এলিয়েন পর্ব-৭ম এবং শেষ

0
1991

#এলিয়েন
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#৭ম_এবং_শেষ।

আর যুথী আমাকে দেখে হেসে দিয়ে বল্লো,
আমার ননদ টা তাহলে আমার আগেই এসে গেছে?

আমি কিছু বলার মত ভাষা হারিয়ে ফেললাম।

-হৃদ তাড়াতাড়ি সাদা পাঞ্জাবী টা পরে নাও তো।
-এক্ষুণি পরে আসছি,তুমি যাও গিয়ে বসো।

আরফা তুমিও যাও।

আমি মাথা নিচু করে চলে আসলাম।

কিছু ক্ষণ পর হৃদ একটা পাঞ্জাবী পরে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

আমার নজর আটকে গেলো ওর দিকে চেয়ে।

-কিরে কি দেখছিস?

-না কিছুনা।
-রাতে লাইন কেটে যাবার পর কত বার তোর নাম্বার ট্রাই করলাম।
আর গেলোই না।

-ওহ।
-শোন না,আজ না আমি খুব এক্সাইটেড।
এত্ত খুশি লাগছে আমার।

বিকেল হয়ে গেছে।

-কিরে হৃদ,তোর গেস্ট রা এখনো আসছেনা যে?

-এই তো আন্টি এসে গেছি আমরা।

হৃদের বন্ধুরা এসে গেছে।

এসে সবাই হৃদের সাথে আর যুথীর সাথে কথা বলছে।

আর কোন গেস্ট নেই আর বাসায়।
শুধু হৃদের বন্ধুরা,যুথী আমার পরিবার আর হৃদের পরিবার।

ওহ,তাহলে এ কয়জন নিয়েই ও অনুষ্ঠানের প্ল্যানিং করেছে।

অযথা ও আমাদের ইনভাইট করতে বলেছে।

এখন যদি সবার সামনে এলিয়েন টা যুথীকে আংটি পরায়,
তখন আম্মু আব্বু কতই না আঘাত পাবে।

এই দুজন মানুষকে আসতে না বল্লেও পারতো।

হৃদের বন্ধুরা যুথীর সাথে আড্ডা জমিয়ে দিয়েছে।
দিবেই তো,বন্ধুর বউ বলে কথা।

সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করলাম।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে,
একটু পরই কেক কাটবে হৃদ।
আর সবার সামনে হয়তো বলবে ও যুথীকে ভালবাসে আর ওকে বিয়ে করতে চায়।

উফফ এসব ভাবতে পারছিনা আমি।
অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমি এগুলো ভাবতেই।

একা এসে দাঁড়িয়ে আছি হৃদের রুমের ব্যালকোনিতে।

হৃদ যেন কেন রুমে এসেছে,

-আরফা,তুমি এখানে?

-হ্যাঁ।
-এখানে কি করো?
চলো যাই সবাই তো ওখানে অপেক্ষা করছে।

-আপনি এখানে কেন তাহলে?

-আংটি টা নিতে এসেছিলাম।

-হৃদ আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।
-উঁহু এখন কোন কথা না,চলো আগে ওখানে যাই।

-না হৃদ,আমাকে বলতে দিন প্লিজ।

আমি হাত জোর করে ওর সামনে হাত উঠাতেই ও আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,

-এই চুড়ি তোমার হাতে?

-হ্যাঁ আন্টি দিয়েছেন আমাকে.
-কেন দিয়েছে?
এই চুড়ির উপর তো তোমার কোন অধিকার নেই।

এই চুড়ি তো আমার মা আমার হবু বউ এর জন্য রেখেছে।

-চুড়ি খোলো,
-কিহ?
-আমি বলেছি চুড়ি খোলো।
এই চুড়ি তোমার নয়,এগুলো আমি যুথীকে দিবো।

-না প্লিজ এই কথা বলবেন না,এই চুড়ি মা আমাকে দোয়া করে দিয়েছেন।
-কি বললে তুমি?
মা?আন্টি বলো আন্টি।

