#এলিয়েন।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_৫
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হৃদ একটা হাসি দিয়ে ওর পেছন থেকে একটা মেয়েকে হাত ধরে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বল্লো,
-দেখো তো ওকে চেনো কিনা,
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
যুথী তুই?
-সারপ্রাইজ।
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-দেখতো তোর ভাইকে কেমন লাগছে।
চেনা যায়?
পুরোই চেঞ্জড না?
-হুম একদম।
-দেখেছিস,বলেছিলাম না, হৃদ ওর ভালবাসার মানুষ টার জন্য নিজেকে পুরো বদলে ফেলবে?
-তারমানে তুই…
-হ্যাঁ ঠিক ধরেছিস।
-আমাকে কেমন লাগছে বলো তো আরফা?
-হুম ভালো।
আচ্ছা আমি আসছি।
-আরে শোন না,কোথায় যাচ্ছিস?
-বাসায় যাবো।
-একটা থ্যাংক্স তো দিতে দিবি অন্তত।
-থ্যাংক্স?কিসের জন্য?
-এই যে তুই আমার বান্ধবী না হলে আমি হৃদকে চিনতাম না।
আর হৃদকে না চিনলে ওকে পেতামও না।
থ্যাংক্স দোস্ত।
-ওহ,আচ্ছা।
আচ্ছা তোরা থাক আমি আসছি।
আমি ওদের ওখানে রেখেই বাসায় চলে আসি।
-কিরে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?
-ভালো লাগছিলোনা তাই।
-ওহ।যা তাহলে ফ্রেশ হয়ে নে।
-হুম যাচ্ছি।
ফ্রেশ হয়ে খাটে গা এলিয়ে দিলাম।
কি যেন নেই নেই মনে হচ্ছে আজ।
চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম,সবই তো আছে।
তাহলে কি নেই?
কেন এই শূন্যতা অনুভব করছি?
মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম হৃদের নাম্বার।
হৃদ ফোন ধরছেনা।
মেসেজ দিলাম,
মেসেজেরও কোন রিপ্লাই নেই।
মানুষ অল্প কিছু সময়ের মাঝে এতটা পরিবর্তন হতে পারে?
আমার কলও ধরছেনা।
অনেক বার ট্রাই করার পর হৃদ আমাকে কল ব্যাক করলো।
-এত বিজি আপনি?একটা বার ফোনও দিলেন না।
আর না কোন মেসেজ।
কিসের এত ব্যস্ততা আপনার?
-জরিনা,তুমি আমার একজন ভালো ফ্রেন্ড।কিন্তু কথাটা ঠিক কিভাবে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছিনা।
-কি এমন কথা যা বলার জন্য এত সংকোচ বোধ করছেন।
-না আসলে,শোনো,
তুমি কিছু মনে করোনা আমি আর তোমার সাথে কথা বলা কন্টিনিউ করতে পারবোনা।
-মানে কি?
-মানে হচ্ছে,আমি আর তোমার সাথে কথা বলবোনা আজকের পর থেকে।
-কেন বলবেন না?
কি করেছি আমি?
-তুমি কিছু করোনি তবে আমার লাইলে কেউ একজন এসেছে যে কিনা চায়না আমি অন্য কোন মেয়ের সাথে কোন প্রকার কথা বলি।
-বাহ্ পুরুষ মানুষ এরকমই,দু দিন যেতে না যেতেই একজন কে ভুলে আরেকজনকে খুঁজে নিতে পারে।
-ঠিক বুঝলাম না,কি বললে তুমি।
তুমি আমার ফ্রেন্ড,লাভার না।
আর তোমাকে ভুলে আরেকজনকে খুঁজে নিলাম মানে?
-আমি আমার কথা বলিনি,
আমি বলেছি আপনার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তার কথা।
তাকে ভুলতে আপনার দু দিনও সময় লাগলোনা,আবার জড়িয়ে গেছেন আরেক জনের সাথে।
-ওহ আরফার কথা বলছো,
ও তো আমাকে লাইক করেনা।তাছাড়া যার কাছে আমার দাম নেই,তার মূল্য আমার কাছেও নেই।
ওকে মনে রেখেই বা কি লাভ।
আর আমি ওর থেকেও বেটার কাউকে জীবনে পেয়েছি।
যে আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।
-ওহ তাই?আর এমনই ভালবাসে যে তার কথায় আজ আমাদের বন্ধুত্বও মাটি চাপা দিতে আপনি দ্বিধাবোধ করছেন না।
-দেখো,তুমি আমার বন্ধু।
আর ও আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।ওকে তো আমি কষ্ট দিতে পারিনা।
-আমরা কথা বললে ও তো আর জানছেনা।
আপনি ওকে না জানালেই পারেন।
-সরি জরিনা,আমি ওকে ঠকাতে পারবোনা।
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।
আমি তোমাকে ব্লক লিস্টে রাখলাম।
ভালো থেকো।তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো।
-শুনুন শুনুন,
হৃদ আমাকে কথা শেষ করতে দেয় নি।
তার আগেই লাইন কেটে দিয়ে আমার নাম্বার ব্লক করে দেয়।
এলিয়েন টা আসলেই এলিয়েন।
দয়া মায়া কিচ্ছু নাই।এত দিনের বন্ধুত্ব টাকে এভাবে শেষ করে দিলো।
ও না হয় স্বার্থপর বুঝলাম,
কিন্তু আমি?
আমি তো ওর থেকেও বেশি খারাপ।বাবা মায়ের এত দিনের দেয়া কথা আমি ভাঙতে পেরেছি।
আর ও এই অল্প ক দিনের সম্পর্ক ভাঙতে পারবেনা।
পরের দিন কলেজে গিয়ে দেখি যুথী আর এলিয়েন টা এক সাথে বসে আছে।
আর কি হাসাহাসিই না করছে।
খুব জমেছে বোধয় ওদের প্রেম।
আর যুথীও খুব খুশি,
দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আর খুশি হবেই বা না কেন।
এত সুন্দর লাভার থাকলে কে না খুশি থাকবে।
এলিয়েন টাকে যে কখনো এত সুন্দর দেখাবে কল্পনাও করিনি কখনো।
এত সুন্দর করে হাসতেও পারে ছেলেটা,না দেখলে বুঝতামই না।
আমি চেয়ে আছি ওদের দিকে।
হঠাৎ হৃদের চোখ পড়ে যায় আমার চোখে।
আমি দেখেই না দেখার ভান করে চলে আসছিলাম।
আর তখনই হৃদ আমাকে ডাকে,
আমি দাঁড়িয়ে যাই।
-কেমন আছো?
-জ্বী ভালো।আপনারা?
-হ্যাঁ ভালো আছি।
-আমরা খুব ভালো আছিরে,
-আরো ভালো থাক দোয়া করি।
-আন্টি কেমন আছে আরফা?আর আংকেল?
-জ্বী ভালো আছে।
-সবাইকে নিয়ে এসো আমাদের বাসায়।
-হ্যাঁ আসবো।
-আমাকে যেতে বলবেনা বুঝি?
-উঁহু।তোমাকে বলবোনা,
একবারে তুলে নিয়ে যাবো।
-ধুর দুষ্টু।লজ্জা লাগেনা বুঝি।
-যুথী,তুই এত লজ্জাবতী কবে থেকে হলি?
আগে তো কখনো এমন লজ্জা পেতে দেখিনি।
-ওসব তুই বুঝবিনা,
প্রেমে পড়লে মেয়েরা লজ্জাবতী হয়ে যায়।বিশেষ করে প্রেমিকের সামনে।
আগে প্রেমে পড়,তারপর বুঝবি।
-প্রেম,ওমন ছেলে আর কই।
-এখনো তোমার স্বপ্ন পুরুষ তুমি পাওনি আরফা?
চিন্তা করোনা খুব শীঘ্র পেয়ে যাবে দেখে নিও।
-হুম দেখি।
আচ্ছা আমি আসি,থাকুন আপনারা।
-আচ্ছা যাও।
কিছু দিন পরই হৃদের জন্মদিন।
আন্টি ফোন দিয়ে আম্মুকে বললেন হৃদ নাকি এবারের জন্মদিন টা ধুমধাম করে পালন করতে চায়।
তাই তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন।
আর আমরা যেন জন্মদিনের দিন সকাল সকালই ওই বাসায় গিয়ে পৌছাই।
আম্মু আমাকে আর আব্বুকে জানালো।
আব্বু বললেন,
যেই ছেলে এইভাবে আমাদের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য না করে দিলো তার জন্মদিনে আমাদের যাওয়া কি উচিৎ?
