#এলিয়েন।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#প্রথম_পর্ব।
আমার যখন ৫ বছর,তখনই আম্মু আব্বু হৃদের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রাখেন।কথা থাকে আমরা দুজন যখন বড় হবো তখনই আমাদের বিয়ে হবে।হৃদ আম্মুর খালাতো বোনের ছেলে।আম্মুর কোন আপন বোন নেই।কিন্তু হৃদের মা আপন বোনের চেয়েও বেশি।
হৃদের মা আর আমার আম্মুর খুব ভালো সম্পর্ক দেখেই হৃদের মা বাবা আর আমার আম্মু আব্বু আমার আর হৃদের বিয়ে ঠিক করেন।
যাতে সম্পর্কটা আরো মজবুত হয়।
হৃদ আমার ৪ বছরের বড়।
হৃদ আর আমি এদিকে বড় হতে থাকি।
আন্টি আংকেল প্রায়ই আমাদের বাড়ীতে আসেন।আর আমরাও তাদের বাড়ীতে যাই।
এক সাথে ঘুরতে বেড় হই।
অনেক আনন্দ করি।
আমাদের পরিবারের সবাই আমার আর হৃদের বিয়ের কথা জানলেও আমরা দুজনের একজনও জানিনা আমাদের বাবা মা যে আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছেন।
হয়তো তারা চান নি এই খবর টা আমাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাক।বা আমরা পড়াশোনায় থেকে অন্য কোন চিন্তা ভাবনায় মগ্ন হই।
আমি যখন এস.এস.সি পাশ করি,
আন্টি সেদিন ২০ কেজি মিষ্টি নিয়ে আমাদের বাসায় আসেন।
আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান।
ভাবলাম,খালা তাই হয়তো অনেক খুশি হয়েছেন।
তাইতো এত মিষ্টি নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছেন।
আম্মু সেদিন পোলাও মাংস রান্না করেন আংকেলও আসেন।
আর সাথে হৃদও।
আমরা সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করি।
খাওয়া দাওয়া শেষে আন্টি আমাকে হঠাৎ করেই তার পার্স থেকে একটা আংটি বের করে আমার হাতে পরিয়ে দেন।
আমি অবাক হয়ে বলি,
এটা কেন আন্টি?
-আরে এটা তোর গিফ্ট।
ভালো রেজাল্ট করেছিস তাই।
আমি সেদিনও কিছু মনে করিনি।ভেবেছি আন্টি আমাকে ভাগ্নি হিসেবেই আংটি টা পরিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু অবাক তো হয়েছি আমি সেদিন,
যেদিন আমার এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়।
আর আন্টি এসে আমাকে বলেন,
এবার বউ সাজার জন্য রেডি হ।
বাকি পড়া তুই আমার বাড়ীতে গিয়েই পড়বি।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,মানে?
-আরে হৃদের বউ করে তোকে আমি আমার বাসায় নিয়ে যাবো।
তারপর যত পারিস পড়িস।
আমি সরাসরি তখন আর কোন কথা বলিনা আন্টির সাথে।
তবে সেদিন আন্টি চলে যাবার পর আম্মুকে জিজ্ঞেস করি,
-আফসানা আন্টি কি বলে গেলেন এসব?
-কি বল্লো তুই তো শুনেছিস ই।
-শুনেছি তবে বুঝিনি কিছুই।
-আমরা সবাই তোর আর হৃদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি ছোট বেলায়।
আর কথা ছিলো তোরা বড় হলেই তোদের বিয়ে দিয়ে দিবো।
তো এখন তো বড় হয়েছিস।
তাই আফসানা চাচ্ছে তোকে হৃদকে দিয়ে বিয়ে করিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে।
আর পড়াশোনা নাকি ও ওখান থেকেই করাবে।
-তোমরা কি বলছো ভেবে বলছো তো?
-এখানে ভাবাভাবির কি আছে?
হৃদ ভালো ছেলে,
ভালো স্টুডেন্ট।
ছেলে হিসেবে ওর তুলনা হয়না।
সোজা শান্ত ছেলে।
-তবে আমার তাকে একদম পছন্দ না।
আর আমি তাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
-আরফা,আমরা বড়রা মিলে এই সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছি।
-কিন্তু তোমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি।
কেননা,এটা তোমাদের ভাবা উচিৎ ছিলো বড় হয়ে আমাদের তোমাদের মতামত পছন্দ নাও হতে পারে।
-তুই এত বড়ও হস নি যে ভালো মন্দ বুঝিস।
আমরা যা ঠিক করেছি তাই হবে।
আর আমি সবার সাথে কথা বলে তোদের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।
আর তারপর ওখানে গিয়েই তুই অনার্সে ভর্তি হবি।
-একটু আগেই না বললে আমি অত বড় হইনি।
তবে ছোট বেলায় বিয়ে দিতে চাচ্ছো কেন?