চুড়ি খোলো,এই চুড়ির উপর যার অধিকার আমি তাকেই সেই চুড়ি দিতে চাই।

-আমি দিবোনা এই চুড়ি।
-কেন দিবেনা?
-দিবোনা বলেছি দিবোনা।

আর আংটি কই দেখি,
এই যে এই আংটি টাইতো।
আর এই আংটাও আমার।

এবার পাঞ্জাবীর কর্লার ধরে এলিয়েন টাকে বললাম,

-আর এই যে তুই,এই তুই টাও আমার।শুধুই আমার।

এই চুড়ির উপর,এই আংটির উপর যেমন শুধু মাত্র আমার অধিকার।
তেমনি তোর উপরও শুধু আমারই অধিকার থাকবে।
আর কারোনা।ক্লিয়ার?
কথা টা ঢুকেছে মাথায়?

সেই মুহূর্তে যুথী এসে বলে,

তাহলে আর কি,
-হৃদ,সাদা শাড়ীটা কই রেখেছো?ওটাও দিয়ে দাও।
তাহলেই সব হয়ে যাবে।

আমি অবাক হলাম,
হৃদের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
মানে কি?

-আগে পাঞ্জাবী তো ছাড়ো।
-ওহ সরি।

-এগুলো বলতে এত গুলো দিন লাগলো?
কতই না কষ্ট করতে হলো আমাদের।
আর ফাইনালি তুমি,

-আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা।

-আচ্ছা আমি বলছি,

আসলে হৃদের সাথে আমার কোন প্রেম এর সম্পর্ক নেই।
আমরা অনলি ফ্রেন্ড।
হৃদের বন্ধু তন্ময় আমাকে প্রপোজ করেছে,আর আমি সেটা এক্সেপ্ট ও করেছি।

আর তারপর তন্ময়ের কাছ থেকেই শুনি আমি হৃদ আর তোর বিষয়ে সব কিছু।
যে,তোর সাথে হৃদের বিয়ে হবার কথা।

আর আমি এ কথা শুনে খুব রেগে যাই,
যে তুই আমার এত ভালো বন্ধু হয়েও আমাকে এ কথা টা বল্লিনা।
গোপন করলি আমার কাছে।

তাই আমি সেদিন ফান করে তোকে গিয়ে বলি হৃদকে আমার পছন্দ।
যাতে তুই জ্বলিস আর সত্যি টা আমাকে বলিস।
কিন্তু আমি সেদিন তোর কোন রিয়েক্ট না দেখে খুবই অবাক হই।

আর তারপর কিছু দিন পর তন্ময়ের কাছে শুনতে পাই তোর আর ওর বিয়েটা ভেঙে গেছে।

হৃদ পুরাই ভেঙে পড়ে তখন,শুধু কান্নাকাটি করে।
পরে ও তন্ময় আর আমার সাথে সব শেয়ার করে।

আর বলে,তোর নাকি স্মার্ট ছেলে পছন্দ।
তাই ও স্মার্ট হবে।
আর তাই ও নিজেকে তোর জন্য পরিবর্তন করে।

আবার এদিকে হঠাৎ একদিন হৃদের ফোনে কল আসে,

ও বের করতেই বলে জরিনার কল।

আমি আর তন্ময় জিজ্ঞস করি জরিনা কে?

তখন বলে, তোর মা নাকি তোর নাম্বার দিয়েছিলো ওকে।
আর ভুল করে কল নাকি রং নাম্বারে চলে যায়।আর তারপর থেকেই নাকি জরিনার সাথে ওর বন্ধুত্ব।

পরে আমি হৃদের ফোন নিয়ে নাম্বার টা দেখতে চাইলাম।

পরে দেখি,নাম্বারে কোন ভুল নেই।
ওটা তোরই নাম্বার।

আর আমি হৃদকে ১০০% শিউরিটি দিয়ে বলি,এটা তোরই নাম্বার।

তখন ও বুঝতে পারে জরিনা আসলে আর কেউ নয়।
তুই ই।তুই ই জরিনা সেজে ওর সাথে কথা বলিস।

আর তাই ও জরিনাকে মানে তোকে এভিয়েড করে,আর বলে আমাকে ও ঠকাতে চায়না।
যাতে এগুলো শুনে তোর মনের ঘুমন্ত ভালবাসাটা জাগ্রত হয়।

আর ফাইনালি আজ আমরা সাক্সেস।
আর হৃদ আজকের প্ল্যান কিন্তু তোর জন্যই করেছে।

আজ আমি হৃদ আর তন্ময় গিয়ে তোর জন্য সাদা শাড়ী কালো ব্লাউজ আর আংটি কিনি।

হৃদের বিশ্বাস ছিলো আজ তুই ওকে তোর মনের কথা বলবিই।
আর যদি আজ না বলিস তাহলে ও আর কোন দিন তোর দিকে তাকাবে না।

আর এই যে শাড়ী দেখছিস,এই শাড়ী আমাকে তন্ময় কিনে দিয়েছে।হৃদ না।
তন্ময় বল্লো দুই বান্ধবী পার্টিতে এক রকম শাড়ীই পরো।

উফফ ফাইনালি আমরা সাক্সেস।
এবার আমি ওখানে যাচ্ছি।
তোরা রেডি হয়ে আয়।কেমন?

যুথী চলে যাচ্ছিলো,
আমি যুথীকে পিছু ডেকে বলি,

-যুথী,
-হুম বল,
-থ্যাংক ইউ রে।
-হা হা হা, ওয়েলকাম মিসেস এলিয়েন।

তাড়াতাড়ি শাড়ীটা পরে আয়।

:

আমি হৃদের বুকে দুই তিন টা কিল ঘুষি দিয়ে বললাম,

-আমার সাদাসিধে এলিয়েন টাই ভালো ছিলো।
স্মার্ট হৃদ টা খুব চালাক।

হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো,
হয়েছে এবার মান অভিমানের পর্ব শেষ করো।
আর এই নাও শাড়ী,এটা পরে ওখানে চলে আসো।

তারপর আমি শাড়ীটা পরে সবার সামনে যাই।
সবাই আমাকে শাড়ীতে দেখে খুশি হয়।

হৃদ কেক কাটার আগে সবাইকে বলে,
আমি আজ সবাইকে একটা গুড নিউজ দিতে যাচ্ছি,

আর এই গুড নিউজ টা দিতেই বিশেষ করে আমার বার্থডের আয়োজন করা।

সবাই জেনে খুশি হবেন যে,খুব তাড়াতাড়ি এই যে আমার কাজিন আরফা,
ওর সাথে আমার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে,তাই আজ আমি সবার সামনে ওকে আংটি পরিয়ে দিতে চাই।

আর সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

সবাই খুব বেশি খুশি হয় এই কথা গুলো শুনে।
বিশেষ করে আমাদের দুই পরিবার।

তারপর আমার এলিয়েন টা আমাকে আংটি পরিয়ে দেয়।
আর আব্বু তখন তার হাত থেকে তার আংটিটা খুলে দিয়ে বলেন,
নে মা পরিয়ে দে হৃদের আঙুলে।
তারপর আমিও হৃদকে আংটি পরিয়ে দেই।

এরপর হৃদ আমার হাত ধরে কেকটা কাটে।
বাবা মা,বন্ধু বান্ধব সবাই হাসতে হাসতে হাত তালি দেয়।

এরপর একটা শুক্রবার দেখে হয়ে যায় ধুমধাম করে আমার আর আমার এলিয়েনের বিয়ে।

এখন আমাদের বিয়ের ৯ বছর চলে।
৭ বছরের আমাদের একটা ছেলে আছে।
ছেলেটা একদম বাবার মত হয়েছে।
মানে বাবা যেমন স্মার্ট হবার আগে ছিলো।

ছেলে আমার চুলের মাঝ খানে সীঁথি কাটে।
মাথায় এত্ত গুলা তেল দেয়।
এই বয়সেই সে চেক শার্ট ছাড়া কোন রকম টিশার্ট বা শার্ট পরেনা।

এক এলিয়েন নিয়েই পারিনা আমি।
আবার এলিয়েন টু এর জন্ম।

কেউ কি আমার ছেলেকে মেয়ের জামাই বানাবেন নাকি হ্যাঁ?
বানাতে চাইলে আগে ভাগেই মেয়ের বায়োডাটা জমা দিন।
পরে কিন্তু সিরিয়াল পাবেন না হুম।

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে