান নিশ্চয়ই জানে বিভোর এখন কোথায় আছে।”
শেফা আক্তারের মেজাজ আরো কিছুটা বিগড়ে গেলো!
“ফোন আমার কাছে?এই এই তোমার খোজা লাগবে না!খোজার কিছুই খুজছো না উলটা নিজেকে বলদ প্রমাণ করতেছো!”
থমথমে মুখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে একজন ফোন লাগালেন। বেশ গম্ভিরতা নিয়ে বললেন,”আহসান আমি জানি তুই জানিস বিভোর কোথায় সত্যি করে বল!”
শেফা আক্তারের নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে এখন!এ কাকে বিয়ে করলেন তিনি!শেফা আক্তার না পেরে তাহসীন সাহেবের ফোনটা নিয়ে রাগি গলায় বলেন,”এই তুমি কি ছোট খোকা নাকি?ফোন যে লাগে নি দেখো না।”
তাহসীন সাহেব বোকা হাসলেন। শেফা আক্তার পর পর তপ্ত শ্বাস ফেলে বলেন,”বাদ দাও!ছেলে যেইখানে গিয়েছি চলেই আসবে নে আর না আসলে আর কি করার ভেবে নিবো এটাই ভাগ্যে লিখা ছিলো!”
এদিকে_
স্তম্ভিত চেহারায় বসে আছি আমি!কি হলো সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো। কেউ কেউ তো আমাকে দেখে বলছে,”ইশ!সবার জন্য মাঝখানে দিক দিয়ে বেচারি মেয়েটার জীবণ নষ্ট হলো! আমার মনে হয় কি ওর স্বামীর কোথাও সম্পর্ক টম্পর্ক আছে নাহলে কি আর যায়!”
আবার আরেকজন বলছে,”আজকাল কি যুগ আইলো রে বাবা!মত না থাকলেই কবুল বলেই চলে যায়!আর আমাদের সময়ে? বাপ-মা জোর জবরদস্তি কইরা বিয়া দিতো!”
আমার গলায় কাটা আটকে গেছে যেনো মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না!কি থেকে কি হলো বুঝতেই বেশ সময় লাগলো। আমার ফুপাতো বোন লিলি এসে আমার পাশে বসে হতাশার সুরে বলল,”ইশ রে আপু!দেখেছিস কি হলো?কত হ্যান্ডসাম ছিলো দুলাভাই!চলে গেলো কেনো বুঝতে পারলাম না।”
তিক্ত চাহনি নিক্ষেপ করলাম লিলির দিকে। আসার পর থেকেই হ্যান্ডসাম দুলাভাই বলে কান ঝালাপালা করে দিছে। পারলে ঠাটিয়ে একটা চড় দিয়ে দেই শুধু ভদ্রতার খাতিরে সংযত করে রেখেছি নইলে এতক্ষন ওকে আস্ত রাখতাম নাকি!
ফুপি এসে লিলির কান মলে দিয়ে বলল,”বেয়াদব মেয়ে!বড়দের মধ্যে কি?যাহ রুমে যা।”
লিলি বকুনি খেয়ে চলে গেলো। ফুপি আমার পাশে বসে আশ্বাস দিয়ে বলল,”চিন্তা করিস না তোর বর চলে আসবে! কোনো পুরুষই স্ত্রী ছাড়া থাকতে পারে না।”
মনে মনে বিরক্তি নিয়ে সেই স্বামী নামক মানুষটা ভয়ংকর নামে উপাধি দিলাম। লোকটার জন্যই এমন হচ্ছে!যত্তসব!মনে মনে দোয়া করতে লাগলাম যাতে ফুপি চলে যায় এখন উঠে নাহলে সেই যে স্বামী নিয়ে জ্ঞান দেওয়া শুরু করবে থামবেই না। আলহামদুল্লিল্লাহ দোয়া কবুলও হয়ে গেলো। ফুপি যেতেই পরপর শ্বাস ফেললাম!উহ!বাঁচা গেলো।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর আম্মু এসে গম্ভিরতা বজিয়ে রেখে বলে,”স্পর্শীতা!উঠে আমার সাথে চল।”
ভাবলাম শশুড় বাড়ি যাবো না??আম্মু আমার হাত ধরে আমার রুমে নিয়ে গেলো প্রশ্ন করতে যেয়েও থেমে গেলাম
আম্মুর রেখে যেতেই হুড়মুড়িয়ে দরজা ঠেলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রাবা ঢুকলো আমি ছোট ছোট চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,”তো এই মানবীটার কথা মনে পরলো আপনার?”
রাবা মাথায় হাত দিয়ে বলল,”ও মাই গড তোরে দেখে এতো টেনশন ফ্রি মনে হচ্ছে কেন বলবি?তোর ধারণা আছে?তোর বর তোকে রেখে কোথায় জানি চলে গিয়েছে!”
আমি কিছুটা গম্ভির হয়ে বলি,”চলে গিয়েছে তো গিয়েছে এতে আমার আর কি করার?আর এতো বড় মানবটাকে তো আমি আটকিয়ে রাখতে পারবো না চাইলেও তাই না?”
রাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”সিরিয়াসলি নিতে হয় কিছু কিছু বিষয়!কিন্তু তুই তো সব ছাড়িয়ে!”
ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বসে রইলাম। যা হয়েছে তা তো ফিরে পাওয়া যাবে না!আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার নেই!
২.
“আপনারা গেলে যান আমার মেয়ে আমি কোনোমতেই আপনাদের কাছে দিবো এখন এই মুহুর্তে!”
তাহসীন সাহেব আমার বাবাকে বুঝাতে বলেন,”দেখুন!বিয়ে হয়েছে ওদের!এখন বাড়ির বউকে ছাড়া বাড়ি ফিরলে সবাইকে কি মুখ দেখাবো?”
আফতাব সাহেব মুখ ঘুড়িয়ে বললেন,”আপনার ছেলেকে ফিরে আসতে বলুন আমি খুশি মনে আমার মেয়েকে আপনাদের হাতে তুলে দিবো!”
তাহসীন সাহেব চুপ করে রইলেন। কি বলবেন তিনি?সত্যিই তো বলেছেন আফতাব সাহেব!সব কিছুই তার ছেলের জন্য হয়েছে। মনে মনে বিভোরকে বেশ কঠিন ভাবে বকলেন তিনি!
শেফা আক্তার তিক্ত মেজাজ নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। এর মাঝে তিনি নেই!তাহসীন সাহেবও কিছু বলছেন না স্ত্রীর বুঝতে পারছেন স্ত্রীকে এখন কিছু বলা মানে বাঘিনীর গর্তে পা দেওয়া তাই চুপ থেকে সবটা নিজে দেখাই তিনি ভালো মনে করেন।
কিছুক্ষন আফতাব সাহেব ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়েও লাভ হলো না। তিনি তার কথায় অটুট!তাহসীন সাহেব আর উপায় না পেয়ে স্ত্রীর আর আত্মীয়দের নিয়ে বেরিয়ে পরেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।
উনাদের বেরিয়ে পড়তেই আফতাব সাহেব সব মেহমানদের চলে যেতে বলে নিজের রুমে আসলেন। ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে রইলেন। এইসব ঝামেলার মধ্যে মাথা ধরেছে তার। তাফিদা বেগম সব দেখে এক দফা শ্বাস ফেলে এক কাপ কড়া চা করে এনে আফতাব সাহেবের সামনে রাখলেন। উনি তা টের পেয়ে হাতে নিয়ে কাপে এক চুমুক দিতেই তাফিদা বেগম বলেন,”ঝামেলার মাঝখানে মেয়েটার জীবণ নষ্ট হলো!”
আফতাব সাহেব চোখ বুজে বলেন,”আমি কি জানতাম বিভোর এইরকম কোনো কান্ড ঘটাবে?তাহসীন সাহেব তো বলেছেনই বিভোরের মত আছে এই বিয়েতে তাহলে বুঝলাম না বিভোর কেনো এমন করলো!”
তাফিদা বেগম জবাবে হতাশার নিশ্বাস ফেললেন। আপাতত তার কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না।
.
এপাশ ওপাশ করেও ঘুমাতে ব্যর্থ হলাম আমি!বিবাহিত হয়েও অবিবাহিতদের মতো থাকতে হচ্ছে আমাকে!কেউ শুনলে তো ভয়ংকর ভাবে হাসবে।
[ আমার নাম স্পর্শীতা। গাজীপুরে মা-বাবা আর ছোট ভাইয়ের সাথে থাকি। অনার্স দিত্বীয় বর্ষের ছাত্রী। বাকিটা গল্পের মাধ্যমে জানা যাবে]
#চলবে?