আর আমি তো কোনদিনও ওই হৃদ কে বিয়ে করবোনা।
-কেন করবিনা?কারণ টা বল আমাকে।
-কারণ ও একটা হাবলা মার্কা ছেলে।
এই যুগেও সে মাঝ খানে সীঁথি কাটে চুলে।
চশমা পরে,
চেক শার্ট ছাড়া কোন দিন একটা টিশার্টও পরতে দেখিনি আমি তাকে।
মাথা নিচু করে চলা ফেরা করে।
যেখানে ছেলেরা চলবে বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে।
সেখানে এই ছেলে চলে মাথা নিচু করে।
আজ পর্যন্ত দেখলাম না কোন মেয়ের সাথে সে কথা বলেছে।
এই যুগে এমন ছেলেকে ছেলে বলা যায়না।
এলিয়েন বলা যায়।ভিন্ন গ্রহের এলিয়েন।
আমার পক্ষে এই এলিয়েনকে বিয়ে করা সম্ভব না।
-তুই আমার পেটে জন্মেছিস,আমি তোর পেটে না।
তাই আমি যা বলবো তোর তাই শুনতে হবে।
আমি তোকে ওই এলিয়েনের কাছেই বিয়ে দিবো।
আর তখনই হৃদ এসে হাজির,
-বাবা তুই?কখন এলি?মায়ের সাথে এলি না কেন?তোর মা তো এই একটু আগেই চলে গেছে।
-কাজ ছিলো একটা তাই আসতে পারিনি তখন।
আম্মু নাকি ভুল করে মোবাইল রেখে চলে গেছে,তাই মোবাইল টা নিতে আসলাম।
(এতই লাজুক যে এই এলিয়েন মার্কা ছেলে, মাথা উঁচু করেও কথা বলেনা।
কথা গুলো মাথা নিচু করেই বলছে)
-ওহ হ্যাঁ,ওই তো তোর মায়ের মোবাইল।
তুই একটু বস আমি তোর জন্য চা করে নিয়ে আসছি।
-আরফা,কথা বল তুই হৃদের সাথে।
আমি চা নিয়ে আসছি।
এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর এই এলিয়েন টা এসে হাজির।
-এই যে,এমন হাবলার মত দাঁড়িয়ে না থেকে বসুন।
-না না ঠিক আছে।
-আপনি কি মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারেন না?
-হুম পারিতো।
-এমন হাবলার মত চুলের স্টাইল ক্যান আপনার?
এই যুগে এমন চুলের স্টাইল কেউ করে?
-না মানে আসলে।
-কাউকে ভালবাসেন?
– না না,এসব আমি করিনা।
-তা করবেন কেন?এসব পারলে তো করবেন।
এলিয়েন কোথাকার।
-কি বললে?
-বললাম আপনার মাথা,
-তোমার কি মন খারাপ রেজাল্ট নিয়ে?
ভালো রেজাল্ট করেছো তো।
সামনে আরো ভালো করে পড়বে,আরো ভালো রেজাল্ট করবে।
-তুমি চাইলে আমি তোমাকে পড়াতে পারি।
-আপনার পড়া আপনি পড়ুন।
আমাকে পড়াতে হবেনা।
আর বেশি পাকনামো করতে আসলে মাথার চুল একটাও থাকবেনা।
একদম ন্যাড়া করে দিবো।
-আরফা,
-কি?
-তুমি কি অবসরে নাপিতের কাজ শিখেছো?
-হুয়াট?
রাগে শরীর ছমছম করছে,
আর আম্মু চা নিয়ে হাজির।
আম্মু আসতেই আমি ওখান থেকে চলে আসি।
হৃদ চলে যাবার পর আম্মু আমার রুমে এসে বলে,
-আমি সবার সাথে কালই কথা বলবো,
তোর আর হৃদের বিয়ের ব্যাপারে।
তুই মেন্টালি প্রিপারেশন নে।
-তবে তুমিও শুনে রাখো আম্মু,
তুমি যেমন আমার মা,
তেমনি আমিও তোমার মেয়ে,
আমি চিরকুমারী থাকবো,
তবুও ওই এলিয়েনকে বিয়ে করবোনা।
আর তখনই আমার মোবাইল ফোন টা বেজে উঠে,
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার।
একা একাই বলছি,
-এই নাম্বার আবার কার?
আম্মুর উত্তর-
রিসিভ কর রিসিভ কর,ওটা আমার এক মাত্র মেয়ের জামাই এলিয়েনের নাম্বার।
-তুমি আমার ফোন নাম্বার ওই এলিয়েন টাকে দিয়ে দিয়েছো?
উফফ ইচ্ছে করছে মোবাইলটা এবার আছাড় মেরে অন্য গ্রহে পাঠিয়ে দেই।
চলবে…