#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_৩৩(অন্তিম পর্ব)
#Jannatul_Ferdos
নিরুপমা যেতে যেতেই তনিমা বেগম মুসকানকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।ঘুম এসেছিল বলে মুসকানকে বিরক্ত করছিল।নিরুপমা তনিমার বেগমের কাছে মুসকানকে রেখে যায়।উৎস গোসল করে বের হয়েছে তখন। স্নিগ্ধ লাগছে উৎসকে খুব।নিরুপমা প্রাণভরে তার ভালোবাসার মানুষকে দেখছে।উৎস আয়নার সামনে চুল মুছতে মুছতে বলে
“কি দেখে হুম?সুন্দর ছেলে দেখলেই তোমরা মেয়েরা এমন ভাবে তাকিয়ে থাকো যেন সুন্দর ছেলে দেখো নাই।আমাকে এভাবে দেখে লাভ নাই বুঝলা।
নিরুপমা কোমড়ে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে..
” কি কি কি বললেন আপনি?এই যে মিস্টার আপনাকে দেখার আমার কোনো ইচ্ছা নেই ঠিক আছে?আসছে সুন্দর ছেলেদের দিকে মেয়েরা তাকায় থাকে।আপনাদের ছেলেদের ভালো করেই জানি বউ থাকতে ও সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।লুচু কোথাকার হুহ
“কি বললে তুমি আমি লুচু?আর আমি কবে বউ ছেড়ে অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়েছি হ্যা?
” আপনি?আপনি তো বউয়ের দিকেই তাকান না মেয়েদের দিকে কি তাকাবেন।নিরামিষ একটা
“কিহ আমি নিরামিষ?
” তাছাড়া আর কি?আমিষ বলতে কিছু আছে নাকি আপনার ভিতরে?
“ওহ আচ্ছা তাই?আমিষ আছে কিনা দেখাবো নাকি?
উৎস একটা ডেভিল হাসি দিয়ে নিরুপমার দিকে এগোতে থাকে।আর নিরুপমা পিছাতে থাকে।
” কি কি কি করবেন আপনি?…নিরুপমা তুতলে বলতে থাকে
“কেন আমি আমিষ কিনা দেখবে না?
” না না আমি দেখব না।আপনি থাকেন আমি যাই।
নিরুপমা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়। উৎস হাসে নিরুপমার কান্ডে দেখে।হাসতে হাসতে উৎসের আজকের তারিখের দিকে নজর যায়।তার মুখে এবার একটা বিজয়ের হাসি ফুটে উঠে।আর মাত্র কিছুক্ষণ তারপর নিরুপমার জন্য থাকবে বিশাল বড় একটা সারপ্রাইজ।
নিরুপমা অনেক্ষণ যাবত উৎসের আসার অপেক্ষা করছে।আজ মুসকানকে নিরুপমার কাছে রাখতে বারন করছে সে।মুসকান ঘুমালে প্রেমার কাছে দিয়ে এসেছে।উৎসের কার্যক্রম তারা কাছে সুবিধার লাগছে না।উৎস বেশ সময় পরে রুমে আসে।নিরুপমা অধীর আগ্রহে বসে ছিল উৎসের জন্য।কিন্তু নিরুপমা কিছু বলার আগেই উৎস বলে…
“এখন কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।হুসসসস চুপ একদম চুপ এখন ঘুমাবে সব প্রশ্নের উত্তর পাবে তবে এখন ঘুমাবে….নিরুপমা উৎসকে কিছু বলতে গেলে উৎস আঙ্গুল নিরুপমা ঠোঁটের উপরে রেখে চুপ করায় কথা গুলো বলে নিরুপমা ঠোঁটের কাছে থাকা তিলে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে শুয়ে পড়ে।নিরুপমা তিলটাকে ছুঁয়ে দেখে।অন্যদিনের তুলনায় কেন জানি উৎসের পরশ নিরুপমার আজ খুব বেশি ভালো লাগছে একান্ত আপন মনে হচ্ছে।ইসসস সারাটা জীবন যদি উৎসের ভালোবাসা পেতো কতই না ভালো হতো। কিন্তু নাহ নিরুপমা পরাজিত উৎসের মনে ভালোবাসার শস্য ফলাতে সে ব্যর্থ হয়েছে।আশা এবার ছেড়ে দিয়েছে।যে বুঝে না তাকে হাজার চেষ্টা করলে ও বোঝানো সম্ভব না।নিরুপমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘড়ির কাটায় রাত ১১ টা বেজে ৪৫ মিনিট। উৎস ছাদে দাঁড়িয়ে নিরুপমাকে কল দিয়েছে।উৎসের কল দেখে নিরুপমা চমকে যায়। পাশে শুয়ে কেন কল দিচ্ছে তাকে?এরপর পাশে লক্ষ্য করে দেখে উৎস তার পাশে নেই তাহলে কোথায় গেল সে?কল রিসিভ করতেই উৎস বলে উঠে…
শহুরে জমা মেঘ আর এক পশলা বৃষ্টি
তখন তুমিময় তুমিতে ছিলেম উদাসীন
গোধূলি লগ্নের অপরুপ
এক সন্ধ্যায় হুট করেই এসেছিলে
শীতল করে দিয়েছিলে আমাকে!
হয়তো কোনো এক শীতের ক্ষণে
শরীর ভিজিয়েছিলে শিশিরে!
হৃদয়ের অব্যক্ত কথা বলছিলে আলাপনে
গাঙচিলের বেশে তুমি ছিলে
আমার অস্তিত্বের পুজারি!
সেই ক্ষণে সেই বেলায় সে সাঝেঁ
মনের ক্যানভাসে রঙ তুলি ছাড়াই
এঁকেছিলাম তোমার জলছবি!
নিরুপমা মনোযোগ সহকারে উৎসের কবিতা শুনছিল।সে যে এতো গুছিয়ে কথা বলতে পারে নিরুপমা জানতো না।দুইজনেই চুপ।দুপাশে পিনপতন নিরবতা কাজ করছে।এবার উৎস লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে “ছাদে আসো।
“এতো রাতে ছাদে কেন?
” এতো প্রশ্ন করো না নিরুপমা যা বলছি তাই করো কুইক
নিরুপমা ফোন রেখে ছাদে যায়।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিরুপমা ফোনের লাইট জ্বালিয়ে ছাদে উঠে।নিরুপমার উপস্থিত উৎস টের পেয়ে লাইট অফ করতে বলে নিরুপমা লাইট অফ করে সামনে এগোয়।
উৎস নিরুপমাকে পিছন ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধোরে বলে..
“আকাশে কখনো ফানুস দেখেছো নিরুপমা?
নিরুপমা অবাক হয় উৎসের কাজে।উৎস তাকে এতোটা আপন করে নিয়েছে?তবে কি উৎস তাকে ভালোবাসে?
” কি হলো বলো তাড়াতাড়ি সময় নাই।
“না দেখি নি..নিরুপমা উৎসের দিকে তাকিয়ে বলে।
” এবার সামনে তাকিয়ে দেখো তো?
নিরুপমা সামনের দিকে ফিরলে ওর চোখের জ্বল জ্বল করে উঠে।আকাশে অসংখ্য ফানুস উড়ছে।নিরুপমা বাস্তবে কখনো ফানুস দেখে নি।আর আজ তার সামনে এতো ফানুস উড়ছে।চোখ ভিজে উঠেছে।কিছু বলতে যাবে তার আগেই জোরে একটা বাঁশির আওয়াজ শুনতে পায় নিরুপমা। ঠিক সেই মূহুর্তে আকাশে একটা বাজি ফুটে বড় বড় করে জ্বলে উঠে
Happy First Marriage Anniversary
নিরুপমা এবার আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্না করে দেয়।আজ যে তার আর উৎসের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী সে ভুলে গিয়েছিল।উৎস তাকে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দেবে সে কখনোই ভাবে নাই।চোখের পানি মুছে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে উৎস হাটু গেড়ে একগুচ্ছ কাঁঠ গোলাপ নিয়ে তার সামনে বসে আছে।নিরুপমা অবাক হয়ে উৎসের দিকে তাকিয়ে আছে।উৎস এবার বলতে শুরু করে…
“আমি লাইফে কখনো ভাবিনি দ্বিতীয়বার কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারব।এতোটা প্রচন্ড ভাবে কারোর নেশায় আমি পড়ে যাবো।তোমার ভিতর আছে এমন এক মাদকতা যা অরিত্রার মধ্যে ছিল না।তুমি মায়াবতী নিরুপমা যে মায়াটা অরিত্রার মধ্যে ছিল না।কিন্তু আমি অরিত্রাকে এতো বেশি ভালোবাসতাম যে তোমাকে কখনো আমি লক্ষ্য করে দেখি নি।এখন তুমি বলবে প্রথম ভালোবাসার সাথে তোমাকে তুলনা দিচ্ছি?উহু একদমই না।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অরিত্রা আমার মনের কোনো একটা লুকায়িত কঠোরে বন্ধি থাকবে।আমি আসলে খুব বোকা ছিলাম গো জানতাম সে ফিরে আসবে না তাও তার জন্য আমি আশায় থাকতাম।অরিত্রা চেয়েছিল আমি ভালো থাকি।ও আমাকে মৃত্যুর আগে বলেছিল মুসকানকে আপন করে নেবে এমন বিশ্বাস যোগ্য কাউকে যদি আমি পাই যেন বিয়ে করে নেই।কিন্তু আমি ওর কথা না রেখে এতোদিন যাবত অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছি।নিরুপমা অরিত্রা আমার প্রথম ভালোবাসা আর তুমি আমার শেষ ভালোবাসা।তুমি আমার অস্তিত্বে মিশে গেছো একটা মূহুর্ত ও আমি তোমাকে ছাড়া ভাবতে পারি না তাহলে সারাজীবন কিভাবে ভাব্বো বলো?তুমি যদি বড় ফুফির বাসায় গিয়ে লুকিয়ে না থাকতে আমার থেকে দূরে না থাকতে তাহলে আমি হয়তো কখনো বুঝতামই না আমি তোমাকে ভালোবাসা খুব বেশি।আমি যে ভয়ংকর প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়েছি।তুমি আমার ভালোবাসা,তুমি আমার অস্তিত্ব,তুমি আমার শ্বাস-প্রশ্বাস তুমি আমার সন্তানের মা, তুমি ভালো থাকা আমার #এবং স্ত্রী তুমি আমার।আমি তোমাকে আমার ভালোবাসার রঙে রাঙাতে চাই নিরুপমা। বড্ড ভালোবাসি গো বউ তোমাকে।আমাকে আপন করে নিবে?আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে আমি তোমাকে বলেছিলাম আমার স্ত্রীর অধিকার আমি তোমাকে দিব না।আজ আমি তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাচ্ছি দেবে তুমি আমাকে?
নিরুপমা কাঁদছে খুব বেশি কাঁদছে।আজ সে উৎসের ভালোবাসা পেয়েছে।উৎসের থেকে স্ত্রীর স্বীকৃতি পেয়েছে।উৎসকে জড়িয়ে ধোরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে নিরুপমা। তার দুঃখের সময় বুঝি ঘুচলো এবার।বেশকিছু সময় পর দুইজনে ছাদ থেকে নেমে বাসায় আসে।কিন্তু বাসায় এসে দ্বিতীয় ধফা চমক খায় নিরুপমা। সকলে কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওরা বাসায় প্রবেশ করতেই সকলে একসাথে বলে উঠে “Happy First Marriage Anniversary ”
নিরুপমা তার শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধোরে কেঁদে দেয়।আজ সে আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করছে সে ভেবেছিল তার কপালে সুখ নেই কিন্তু আজ তার কপালে এতো সুখ।আসলেই দুঃখের পরেই সুখ আসে।কেক কেটে সকলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে যায়।নিরুপমাকে তখন উৎস বলে…
“রাতের নিরবতায় আমার হাত ধোরে হাঁটবে নিরুপমা?
নিরুপমা স্মিত হাসে।
” তার আগে তোমাকে একটা জিনিস দেখানোর আছে
“কি?
” রুমে চলো দেখবে।
উৎস নিরুপমাকে তাদের রুমে নিয়ে যায়।রুমে গিয়ে যখন আলো জ্বালিয়ে দেয় নিরুপমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। রুম জুড়ে আছে মুসকান আর নিরুপমার অসংখ্য ছবি।সব নিরুপমার অজান্তেই তোলা হয়েছে।নিরুপমা পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয় কয়েকটি উৎস আর নিরুপমার ও ছবি আছে সেগুলোও তার অজান্তেই তোলা হয়েছে।উৎস এবার বলে..
“ফুফিদের বাড়ি যাওয়ার আগে যত পিক প্রেমা তুলেছে।কি মনে করে তুলেছিল ও জানে।এরপরের গুলো আমার তোলা।
নিরুপমা উৎসকে শক্ত করে জড়িয়ে ধোরে।
” আমার জীবনে বেস্ট পাওয়া আপনি উৎস।অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে।
উৎস মৃদু হেসে নিরুপমা মাথায় চুমু খায়।
উৎস আর নিরুপমা মধ্যরাতেই হাঁটতে বের হয়।চারিদিকে নিরবতা বিস্তৃত করছে।উৎস আর নিরুপমা একে অপরের হাত ধোরে হাঁটছে।নিরুপমা এবার উৎসকে বলে..
” আপনি যে চোর তা তো জানতাম না।
উৎস এবার ভ্রু কুঁচকে নিরুপমার দিকে তাকায়
“কি বললে তুমি?আমি চোর? কি চুরি করেছি আমি
” ওইযে ছাদে তখন যে বললেন আকাশে কখনো ফানুস দেখেছো? ওটাতো এই অবেলায় গানের থেকেই চুরি করেছেন
“এটাকে চুরি বলে?আমরা গানের বিভিন্ন অংশ বলি না তখন কি চুরি হয়? হয় না তাহলে গানের থেকে একটা ডায়ালগ বললেই চুরি হয়ে যায়?
” হ্যা তাতো অবশ্যই।
“মটে ও না
” মটে ও হ্যা
“উফ তোমার সাথে তর্কে জেতা যায় না।তুমি এমন কেন নিরুপমা?বড্ড জ্বালাও তুমি
” আমি এমনই।আমার সাথে থাকতে হলে আমাকে এভাবে সহ্য করতে হবে,আর আমি অনেক জ্বালাবো এতো দিন কিছুই জ্বালাই নি।সব যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে চলবে?
“এবার যে তুমি নাটকের ডায়ালগ কপি করলে তার বেলায়?
নিরুপমা ফিক করে হেসে দেয়।উৎস তার বুকে জড়িয়ে নেয় নিরুপমাকে। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধোরে বলে ” আমার চলবে না দৌড়োবে বউ।
বউ ডাক শুনে নিরুপমা লজ্জায় উৎসের বুকে মুখ গুজে হাসে।শুরু হয় ওদের নতুন পথ চলা।
সমাপ্ত!!