এলিয়েন পর্ব-০৪

0
1783

#এলিয়েন।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_৪

আজ কলেজে এসে কোথাও হৃদ কে দেখিনি।
দু চোখ আমার বার বার পর্যবেক্ষণ করে যখন ক্লাসের দিকে পা বাড়ালাম।

ঠিক তখনই যুথী হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আমাকে বল্লো আরফা আরফা,

-কিরে এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন?
-তোকে একটা কথা বলতে এলাম
-তাতো বুঝতেই পারছি,কিন্তু এইভাবে দৌড়ে আসলি কেন?আমি কি চলে যাচ্ছি নাকি কোথাও?

-অত কথা বলিস না,
আমার কথা টা শোন আগে।
-হুম বল,
-আই এম ইন লাভ।
-বাহ্ এটা তো ভালো খবর।
-হুম,
-তো কে সেই মহা মানব যে কিনা আমার বান্ধবীর মন চুরি করেছে।
নাম টা শুনি।

-সে আর কেউ নয় রে দোস্ত,তোরই ভাই হৃদ।

কথা টা বলেই যুথী লজ্জায় ওর দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেল্লো।

আর ওর কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে টুপ করে মাটিতে পড়লাম।

কি বলছে এই মেয়ে।

-ওই,কি বলছিস তুই?
-হ্যাঁ রে আমি ঠিকই বলছি,
আমি জানি হৃদ একটু অন্য রকম।যাকে এ যুগের ছেলে মেয়েরা বলবে ক্ষ্যাত।

কিন্তু আমার কাছে ওমন ছেলেই পছন্দ।
আমি ওকে পরিবর্তন করে নেবো।
তুই শুধু আমার কথা টা ওকে বলে দে প্লিজ।
প্লিজ প্লিজ প্লিজ দোস্ত।তুই আমাদের রিলেশন টা করে দে।

-যুথীইই
-হুম বল,
-তুই পাগল হয়ে গেছিস।জাস্ট পাগল।

কথা টা বলেই আমি যুথীকে ফেলে একবারে বাসায়ই চলে আসলাম।

বাসায় এসে তাড়াতাড়ি করে হৃদকে ফোন দিলাম।
কিন্তু হৃদ ফোন তুলছেনা।
উফফ ও আজ কলেজেও আসেনি,আবার ফোন ও ধরছেনা।
আজ জরিনা সেজে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেন যে জরিনা সাজতে গেলাম।এখন ফোন রিসিভ করলেও জিজ্ঞেস করতে পারবোনা যে কেন ও কলেজে আসেনি।

থাক,তবুও তো জানা যাবে ও কেমন আছে।
কিন্তু ফোন টাই তো রিসিভ করছেনা।

রিং বাজতে বাজতে অবশেষে এলিয়েন টা ফোন রিসিভ করেছে।

-কই ছিলেন আপনে?ফোন কেন রিসিভ করেন নাই?
ওহ না সরি,কোথায় ছিলেন আপনি?ফোন কেন রিসিভ করছিলেন না?

-আরে আমি আজ একটু ব্যস্ত।
তাই রিসিভ করতে পারিনি।তুমি কেমন আছো জরিনা?
-ভালো আছি।
-আজ কি কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে?
-হ্যাঁ।

-আচ্ছা শোনো,আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।
আমি একটু আরফাদের বাসায় যাচ্ছি।
-আরফা?
-ওই যে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে আমার বাবা মা।
-ওহ।
-ওই বাসায় কেন?
-গিয়ে এসে তারপর সব বলি?

-আচ্ছা।
-তাহলে এখন রাখছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।

এলিয়েনটা আমাদের বাসায় কেন আসছে কে জানে।

আসলে হৃদের জন্য আমার যত টুকু টান আছে সেটা হচ্ছে মায়া।
এ ছাড়া আর কিছু নয়।
ভালবাসা তো অন্য জিনিষ।তার প্রতি আমার ভালবাসা টা হবেনা হয়তো কোন দিনই।
কারণ সে আমার স্বপ্ন পুরুষ থেকে একদম আলাদা।পুরোপুরি বিপরীত মানুষ সে।
কোন ভাবেই তাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব না।

কিছু ক্ষণ পর আন্টি আর হৃদ আমাদের বাসায় আসে।

আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে আমাকে ডাকেন তারা।আমি গিয়ে হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলি।

কথার এক পর্যায়ে এলিয়েন টা আমাকে ডেকে বলে,আরফা চলো তোমার রুমে যাই।

আমি কিভাবে এখন সবার সামনে তাকে না করি।
রাগ হচ্ছে এলিয়েন টার উপর।তবুও নিয়ে গেলাম আমার রুমে।

-হুম,বসুন।
-বাহ্ তোমার রুম টা তো খুব সুন্দর।
-এই প্রথম এলেন নাকি?
-না আরেক বার মনে হয় এসেছিলাম কিন্তু এত সুন্দর ভাবে গোছানো ছিলোনা।
-হুম গুছিয়েছি।
আমার গোছানো সব কিছু পছন্দ।
-আর জীবন সঙ্গী কেমন পছন্দ?
-এই ধরুন স্মার্ট,হ্যান্ডসাম,কিউট এ সব কিছুই থাকতে হবে ওর মধ্যে।
যা আপনার মাঝে এর কিছুই নেই।

-হ্যাঁ আমি জানি।
সব মেয়েদেরই একটা স্বপ্ন থাকে তার ভবিষ্যৎ বরকে নিয়ে।তোমারও থাকাটা স্বাভাবিক।

কিন্তু আন্টি আংকেল,মা বাবা যে আমাদের দুজনের..