আমি উত্তর দিলাম,
কেন উচিৎ না বাবা?
-তারাতো আমাদের আত্মীয়।
আর পরে যেই সম্পর্ক টা হবার কথা ছিলো সেই সম্পর্কের আগে থেকেই যেহেতু আমাদের মাঝে একটা সম্পর্ক আছে,সেহেতু আমাদের সেই সম্পর্কের খাতিরে অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিৎ।
আম্মু হাফ ছেড়ে উত্তর দিলো,
আরফা ঠিকই বলেছে।
-তাহলে আর আমি কি বলবো,
মা মেয়ে যখন যাবে,আমারতো তাহলে যেতেই হবে।
ঠিকাছে যাওয়া যাবে তাহলে।
কয়েক দিন পর.
আজ রাত ১২ টার পরই এলিয়েনটার জন্মদিন।
আমি যে ওকে উইশ টা করবো তারও কোন উপায় নেই।
নাম্বার টাও রেখেছে ব্লক করে।
রাত ১১.৪৫ এ আম্মুর মোবাইল টা আমার কাছে নিয়ে আসলাম।
আর আম্মুকে বললাম আমার একটু দরকার আছে তোমার মোবাইল টা।আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নেই।
আর একটু পরেই এলিয়েন টার বার্থডে,
ঘড়ির কাটা যখন ১২ টা ১ ঠিক তখনই আমি আম্মুর মোবাইল থেকে হৃদকে ফোন দেই,আর ও রিসিভ করতেই সুরে সুরে বলি,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ,
হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার হৃদ,
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
-থ্যাংক ইউ সো মাচ।
তবে আমি কিছু টা শকড,
কে বলছো তুমি?
-কেন?
-নাম্বার আর ভয়েজের তো কোন মিল খুঁজে পাচ্ছিনা।
নাম্বার বলে এটা আমার আন্টির নাম্বার।
আর ভয়েজ বলে,উইশ টা আমাকে জরিনা করছে।
কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।
জরিনা কিভাবে আন্টির নাম্বার থেকে আমাকে ফোন দিবে।
-সরি।
-সরি কেন?
-আমি আরফা,
আর জরিনা নামে কেউ নেই।
আমিই এত দিন জরিনা সেজে আপনার সাথে কথা বলেছি।
আসলে আপনার ফোন টা রং নাম্বারে যায়নি সেদিন।রাইট নাম্বারেই গিয়েছিলো।
আমি আপনার সাথে ফান করেছি।
-তাই বলে ভয়েজ ভাষা এত চেঞ্জ?
-হ্যাঁ টেনে টেনে কথা বলেছি অশুদ্ধ ভাষায় আমিই।
আর এত কষ্ট করে ভাষা শুদ্ধ করেছেন আপনি,আমারি।
আর আপনার ব্লক লিস্টের নাম্বার টাও আমারি।
-বাহ্ কি সুন্দর গেইম।
-সরি।ক্ষমা করবেন আমাকে।আমি ক্ষমা চাচ্ছি প্লিজ।
-আজ একটা শুভ দিন বলে তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।
অন্য কোন দিন হলে হয়তো করতাম না।
-সরি বলেছিতো।
-ইটস ওকে।
-হুম।
আচ্ছা বলুন তো,প্রথম উইশ টা আমিই করেছি না?
-না,
-তাহলে?
-যুথী করেছে।
-কিভাবে?ফোনে তো আমিই কল দিলাম প্রথম।
-কিন্তু ও আমাকে মেসেজ তোমার কলের আগে দিয়েছে।
আমি মেসেজ টা দেখেই তোমার ফোন রিসিভ করি।
-ওহ ভালো।
আচ্ছা রাখছি।
-আচ্ছা রাখো,সকাল সকাল চলে এসো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
কোন কিছুতেই শান্তি লাগছেনা আজকাল কেন যেন।
কেন যেন মনে হয় আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলছি দিন কে দিন।
কিন্তু কি সেটা?
তবে কি সেই জিনিষ টা জীবন্ত সেই এলিয়েন?
তবে কি আমি ওর সৌন্দর্যের জন্য ওর মায়ায় আবদ্ধ হচ্ছি?
আমি কি তাহলে সুন্দরের পূজারি?
না না,আমি তো সেদিনই কেমন একটা অদ্ভুত আঘাত অনুভব করেছিলাম,যেদিন যুথী আমাকে এসে বল্লো ও হৃদকে পছন্দ করে।
কেমন একটা খারাপ লাগা কাজ করেছিলো সেদিন ওর কথায়।
তাইতো আমি সেদিন ওকে কিছু না বলেই বাসায় চলে এসেছিলাম।
আবার যেদিন আম্মুর মুখে শুনলাম হৃদ বাসায় ওর অমতের কথা বলে বিয়েটা ভেঙেছে সেদিনো তো ওর জন্য আমার খারাপ লেগেছিলো।
আবার যেদিন দেখলাম যুথী হৃদের পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো,সেদিনই কেমন একটা ধাক্কা এসে লেগেছিলো বুকের ভেতর।
মাথাটা ঝিম ধরে গিয়েছিলো।
আসলে যখন থেকে আমি হৃদকে হারাতে শুরু করলাম তখন থেকে একটু একটু করে ওর মূল্যটা বুঝতে শুরু করলাম।
ও কি আমার কাছে সেটা বুঝতে শুরু করলাম।
আসলে আমি যেটাকে ওর প্রতি শুধু মায়া ভেবেছিলাম,সেটা ধীরেধীরে যে ভালবাসায় পরিণত হচ্ছিলো বুঝতে পারছিলাম না।
কিন্তু এখন আমি কি করবো?
আমি যে নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মেরেছি।
আমি কি হৃদকে সব খুলে বলবো?
মাফ চাইবো ওর কাছে?
ভিক্ষা চাইবো ওকে আমি ওরই কাছে?
আমি যে ওকে অন্যের হতে দেখতে পারছিনা।
আর তখনই যুথীর ফোন এলো আমার মোবাইলে।
-হ্যাঁ বল,এত রাতে ফোন দিয়েছিস।
-শোন না,আমি না খুব এক্সাইটেড আজ।
-কেন কি হয়েছে?
-হৃদ বলেছে আজ ওর জন্মদিনের পার্টিতে ও আমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবে।
কি হতে পারে সেই সারপ্রাইজ টা,তা আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি।
আর ও এই জন্যই বোধয় এত বড় আয়োজন করতেছে ওর বার্থডেতে।
-কি সারপ্রাইজ?
-আমার তো মনে হচ্ছে ও আজ আমাকে সবার সামনে আংটি পরাবে।
উফফ খুশিতে আমার আর ঘুমই আসবেনা আজ।
-তোর পরিবারকে না জানিয়েই?
-আমি আম্মুকে বলেছি হৃদের কথা।
আম্মু বলেছে কোন সমস্যা নেই।
আর সমস্যা থাকবেই বা কি করে বল, এত ভালো পরিবার।এত ভালো ছেলে।দেখতে এত হ্যান্ডসাম।
কেউ কি হাত ছাড়া করবে?
-হুম তাইতো।
-আচ্ছা বলতো আমি কোন শাড়ীটা পরবো?
-শাড়ী?শাড়ী কেন পরবি?
-আজব!আমার লাইফের এত বড় দিন আজ।আর আমি আমার ফেভারিট পোশাক শাড়ী পরবো না?
তুই বল না দোস্ত কোন শাড়ীটা পরবো আমি?
কোন শাড়ীটা পরলে আমাকে বেশি ভালো দেখাবে?
আর শোন,তুই এখন থেকে আমাকে আর নাম ধরে ডাকবিনা।
ভাবী বলে ডাকবি হি হি।
আমার আর সহ্য হচ্ছেনা এসব।
তাই সহ্যের সীমা টা ছাড়িয়ে যেতেই আমি আমার মোবাইল টা দেয়ালে ছুড়ে মারলাম।
আর মোবাইল টা সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
চলবে…