-হ্যাঁ আমি জানি।
কিন্তু দেখুন,আমার সাথে আপনি যান না।
আপনার সাথে আমাকে মানায় না।
আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবোনা।
আমি আমার মা বাবাকে বলেছি।
আপনি আপনার মা বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলুন।

আমার কথা গুলো শুনে হৃদের মুখ টা কালো হয়ে গেলেও খুব মায়াবী একটা হাসি দিয়ে আমাকে ও বল্লো,

-আমিও চাইনা জোর করে তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে।
বাবা মা তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন।

মা যখনই একটা নিজের জন্য নতুন শাড়ী কিনেছেন সাথে তোমার জন্যও একটা কিনেছেন।

তোমার জন্য কিছু গহনাও গড়ে রেখেছেন।

কিভাবে আমি না করবো তাদের বুঝতে পারছিনা।

-আপনি বলবেন আমার আপনাকে পছন্দ না।
আমি চাইনা আপনাকে বিয়ে করতে।

-সমস্যা নেই।তুমি চিন্তা করোনা,তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এ বিয়ে হবেনা।
ভালো থেকো।
মন দিয়ে পড়াশোনা করো।দোয়া করি তুমি যেন তোমার স্বপ্নের মত একজন জীবন সঙ্গী পাও।

-আপনিও।

সেদিন হৃদ চলে যায়।

দু দিন পর আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে জানায়,

-শেষ পর্যন্ত তোর ইচ্ছেই পূরণ হলো।
-কি ইচ্ছে?
-হৃদ নাকি তোকে বিয়ে করতে পারবেনা।
-মানে?
-ও সবাইকে বিয়ের জন্য না করেছে।ও নাকি তোকে বোনের মতই দেখে।তোকে নাকি স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবেনা।

-ওহ।সবাই কি বল্লো?
-কি আর বলবে,আফসানা তো কেঁদে কেঁদে অস্থির।
কথাই বলেনা দু দিন যাবত কেউ হৃদের সাথে।
খেতেও দেয় না কেউ।
রান্না করে রেখে দেয়।হৃদও হাত দিয়ে বেড়ে খায়না।

এই চলছে।

যা এবার তুই নিজে পছন্দ করে বিয়ে কর।
আমরা আর কোন ছেলে দেখবোনা তোর জন্য।

আম্মু চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো।

এলিয়েন টা আমার কথা বলেনি তাহলে।নিজের সবার চোখে খারাপ হয়ে গেলো।

যাইহোক,বিয়েটা তো ভেঙেছে।আজ তো আমার খুশি হবার কথা কিন্তু আমি কেন খুশি হতে পারছিনা।

এদিকে জরিনা সেজে আমি হৃদকে মেসেজ দেই।
হৃদ আমাকে মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ডিরেক্ট কল দেয়।

আর কল দিয়ে কাঁদতে থাকে।

শুনেছি ছেলে মানুষ সহজে কাঁদেনা।
ও আজ কাঁদছে কেন তাহলে?

-কি হয়েছে কাঁদছেন কেন?

-আমার বিয়েটা ভেঙে গেছেরে জরিনা।

-তাতে কি?তাই বলে এই ভাবে কাঁদতে হবে?

-আমি আমার জন্য কাঁদছিনা।
কাঁদছি দুই পরিবারের মানুষ গুলোর জন্য।কতই না কষ্ট পেয়েছেন তারা।

আমি হৃদকে বুঝালাম।
শান্তনা দিলাম।
বললাম,এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় যেন মন দেয়।

হৃদ প্রায় এক সপ্তাহ হয় কলেজে আসেনা।

আমি কলেজে এসে বসে আছি।
হঠাৎ আমার বান্ধবীরা আমাকে ডেকে বলে, আরফা দেখ দেখ।

-কি দেখবো?

পেছনে তাকিয়ে আমি হা হয়ে যাই।

এ কি দেখছি আমি.

আমার এক বান্ধবী আমার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলে এভাবে কি দেখছিস?

-ওই বল তো ছেলেটা কে?
আমি কি কিছু ভুল দেখছি?

-না না তুই একদম ঠিক দেখছিস।
ওটা আর কেউ নয় তোর ভাই হৃদ ই।
হৃদকে তো চেনাই যাচ্ছেনা।

ও তো আর আগের হৃদ নেই।
পুরোপুরি চেঞ্জ।

উফফ কি স্মার্ট লাগছে আজ হৃদকে।

কি তার চুলের স্টাইল,কি ড্রেসাপ।

একটা ছেলে এত কিউট হয় কি করে?

আমার একেক বান্ধবী একেক টা কথা বলে যাচ্ছে।

আর হৃদ ধীরেধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই হৃদ একটা হাসি দিয়ে ওর পেছন থেকে একটা মেয়েকে হাত ধরে আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বল্লো,

-দেখো তো ওকে চেনো কিনা,

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে